Thursday, 26 July 2018

HS PHILOSOPHY ( WBCHSE) | একাদশ শ্রেণীর দর্শনের প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
                          পাশ্চাত্য দর্শন
                      দ্বিতীয় অধ্যায়
           একাদশ শ্রেণী (wbchse)
জ্ঞানের স্বরূপ ও জ্ঞান  সম্পর্কিত মতবাদ
  
প্রশ্ন:  জানা' ক্রিয়াপদটি কী কীও অর্থে ব্যবহৃত হয়? বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো।(What are the different senses in which the word 'Know' is used? Discuss the conditions of propositional knowledge.)   ৩+৫

উঃ 
     'জানা' ক্রিয়াপদটির বিভিন্ন অর্থ: 'জ্ঞান' এই বিশেষ্য পদটি 'জানা' ক্রিয়াপদটি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। কাজেই জ্ঞান শব্দটির পরিবর্তে সাধারণভাবে 'জানা' ক্রিয়াপদটিকে ব্যবহার করা হয়। 'জানা' এই ক্রিয়াপদটি চেনা বা শনাক্ত করা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, অবহিত হওয়া, পরিচিতি, কর্মকুশলতা, প্রভৃতি বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ  লক্ষ করা যায়। তবে অধ্যাপক জন হসপার্স 'জানা' শব্দটির তিনটি মুখ্য অর্থ বা ব্যবহার উল্লেখ করেছেন। (ক) পরিচিতি অর্থে জানা, (খ) কর্মকৌশল অর্থে জানা এবং (গ) বাচনিক অর্থে জানা। 'জানা' ক্রিয়াপদটির মুখ্য অর্থগুলি নিম্নে বর্ণিত হলো।

(ক) পরিচিতি অর্থে জানা: পরিচিতি অর্থে জানা বলতে চেনা বা সাক্ষাৎ পরিচয়কে বোঝায়। এই পরিচিতি কোন বস্তুর, কোন ব্যক্তির বা কোন স্থানের সঙ্গে ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা থেকেই পরিচিতি বোধ হয়। যেমন- 'আমি শ্যামকে জানি'। এখানে 'জানা' বলতে বোঝায় শ্যামের সঙ্গে পরিচয় থাকা। পরিচিতি জ্ঞানে কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সম্বন্ধে সব সময়ে পর্যাপ্ত তথ্য আমাদের কাছে নাও থাকতে পারে। তবে ঐ বস্তু বা ব্যক্তিকে চেনার মত তথ্য অবশ্যই থাকবে।

        (খ) কর্মকৌশল অর্থে জানা: কর্মকৌশল অর্থে জানা বলতে বিশেষ ধরনের কাজ করার ক্ষমতাকে বা দক্ষতাকে বোঝানো হয়। যেমন- যখন বলা হয় 'আমি সাঁতার কাটতে জানি' তখন 'জানি' বলতে বোঝায়, কিভাবে হাত-পা নেড়ে সাঁতার কাটতে হবে সে-কৌশল, আমার জানা।

           বাচনিক অর্থে জানা: 'জানা' শব্দটির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হল বাচনিক অর্থ। ‌ যাকে বচনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে বাচনিক জ্ঞান বলে। বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে জানা বলতে কোন বচনকে সত্য বলে জানা বোঝায়। এ প্রকার জানাকে 'জানা যে'-ও বলা হয়। এখানে জানা শব্দটি প্রয়োগ করা হয় এইভাবে -'আমি জানি যে, ..........'। 'যে' শব্দটির পর একটি অনুক্ত বচন থাকে এবং সেটাই হলো আমাদের জানার বিষয়। যেমন- 'আমি জানি যে, সক্রেটিস হন একজন দার্শনিক'।

        বাচনিক জ্ঞানের শর্ত: বাচনিক জ্ঞানের দাবির ক্ষেত্রে কতগুলি শর্ত পূরণ করতে হয়। জন হসপার্স বাচনিক জ্ঞানের প্রধান তিনটি শর্তের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো (ক) সত্যতার শর্ত (খ) বিশ্বাসের শর্ত (গ) বিশ্বাসযোগ্যতা বা পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের শর্ত। এখন এই তিনটি শর্তকে  বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

         (ক) সত্যতার শর্ত: বাচনিক জ্ঞানের প্রথম শর্ত হলো সত্যতা। এই 'সত্যতা' বলতে বচনটির বিষয়বস্তুর সত্যতাকে বোঝায়। অর্থাৎ, জ্ঞেয় বচনটি অবশ্যই বস্তুগতভাবে সত্য হবে। বচনটি যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমি বলতে পারবো না যে, আমি বচনটিকে জানি। যেমন- 'আমি জানি যে, শরৎচন্দ্র দেবদাস লিখেছেন' - এই জ্ঞানটির ক্ষেত্রে 'শরৎচন্দ্র দেবদাস লিখেছেন' বাক্যটিকে সত্য হতে হবে। 

        কিন্তু এমন অনেক বচন আছে যা সত্য অথচ তার সম্বন্ধে আমি জানি না। যেমন- রসায়নশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যায় এমন অনেক সত্য বচন আছে যার সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের কোনো জ্ঞান নেই, যা একমাত্র এসব শাস্ত্রের  বিশেষজ্ঞরাই জানেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সত্যতা শর্তটি পূরণ হলেই বলা যাবে না যে জ্ঞান হয়েছে। অন্য শর্ত পূরণেরও প্রয়োজন আছে।

     বিশ্বাসের শর্ত: বচনের সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাস বাচনিক জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্ত। যে বচনটিকে আমি জানি বলে দাবি করছি সেই বচনটি কেবল সত্য হলেই চলবে না, সেই বচনটির সত্যতা সম্পর্কে আমার বিশ্বাস থাকতে হবে। অর্থাৎ, যখন কোন বচন বিষয়বস্তুর দিক থেকে সত্য হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে  জ্ঞাতার দিক থেকেও ওই সত্যতায় বিশ্বাস থাকে তখনই বচনটি জানি এইরূপ দাবি করা যায়। বাচনিক জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্তটি হলো ব্যক্তি-সাপেক্ষ শর্ত। বচনটি  সত্য বলে বিশ্বাস না করলে জ্ঞান হতে পারেনা। কিন্তু বচনটি সত্য বলে বিশ্বাস করলেও জ্ঞান নাও হতে পারে। 'আমি জানি আগামী শুক্রবার অসীম কলেজে আসবে' - এই বচনটি সত্য বলে বিশ্বাস করলেও অসীম নাও আসতে পারে এবং বচনটি মিথ্যা হতে পারে। কাজেই সত্যতায় বিশ্বাস থাকলেও কোন কোন বচন সত্য নাও হতে পারে।

          বিশ্বাস যোগ্যতার শর্ত: বাচনিক জ্ঞানের তৃতীয় শর্ত হলো বিশ্বাসের শর্ত বা পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের শর্ত। কোন বচনকে সত্য বলে জানা এবং সেই সত্যতায় বিশ্বাস সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত হলে তবেই তা সমর্থনযোগ্য হয়। যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তি হলো সাক্ষ্য-প্রমাণ। সুতরাং, জ্ঞাতা যে বচনটিটিকে সত্য বলে বিশ্বাস করে সেই বচনটির সত্যতার সমর্থনে পর্যাপ্ত বা উপযুক্ত তথ্য বা সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা চাই।

       তবে বিশ্বাসের সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলেও জ্ঞান যে হবেই তার কোন মানে নেই। একজন আবহাওয়াবিদ ঘোষণা করলেন 'আগামীকাল বিকেলে বৃষ্টি হবে'। এ বিষয়ে তিনি বায়ুমন্ডলের গতি-প্রকৃতি নিয়ে নাড়াচাড়া করে সিদ্ধান্ত নিলেন। অথচ বৃষ্টি হলো না। কাজেই বিশ্বাসের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য থাকলেও কোন কোন বচন সত্য নাও হতে পারে।

       আবশ্যিক শর্ত ও পর্যাপ্ত শর্ত: যে শর্তটি অনুপস্থিত থাকলে আলোচ্য ঘটনাটি ঘটতে পারে না সেই শর্তটিকে উক্ত ঘটনার আবশ্যিক শর্ত বলা হয়। আর যে শর্তটি উপস্থিত থাকলে আলোচ্য ঘটনাটি ঘটবেই সেই শর্তটিকে উক্ত ঘটনার পর্যাপ্ত শর্ত বলা হয়। এখন বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্যতার শর্ত, বিশ্বাসের শর্ত, বিশ্বাস যোগ্যতার শর্ত - এই তিনটি শর্তের কোনো একটির অভাব ঘটলে বাচনিক জ্ঞান হতে পারে না। তাই এই তিনটি শর্তের প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত। আর ওই তিনটি শর্ত একত্রিত করলে বাচনিক জ্ঞান হবেই। তাই তিনটি শর্তকে একত্রে বাচনিক জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত বলা হয়।
                         <<<<<<<>>>>>>>
If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: