Wednesday 18 December 2019

B.A 3rd year (UGB) এর শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তর

Leave a Comment
প্রত্যক্ষ ও ও প্রত্যক্ষ পরামর্শদান বলতে কী বোঝ? এদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর।
অথবা প্রত্যক্ষ ও প্রত্যক্ষ পরামর্শদানের পার্থক্য উল্লেখ কর।
       প্রত্যক্ষ পরামর্শদান: যে পরামর্শদানে পরামর্শগ্রহীতা অপেক্ষা পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তা সমাধানের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় তাকেই প্রত্যক্ষ বা নির্দেশক পরামর্শদান বলে।
       অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদান: যে পরামর্শদান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের উপর গুরুত্ব না দিয়ে তার নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা উপর বেশি ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় তাকে অপ্রত্যক্ষ বা ও নির্দেশক পরামর্শদান বলে।
      প্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্য: প্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল---
১) প্রত্যক্ষ পরামর্শদানে সুপরিকল্পিত পথে পরামর্শদান পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে পরামর্শ গ্রহীতার অস্বাভাবিক আচার-আচরণের বিশ্লেষণ, সমস্যার প্রকৃতি, গুরুত্ব ও অবস্থানের নির্ধারণ এবং সমস্যার প্রতিকারমূলক পন্থাপদ্ধতি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়।
২) এই পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতার বৌদ্ধিক এর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে তার বৌদ্ধিক সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে পরামর্শদানের ব্যবস্থা নিতে হয়।
৩) এই জাতীয় পরামর্শদানে একজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পরামর্শদাতা ই পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার অনুধাবনে এবং সাবধানে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন বলে বিবেচনা করা হয়।
৪) এই জাতীয় পরামর্শদানের পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যা উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে প্রদত্ত সমাধানের উপায় পরামর্শ গ্রহীতার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব কিনা তা বিচার বিবেচনা করা হয় না।
৫) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতার ভূমিকা কেবল গ্রাহক হিসাবেই সুনির্দিষ্ট থাকে। যেহেতু এখানে পরামর্শদাতার ভূমিকা সুনিয়ন্ত্রকের, তাই এই জাতীয় পরামর্শদানে তিনিই প্রধান এবং সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁরই ভূমিকা সর্বাধিক।
৬) পরামর্শদাতা পরামর্শদানে বিশেষ ভাবে সকল দিক থেকে সক্রিয় থাকেন এবং তুলনামূলকভাবে পরামর্শ গ্রহীতা এখানে নীরব ভূমিকা নিয়ে থাকেন।
অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদান এর বৈশিষ্ট্য: নিম্নে  অপ্রত্যক্ষ পরামর্শদানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল--
১) এই পরামর্শ দানে ব্যক্তির বা পরামর্শ গ্রহীতার ব্যক্তিসত্তা বিকাশের উপর বেশি গুরুত্ব থাকে।
২) এই জাতীয় পরামর্শদানের পরামর্শদাতা পরামর্শ গ্রহীতাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে নিজের বক্তব্য বলতে দেন এবং এতে পরামর্শ গ্রহীতা অনেকাংশে নিজস্ব মানসিক (জট মুক্তির) আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
৩) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শ গ্রহীতা নিজেই নিজের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হোন এবং আত্মশক্তি জাগ্রত করে এবং আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হন।
৪) যেহেতু এই জাতীয় পরামর্শে পরামর্শ গ্রহীতার সমস্যার প্রকৃতি জানার ও সমস্যা সমাধানের উপর পরামর্শদাতাকে কোন গুরুত্ব দিতে হয় না সেহেতু তাকে পরামর্শ গ্রহীতার অতীত ইতিহাস জানার এবং তার উপর মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা ব্যবহার করার কোন উদ্যোগ নিতে হয় না।
৫) এই জাতীয় পরামর্শদানের সমর্থকরা ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তার উপর আস্থাবান থাকেন এবং প্রতিটি ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম এই ধারণা পোষণ করেন। তাই এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শদাতা এমন একটি পরামর্শ প্রাপ্তির পরিবেশ রচনা করেন যাতে করে পরামর্শ গ্রহীতার মধ্যে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় সকল কাজ সম্পাদনের উৎসাহ দেখা দেয় এবং তিনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজস্ব সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সমস্যা সমাধানে ব্রতী হতে পারেন।
৬) পরামর্শদাতার দ্বারা পরামর্শ গ্রহীতা এমন ভাবে উৎসাহিত হন যে তিনি নিজে থেকে সব রকম সমস্যার কথা ও অন্যান্য বিষয় খোলা মনে প্রকাশ করতে উদ্যত হন।
৭) পরামর্শ গ্রহীতা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধারায় পরামর্শদাতার সাহায্য গ্রহণ করলেও চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেন।
৮) এই জাতীয় পরামর্শদানে পরামর্শদাতার হৃদয়ে সঞ্চারিত আবেগের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
Read More

Wednesday 11 December 2019

B.A. 3rd year এর শিক্ষা বিজ্ঞানের নোট (গৌড়বঙ্গ ইউনিভার্সিটি)

Leave a Comment
প্রশ্ন: আদর্শায়িত অভীক্ষা ও শিক্ষক নির্মিত বা অ-আদর্শায়িত বা সাধারণ অভীক্ষার পার্থক্য নিরূপণ কর।

উঃ

আদর্শায়িত অভীক্ষা: সাধারণভাবে যেসব অভীক্ষার পদ সংখ্যা, প্রয়োগ পদ্ধতি, গঠন পদ্ধতি এবং তাৎপর্য নির্ণয়ের পদ্ধতি সবই নিয়ন্ত্রিত থাকে, তাকে বলা হয় আদর্শায়িত অভীক্ষা।

শিক্ষক নির্মিত অভীক্ষা: শিক্ষক নির্মিত অভীক্ষা হচ্ছে সেই সমস্ত অভিক্ষা যেগুলি শিক্ষকেরা বিশেষ উদ্দেশ্যমুখী পরিমাপের স্বার্থে অভীক্ষা গঠনের নীতিসমূহকে আংশিকভাবে মেনে অভিক্ষা প্রস্তুত এর ব্যবস্থা নেন।

আদর্শায়িত অভীক্ষা ও শিক্ষক নির্মিত  অভীক্ষার পার্থক্য: আদর্শায়িত অভীক্ষা এবং শিক্ষক নির্মিত অভীক্ষাকে পাশাপাশি রেখে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে বেশ কয়েকটি পার্থক্য চোখে পড়ে। পার্থক্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল - 

১) আদর্শায়িত অভীক্ষায় সাধারণধর্মী, শিক্ষাগত ও মানসিক বৈশিষ্ট্যাবলী পরিমাপ করা সম্ভব হয়। যেহেতু এই জাতীয় অভীক্ষাযেকোনো স্থানীয় অবস্থাভেদে সকলের উপর প্রয়োগ করা সম্ভব, সেতু উপরোক্ত ধরনের বৈশিষ্ট্যাবলী পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
অপরদিকে, সাধারণ অভীক্ষায় পদগুলি বিশেষ ধর্মী এবং এই জাতীয় অভীক্ষায় স্থানীয় অবস্থাভেদে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে গঠন করার ব্যবস্থা নিতে হয়।

২) আদর্শায়িত অভীক্ষায় অভীক্ষা পদগুলি বিশেষজ্ঞের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অনুসারে নির্মিত এবং প্রয়োগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচিত। 

অন্যদিকে, সাধারণ অভীক্ষায় অভীক্ষা পদগুলিকে নির্বাচন করা হয় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং এই জন্য এদের গুণগতমান পূর্বনির্ধারিত থাকেনা এবং মোটামুটি ভাবে অজানাই থাকে বলা যায়।

৩) আদর্শায়িত অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বেশি থাকে এবং তার মান আদর্শ মান এর উপরেই থাকে। কিন্তু সাধারণ অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা জানা থাকে না।

৪) আদর্শায়িত অভীক্ষার প্রয়োগ পদ্ধতিও মূলত আদর্শায়িত এবং এর মান নির্ণয়ের পদ্ধতিও বেশ আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষক নির্মিত অভিক্ষায় পূর্বনির্ধারিত প্রয়োগ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও উক্ত পদ্ধতি ইচ্ছানুসারে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।

৫) আদর্শায়িত অভীক্ষা অভীক্ষা গঠনের সময় আদর্শমান নির্ধারণ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে বিভিন্ন অর্জিত নম্বরের মধ্যে তুলনা করার সুবিধা হয়। কিন্তু শিক্ষক নির্মিত  অভীক্ষায় তাৎপর্য নির্ণয়ের পার্থক্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে এখানে আদর্শায়িত অভীক্ষার মত তুলনা করা অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে।

 মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষক নির্মিত অভীক্ষায় আদর্শায়িত অভীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া মেনে অগ্রসর হয়ে অভীক্ষা গঠনের রীতিনীতি মানা না হলেও শিক্ষার্থীদের সাধারণ পারদর্শিতা পরিমাপে এবং জ্ঞানের দক্ষতা উপলব্ধি প্রভৃতির সাধারণ পরিমাপে এই জাতীয় শিক্ষক নির্মিত অভিক্ষা শিক্ষাক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত।  তবে আদর্শায়িত অভীক্ষার গঠন প্রণালীর পর্যায়ক্রমিক ও প্রক্রিয়ামাফিক অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি যে খুব বিজ্ঞানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য তা অস্বীকার করা যায় না।
Read More

B.A. 3rd year শিক্ষাবিজ্ঞান এর নোট (Education) ugb

Leave a Comment
প্রশ্ন: সংগতি বিধানের গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর:

সংগতিবিধানের গুরুত্ব: সংগতিবিধান একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিনিয়ত সংগতিবিধান করার চেষ্টা করে। জন্মের সময় সে থাকে মা এবং বাবার অধীন। সে সময় তার জৈবিক চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য তাকে অন্যদের উপর নির্ভর করতে হয়। সে সময়ে বাহ্যিক জগত তার কাছে থাকে অস্পষ্ট ও ধোঁয়ার মতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে সংবেদন প্রত্যক্ষণ এবং ধারণা গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলির সঙ্গে সংগতিবিধান করার চেষ্টা করে। পরিবেশের উপাদান গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- জৈবিক উপাদান, মানসিক উপাদান এবং সামাজিক উপাদান। জৈবিক উপাদানগুলি হল জীবন ধারণের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চাহিদা। যেমন- জল, বায়ু, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি। মানুষ যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব তাই তার মধ্যে অনেক ব্যক্তিগত মানসিক চাহিদাও দেখা দেয়। যেমন- আত্মপ্রকাশের চাহিদা, সক্রিয়তার চাহিদা, স্বাধীনতার চাহিদা, প্রাক্ষোভিক বিকাশের চাহিদা ইত্যাদি। এগুলি হল পরিবেশের মানসিক উপাদান। আবার সামাজিক মেলামেশার চাহিদা, দল গঠনের চাহিদা ইত্যাদি হল তার পরিবেশের সামাজিক উপাদান।

শিশু ধীরে ধীরে ওই উপাদানগুলির সাথে সংগতি বিধানের চেষ্টা করে এবং এর মাধ্যমে সে পরিবেশের মূর্ত ও অমূর্ত উপাদানগুলির সাথে পরিচিত হয়। এই সময় তাদের চাহিদা ও প্রবৃত্তিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে শিশুর মধ্যে অপসংগতিমূলক আচরণগুলি দেখা যায়।

শিশু তার অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চাহিদাগুলির মধ্যে মূলত তিনটি উপায় সংগতিবিধান করার চেষ্টা করে -

১) শিশু তার অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে দমন করতে বা সংশোধন করতে পারে।

২) সে তার বাহ্যিক পরিবেশ পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ চাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটাতে পারে।

৩) উন্নত মানসিক কৌশল ব্যবহার করে অন্তর দ্বন্দ্বমূলক পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারে।

মনোবিদরা সংগতিবিধানকে দুই দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন-

১) সংগতিবিধানকে প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশু নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। খিদে পেলে খাবার জোগাড় করার চেষ্টা হল একটি প্রক্রিয়া।

২) যখন সংগতি বিধান একটি সাফল্য হিসেবে প্রকাশ পায় তখন তাকে সম্পাদিত কার্য হিসেবে দেখা হয়। শিক্ষার্থী পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করলে এক্ষেত্রে সংগতিবিধান হিসেবে পরিগণিত হয়।

অনেকে আবার একে একটি প্রক্রিয়া না বলে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ এই প্রক্রিয়া ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে।
Read More

Friday 6 December 2019

B. A. education note (UGB)

Leave a Comment
প্রশ্ন: শিক্ষা জগতে মন্তেসরীর অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর:

 ভূমিকা: শিক্ষা জগতে এক অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলেন মাদাম মারিয়া মন্তেসরী। পেশাগত দিক থেকে তিনি ছিলেন চিকিৎসক। তাঁর কর্মপ্রেরণার মূলে ছিল সেবামূলক মনোভাব। মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল সাধনই ছিল তার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, মানুষের অজ্ঞতাই তার জীবনের সব রকম বিপর্যয়ের কারণ। তাই মানুষের সার্বিক উন্নতি করতে হলে তার উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজন, এই ছিল তার জীবনের বিশ্বাস। জীবনের এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তিনি জীবনের বেশি সময় শিশু শিক্ষার নীতি ও পদ্ধতি রচনায় ব্যয় করেন।

      শিক্ষাক্ষেত্রে মন্তেসরী অবদান:

 শিক্ষার লক্ষ্য: মন্তেসরী বিশ্বাস করতেন প্রত্যেক শিশুই তার একান্ত নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। তাঁর মতে, শিশুর জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতাগুলি বিকাশ ধর্মী। প্রত্যেক শিশুই নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী অন্তর থেকে বিকাশ লাভ করবে। শিক্ষার লক্ষ্য হবে প্রত্যেক শিশুর আত্মবিকাশের প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা। অর্থাৎ, মন্তেসরীর শিক্ষাচিন্তা অনুযায়ী, শিক্ষা হল বিকাশের প্রক্রিয়া আর তার লক্ষ্য হল ব্যক্তি জীবনের স্বাতন্ত্র্যের পরিচায়ক বিকাশ ঘটানো।

পাঠ্যক্রম: মন্তেসরী কেবল শিশুর শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। নিয়মমাফিক পাঠ্যক্রমে তিনি শিশুদের জন্য লেখা, পড়া এবং গণিত এই তিনটি বিষয় রাখার কথা বলেছেন। এছাড়া জীবনের পক্ষে প্রয়োজনীয় কতগুলি অভ্যাস এবং দক্ষতা বিকাশের উপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। কিভাবে নিজের দেহের যত্ন নিতে হয়, কিভাবে ঘর পরিষ্কার করতে হয়, কিভাবে পোশাক ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হয়, সে সংক্রান্ত অভ্যাস ও দক্ষতা গঠনের কথা তিনি বলেছেন। এছাড়া শৈশবে দৈহিক বিকাশে সহায়তা করার জন্য তিনি বয়সোপযোগী কিছু ব্যায়ামের কথাও উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষণ পদ্ধতি: মন্তেসরী প্রবর্তিত শিক্ষণ পদ্ধতি মন্তেসরী পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতি তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমত: ইন্দ্রিয় পরিমার্জন আর নীতি; দ্বিতীয়তঃ সক্রিয়তার নীতি বা স্বয়ং শিক্ষার নীতি; এবং তৃতীয়তঃ স্বাধীনতার নীতি।

মন্তেসরী বলেছেন, শিশুদের মানসিক অগ্রসরতার জন্য দায়ী হলো তাদের ইন্দ্রিয়গুলি।  ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই আমরা বাইরের জগত থেকে জ্ঞান আহরণ করি। তাই শিশুকে সার্থকভাবে শিক্ষা দিতে হলে প্রথমেই তার ইন্দ্রিয়গুলিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এই নীতি কে বলা হয় ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার নীতি। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করেন। এগুলিকে বলা হয় ডিড্যাকটিক এপারেটাস (Didactic Apparatus) এগুলির সহায়তায় শিশুরা সহজে  বিভিন্ন উদ্দীপকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে, প্রতিক্রিয়া করতে পারি। মন্তেসরী তার পূর্বসূরিদের মত শিখনের ক্ষেত্রে শিশুর আত্মসক্রিয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শিক্ষার্থীরা নিজের চেষ্টায় যা শিখবে, উদ্ভাবিত ডিড্যাকটিক অ্যাপারেটাসগুলিতে তাই শিক্ষার্থীদের ত্রুটি দূর করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এইভাবে আত্ম সক্রিয়তায় শেখার পদ্ধতিকে তিনি নাম দিয়েছেন স্বয়ং শিখন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্বয়ং শিখনের সুযোগ দিতে হলে স্বাধীনতার প্রয়োজন। তাই মন্তেসরী স্বাধীনতাকে শিক্ষার যোগ্য মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

মন্তেসরী শিক্ষণ পদ্ধতি সাধারণভাবে ছয় বছর পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার জন্য রচিত হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে পাঠ্যক্রমে তিন দিক থেকে অনুশীলনের ব্যবস্থা আছে।

প্রথমত: শিশুদের জীবন যাপনের উপযোগী শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাপড় কাচা, নখ কাটা, দাঁত মাজা, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদির মত কাজ শেখানো হয়। এই ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে একদিকে তাদের দৈহিক বিকাশে সহায়তা করা হয়, আবার অন্যদিকে তারা জীবনের প্রত্যক্ষ কার্যাবলীর সঙ্গে পরিচিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ মন্তেসরী তার পদ্ধতিতে ডিড্যাকটিক অ্যাপারেটাস এর সাহায্যে শিশুদের ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যেমন বিভিন্ন আকারের কাঠের টুকরো, কাগজ,  আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, পেন্সিল,  বিভিন্ন রঙের উল, বাক্স, ঘণ্টা, ঘনক ইত্যাদি এইসব বস্তু-সামগ্রীর মাধ্যমে শিশুদের আকার, আয়তন, রং, ওজন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়ে থাকে।

তৃতীয়তঃ প্রথাগত লেখা, পড়া ও গণিত শিক্ষাদানের বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা এই পদ্ধতির মধ্যে আছে।

শিক্ষকের ধারণা: মন্তেসরী পদ্ধতিতে শিশুকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং তাদের স্বয়ং শিখনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই এই পদ্ধতিতে শিক্ষিকার ভূমিকাও বিশেষ ধরনের। তার প্রধান দায়িত্ব হল শিশুর শিখন প্রচেষ্টাকে নির্ধারিত পথে পরিচালনা করা। মন্তেসরী তার এই শিক্ষিকা বা পরিচালিকার প্রয়োজনীয় গুণাবলী সম্পর্কে বলেছেন - " Virtues and not words are the main qualifications of the teacher. She should be  partly a scientist, partly a doctor and completely religious." অর্থাৎ শিশুদের সামগ্রিক দিক থেকে সাহায্য করার জন্য সামগ্রিক দিক থেকে সাহায্য করার জন্য যত রকমের মানবিক গুণ থাকা প্রয়োজন, তা শিক্ষিকার থাকা উচিৎ। 

মন্তব্য: মন্তেসরীর শিক্ষা চিন্তা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষভাবে তাঁর প্রবর্তিত পদ্ধতি আধুনিককালে শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে এক স্থায়ী আসন অধিকার করেছে। তবে তার শিক্ষাচিন্তার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান হলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন। তিনি বলেছেন প্রত্যেক শিশুকে পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে পৃথকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করতে হবে। এই কারণে অনেকে মনে করেন মন্তেসরী শ্রেণী শিক্ষণ ব্যবস্থার মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছেন।

English version

Discuss the role of Montserri in the education world.

 Answer:

  Introduction: Madam Maria Montesri is one of the brightest astrologers in the world of education.  He was a doctor by profession.  At the core of his motivation was a serviceable attitude.  The main purpose of his life was to achieve the overall well-being of man.  He realized that ignorance of man was the cause of all the disasters in his life.  So in order to improve the people overall, he needed proper education, it was his belief in life.  In line with this belief in life, he spends most of his life writing policies and procedures for child education.

       Mantisari's contribution to education:

  Learning Objective: Montserri believed that every child was born with his own unique qualities and abilities.  According to him, it is religious to develop the child's innate traits and abilities.  Each child will develop from his or her own individuality.  The goal of education will be to help every child develop self-development.  That is to say, according to Montserri's teaching, education is the process of development and its purpose is to introduce the individual to the individual's life.

 Curriculum: Montessori only presented his commentary on the child's education curriculum.  In the regular curriculum, he tells the children to keep writing, reading and math in three subjects.  He also emphasized on developing certain habits and skills necessary for life.  He said that the habits and skills of how to take care of your body, how to clean your house, how to keep your clothes clean, etc.  He also mentioned some age-appropriate exercises to help with physical development in childhood.

 Teaching Methods: The teaching method introduced by the Montessori is known as the Montessori Method.  This method is based on three principles.  Firstly, the sense refinement and the principle;  Secondly, the principle of activism or self-education;  And thirdly, the principle of independence.

 Montesari says children's senses are responsible for their mental development.  It is through the senses that we acquire knowledge from the outside world.  Therefore, in order to properly teach a child, one must first educate his or her senses.  This principle is called sense refinement.  For this purpose he made a variety of materials.  These are called Didactic Apparatus, with the help of which children can easily distinguish between different stimuli and react.  Montesari, like his predecessors, emphasized the child's self-interest in learning.  Deductive apparatuses invented by students to learn what they were trying to do, so that students were eliminated in error.  In this way, he called the process of self-learning self-learning.  On the other hand, freedom is needed to give students the opportunity to learn for themselves.  That is why Montesari has accepted independence as a worthy medium of education.

 The Montessori teaching system was generally designed to educate children for up to six years.  In this way, there are three aspects of practice in the curriculum.

 In the first place, children are taught tasks like cutting, nailing, brushing their teeth, cleaning their house, etc.  This kind of work helps them develop their physical development on the one hand, and on the other hand they are introduced to the direct activities of life.

 Secondly, Montsari arranges for the training of children's senses with the help of Didactic Apparatus in his method.  Children of different sizes, such as pieces of paper, furniture, different types of coins, pencils, wools of different colors, boxes, bells, cube, etc. are given ideas about the size, volume, color, weight, etc. of the children.

 Thirdly, there are specialized systems for teaching formal writing, reading and mathematics.

 Teacher's idea: In the monastic system, children are given free freedom and emphasis is placed on their self-learning.  Therefore, the role of the educator in this method is also special.  Her main responsibility is to guide the child's learning efforts in the prescribed way.  Montessori describes the essential qualities of her teacher - "Virtues and not words are the main qualifications of the teacher. She must be a scientist, a doctor and completely religious."  That is, the teacher should have the kind of human qualities needed to help the children in the overall direction.

 Comment: Montserri's education has influenced the modern education system in many ways.  In particular, the method introduced by him has taken a permanent seat in the education of children in modern times.  However, the most significant contribution to his education is the introduction of a person-centered education system.  He said each child should be monitored individually and if necessary, the education system should be administered separately.  For this reason, many people think that Montserri has played the death knell for the classroom education system.
Read More