Showing posts with label Sociology. Show all posts
Showing posts with label Sociology. Show all posts

Wednesday, 14 July 2021

সমাজ দর্শন: ধর্মের মার্কসীয় ব্যাখ্যা দাও।

Leave a Comment

 প্রশ্ন  “ধর্ম জনগণের আফিম” —এই উক্তিটি ব্যাখ্যা কর ও বিচার কর। এই প্রসঙ্গে ধর্ম জনজীবনের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত তা আলােচনা কর।

 অথবা, ধর্মের মার্কসীয় ব্যাখ্যা দাও।

 অথবা, ধর্মের সামাজিক ভূমিকা আলােচনা কর। 

( “Religion is the opium of People" — Explain and examine this statement. Show how religion is related to social life.) 

উত্তর“ধর্ম জনগণের আফিম" - এই উক্তিটি জার্মান দার্শনিক ও সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্কস - এর। তিনি মনে করেন, ধর্ম হল আফিম সেবনের অনুরূপ। আফিম সেবনে মানুষ যেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তার চিন্তাশক্তি যেমন স্তিমিত হয়ে যায়, সেইরূপ ধর্মের বাণীও মানুষকে নিস্তেজ করে দেয়, তার বিচারশক্তি হারিয়ে যায়। ধর্ম তার সত্য উপলব্ধির প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। 

ধর্ম যেন মুখােস, যা পরিধান করে শাসক তার শোষণ নীতি অব্যাহত রাখে। দরিদ্র জনগণকে নিপীড়নের জন্য সুবিধাবাদী শাসকগণ ঈশ্বরের কল্পনা করে। অসহায় দুর্বল মানুষকে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব কল্পনা করতে বাধ্য করা হয়। পুরােহিতদের মাধ্যমে তাদের বােঝান হয় যে ইহজীবনের দুঃখকষ্ট তাদের কর্মফল, তাই ঈশ্বরের অভিপ্রেত। প্রতিবাদ না করে তারা যদি দুঃখ - কষ্ট মেনে নেয় তবে পরজীবনে ঈশ্বর তাদের পুরস্কৃত করবেন। 

ধর্মের প্রথম কথা হল মিথ্যা। ধর্ম নিপীড়নের হাতিয়ার। শাসকশ্রেণী অবাধে যাতে সর্বহারাদের শােষণ করতে পারে তারজন্য ধর্মকে তারা হাতিয়াররূপে গ্রহণ করে। ধর্মের মূলে আছে শোষণের গােপন পরিকল্পনা, ধনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার এক অভিনব কৌশল। ধর্মের বাণী শােষিতদের নিস্তেজ করে দেয়, শােষকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণী - সংঘাত অনিবার্য। পুঁজিবাদীদের কাছে ধর্ম হয়ে ওঠে শ্রেণী - সংগ্রামের অন্যতম হাতিয়ার। এমন একদিন আসবে যখন এই শ্রেণী - সংগ্রামের অবসান হবে, নিপীড়িত জনগণ জয়ী হবে। ধর্মও সেদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। 

 সমালোচনা: বিভিন্ন কারণে ধর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় অভিমত গ্রহণ করা যায় না। সমাজ - জীবনের উপর ধর্মের প্রভাব খুবই স্পষ্ট। ধর্ম সমাজ - সংহতির সহায়ক। মানুষকে মানুষের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা ধর্মের প্রধান সামাজিক কাজ। একথা সত্য যে ধর্মের নামে সমাজে অনেক অধার্মিক বা অসামাজিক কাজ আজও ঘটছে। হিন্দু - মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত, মন্দির ধ্বংস, মসজিদ ধ্বংস প্রভৃতি কাজ আজও সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এইগুলি হল স্বার্থান্বেষী মানুষের দ্বারা ধর্মের অপপ্রয়ােগ। এর জন্য ধর্মকে দায়ী করা উচিত নয়।

ধর্মের সামাজিক ভূমিকা: ধনতান্ত্রিক সমাজ - ব্যবস্থার উদ্ভবের ফলে ধর্মের উদ্ভব — একথা সত্য নয়। আদিম সমাজ ব্যবস্থায়ও ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আবার ধর্ম যে সার্বিকভাবে শােষণের হাতিয়ার একথা ঠিক নয়। উচ্চতর ধর্মে বা সর্বজনীন ধর্মে প্রেম, ভালবাসা, দয়া, প্রভৃতি মহৎ গুণগুলি প্রচার করা হয়। যথার্থ ধর্ম মানুষের আচরণকে সংযত করে, তাকে সহনশীল করে তােলে। পরস্পরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রয়ােজনে সামাজিক বা অর্থনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলে। তাছাড়া অনেক মঙ্গলজনক ক্রিয়াকর্মকে ধর্ম উৎসাহিত করে। সামাজিক উন্নতি, সংস্কার, বিপ্লব প্রভৃতি মানুষের ধর্মীয় চেতনার জন্য ঘটে থাকে। সুতরাং সমাজ - জীবনে ধর্মের প্রয়ােজন নেই, একথা ঠিক নয় । ধর্মের মাধ্যমে বিশ্বশান্তির বাণী বিবেকানন্দ প্রচার করেছেন। সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য মানুষ ধর্মকে অলৌকিকতার সঙ্গে যুক্ত করে, ধর্মের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারে না। যথার্থ ধর্ম মানুষকে উদার করে, তাকে নৈতিক শক্তি যােগায়। 

মার্কসবাদীদের ধর্মবিমুখতার অন্যতম কারণ হল তাদের জড়বাদী দৃষ্টিভঙ্গী। জড়বাদ অনুসারে জড় একমাত্র জগতের উপাদান, চেতনা জড়ের এক বিশেষ অবস্থা। কতকগুলি রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণের ফলে প্রাণের উদ্ভব। জগৎ স্রষ্টারূপে ঈশ্বরের কল্পনা নিরর্থক । কিন্তু জড়বাদ একমাত্র দার্শনিক মতবাদ নয়। হেগেলীয় দ্বন্দ্ববাদের মার্কসীয় ব্যাখ্যা সর্বজনস্বীকৃত নয়।

<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>

Read More

Friday, 8 January 2021

সমাজবিদ্যার একটি প্রশ্ন ও উত্তর

Leave a Comment

 প্রশ্ন : সংস্কৃতি কাকে বলে? সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।

 উত্তর: 

 সংস্কৃতির সংজ্ঞা (Definition) : এডওয়ার্ড টাইলরের মতে, সংস্কৃতি বলতে বােঝায় মানুষের জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নৈতিকতা, আইন, প্রথা ইত্যাদির জটিল মিলন এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে তার দক্ষতা ও অভ্যাস যেটা সে সমাজের সদস্য হিসেবেও আয়ত্ত করে। 

পিটার ওর্সলের ( Peter Worsley ) মতে, সংস্কৃতি বলতে বােঝায় সামাজিক উৎপাদন ও সম্পদ যা শিক্ষার দ্বারা একটি প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।

বায়ারস্টেড ( Bierstedt) এর মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জটিল সমন্বয় যা সমাজের সদস্য হিসেবে একজন মানুষ চিন্তা করে, কোন কিছু করে এবং যা তাদের থাকে।

সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কুলী, এনজেল ও কার ( Cooley, Angel and  Car ) বলেন, একত্রে বাস করার সঠিক ফলশ্রুতি যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত- তাই হচ্ছে সংস্কৃতি। সমাজতাত্ত্বিক রস বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে সামগ্রিকভাবে মানুষের অর্জিত আচরণ পদ্ধতি যা অনুকরণ অথবা নির্দেশনায় মাধ্যমে বর্তায়। প্রখ্যাত সমাজ নৃ-তাত্ত্বিক মালিনাউস্কির (Malinowski) মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে মানব সৃষ্ট এমন কৌশল বা উপায় যার মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে।

 রালফ্ লিনটন ( Ralph Linton ) সংস্কৃতির একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন-- সংস্কৃতি হচ্ছে মানব আচরণের সামাজিক রূপ যা মানুষ কোনও সমাজে বয়স্কদের থেকে গ্রহণ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মে তা বাহিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে একটি কুঠার মানুষের তৈরি জিনিস বলে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই হাতিয়ারটি তার কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সংস্কৃতি মানুষের সৃষ্টি জিনিসের চেয়ে বরং জিনিসগুলির উপযােগিতা ও ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। 

প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে কোয়েনিগ (Koening) সংস্কৃতির সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন। তার মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সার্বিক প্রচেষ্টার ফল যা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে জীবনপ্রণালীকে উন্নত করে। মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা যে কোন অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। বেঁচে থাকার প্রয়ােজনীয় বস্তুণ্ডলির চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মানুষ নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে, সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যাকে এক কথায় সংস্কৃতি বলা যায়। 

 সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ :

 ১। সংস্কৃতি হল মানুষের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জীবনযাপনের ধারার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা। মনুষ্যেতর প্রাণীর পক্ষে কোন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে তােলা সম্ভব নয়। সংস্কৃতিবিহীন মানবসমাজের কথা কল্পনা করা যায় না।

 ২। সংস্কৃতি সহজাত নয়। অভিজ্ঞতা, অনুশীলন ও চর্চার মাধ্যমে সংস্কৃতিকে রপ্ত করতে হয়। সংস্কৃতি আহরণের এই প্রক্রিয়াকে সমাজতত্ত্বের পরিভাষায় সামাজিকীকরণ (Socialization) বলে অভিহিত করা হয়। 

৩। বস্তুগত ও অবস্থাগত উভয় উপাদানের সংমিশ্রণে সংস্কৃতি গঠিত হয়। জৈবিক, পরিবেশগত, মনস্তাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক বিভিন্ন উপাদান থেকে সংস্কৃতি গঠিত। 

৪। সংস্কৃতি সদা পরিবর্তনশীল। সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় বা একপেশে কোন বিষয় নয়। সংস্কৃতির অভিযােজনমূলক (adaptive) চরিত্র পরিবর্তনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জ্ঞান - বিজ্ঞানের উন্নতি, রাষ্ট্রের কার্যাবলীর ব্যাপকতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানে (quality of life) পরিবর্তন সংঘটিত হওয়ার জন্য মানব সংস্কৃতিরও পরিবর্তন ঘটে । 

৫। সংস্কৃতি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত শিক্ষা বা অনুশীলনের বিষয় নয়। সমাজের সদস্য হিসেবেই মানুষ সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে সংস্কৃতি হল যৌথ এবং অংশীদারমূলক ( shared )।

 ৬। সংস্কৃতি শূন্যে অবস্থান করে না। সংস্কৃতি হচ্ছে কাঠামােভিত্তিক।  কাঠামােভিত্তিক রূপের মাধ্যমে সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটে। সংস্কৃতির এই  রূপটি বস্তুগত বা অবস্তুগত উভয় ধরনেরই হতে পারে।

৭। সংস্কৃতি সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি, শুধু মানুষই সংস্কৃতির অধিকারী। সংস্কৃতি সামাজিক অবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও। 

৮। সামাজিক অবস্থা ভেদে সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য যেমন আছে, তেমনি সাদৃশ্যও আছে। মানুষের ধ্যান - ধারণা, আচার - আচরণ ও সংগঠনের মাধ্যমে প্রকাশিত সংস্কৃতি সর্বযুগে ও সব জায়গায় এক রকম হয় না। 

৯। সংস্কৃতির মধ্যে যেমন আদান - প্রদান হয় আবার এর মধ্যে দ্বন্দ্বও দেখা যায়। 

১০৷ মানব সংস্কৃতির বৈচিত্র্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আচার - আচরণ এক সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতিতে ভিন্ন। যেমন ইউরােপিয়ান সমাজে যে আচরণগুলিকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় অন্য সমাজে অনেক সময় তা স্বাভাবিক বলে নাও ভাবা হতে পারে। প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব আচরণের ধারা আছে যা অন্য সংস্কৃতি থেকে অনেকাংশে আলাদা। 

<<<<<<<<<<<The End >>>>>>>>>>>>

Read More

Sunday, 10 June 2018

৯। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্নোত্তর

Leave a Comment
 প্রশ্ন: গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য নির্নয় করা। 
উঃ
 গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য:

     ১)  নগর সমাজ বলতে এমন স্থানকে বোঝানো হয়, যেখানে অধিকাংশ মানুষ অকৃষিজ পেশায় জড়িত এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। অপরদিকে, কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে যে মানববসতি গড়ে ওঠে, তা-ই গ্রামীণ সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। 

     ২) গ্রামের মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকে নগরের মানুষের চেয়ে কম সম্পদশালী। নগরের একটি অংশ উচ্চবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। বাকি একটি অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কিন্তু গ্রামে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
 নগরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন দিকে যেমন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, গ্রামীণ জীবনে তা নেই।

      ৩) নগরজীবন অনেকটা প্রযুক্তিনির্ভর ও উন্নত কিন্তু গ্রামে প্রযুক্তির ব্যবহার কম।

    ৪) প্রথাগত সম্পর্কই গ্রামীণ সমাজের ভিত্তি। অন্যদিকে, নগর মানুষের মধ্যে মূলত যৌক্তিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

    ৫) গ্রামে ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবার দেখা গেলেও শহরে এ ধরনের পরিবারের পরিবর্তে অণু পরিবার দেখা যায়।

  ৬) গ্রামে বিবাহবিচ্ছেদ কম হলেও শহরে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশি। 

    ৭) গ্রামের মানুষ নগরের মানুষের তুলনায় ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ, গ্রামীণ জীবনে ধর্মের প্রভাব অত্যধিক। কিন্তু নগরজীবনে এর প্রভাব কম।

     ৮) গ্ৰামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু শহরে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিমালিকানাধীন বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য রয়েছে।

    সার্বিকভাবে বললে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, ঘরবাড়ি, আসবাব, চিত্ত-বিনোদন প্রভৃতি ক্ষেত্রেও গ্রাম ও নগর জীবনে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
                            <<<<<>>>>>
Read More

৮। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর

Leave a Comment
প্রশ্ন: ভারতীয় নগর সমাজে মিউনিসিপ্যালিটির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উঃ
      নগর সমাজ: কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও নানা বৃত্তির মানুষ যখন পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একত্রে বসবাস করি এবং সেই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসার ঘটে ও জনবসতির বিস্তার ঘটে তখন সেটিকে বলা হয় নগর সমাজ।

       ভারতীয় নগর সমাজে মিউনিসিপ্যালিটির ভূমিকা: ভারতে কয়েকটি ছোট নগরে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যালিটির দ্বারা পরিচালিত হয়। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্থানীয় সমস্যা সমাধানে পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যালিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যম। নিম্নে এর কার্যাবলি বর্ণনা করা হলো---

     বাধ্যতামূলক কার্যাবলী: পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি পৌরসভার বাধ্যতামূলক আজ হলো প্রশাসনিক উন্নয়নমূলক জনস্বার্থমূলক এবং জনকল্যাণমূলক। পৌরসভার বাধ্যতামূলক কাজের তালিকায় 49 টি বিষয়ে আছে। যেমন-- রাস্তায় আলো লাগানো, জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, পার্ক ও উদ্যান গড়ে তোলা, বৃক্ষরোপণ, বস্তি অঞ্চলের রাস্তা সংস্কার, ব্যাধি প্রতিরোধ, জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রক্ষা, ঐতিহাসিক ক্ষেত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি।

      স্বেচ্ছাধীন কার্যাবলী: পৌরসভার স্বেচ্ছাধীন কাজের তালিকায় অন্যতম বিষয় হলো --- পানীয় জল সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, দাতব্য চিকিৎসালয়, প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ, শিশু কল্যাণে ব্যবস্থা গ্রহণ, খাদ্য ও ঔষধ বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ, পাঠাগার স্থাপন, সামাজিক শিক্ষার প্রসার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ইত্যাদি।
অর্পিত কার্যাবলী: রাজ্য সরকার কিছু কাজ কর্মের দায়িত্ব পৌরসভাকে দিতে পারে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-- স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, অসামরিক প্রতিরক্ষা, খাদ্যসামগ্রী নিয়ন্ত্রণ, যুব কল্যাণ ইত্যাদি।

   উপরোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি পৌরসভায় প্রচুর অর্থের দরকার হয়। এই অর্থ নানা উপায়ে সংগৃহীত হয়। আয়ের মূল উৎস কর। জমি ও বাড়ির উপর ধার্য কর, জল সরবরাহ এবং পথঘাট আলোকিত করার ধার্য কর, যানবাহনের উপর ধার্য কর, বৃত্তি ও পেশার উপর আরোপিত কর ইত্যাদি। এছাড়া পৌরসভা রাজ্য সরকার থেকে ঋণ পেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেক পৌরসভাকে অজস্র দায়িত্ব পালন করতে হয়।
                        <<<<<>>>>>
Read More

Friday, 8 June 2018

৭। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্নোত্তর

Leave a Comment
শিল্প সামাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

উঃ শিল্প সমাজ: শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাঠামোতেও আসে পরিবর্তন। নতুন কলেবরে গড়ে ওঠে মানবসমাজ। এটাই শিল্প সমাজ বলে পরিচিত। 

     বৈশিষ্ট্য: শিল্প সমাজের কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন---

     (১) শিল্প সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বড় আকারের কলকারখানা, নতুন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। সাবেকি পরিবারকেন্দ্রিক শিল্পের পরিবর্তে শিল্প সমাজে গড়ে তোলা হলো বৃহদায়তন কল-কারখানা।

   (২) বৃহদায়তন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে মালিকানা ও পরিচালন গোষ্ঠী আলাদা। শেয়ার বিক্রয় করে মূলধন জোগাড় করা হয়। শেয়ার ক্রেতাদের নিয়েই গড়ে ওঠে কলকারখানার মালিক গোষ্ঠী। শিল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন পেশাদার বিশেষজ্ঞগণ। এরাঁ বেতনের বিনিময়ে পরিষেবা প্রদান করেন।

      (৩) বৃহদায়তন শিল্প কারখানায় শ্রমিক বিভাজনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এখানে শ্রমের বিশেষায়ণ ঘটে। এখানে পরিচালন ক্ষেত্রেও দায়িত্ব ভাগ হয়ে যায়।

   (৪) বৃত্তিগত বিশেষীকরণ এর জন্য শিল্পসমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন মনোভাব তৈরি হয়। গড়ে ওঠে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ। এভাবে সমাজ বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে বিভাজিত হয়ে যায়।

     (৫) নারী স্বাধীনতা শিল্প সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাক শিল্প সমাজে নারী ছিল অন্তঃপুরবাসিনী। শিল্প সমাজে কাজের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় মেয়েদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে।

                               <<<<<>>>>>
Read More

Thursday, 7 June 2018

৬। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্নোত্তর

Leave a Comment
প্রশ্ন: সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উঃ সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার পার্থক্য:

       প্রথমত, সহযোগিতা একপ্রকার সামাজিক কর্মপদ্ধতি যার দ্বারা ব্যক্তিগণ যৌথভাবে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রয়াসে সামিল হয়। অপরদিকে, প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে একতরফাভাবে অন্যকে টপকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়।

      দ্বিতীয়ত, সহযোগিতা একটি সমবেত কার্যপ্রক্রিয়া। কিন্তু প্রতিযোগিতা একক কার্যপ্রক্রিয়া।

        তৃতীয়ত, সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি নেই। কিন্তু প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকে যা প্রতিযোগীদের মানতেই হয়।

     চতুর্থত, সহযোগিতা মানুষের মনে সন্তোষ ও আত্মতৃপ্তি জাগায়। কিন্তু প্রতিযোগিতা এর পাশাপাশি হতাশা ও নৈরাশ্যের সৃষ্টি করে।

    পঞ্চমত, সহযোগিতা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে গভীর মনোভাব গড়ে তোলে। কিন্তু প্রতিযোগিতা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রেষারেষি ও মানসিক বিভাজন সৃষ্টি করে।

      ষষ্ঠত, সহযোগিতা মূলত ইতিবাচক ফল দেয়। কিন্তু প্রতিযোগিতা ইতিবাচক ফল প্রধানের সঙ্গে বেশ কিছু নেতিবাচক ফলও প্রদান করে।

        সপ্তমত, সামাজিক স্থায়িত্ব রক্ষায় সহযোগিতা খুবই জরুরী। অপরদিকে, সামাজিক পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা জরুরি।
              <<<<<>>>>>
Read More

Tuesday, 5 June 2018

৫। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
প্রশ্নজাতি এবং শ্রেণীর তুলনামূলক আলোচনা কর।
উঃ
         সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতি উভয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা---

      প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল, কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্নস্তরভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তরভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারকে অনুসরণ করি তাহলে সে ক্রমশই উচ্চস্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাব এর জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নতি হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয়না। তাই, সামাজিক শ্রেণী সচল, কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল।

       দ্বিতীয়ত, জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতিবিবাহ স্বাস্থ্যসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। কিন্তু সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক রীতি-বিরুদ্ধ নয়।

         তৃতীয়ত, জাতিভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়।শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। 

       এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
                               <<<<<>>>>>
Read More

৪। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
 সমাজতত্ত্ব ও দর্শনের সম্পর্ক লেখ।              5 নম্বর
উঃ
 সমাজতত্ত্ব ও দর্শনের সম্পর্ক: সমাজতত্ত্ব ও দর্শনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।

      প্রথমত, সমাজতত্ত্বের আলোচনার একমাত্র বিষয়বস্তু সমাজে বসবাসকারী মানুষ ও সমাজ। দর্শন অনুরূপভাবে সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন-- এর উদ্দেশ্য কি? সমাজ ও ব্যক্তির সম্পর্ক কি? প্রভৃতি উত্তর খুঁজতে সমাজের দার্শনিক আলোচনায় সচেষ্ট।

      দ্বিতীয়ত, সমাজতত্ত্ব হল সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক আচার-আচরণের বিজ্ঞান। অনুরূপভাবে সমাজের দার্শনিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দর্শনেও সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে মানুষের আচরণের তাৎপর্য বিচার করা হয়।

         তৃতীয়ত, মানুষের নানাবিধ ও জাগতিক কর্মকাণ্ড সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়বস্তু; এগুলিকে ব্যক্তির মনোজগতের বাহ্যিক প্রকাশ হিসেবে মনে করা হয়। তাই ব্যক্তির মনের পর্যালোচনাও সমাজতত্ত্বের আলোচনায় এসে যায়। একইভাবে বিশ্বদর্শন হিসাবে দর্শনের আলোচনাতেও ব্যক্তির মন কে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

       চতুর্থত, সমাজতত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় আলোচনার ক্ষেত্রে যেমনভাবে যুক্তি ও বুদ্ধিগ্ৰাহ্য বিচারপদ্ধতি অনুসৃত হয়, তেমনই দর্শন একই পদ্ধতিতে জগৎ ও জীবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে।
Read More

Thursday, 31 May 2018

৩। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
প্রশ্ন: লিঙ্গ-বৈষম্য বলতে কি বোঝ? সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকারভেদ হিসাবে লিঙ্গ-বৈষম্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
উঃ
  লিঙ্গ-বৈষম্য:  'কোন কর্ম, রীতিনীতি অথবা মনোভাবকে 'লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক' বলা হবে যদি ওইসব যুক্তিহীনভাবে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে এবং অপ্রাসঙ্গিক পার্থক্যের উপর নির্ভর করে তাদের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করে, তাদের শোষণ করে।' তাহলে ''লিঙ্গ-বৈষম্যবাদী' বলতে তাদের বোঝানো হয় যারা মনে করে যে, সমাজের নারী এবং পুরুষকে কেন্দ্র করে যে বৈষম্যমূলক মনোভাব, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ইত্যাদি প্রচলিত আছে তার সঙ্গত এবং সমর্থনযোগ্য।

      বর্তমান সমাজে লিঙ্গ-বৈষম্য: বর্তমান মানবসমাজে সব দেশেই লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক মনোভাব অল্পবিস্তর লক্ষ্য করা যায়। এই বৈষম্যমূলক মনোভাবের জন্য আমরা সাধারনত মনে করি যে পরিসেবা(nurse) করলে সে নারী হবে, ডাক্তার হলে সে পুরুষ; ঘর মোছা, বাসন মাজার লোক হলে সে নারী হবে, মিস্ত্রী হলে পুরুষ হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও এই বৈষম্য স্পষ্ট হয়; মেয়েদের বোধ সামর্থ্য ছেলেদের অপেক্ষা বেশি; ছেলেদের দেশ-প্রত্যক্ষণ সামর্থ্য মেয়েদের অপেক্ষা বেশি। এর থেকে আমাদের ধারণা মেয়েদের পাঠ্যবিষয় হবে মনস্তত্ত্ব, সাহিত্য, রন্ধনশিল্প ইত্যাদি। আর ছেলেদের পাঠ্যবিষয় হবে যন্ত্রশিল্প, প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি। মেয়েরা অন্তর্মুখী, ছেলেরা বহির্মুখী এবং আক্রমণপ্রবণ। মেয়েরা প্রসাধন বিলাসী, ছেলেরা প্রসাধন বিমুখ ইত্যাদি।

     কেশ-বিন্যাস, বেশভূষা, চলা-বলা ও বসার ভঙ্গি দেখেই আমরা নারী ও পুরুষের মধ্যে সহজেই পার্থক্য করতে পারি। সমাজ অনুমোদিত এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে কেউ অনুসরণ না করলে আমরা তা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারিনা, কখনো ঠাট্টা-বিদ্রুপ করি, আবার কখনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করি। যেকোনো সভ্যসমাজে কোন স্ত্রী লোক পুরুষের পোশাকে বাইরে চলাফেরা করলে অপরের উপহাসের পাত্র হয় এবং কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীলোকের পোশাকে চলাফেরা করে তাহলে সে কেবল উপহাসের বিষয় হয় না, শাস্তিযোগ্য অপরাধরূপেও গণ্য করা হয়।

        লিঙ্গ-বৈষম্য অনুসারে এপ্রকার বেশ-বাসের বৈষম্যের জন্য অনেক সময় আবার আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখা দেয় যা পুরুষের কাছে অনুকূল হলেও স্ত্রীলোকের কাছে প্রতিকূল। পোশাকের ধরন ও চলন ভঙ্গি দেখেই যেখানে নারী অথবা পুরুষ চিহ্নিত করা যায় সেখানে গভীর রাতে একাকী বাড়ি ফেরার সময় কোন স্ত্রীলোকের পোশাক ও চলন ভঙ্গি হবে বিপদের কারণ --- তাকে পুরুষ অপেক্ষা বেশি অসহায় ও দুর্বল জেনে দুষ্কৃতীরা স্বভাবতই আক্রমণ করে।

       সমাজের অপরাপর অনেক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যবস্থার লক্ষ্য করা যায়। কোন আলোচনাচক্রে, যথা-- ব্যবসায়িক সভা-সমিতিতে স্ত্রীলোকের অভিমত অপেক্ষা পুরুষের অভিমতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সাধারণভাবে, পুরুষকে শক্তিমান রূপে এবং স্ত্রীলোককে অপেক্ষাকৃত দুর্বল রূপে গণ্য করা হয় এবং মনে করা হয় যে পুরুষের কাজ মূলত অর্থ উপার্জন, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ ইত্যাদি, আর স্ত্রী লোকের কাজ মূলত সন্তানের পরিচর্যা ও গৃহকর্ম। পুরুষের কাছে পরিবার অপেক্ষা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ বেশি কাম্য হবে, আর স্ত্রীলোকের কাছে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ অপেক্ষা তার পরিবার পরিচর্যা বেশি কাম্য হবে। আমাদের ব্যবহৃত ভাষাতেও এই লিঙ্গবৈষম্য পরিস্ফুট হয় --- ইংরেজিতে কোন পুরুষের পৌরুষ থাকলে বলি " He Man", আর স্ত্রীলোকের বলি "She"। সব ভাষাতেই সর্বনাম প্রয়োগের ক্ষেত্রে অথবা বিশেষণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকাশ পায়। যেমন- বাংলায় পুরুষকে বলি 'সুন্দর' স্ত্রীলোককে বলি 'সুন্দরী'।
কাজেই বর্তমান মানব সমাজে লিঙ্গ-বৈষম্য মূলক ব্যবস্থাদি যে এক বাস্তব ঘটনা, এটা অস্বীকার করা যায় না।

    লিঙ্গ-বৈষম্যের উৎস: লিঙ্গ-বৈষম্যের উৎস কি?  প্রশ্নটি বিতর্কিত। 

   উদারপন্থীদের  মত: লিঙ্গ-বৈষম্যের মূলে মানুষের জন্মগতি নয়, তাহলো সামাজিক পরিবেশ। নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য করা হয় তা স্বভাবগত নয়, তা নেহাৎই কৃত্রিম, সমাজের সৃষ্টি। নারী ও পুরুষের মধ্যে যেখানে স্বভাবগত কোন প্রভেদ নেই সেখানে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য নৈতিক দিক থেকে অন্যায়, নৈতিক অপরাধ।

    রক্ষণশীলদের মত: লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকৃতিদত্ত, স্বভাবজ; কাজেই বৈষম্যমূলক মনোভাব, রীতিনীতি বা আচার-আচরণ অন্যায় বা অনুচিত নয়।
                                   <<<<<>>>>>
Read More

Friday, 18 May 2018

২। সমাজবিদ্যার(Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
  প্রশ্ন: সামাজিক শ্রেণী এবং জাতি বা বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।           ১৫ নম্বর
     OR, সামাজিক শ্রেণী ও বর্ণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উঃ   সামাজিক শ্রেণী: সামাজিক শ্রেণী প্রসঙ্গে গিন্সবার্গ বলেন, " সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায়, সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন অংশ বা জনগোষ্ঠীকে যারা সমতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমাজস্বীকৃত উঁচু-নিচু মানদণ্ডের দ্বারা এক জনগোষ্ঠি অপরাপর জনগোষ্ঠি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে"। ম্যাকাইভার ও পেজ্ বলেন, "সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায় সম্প্রদায়ের এমন এক খন্ডাংশ যা মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র। সামাজিক শ্রেণী প্রথমত, মর্যাদা অনুসারে উঁচু-নিচুভাবে অবস্থান করে; দ্বিতীয়ত, শ্রেণীর মর্যাদা সমাজস্বীকৃত হয় এবং শ্রেণী সদস্যরা ওই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকে; তৃতীয়ত, সামাজিক শ্রেণীর সাংগঠনিক স্থায়িত্ব থাকে"। প্রত্যেক শ্রেণীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক শ্রেণি- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না;  তবে প্রত্যেক শ্রেণি অন্য শ্রেণী থেকে উচ্চতর ভাবে বা নিম্নতর ভাবে সম্বন্ধের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থান করে।

   জাতি বা বর্ণ: স্যার এডওয়ার্ড ব্লাস্ট তাঁর 'Social Service in India' নামক নিবন্ধ সংকলন গ্রন্থে বলেছেন, 'জাতি হচ্ছে এমন এক জনগোষ্ঠি যাদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রথা প্রচলিত, যারা বংশপরম্পরায় এক সাধারণ পদবী গ্রহণ করে, যারা সামাজিক আচার আচরণের ক্ষেত্রে কতগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে, যারা গতানুগতিকভাবে পূর্বপুরুষের বৃত্তি গ্রহণ করে এবং যারা মনে করে যে তাদের আদি পূর্বপুরুষ একই ব্যক্তি এবং এভাবে যারা এক সুসংহত গোষ্ঠী জীবনে বসবাস করে।' জাতি এবং জাতিভেদ প্রথা কেবলমাত্র ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় -- ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে, এমনকি ভারতের বাইরে অনেক হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রথার প্রচলন আছে। প্রাচীনকালের মিশর জাপান প্রভৃতি দেশেও যে এই প্রথার প্রচলন ছিল, ইতিহাসে তার অনেক নজির পাওয়া যায়। বর্তমানে মাসাইদের মধ্যে, পূর্ব-হর্নের সোমালীদের মধ্যে, পলিনেশীয়দের মধ্যে, বর্মীদের মধ্যে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। তবে, জাতি ও জাতিভেদ প্রথা বলতে বিশেষ করে ভারতীয়দের এবং আরো বিশেষ করে ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সামাজিক শ্রেণীভেদ প্রথাকেই বোঝানো হয়, কেননা ভারতীয় সমাজে এই প্রথা অতিপ্রাচীন এবং সুপ্রাচীন হওয়ায় এই প্রথা ভারতীয় জনজীবনে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।
       জাত- ব্যবস্থা জন্ম ভিত্তিক। ব্যক্তি যে জাতে জন্মগ্রহণ করে সে জাতির সদস্য হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করে। প্রত্যেক জাতভুক্ত ব্যক্তিকে সেই জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। প্রত্যেকটি জাতির একটি পেশা বা বৃত্তি নির্দিষ্ট থাকে।

   সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতীয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা ----
  
    প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্ন স্তর ভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারা কে অনুসরণ করে, তাহলে সে ক্রমশই উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাবের জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নীত হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলে এই প্রথাকে নিশ্চল বলাই সঙ্গত।

    দ্বিতীয়ত,  জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতি বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।

    তৃতীয়ত, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
                            <<<<<>>>>>
Read More

Thursday, 10 May 2018

১। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

1 comment
 প্রশ্ন: সামাজিক গোষ্ঠী বলতে কী বোঝো? এর প্রকৃতি আলোচনা কর। সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর:
       সামাজিক গোষ্ঠী এবং তার স্বরূপ: কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগবদ্ধ জনসমষ্টিকে সামাজিক গোষ্ঠী বলা হয়। এ প্রসঙ্গে গিসবার্ট বলেন,  সামাজিক গোষ্ঠী হলো জনসমষ্টি, যাঁরা একটি স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে পরস্পরের উপর কার্য করে। যেমন পরিবার, ক্লাব বা কোন রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।

     ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, "গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।"

       অবশ্য কতগুলি ব্যক্তির সমষ্টি মাত্রকেই গোষ্ঠী বলা যায়না। সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে এই জাতীয় সমষ্টির সঙ্গে কোন দ্রব্যের সমষ্টির তফাৎ নেই; কারণ গোষ্ঠীর সভ্যদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক নেই।
সামাজিক গোষ্ঠীর কোন প্রকার অস্তিত্ব থাকে না যদি না ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। সামাজিক গোষ্ঠী আবির্ভাব তখনি হয় যখন সামগ্রীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুস্পষ্ট সামাজিক সম্পর্ক থাকে এবং কোন একটা স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে কোনো সাধারণ স্বার্থ বা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের উপর কার্য করে। মানসিক, সামাজিক, ঐক্য এবং যান্ত্রিক সমষ্টি থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হলো সামাজিক গোষ্ঠী।

      সামাজিক গোষ্ঠী এবং সমাজ এক নয়, কারণ যেকোনো সামাজিক গোষ্ঠীই সমাজ নয়। এছাড়া সামাজিক গোষ্ঠী অপেক্ষা সমাজ অনেক কম স্থায়ী।
আবার আপাত গোষ্ঠীকে সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে এক করে ফেললে ভুল হবে। আপাত গোষ্ঠীর কোনো স্বীকৃত সংগঠন নেই, কিন্তু সামাজিক গোষ্ঠীর একটি স্বীকৃত সংগঠন আছে। এটা স্বীকার করতেই হয় যে, আপাত গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বর্তমান। উদাহরণস্বরূপ, 1 ওই দলের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো জনসমষ্টি, যাদের উদ্দেশ্য একসঙ্গে মিলেমিশে হরিনাম করা--কিন্তু এদের নির্দিষ্ট কোন সংগঠন নেই। একই ব্যবসায়ে নিযুক্ত যে জনসমষ্টি, যাদের পেশাগত উদ্দেশ্য এক কিন্তু তাদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন নেই।
অবশ্য এইসব গোষ্ঠী যদি সংগঠনের মাধ্যমে নিজেকে সংগঠিত করে তবে আপাত গোষ্ঠী সামাজিক গোষ্ঠী তে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

           সামাজিক গোষ্ঠী কিভাবে সৃষ্টি হয়?

         এর উত্তরে বলা যায় যে, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে একটি দৃঢ় সংগঠনের দ্বারা নিজেদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, এর মাধ্যমেই সামাজিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে।

    সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে  সামাজিক গোষ্ঠীগুলির শ্রেণীবিভাগ করা হয়। কয়েকটি মুখ্য বিভাগের উল্লেখ করা হলো--

     ১। সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে সমাজতাত্ত্বিক কুলি দুই প্রকার সামাজিক গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন। যথা-

   (ক) প্রাথমিক গোষ্ঠী বা মুখ্য গোষ্ঠী: যখন সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষ এবং গভীর হয় এবং মুখোমুখি সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তরঙ্গ 'আমরা' অনুভূতির প্রকাশ পায়, তখন তাকে প্রাথমিক গোষ্ঠী বলে।  যেমন - পরিবার।

   (খ) গৌণ গোষ্ঠী বা মাধ্যমিক গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরোক্ষ বা গৌণ হলে, তখন তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। যেমন- রাজনৈতিক দল, ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক, বিদ্যালয় ইত্যাদি।

  ২। সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

   (ক) অন্তর্গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা রয়েছে, সেই গোষ্ঠীকে বলা হয় অন্তর্গোষ্ঠী। যেমন- পরিবার, ছেলেদের অথবা মেয়েদের দল অন্তর্গোষ্ঠী।

      (খ) বহির্গোষ্ঠী: ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যে গোষ্ঠী সম্পর্কে সে বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করে, ব্যক্তির কাছে সেই গোষ্ঠী বহির্গোষ্ঠী। যেমন- এক পরিবারের সদস্যদের কাছে অন্য পরিবার, ছেলেদের দলের কাছে মেয়েদের দল বহির্গোষ্ঠী।

     ৩। স্থায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে: স্থায়িত্বের স্তর অনুসারে গিসবার্ট চার প্রকার গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন।  যথা-

          (ক) অস্থায়ী গোষ্ঠী: এই সমস্ত গোষ্ঠী সংগঠনের কথা চিন্তা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভাব ঘটে। যেমন - রাস্তায় কোনো অঘটন ঘটলে কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখানে মিলিত হয় আবার কিছু সময় পরে তারা নিজ নিজ গন্তব্য পথে চলে যায়। এ প্রকার গোষ্ঠীকেই বলা হয় অস্থায়ী গোষ্ঠী।

         (খ) স্বল্পকাল স্থায়ী গোষ্ঠী: সংগঠনের দ্বিতীয় স্তরে দেখা যায় এমন এক গোষ্ঠী যার সদস্যরা পূর্বে থেকে চিন্তা করে দলবদ্ধ হয়। যেমন- ছাত্র সংসদ।

      (গ) দীর্ঘকাল স্থায়ী গোষ্ঠী:  এই গোষ্ঠীর উৎপত্তি সদস্যদের ইচ্ছাধীন নয়, তা নির্ভর করে সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের ওপর। যেমন- শ্রমিক সংসদ, শিক্ষক সমিতি।
(ঘ) চিরস্থায়ী গোষ্ঠী: চতুর্থ স্তরে এক বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী দেখা যায় যা চিরস্থায়ী গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এদের অস্তিত্ব অঘঠন ছাড়া (যেমন ভূমিকম্প, মহামারী, রাষ্ট্রবিপ্লব ইত্যাদি) বিঘ্নিত হয় না। যেমন- রাস্ট্র, গ্রাম সমাজ ইত্যাদি।

    ৪। কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে: কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

        (ক) বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর সদস্যরা যখন নির্দিষ্ট বা বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসরণ করে গোষ্ঠী পরিচালিত করে তখন তাকে বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী বলে। যেমন- শ্রেণিকক্ষ।

         (খ) অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের উপর গোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং সদস্যরা কাজকর্মে ও চিন্তা-ভাবনায় সকল প্রকার স্বাধীনতা ভোগ করে তাকে অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন - ফুটবল ক্লাব।


Read More

Monday, 7 May 2018

B. A part 1 Sociology (সমাজবিদ্যা) Suggestion 2018 (University of Gour Banga)

1 comment
SUGGESTION FOR 2018
B.A. part-I (University of Gour Banga)
SOCIOLOGY (General)
 Paper Code- 1- B
[New Syllabus]

Full marks :  100                  Time :   3 Hours

                              বিভাগ - ক

প্রতিটি অংশ থেকে ন্যূনতম একটি করে মোট পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও:                                 মান: 15

                                     অংশ -1

১) সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর।
২) সমাজতত্ত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।
৩) সভ্যতার সংজ্ঞা দাও। সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্য নিরূপণ কর।
৪) সম্প্রদায় বলতে কি বোঝো?  জনসম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
৫) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝো?  সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন মাধ্যম আলোচনা কর।
৬) সামাজিক দ্বন্দ্ব বলতে কি বোঝ? এর বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।

                                অংশ - 2

৭) পরিবার কাকে বলে?  উদাহরণসহ পরিবারের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
৮) সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কি বোঝ?  সামাজিক স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।
৯) বিবাহের সংজ্ঞা দাও।  উদাহরণসহ বিবাহের নিয়ম গুলি আলোচনা করো।
১০) আত্মীয়তা কাকে বলে? আত্মীয়তার ধরন বা প্রকার লেখ।
১১) সামাজিক পরিবর্তন কাকে বলে?  সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদান বা কারণগুলি আলোচনা কর।
১২) লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কি বোঝ? সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকারভেদ হিসাবে লিঙ্গবৈষম্যের সম্পর্কে  কর।

                                   অংশ - 3

১৩) গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে? গ্রামীণ সমাজের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
১৪) নগর সমাজ বলতে কি বোঝ? নগর সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
১৫) শিল্প শ্রমিক কাকে বলে? শিল্প শ্রমিক কাকে বলে সংগঠিত ও অসংগঠিত শিল্প শ্রমিকদের পার্থক্য নিরূপণ কর।
১৬) নগরায়ন বলতে কি বোঝ? নগরায়নের প্রকার গুলি আলোচনা করো।
১৭) বিশ্বায়ন কাকে বলে? বিশ্বায়নের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

                                বিভাগ - খ

                                  অংশ -1

প্রতিটি অংশ থেকে ন্যূনতম একটি করে মোট 5 টি প্রশ্নের উত্তর দাও :                                    মান : 5

১৮) লোকাচার ও লোক নীতির উপর  সংখিপ্ত টীকা লেখ।
১৯) দ্বন্দ্বের সামাজিক ভূমিকা আলোচনা কর।
২০) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিধিবদ্ধ মাধ্যম গুলি আলোচনা করো।
২১)  প্রতিষ্ঠান ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য রচনা কর।
২২) সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
২৩) সমাজতত্ত্ব ও দর্শনের সম্পর্ক আলোচনা কর।
২৪) সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে পার্থক্য লেখ।

                                   অংশ - 2

২৫) পরিবারের কার্যাবলী আলোচনা কর।
২৬) উদাহরণসহ বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
২৭) একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে?
২৮) গোত্র কাকে বলে? এর প্রকারভেদ গুলি কি কি?
২৯) 'সামাজিক বিবর্তন এবং প্রগতি বা উন্নতি' - এই ধারণা দুটির ব্যাখ্যা কর।
৩০) জাতির মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

                               অংশ - 3

৩১) গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য নিরূপণ কর।
৩২) ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে উদারীকরণের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
৩৩) ভারতে গ্রামীণ সমাজে গ্ৰামউন্নয়নের কর্মসূচির প্রভাবের মূল্যায়ন আলোচনা কর।
৩৪) ভারতীয় নগর সমাজে মিউনিসিপ্যালিটির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
৩৫) শিল্প সামাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
৩৬) নগর সমাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
৩৭) জাতীয় শ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।

বি: দ্র: [পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে  প্রতিটি অংশে  তিনটি করে প্রশ্ন থাকে।]
                          <<<<<<>>>>>>
Read More