Thursday 31 May 2018

৩। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
প্রশ্ন: লিঙ্গ-বৈষম্য বলতে কি বোঝ? সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকারভেদ হিসাবে লিঙ্গ-বৈষম্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
উঃ
  লিঙ্গ-বৈষম্য:  'কোন কর্ম, রীতিনীতি অথবা মনোভাবকে 'লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক' বলা হবে যদি ওইসব যুক্তিহীনভাবে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে এবং অপ্রাসঙ্গিক পার্থক্যের উপর নির্ভর করে তাদের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করে, তাদের শোষণ করে।' তাহলে ''লিঙ্গ-বৈষম্যবাদী' বলতে তাদের বোঝানো হয় যারা মনে করে যে, সমাজের নারী এবং পুরুষকে কেন্দ্র করে যে বৈষম্যমূলক মনোভাব, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ইত্যাদি প্রচলিত আছে তার সঙ্গত এবং সমর্থনযোগ্য।

      বর্তমান সমাজে লিঙ্গ-বৈষম্য: বর্তমান মানবসমাজে সব দেশেই লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক মনোভাব অল্পবিস্তর লক্ষ্য করা যায়। এই বৈষম্যমূলক মনোভাবের জন্য আমরা সাধারনত মনে করি যে পরিসেবা(nurse) করলে সে নারী হবে, ডাক্তার হলে সে পুরুষ; ঘর মোছা, বাসন মাজার লোক হলে সে নারী হবে, মিস্ত্রী হলে পুরুষ হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও এই বৈষম্য স্পষ্ট হয়; মেয়েদের বোধ সামর্থ্য ছেলেদের অপেক্ষা বেশি; ছেলেদের দেশ-প্রত্যক্ষণ সামর্থ্য মেয়েদের অপেক্ষা বেশি। এর থেকে আমাদের ধারণা মেয়েদের পাঠ্যবিষয় হবে মনস্তত্ত্ব, সাহিত্য, রন্ধনশিল্প ইত্যাদি। আর ছেলেদের পাঠ্যবিষয় হবে যন্ত্রশিল্প, প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি। মেয়েরা অন্তর্মুখী, ছেলেরা বহির্মুখী এবং আক্রমণপ্রবণ। মেয়েরা প্রসাধন বিলাসী, ছেলেরা প্রসাধন বিমুখ ইত্যাদি।

     কেশ-বিন্যাস, বেশভূষা, চলা-বলা ও বসার ভঙ্গি দেখেই আমরা নারী ও পুরুষের মধ্যে সহজেই পার্থক্য করতে পারি। সমাজ অনুমোদিত এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে কেউ অনুসরণ না করলে আমরা তা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারিনা, কখনো ঠাট্টা-বিদ্রুপ করি, আবার কখনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করি। যেকোনো সভ্যসমাজে কোন স্ত্রী লোক পুরুষের পোশাকে বাইরে চলাফেরা করলে অপরের উপহাসের পাত্র হয় এবং কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীলোকের পোশাকে চলাফেরা করে তাহলে সে কেবল উপহাসের বিষয় হয় না, শাস্তিযোগ্য অপরাধরূপেও গণ্য করা হয়।

        লিঙ্গ-বৈষম্য অনুসারে এপ্রকার বেশ-বাসের বৈষম্যের জন্য অনেক সময় আবার আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখা দেয় যা পুরুষের কাছে অনুকূল হলেও স্ত্রীলোকের কাছে প্রতিকূল। পোশাকের ধরন ও চলন ভঙ্গি দেখেই যেখানে নারী অথবা পুরুষ চিহ্নিত করা যায় সেখানে গভীর রাতে একাকী বাড়ি ফেরার সময় কোন স্ত্রীলোকের পোশাক ও চলন ভঙ্গি হবে বিপদের কারণ --- তাকে পুরুষ অপেক্ষা বেশি অসহায় ও দুর্বল জেনে দুষ্কৃতীরা স্বভাবতই আক্রমণ করে।

       সমাজের অপরাপর অনেক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যবস্থার লক্ষ্য করা যায়। কোন আলোচনাচক্রে, যথা-- ব্যবসায়িক সভা-সমিতিতে স্ত্রীলোকের অভিমত অপেক্ষা পুরুষের অভিমতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সাধারণভাবে, পুরুষকে শক্তিমান রূপে এবং স্ত্রীলোককে অপেক্ষাকৃত দুর্বল রূপে গণ্য করা হয় এবং মনে করা হয় যে পুরুষের কাজ মূলত অর্থ উপার্জন, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ ইত্যাদি, আর স্ত্রী লোকের কাজ মূলত সন্তানের পরিচর্যা ও গৃহকর্ম। পুরুষের কাছে পরিবার অপেক্ষা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ বেশি কাম্য হবে, আর স্ত্রীলোকের কাছে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ অপেক্ষা তার পরিবার পরিচর্যা বেশি কাম্য হবে। আমাদের ব্যবহৃত ভাষাতেও এই লিঙ্গবৈষম্য পরিস্ফুট হয় --- ইংরেজিতে কোন পুরুষের পৌরুষ থাকলে বলি " He Man", আর স্ত্রীলোকের বলি "She"। সব ভাষাতেই সর্বনাম প্রয়োগের ক্ষেত্রে অথবা বিশেষণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকাশ পায়। যেমন- বাংলায় পুরুষকে বলি 'সুন্দর' স্ত্রীলোককে বলি 'সুন্দরী'।
কাজেই বর্তমান মানব সমাজে লিঙ্গ-বৈষম্য মূলক ব্যবস্থাদি যে এক বাস্তব ঘটনা, এটা অস্বীকার করা যায় না।

    লিঙ্গ-বৈষম্যের উৎস: লিঙ্গ-বৈষম্যের উৎস কি?  প্রশ্নটি বিতর্কিত। 

   উদারপন্থীদের  মত: লিঙ্গ-বৈষম্যের মূলে মানুষের জন্মগতি নয়, তাহলো সামাজিক পরিবেশ। নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য করা হয় তা স্বভাবগত নয়, তা নেহাৎই কৃত্রিম, সমাজের সৃষ্টি। নারী ও পুরুষের মধ্যে যেখানে স্বভাবগত কোন প্রভেদ নেই সেখানে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য নৈতিক দিক থেকে অন্যায়, নৈতিক অপরাধ।

    রক্ষণশীলদের মত: লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকৃতিদত্ত, স্বভাবজ; কাজেই বৈষম্যমূলক মনোভাব, রীতিনীতি বা আচার-আচরণ অন্যায় বা অনুচিত নয়।
                                   <<<<<>>>>>
Read More

8. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond.( Class 12 of wbchse)

Leave a Comment
Question: "She had beautiful eyes- but they are of no use to her"  Who is the speaker? Whose eyes are mentioned here? When did the speaker say this? Why are the eyes useless to her?                                                                             1+1+3+1=6

Ans
         The new passenger is the speaker here.

       The girl's eyes are mentioned here.
In the course of conversation, the narrator asked the new messenger if he could tell him if the girl had kept her hair long or short.  The passenger became puzzled to hear it. However,  he said that he noticed her eyes, not her hair. Then the speaker said that her eyes were beautiful but they were of no use to her.

          The eyes are useless to the girl as she was completely blind.
                                  <<<<<>>>>>
Read More

7. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond.( Class xii of wbchse)

1 comment
Question: "I wondered if I would be able to prevent her from discovering that I was blind" -- Who is the speaker ? What did the speaker want to prevent and from whom? Why did the speaker want to prevent his identity? What did the speaker do to prevent his identity?                                                        1+1+2+2=6 Marks

Ans:
          The narrator is the speaker here.

     The narrator wanted to prevent his blindness from the girl.

      The narrator was totally blind. He thought that the girl who got in his compartment, was a sighted person. He thought if the girl could understand that he was blind, she could disregard him.  So the narrator wanted to prevent his identity from her.

     To prevent his identity the narrator planned not to get up from his seat.  Moreover, he behaved to the girl as if he was properly sighted person.
                            <<<<<>>>>
Read More

Wednesday 30 May 2018

6. Question & answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond. ( XII of wbchse)

Leave a Comment
Question: " I am tired of people telling me I have a pretty face"
_ Who said this ,to whom and when?  What did the person spoken to reply?                                                      1+1+2+2=6 Marks 

Ans:
          In the short story of Ruskin Bond, the girl said this

        She said this to the narrator in the course of the train journey.

     In the course of conversation, the narrator suddenly remarked that the girl had an interesting face.  The girl laughed pleasantly. Then she said it was nice to be told that she had an interesting face.  At that time she made the above remark.
                                     
       From the remark of the girl,  the narrator came to know that she had a pretty face. So he replied that an interesting face could also be pretty.
                                 <<<<<>>>>>
Read More

Tuesday 29 May 2018

5. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond.( xii of wbchse)

Leave a Comment
Question "she was silent"Who was silent?  When did she become silent? What guesses did the narrator make about the silence of the person spoken of?                                         1+2+3=6 Marks

Ans: In the short story of Ruskin Bond, the girl was silent.

        She became silent after hearing a discussion about the beauty of the hills of Mussoorie in October by the narrator.

         The narrator started discussing with the girl in such a way as if he was a sighted person .The narrator noticed that the girl , after listening to the description of Mussoorie, was silent . He tired to guess why the girl became silent . He guessed, perhaps his words roused some emotional feelings in the girl's mind.  He also guessed that the girl might have regarded him a romantic fool. 
Read More

Sunday 27 May 2018

4. Question and answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond.(xii of wbchse)

Leave a Comment
 Question: " Yes, October is the best time"
- Who said this and to whom? When did the speaker make this comment? Why is October the best time , according to the speaker?                                1+2+3=6 Marks. 

Answer:
            The narrator said this to the girl.
  
       The girl came to know from the narrator that he was going to Mussoorie.  She said that she loved the Hills of Mussoorie, especially in October. Then the speaker made this comment.

         According to the speaker, the hills of Mussoorie are covered with dahlias in October.  Then the sun is delicious and one can drink a little Brandy sitting in front of a log fire at night . Most of the tourists leave the hills at that times, and therefore, the roads remain quiet and deserted. So, October is the best time
Read More

Saturday 26 May 2018

3. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond.(xii of wbchse)

Leave a Comment
    Question:  Describe the departure of the girl from the train. ( প্রশ্ন: ট্রেন  থেকে মেয়েটির প্রস্থানের বর্ণনা কর। )            6 Marks

Answer:
           The girl's journey came to an end. When the train reached the girl's station at Saharanpur, she bade the narrator Goodbye and left. The narrator wanted to raise his hand and touch her hair. But the girl moved away. Only the perfume of her hair lingered where she had stood. Just then another passenger entered the compartment and the narrator asked him about the hair style of the girl. The new passenger said that he did not notice her hair. He noticed only her beautiful eyes which were of no use to her as she was completely blind.
       
     বঙ্গানুবাদ
                 মেয়েটির যাত্রা শেষ হয়ে গেল। ট্রেনটি যখন সাহারানপুরে মেয়েটির স্টেশনে পৌঁছল, তখন সে কথককে বিদায় জানালো এবং চলে গেল। কথক তার হাত তুলতে চাইল এবং তার চুল স্পর্শ করতে। কিন্তু মেয়েটি চলে গেল।  শুধু তার চুলের সুগন্ধির রেশ রয়ে গেল যেখানে সে দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখন আরেকজন যাত্রী কামরায় প্রবেশ করল এবং কথক তাকে মেয়েটির চুলের ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নতুন যাত্রী বলল যে তিনি তার চুল লক্ষ্য করেন নি। তিনি কেবল তার সুন্দর চোখ দেখেছিলেন যেগুলি তার কাছে কোন কাজের ছিল না কারণ সে ছিল সম্পূর্ণ অন্ধ। 
Read More

2. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond. (xii of wbchse)

Leave a Comment
  Question:  "She was completely blind"  -who is the speaker?  Bring out the irony revealed here.                                       1+5=  6 Marks
2. "তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ ছিল" - বক্তা কে? উদ্ধৃত লাইনটিতে যে পরিহাস প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

    Ans.   The new passenger is the speaker here.      

             The narrator was totally blind. A girl got in his train compartment at Rohana. The narrator  tried to conceal his blindness from the girl. He gave her a short description about the beauty of Mussoorie Hills.  He boldly remarked that she had an interesting face. He was amazed to hear her voice and even tried to touch her hair. The girl departed at Saharanpur. A new passenger entered the compartment. The narrator asked him if the girl had kept her hair long or short. The man answered that he had noticed her eyes, not her hair. He said that she had beautiful eyes. But they were of no use to  her. Because she was completely blind. The irony of the situation is that the narrator was trying to hide his blindness from the girl who was also blind.

বঙ্গানুবাদ:   এখানে বক্তা হলেন নতুন যাত্রীটি।

                কথক সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলেন। রোহানায় একটি মেয়ে  তার ট্রেন কামরায় উঠল। কথক মেয়েটির কাছ থেকে তার অন্ধত্ব গোপন করার চেষ্টা করল। তিনি তাকে মুসৌরি পাহাড়ের সৌন্দর্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলেন। তিনি নির্ভীকভাবে মন্তব্য করেছিলেন যে তার একটি আকর্ষণীয় মুখ ছিল। তিনি তার কণ্ঠস্বর শুনে অভিভূত হয়ে গেলেন, এমনকি তার চুল স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েটি সাহারানপুর স্টেশনে নেমে গেল। একটি নতুন যাত্রী কামরায় প্রবেশ করলেন। কথক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, মেয়েটির চুল লম্বা অথবা খাটো রেখেছে কিনা।  লোকটি উত্তর দেয় যে সে তার চোখ দুটি লক্ষ্য করেছে, তার চুল নয়। সে বলেছিল যে তার চোখদুটি সুন্দর। কিন্তু সেগুলি তার কাছে ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। কারণ সে সম্পূর্ণ অন্ধ ছিল। পরিস্থিতির পরিহাস এই যে কথক যে মেয়েটির কাছ থেকে তার অন্ধত্ব গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন সেও অন্ধ।
Read More

Friday 25 May 2018

1. Question & Answer of the story, "The Eyes Have It" written by Ruskin Bond. (XII of wbchse)

Leave a Comment
Question:  " ----then a girl got in."

(i)  At which station did the girl get in ? (ii) Who were present at the station to see the girl off?
(iii) What were their instructions for the comfort of the girl.                                                                                               (1+1+4)
1. "---- তারপর একটি মেয়ে উঠেছিল।"
(i) কোন স্টেশনে মেয়েটি  উঠেছিল?
(ii) মেয়েটিকে বিদায় জানাতে কারা স্টেশনে উপস্থিত হয়েছিলেন ?
 iii) মেয়েটির স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাদের নির্দেশাবলী কি ছিল?
Ans.
        (i)  The girl got in the train at Rohana station.

        (ii)  A couple, probably the parents of the girl, were present at the station to see the girl off.

    (iii) According to the narrator, the parents of the girl seemed very anxious about their daughter's safe journey. Because, the girl would travel alone. So, they, especially the mother instructed her as to where to keep her things. She advised her not to lean out of the windows. She also advised her how to avoid speaking to unknown passengers at the time of journey.

বঙ্গানুবাদ:
             (i) মেয়েটি রোহানা স্টেশনে  ট্রেনে উঠেছিল।
   
     (ii) একটি দম্পতি,সম্ভবত মেয়েটির বাবা-মা মেয়েটিকে বিদায় জানাতে স্টেশনটিতে উপস্থিত হয়েছিলেন।

        (iii) গল্পকারের মতে, মেয়েটির বাবা-মা তাদের মেয়েদের নিরাপদ যাত্রা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ, মেয়ে একা ভ্রমণ করবে। তাই, তারা, বিশেষতঃ মা তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কোথায় তার জিনিসপত্র রাখতে হবে।  তিনি তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন কখনো সে জানালা দিয়ে বাইরে ঝুঁকবে না। তিনি তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন যে যাত্রার সময় অজানা যাত্রীদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন কিভাবে।
Read More

Wednesday 23 May 2018

উপমা যুক্তি কাকে বলে? উপমা যুক্তির মূল্যায়নের মানদন্ডগুলি উদাহরণসহ আলোচনা কর। (Inductive Philosophy)

1 comment
প্রশ্ন: উপমা যুক্তি কাকে বলে? উপমা যুক্তি মূল্যায়নের মানদন্ডগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উঃ
        উপমা যুক্তি : দুটি বস্তুর মধ্যে কোন কোন বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ্য করে তারই ভিত্তিতে যখন উভয়ের মধ্যে অন্য কোন সাদৃশ্যের অনুমান করা হয় তখন তাকে উপমা যুক্তি বা সাদৃশ্যমূলক আরোহ অনুমান বলে।

    উদাহরণ: পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহে -- জল, মাটি, তাপ, মাধ্যাকর্ষণ ও একই ধরনের আবহাওয়ার দেখে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব দেখে যদি মঙ্গল গ্রহে উপরোক্ত সাদৃশ্যগুলির ভিত্তিতে অনুমান করি যে, সম্ভবত মঙ্গল গ্রহেও প্রাণী আছে তবে ওই যুক্তি বা অনুমানটিকে বলে উপমা যুক্তি।

           উপমা যুক্তির মূল্যায়নের মানদন্ড: উপমা যুক্তির মূল্যায়নের মানদন্ড গুলি হল--

     প্রথমত, উপমা যুক্তির আশ্রয় বাক্যে যে দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য থাকে সেই দৃষ্টান্তগুলির সংখ্যা যত বেশি  হয় সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা তত বেশি বেড়ে যায়। যেমন--- মানিকতলা বাজারে একজন ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনলাম এবং তা মিষ্টি লাগলো।  দ্বিতীয় দিনেও ওই ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনলাম এবং তা মিষ্টি লাগলো। এ থেকে যদি সিদ্ধান্ত করি ওই ফলওয়ালার সব আম মিষ্টি, তাহলে সিদ্ধান্তটির সম্ভাব্যতা খুবই কম হয়ে দাঁড়ায়। অপরপক্ষে, যদি 15/16 বার ওই ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনে দেখি যে তার ফল মিষ্টি এবং তারপর যদি সিদ্ধান্ত করি --- ভবিষ্যতেও ওই ফলওয়ালার হিমসাগর আম মিষ্টি হবে, সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি হয়।

        দ্বিতীয়ত, হেতুবাক্যে জ্ঞাত সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে,  উপমা যুক্তি সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে। যেমন - পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মধ্যে সাদৃশ্যের সংখ্যা বেশি এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য 'পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহেও জীবের অস্তিত্ব আছে' - এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে সাদৃশ্যের সংখ্যা কম হওয়ার জন্য 'পৃথিবীর মতো চন্দ্রেও জীবের অস্তিত্ব আছে' - এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা খুবই কম।

        তৃতীয়ত, হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য যত বেশি হবে, সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে। যেমন- একটি বিদ্যালয় এর 10 জন ছাত্রকে পরীক্ষা করে দেখা গেল যে, তারা সবাই সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে। রবিন ওই বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিক পাঠরত। কাজেই সিদ্ধান্ত করা যায় যে, রবিনও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা আরো বেশি হবে যদি আমরা উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য বেশি পর্যবেক্ষণ করি। যদি দেখা হয় তাদের মধ্যে কে ধনী বা নির্ধন, কে শহরের ছাত্র বা গ্রামের ছাত্র ইত্যাদি।

        চতুর্থত, জ্ঞাত গুণাবলীর তুলনায় যদি অজ্ঞাত গুণাবলীর সংখ্যা ও গুরুত্ব বেশি হয়, তাহলে উপমা যুক্তির সিদ্ধান্ত কম সম্ভাব্য হবে। এই বিষয়টিকে নিচের ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করা যায়:
                                    সাদৃশ্য
                     ----------------------------------------
                       বৈশাদৃশ্য + অজ্ঞাত গুণাবলী

          এর অর্থ হল: উপমাযুক্তির ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য ও অজ্ঞাত গুণাবলীর সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত কম হবে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।

           পঞ্চমত, উপমা যুক্তির মূল্যায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হল  সাদৃশ্যের বিষয়গুলির প্রাসঙ্গিকতা। হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের সঙ্গে সিদ্ধান্তের যদি একটি মাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাদৃশ্য থাকে তাহলেও সেই যুক্তি অনেক বেশি সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যদিকে, হেতুবাক্যে উল্লিখিত বেশ কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে সিদ্ধান্তের উল্লিখিত দৃষ্টান্তের মিল থাকলেও সিদ্ধান্তটি কম সম্ভাব্য হবে। যেমন- রামের রক্ত পরীক্ষা করে যদি যক্ষা রোগের জীবাণু পাওয়া যায় এবং শ্যামের রক্তেও যদি একই জীবাণু পাওয়া যায় এবং যদি তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয় রাম যে ওষুধ খেয়ে ভালো হয়েছে শ্যামও সেই ঔষধে ভালো হবে তবে সিদ্ধান্ত অনেক জোরালো হবে। অন্যদিকে, রাম ও শ্যামের মধ্যে ওজন, বর্ণ, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাদৃশ্য দেখে এবং রামকে একটি ঔষধে সুস্থ হতে দেখে যদি সিদ্ধান্ত করা হয় একই রোগে একই ওষুধে সুস্থ হবে তবে সিদ্ধান্তটি হবে খুবই দুর্বল।

                                   <<<<<>>>>>
Read More

বৈশেষিক দর্শন অনুসারে আত্মা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। (Indian Philosophy)

Leave a Comment
     প্রশ্ন: বৈশেষিক দর্শন অনুসারে আত্মা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

উঃ 
     বৈশেষিক মতে আত্মা: বৈশেষিক মতে আত্মা সর্বব্যাপী ও শাশ্বত। জ্ঞান বা চেতনার আধার হলো আত্মা। আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে বৈশেষিকদের ধারণা নৈয়ায়িকদের ধারণার অনুরূপ। আত্মা দুই প্রকার -- জীবাত্মা ও পরমাত্মা। প্রত্যেক জীবের শরীরেই একটি করে আত্মা বিদ্যমান। তাই জীবাত্মা সংখ্যায় অনেক বা বহু, পরমাত্মা এক। ঈশ্বর হলেন পরমাত্মা। পরমাত্মা প্রত্যক্ষের বিষয় নয়। আমরা জগৎ কারণ-স্বরূপ পরমআত্মার অস্তিত্ব অনুমান করি। আবার সুখ, দুঃখ, বুদ্ধি, প্রযত্ন প্রভৃতি গুনের আশ্রয় রূপে আমরা জীবাত্মার অস্তিত্ব অনুমান করি। স্বরূপ অত আত্মা নির্ঘুম ও  নিষ্ক্রিয়। চৈতন্য আত্মার আগন্তুক গুণ, স্বাভাবিক গুণ নয়। 

       বৈশেষিক মতে, স্বরূপত আত্মা অচেতন দ্রব্য। আত্মা দেহের  সংস্পর্শে এলে চৈতন্য লাভ করে। আত্মার সঙ্গে দেহের সংযোগেই আত্মার বদ্ধাবস্থা হয়। জীব অজ্ঞানবসতঃ দেহ-মন ইন্দ্রিয়কে আত্মা মনে করে। আসলে জীব আত্মার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে না। আত্মার প্রকৃত স্বরূপের জ্ঞান হলো তত্ত্ব জ্ঞান, যার সাহায্যে জীবের মোক্ষলাভ সম্ভব হয়। জীবাত্মা মোক্ষলাভ করলে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেনা, ঈশ্বর সদৃশ্য হয়। আত্মার এক চৈতন্য হীন অবস্থায় মোক্ষাবস্থা, যে অবস্থায় জীবাত্মা  পরমাত্মায় লীন হয়ে যায় না।
                        <<<<<>>>>>>
Read More

প্রশ্ন: সাংখ্যদর্শনের বিবর্তনবাদ / পরিণামবাদ / অভিব্যক্তিবাদ আলোচনা কর।(Sankhya theory of Evolution)

Leave a Comment
প্রশ্ন: সাংখ্যদর্শনের বিবর্তনবাদ / পরিণামবাদ / অভিব্যক্তিবাদ আলোচনা কর।
উঃ

       সাংখ্য বিবর্তনবাদ: সাংখ্যদর্শন দ্বৈতবাদী। এই দর্শনে দুটি তত্ত্ব স্বীকার করা হয়েছে। একটি পুরুষ অপরটি প্রকৃতি। প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগের ফলে এই জগতের আবির্ভাব ঘটে। প্রকৃতি হতে এই জগতের আবির্ভাব। প্রকৃতিতে এই জগতের লয়। সত্ত্ব, রজঃ, তমো এই  গুণ তিনটির সাম্যবস্থা হল প্রকৃতি। প্রকৃতি পরিণামী। নিজ স্বভাহেতু প্রকৃতির নিয়মিত সৃষ্টি করে থাকে। এই পরিণাম দুই প্রকার -- স্বরূপ পরিণাম ও বিরূপ পরিণাম। প্রলয় কালে যে পরিনাম হয় তাকে স্বরূপ পরিণাম এবং সৃষ্টিদশায় যে পরিনাম হয় তাকে বিরূপ পরিণাম বলে।

      প্রকৃতির এই পরিণাম যান্ত্রিক নয়। প্রকৃতি জড়, অচেতন হলেও তার এই পরিনাম উদ্দেশ্যমূলক। প্রকৃতি পরিণামের দুটি উদ্দেশ্য -- একটি পুরুষের ভোগ, অপরটি মোক্ষ। পুরুষের ভোগের জন্য প্রকৃতির সৃষ্টিকার্য যেমন প্রয়োজন মোক্ষের জন্যও পুরুষের পক্ষে প্রকৃতির প্রয়োজন।

     সাংখ্য মতে প্রকৃতি জগতের উপাদান কারণ। উৎপত্তির পূর্বে কার্য কারণে সৎ। জগৎ, কার্য, প্রকৃতিতে অব্যক্ত রূপে থাকে। প্রকৃতির পরিণামের ফলে জগতের অভিব্যক্তি। চেতন পুরুষ ও সক্রিয় প্রকৃতির সংযোগের ফলে পরিণাম শুরু হয়। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগের ফলে গুণত্রয়ের মধ্যে বিক্ষোভ ঘটে। তাদের সাম্যবস্থা নষ্ট হয়। এর ফলে প্রকৃতির মধ্যে প্রবল আলোড়ন শুরু হয়। প্রতিটি গুণ অপর দুটি গুণকে অভিভূত করতে চেষ্টা করে। এর ফলে বিভিন্ন পরিমাণে গুনগুলির বিন্যাস ঘটে। বিভিন্ন জাগতিক বস্তু এর ফলে সৃষ্টি হয়। প্রকৃতি থেকে জড়জগতের ক্রমাভিব্যক্তি নিম্নরূপ:

                          পুরুষ + প্রকৃতি
                             মহৎ( বুদ্ধি)
                              অহংকার
                                     |
|-----------|--------------------------------------------|----
মন    পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়     পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়      পঞ্চতন্মাত্র
                                                                                                                                             পঞ্চমহাভূত

     মহৎ বা বুদ্ধি: মহৎ বা বুদ্ধি প্রকৃতির প্রথম পরিণাম। জাগতিক বস্তু সৃষ্টির বীজ বলে একে মহৎ বা বিরাট বলা হয়। মহৎ থেকেই সৃষ্টি শুরু। আবার জীবের মধ্যে বুদ্ধি রূপে প্রকাশিত হয় বলে এর অপর নাম বুদ্ধি। ধর্ম, জ্ঞান, বৈরাগ্য, বুদ্ধির সাত্ত্বিক রূপ; অধর্ম' অজ্ঞানতা, মোহ বুদ্ধির তামসরূপ। বুদ্ধি চেতন পুরুষ থেকে ভিন্ন। কিন্তু পুরুষের চৈতন্য বুদ্ধিতে প্রতিবিম্বিত হয়। ইন্দ্রিয়, মন, অংকার বুদ্ধির জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। বুদ্ধির জন্য প্রকৃতি ও পুরুষের ভেদ জ্ঞান হয়।  

         মন:    মনের সাহায্য ছাড়া কোন ইন্দ্রিয় কাজ করতে পারে না। মন জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় উভয়ই -- পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, ও মন এই হল একাদশ ইন্দ্রিয়। মন সূক্ষ্ম অথচ সাবয়ব। মন নিত্য ও পরমাণু পরিমাণ নয়। সাংখ্য মতে মন হলো অনিত্য।

       অহংকার: অহংকার প্রকৃতির দ্বিতীয় পরিণাম।  মহৎ বা বুদ্ধি থেকে প্রত্যক্ষভাবে অহংকারের আবির্ভাব হয়। আত্মাভিমান ও সমত্ববুদ্ধি অহংকারের ধর্ম। অহংকারের জন্য পুরুষ নিজেকে কর্তা ও ভোক্তা মনে করে। সত্ত্ব রজঃ ও তমোগুণের তারতম্য হেতু অহংকার তিনপ্রকার -- সাত্ত্বিক রাজস ও তামসা। সাত্ত্বিক অহংকার থেকে পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ও মনের আবির্ভাব হয়। তামস অহংকার থেকে পঞ্চতন্মাত্রের আবির্ভাব হয়।  রাজস অহঙ্কার উভয়ের উৎপত্তিতে সাহায্য করে।

         পঞ্চতন্মাত্র: রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ ও স্পর্শ - এই পাঁচটি পঞ্চতন্মাত্র।  পঞ্চতন্মাত্র থেকে পঞ্চভূতের সৃষ্টি হয়। ক্ষিতি, অপ্,  তেজ, মরুৎ, ও ব্যোম্ -- এই পাঁচটি পঞ্চভূত। পঞ্চ তন্মাত্র থেকে পঞ্চ মহাভুতের আবির্ভাব নিম্নলিখিত উপায়ে হয়।

        (১) শব্দতন্মাত্র থেকে উৎপন্ন হয় ব্যোম আকাশ। শব্দ আকাশের গুণ।

     (২) শব্দতন্মাত্রের সঙ্গে স্পর্শতন্মাত্রের সংযোগের ফলে মরুৎ বা বায়ুর উৎপত্তি হয়। শব্দ ও স্পর্শ বায়ুর গুন।

     (৩)  রূপ তন্মাত্রের সঙ্গে শব্দ স্পর্শ তন্মাত্রের সংযোগে তেজের উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ তেজের গুন।

        (৪) রস তন্মাত্র শব্দ, স্পর্শ ও রূপ তন্মাত্রের  মিলিত হলে অপ্ বা জলের উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস জলের গুন।

      (৫) গন্ধ তন্মাত্র শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস তন্মাত্রের সঙ্গে যুক্ত হলে ক্ষিতি বা  পৃথিবীর উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ পৃথিবীর গুণ।

      মহৎ থেকে মহাভুত অবধি প্রকৃতির এই পরিণামমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-- প্রত্যয় বা বুদ্ধি সর্গ এবং তন্মাত্র বা ভৌতিক সর্গ। প্রত্যয় সর্গের অন্তর্গত হল- মহৎ, অহংকার, মন, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়। তন্মাত্র সর্গের অন্তর্গত হল পঞ্চ তন্মাত্র, পঞ্চভূত মহাভুত ও মহাভুত থেকে উৎপন্ন সকল দ্রব্য। মহৎ থেকে পঞ্চ মহাভুতের আবির্ভাবকে অনুলোম পরিণাম বলা হয়। এর বিপরীত পরিণামমকে অর্থাৎ প্রলয়কালে যে পরিণামম হয় তাকে প্রতিলোম পরিণামম বলে।
                                <<<<<>>>>>
                      
Read More

Tuesday 22 May 2018

প্রশ্ন: বৈশেষিক দর্শন অনুসারে কর্ম পদার্থের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। (Indian Philosophy -বৈশেষিক দর্শন)

Leave a Comment
প্রশ্ন: বৈশেষিক দর্শন অনুসারে কর্ম পদার্থের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।                ১০ নম্বর
উঃ

      কর্ম: কর্ম অর্থে গতি বোঝায়। কর্ম বা গতি বিশ্বের এক মূল তত্ত্ব, -  দ্রব্য ও গুনের অতিরিক্ত একটি দ্রব্য। কর্মের অর্থ গতি বা স্থান পরিবর্তন। দ্রব্য এবং গুণ থেকে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হল কর্ম। দ্রব্যকে আশ্রয় করেই কর্ম বিরাজ করে। দ্রব্য ছাড়া কর্ম থাকতে পারেনা। কর্মের কোন গুণ থাকতে পারেনা। সব রকমের দ্রব্যের মধ্যই কর্ম থাকেনা। কেবল অনিত্য মূর্ত দ্রব্যের মধ্যেই কর্ম বিরাজ করে। দ্রব্যের মধ্যে গুণ ও কর্ম উভয় বিরাজ করলেও গুণ ও কর্মের মধ্যে পার্থক্য আছে। গুন নিষ্ক্রিয় কিন্তু কর্ম সক্রিয়। গুণ হলো দ্রব্যের স্থায়ী লক্ষণ কিন্তু কর্ম হল অস্থায়ী। কাজেই কর্ম বা গতিকে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে।

    কর্ম পাঁচ প্রকার। যথা - (১) উৎক্ষেপন, (২) অবক্ষেপণ, (৩) আকুঞ্চন, (৪) প্রসারণ ও (৫) গমন।

     (১) উৎক্ষেপণ: যে কর্মের দ্বারা উপরের সঙ্গে কোন দ্রব্যের সংযোগ হয়, তাকে বলা হয় উৎক্ষেপণ। যেমন- আম পাড়তে গাছের উপর দিকে ঢিল ছুড়ে দেওয়া

  (২) অবক্ষেপণ: যে কর্মের দ্বারা নিচের দিকে কোন দ্রব্যকে নিক্ষেপ করা হয়, তাকে বলা হয় অবক্ষেপণ। যেমন- ছাদ থেকে নিচে কিছু ফেলে দেওয়া।

    (৩) আকুঞ্চন: কোন দ্রব্যের বিভিন্ন অংশগুলিকে সংকুচিত করাকেই আকুঞ্চন বলে। যেমন- হাত মুষ্টিবদ্ধ করে  হাতের আংগুল গুলিকে সংকুচিত করা।

       (৪) প্রসারণ: কোন দ্রব্যের সংযুক্ত অংশকে বিচ্ছিন্ন করাকেই প্রসারণ বলে। যেমন- মুষ্টির মধ্যে ধরা হাতের আঙ্গুলগুলি বিস্তার করা।

      (৫) গমন: এই চার প্রকার কর্ম বাদে অন্যসব কর্ম হলো গমন। যেমন- আগুনের ঊর্ধ্বগতি, বাতাসের তীব্র গতি প্রভৃতি গমনের অন্তর্গত।

        সবরকম কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। পার্থিব দ্রব্যের কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায়, কিন্তু মনের কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
                                         <<<<<>>>>>

Read More

সাংখ্য দর্শনে পুরুষের স্বরূপ কি? পুরুষের অস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তি গুলি কি কি? সাংখ্য মতে পুরুষ এক না বহু ?আলোচনা কর। (Indian philosophy: সাংখ্য দর্শন)

Leave a Comment
 প্রশ্ন: সাংখ্য দর্শনে পুরুষের স্বরূপ কি? পুরুষের অস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তি গুলি কি কি? পুরুষ এক না বহু? আলোচনা কর।                   ২০ নম্বর
উঃ
     পুরুষ: প্রকৃতি তত্ত্ব ছাড়াও সাংখ্যদর্শনের দ্বিতীয় একটি তত্ত্ব স্বীকার করা হয়েছে সেটি হলো পুরুষ বা আত্মা। পুরুষ হলো সাংখ্যের দ্বিতীয় স্বীকৃত তত্ত্ব। আমরা পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারি না। জগতের সবকিছুকে অস্বীকার করলেও আমার নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা অসম্ভব। আত্মার অস্তিত্ব স্ব-প্রকাশ, তাই সাংখ্য দার্শনিকগণ আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পুরুষ বা আত্মা সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের অতীত এবং তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মের আরেকটি শ্রেণীর দ্রব্য। পুরুষকে বর্জন করে জগতের ব্যাখ্যা হতে পারে না।

     সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, পুরুষ বা আত্মা দেহ নয়, মন নয়, বুদ্ধি নয়, ইন্দ্রিয়ও নয়। আত্মা এদের থেকে স্বতন্ত্র। পুরুষ হচ্ছে এক সচেতন সত্তা যা সব সময় জ্ঞাতা কিন্তু কখনোই জ্ঞেয় বা জ্ঞানের বিষয় নয়। পুরুষ নির্বিকার জ্ঞান স্বরূপ। আত্মা শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ, তাই পুরুষ বা আত্মার কোন পরিবর্তন বা বিকার হয়না। পুরুষ সনাতন - তার উৎপত্তি বা ধ্বংস নেই। পুরুষ পরিচ্ছিন্ন বা সীমিত নয়। পুরুষ বিভু বা সর্বব্যাপী। পুরুষ লোভ, মোহ, রাগ-বিরাগ মুক্ত। পুরুষ  অপরিণামী।

পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ: সাংখ্য দর্শনে পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বের স্বপক্ষে একাধিক যুক্তি দেখানো হয়েছে ও এইসব যুক্তি দ্বারা পুরুষ বা আত্মার আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তিগুলি এইরকম -

      ক) সংঘাতপরার্থত্বাৎ: সংঘাত অর্থাৎ যৌগিক পদার্থ অপরের উদ্দেশ্য পূরণ করে থাকে। এইসব যৌগিক পদার্থের নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য নেই। টেবিল চেয়ার ঘট পট প্রভৃতি সংঘাত দ্রব্য পর-প্রয়োজনে নিবেদিত। এইসব সংঘাত দ্রব্যগুলি কোন চেতন সত্তার প্রয়োজন মেটায়। এই চেতন সত্তাই পুরুষ।

    খ) ত্রিগুণাদি বিপর্যয়াৎ: সব জ্ঞেয় বস্তুই ত্রিগুণাত্মিকা অর্থাৎ সব জ্ঞেয় বস্তুরই সত্ত্ব রজঃ ও তমঃ এই তিনটি গুণ আছে। কাজেই এদের দ্রষ্টা হিসেবে এমন একটি সত্তার অস্তিত্ব থাকতে হবে যার মধ্যে শুধু চৈতন্য আছে, কিন্তু গুণত্রয় নেই। এই সত্তাই  হলো পুরুষ।

    গ) অধিষ্ঠানাৎ: যার অধিষ্ঠানের জন্য দেহ বুদ্ধি-অহংকার-মন বিশিষ্ট হয়ে চেতন পদার্থের মত মনে হয় এবং যার অভাবে দেহ বুদ্ধি- অহংকার-মনবিহীন হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে তাই পুরুষ বা আত্মা। সচেতন একজন রথী না থাকলে যেমন অচেতন রথ ঠিক পথে চলতে পারে না, তেমনি অচেতন প্রকৃতির কার্য যে নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে ঘটতে দেখা যায় তাও কোন সচেতন সত্তার সাহায্য ছাড়া হতে পারে না। এই সচেতন সত্তাই পুরুষ।

      ঘ) ভক্তৃভাবাৎ: সুখ-দুঃখ ও বিষাদাত্মক ভোগ্যবস্তুর ভোক্তা রূপে চেতন পুরুষের অস্তিত্ব মানতে হবে। ভোগ্যবস্তুর অস্তিত্ব মেনে নিলে ভোক্তার অস্তিত্বকেও স্বীকার করতে হয়। সুখ, দুঃখ ও বিষাদ ইত্যাদি ভোগ্য। কোন জড় ও অচেতন দ্রব্যের পক্ষে ভোগ করা সম্ভব নয়। তাই ভোক্তা রূপে চেতন সত্তার অস্তিত্ব মানতেই হবে এবং চেতন সত্তাই পুরুষ।

      ঙ) কৈবল্যার্থং প্রবৃত্তেশ্চ:  অনেকের মধ্যে কৈবল্য বা মুক্তির চেষ্টা দেখা যায়। প্রকৃতি কিংবা প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত বস্তু তো অচেতন এবং স্বভাবতই দুঃখযুক্ত। কাজেই তাদের পক্ষে দুঃখ থেকে মুক্তির প্রশ্ন ওঠেনা। তাহলে প্রকৃতি থেকে স্বতন্ত্র এক সচেতন সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, নইলে কৈবল্য লাভের চেষ্টার কোনো অর্থ হয় না। এই সচেতন সত্তাই পুরুষ।

      বহু পুরুষবাদ বা আত্মার বহুত্ববাদ : সাংখ্য মতে, পুরুষ বা আত্মাএক নয়, বহ। সাংখ্য কার নিম্নলিখিত যুক্তির সাহায্যে পুরুষের বহুত্ব প্রমাণ করেছেন:

        (ক) বিভিন্ন জীবের মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, ইন্দ্রিয় বিষয়ে পার্থক্য দেখা যায়। এক ব্যক্তির জন্ম হলে অন্য ব্যক্তির জন্ম হয় না। একজন অন্ধ বা বধির হলে অন্যজন অন্ধ বা বধির হয়না। এরকম যখন বাস্তবে হয় না তখন আমাদের মানতেই হবে আত্মা এক নয়, বহু।

       (খ) সমস্ত জীবের মধ্যে এক আত্মা থাকলে সমস্ত জীবের প্রবৃত্তি যুগবৎ হত অর্থাৎ একজনের প্রবৃত্তিতে অন্যজনেরও একই প্রবৃত্তি জাগ্রত হত। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা হয়না। যেমন- একজন যখন যাচ্ছে, আর একজন তখন আসছে। সুতরাং জীবের প্রবৃত্তিগত ভিন্নতাই আত্মার ভিন্নতা প্রমাণ করে। তাই  এক নয়, বহু।

       (গ) একথা আমরা স্বীকার করি যে মানুষ দেবতা নয়, আবার পশুও নয়। একই আত্মা যদি সকলের মধ্যে থাকতো তবে দেবতা মানুষ ও পশুপাখির কোন প্রভেদ থাকত না। কাজেই, আত্মার বহুত্ব স্বীকার করতে হবে।

    (ঘ) মৃত্যুর পর পূণ্যাত্মার স্বর্গবাস, পাপাত্মার নরকবাস। এর দ্বারাও প্রতিপন্ন হয় যে বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিভিন্ন আত্মা বিরাজমান। সমস্ত জীবের মধ্যে এক আত্মা থাকলে একজনের মুক্তিতে অন্য সবাই মুক্তি লাভ করতো। সুতরাং আত্মা এক নয়, বহু।
                                  <<<<<>>>>>
Read More

Saturday 19 May 2018

সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ভূমিকা আলোচনা কর।[ভারতীয় দর্শন(Indian philosophy)]

Leave a Comment
     প্রশ্ন: সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ভূমিকা আলোচনা কর।

       সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ : কোন একটি শ্রেণী বা জাতির অন্তর্গত একটি ব্যক্তি বা বস্তুর সামান্য ধর্মের প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে সেই জাতি বা শ্রেণীর অন্তর্গত সমস্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। যেমন- মানুষ জাতির সামান্য ধর্ম হলো মনুষ্যত্ব। ন্যায় মতে, যখন আমরা একটি বিশেষ মানুষকে প্রত্যক্ষ করি তখন 'মনুষত্ব' নামক সামান্য ধর্মটিও প্রত্যক্ষ করি। এই 'মনুষত্ব' ধর্মের মাধ্যমে সকল মানুষকে প্রত্যক্ষ করাই হলো সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ।

       ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের ভূমিকা:  ন্যায়সম্মত ব্যাপ্তি নির্ণয়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ। সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ একপ্রকার অলৌকিক প্রত্যক্ষ। যেমন আমরা পর্বত, পাকশালা প্রভৃতি কোন কোন ক্ষেত্রে ধূম ও বহ্নির ব্যাপ্তি প্রত্যক্ষ করতে পারি। কিন্তু ব্যাপ্তি সম্বন্ধ সার্বজনীন। তাই আমাদের বলার উদ্দেশ্য এরকম হয় না যে, শুধু পর্বতীয় ধূমের সঙ্গে পর্বতীয় বহ্নির ব্যাপ্তি আছে বা পাকশালার ধূমের সঙ্গে পাকশালার বহ্নির ব্যাপ্তি আছে। সকল ধূমের সঙ্গে সকল বহ্নির ব্যাপ্তিই আমরা জানতে চাই। কিন্তু সকল ধূম ও সকল বহ্নির সঙ্গে আমাদের ইন্দ্রিয়ের সাধারণ বা লৌকিক সন্নিকর্ষ সম্ভব নয়। তা সমাধানকল্পেই ন্যায়দর্শনে সামান্যলক্ষণ সন্নিকর্ষের দ্বারা সকল ধূম ও সকল বহ্নির ব্যাপ্তিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

         এই সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষের সাহায্যে আমরা কোন একটি স্থানে ধূমকে প্রত্যক্ষ করার সময় ঐ ধূমের মাধ্যমে ধূমত্ব জাতিকে এবং ঐ ধূমত্ব জাতির মাধ্যমে সকল ধূমকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। অনুরূপভাবে বহ্নিত্ব জাতির মাধ্যমে আমরা সকল বহ্নিকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের প্রত্যক্ষকালে ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের সম্বন্ধও আমাদের প্রত্যক্ষের বিষয় হয়। ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের এই সম্বন্ধের সাহায্যে আমরা সামান্যত সকল ধূমের সঙ্গে সকল বহ্নির একটি সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করি। এই প্রত্যক্ষ হয় এক ধরনের অলৌকিক প্রত্যক্ষ। এটাই সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ। এইভাবে সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষের সাহায্যে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপ্তি নির্ণয় করা যেতে পারে।
                         <<<<<>>>>>
Read More

নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর। [( ভারতীয় দর্শন)( Indian Philosophy)]

1 comment
 প্রশ্ন:  নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর।

    উঃ      নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষণের পার্থক্য : নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ এবং সবিকল্পক প্রত্যক্ষ তুলনা করলে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি ধরা পড়ে ------

     প্রথমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের প্রাথমিক স্তর। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তর বা পরিণত স্তর।

      দ্বিতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যপদেশ্য জ্ঞান। কেননা- এই রূপ জ্ঞানকে কোন বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষকে বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হল ব্যপদেশ্য জ্ঞান।

      তৃতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যবসায়াত্মক জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান বা অস্পষ্ট জ্ঞান। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ব্যবসায়াত্মক বা সুস্পষ্ট জ্ঞান বা সুনিশ্চিত জ্ঞান।

     চতুর্থত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের অনুব্যবসায় সম্ভব নয়।  কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষকের অনুব্যবসায় সম্ভব। 'অনু ব্যবসায়' শব্দটির অর্থ স্মৃতি বা পূর্ব জ্ঞান। এখন নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয় বলে এই প্রত্যক্ষ স্মৃতি ও কল্পনা বর্জিত। কিন্তু, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তাই এই প্রত্যক্ষে স্মৃতি ও কল্পনার ভূমিকা আছে।

     পঞ্চমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ নিস্প্রকারক বলে বচনে প্রকাশ করা যায় না। তাই এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে না। অর্থাৎ, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ প্রমা বা অপ্রমা হতে পারেনা। পক্ষান্তরে, সবিকল্পক জ্ঞানকে বচনাকারে প্রকাশ করা যায়  বলে, এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে। অর্থাৎ, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রমা ও অপ্রমা উভয়ই হতে পারে।

     ষষ্ঠত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধ বর্জিত। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধযুক্ত।

      সপ্তমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে কেবলমাত্র কোন বস্তুর অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুটি কী তা জানা যায় না। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষে গুণ-সমন্বিত বস্তুকে জানা যায়।

     অষ্টমত, নির্বিকল্পক জ্ঞানের কেবল প্রত্যক্ষ হয় কিন্তু অনুমিতি, উপমিতি, শাব্দবোধ প্রভৃতি হতে পারে না। অপরদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানের প্রত্যক্ষ, অনুমিতি উপমিতি, শাব্দজ্ঞান প্রভৃতি হতে পারে।

      নবমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষের মধ্যে কেবলমাত্র সংযোগ সন্নিকর্ষটি ছাড়া অন্যগুলি প্রয়োজন নয়। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষই প্রযুক্ত হতে পারে।
  
    মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায়, নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের মধ্যে উক্ত পার্থক্য করা গেলেও উভয় প্রত্যক্ষকে দুটি স্বতন্ত্র প্রত্যক্ষ বলে মনে করলে ভুল হবে। আসলে উভয়েই একই প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার দুটি ভিন্ন স্তর। নৈয়ায়িকদের মতে নির্বিকল্পক স্তরের অস্পষ্ট ও অব্যক্ত জ্ঞান সবিকল্পক স্তরে স্পষ্ট ও ব্যক্ত হয়। তাই আমরা যখন নির্বিকল্পক স্তর থেকে সবিকল্পক স্তরে উন্নীত হই তখন আমাদের বাস্তব জ্ঞানেরও উন্নতি ঘটে।
                                                                                                                      <<<<<>>>>>
Read More

Friday 18 May 2018

পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা করো। (INDIAN PHILOSOPHY)

Leave a Comment
প্রশ্ন: পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা কর।
উ: পঞ্চাবয়বী ন্যায়: ভারতীয় দার্শনিকরা মনে করেন পরার্থানুমান বা অন্যের কাছে কিছু প্রমাণের জন্য অনুমান করতে হলে অনুমানকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। কেননা, এ অনুমান হলো পরকে বোঝাবার জন্য। নৈয়ায়িকদের মতে, পরার্থানুমানকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি বচন বা অবয়বের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হলো- (১) প্রতিজ্ঞা, (২) হেতু, (৩) উদাহরণ, (৪) উপনয়, (৫) নিগমন। এই পাঁচটি অবয়বকে একত্রে বলা হয় পঞ্চাবয়বী ন্যায়। পরার্থানুমানের অবয়বগুলিকে যুক্তির আকারে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে-

(১)  পর্বতটি বহ্নিমান (প্রতিজ্ঞা)
(২) কারণ  পর্বতটি ধূমবান (হেতু)
(৩) যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি, যেমন- মহানস বা পাকশালা, কামারশালা ইত্যাদি (উদাহরণ)
(৪)  পর্বতটিও ধূমবান (উপনয়)
(৫) সুতরাং,  পর্বতটি বহ্নিমান (নিগমন বা সিদ্ধান্ত)।

    পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের প্রত্যেকটি অবয়বের পরিচয়, কার্য ও প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিজ্ঞা : যে অবয়ব বাক্যে বক্তা তার প্রতিবাদ্য বিষয়টিকে বাক্যের আকারে প্রকাশ করে তাকে প্রতিজ্ঞা বলে। প্রতিজ্ঞা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা হয় যে পক্ষে সাধ্য আছে। 'পর্বটি বহ্নিমান' - এই প্রতিজ্ঞা বাক্যে পর্বত = পক্ষ এবং বহ্নি = সাধ্য। এই বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে পক্ষ সাধ্যবিশিষ্ট। সুতরাং পর্বতটি যে বহ্নিবিশিষ্ট তা প্রতিপাদন করাই প্রতিজ্ঞার মূল কাজ। কাজেই পক্ষ জ্ঞানের জন্য প্রতিজ্ঞা বাক্যে প্রয়োজন হয়।

      হেতু : ন্যায়ের দ্বিতীয় অবয়ব বাক্যটি হল হেতুবাক্য। যা সাধ্যকে সাধন করে বা প্রমাণ করে তার নাম হেতু। এই হেতুর অপর নাম লিঙ্গ। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে বা লিঙ্গ প্রতিপাদন করে। তাই লিঙ্গ জ্ঞানের জন্যই হেতু বাক্যের প্রয়োজন হয়।

    উদাহরণ : ন্যায়ের তৃতীয় অবয়ব বাক্যটি হল উদাহরণ। যে বাক্য ব্যাপ্তি প্রতিপাদন করে তাকেই উদাহরণ বাক্য বলে। পরিচিত দৃষ্টান্ত সহযোগে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সার্বিক সম্পর্ক জ্ঞাপক অবয়ব হলো উদাহরণ। অর্থাৎ বাক্যের প্রতিজ্ঞা এবং হেতুর মধ্যে যে ব্যাপ্তি সেটিকে পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিপাদন করার জন্যই উদাহরণ বাক্যে প্রয়োজন হয়।

   উপনয় : যে বাক্যে ব্যাপ্তিবিশিষ্টি হেতু বা লিঙ্গের প্রতিপাদন করা হয়, তাকে উপনয় বাক্য বলা হয় । সাধ্যের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হেতুপদের ও পক্ষপদের সম্বন্ধজ্ঞাপক অবয়বই উপনয়। এই বাক্যে পক্ষে সাধ্যের ব্যাপ্তিবিশিষ্ট হেতুর প্রতিপাদন করা হয়। উপনয়ে সামান্য বচনটিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কাজেই, পক্ষধর্মতা জ্ঞানের জন্য উপনয় বাক্যের প্রয়োজন হয়।

     নিগমন : যে বাক্যে ব্যাপ্তি ও পক্ষধর্মতাবিশিষ্ট হেতুর দ্বারা পক্ষে সাধ্য আছে তা প্রতিপাদিত হয়, তাকে নিগমন বাক্য বলা হয় । নিগমন হলো সিদ্ধান্ত অবয়ব। পূর্ববর্তী বাক্যগুলির উপর নির্ভর করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তাকে নিগমন বলে। সুতরাং, প্রতিজ্ঞা বাক্য থেকে পাওয়া বিষয়টিকে প্রমাণ করা নিগম মনের কাজ।
                     <<<<<<>>>>>>
Read More

২। সমাজবিদ্যার(Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
  প্রশ্ন: সামাজিক শ্রেণী এবং জাতি বা বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।           ১৫ নম্বর
     OR, সামাজিক শ্রেণী ও বর্ণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উঃ   সামাজিক শ্রেণী: সামাজিক শ্রেণী প্রসঙ্গে গিন্সবার্গ বলেন, " সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায়, সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন অংশ বা জনগোষ্ঠীকে যারা সমতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমাজস্বীকৃত উঁচু-নিচু মানদণ্ডের দ্বারা এক জনগোষ্ঠি অপরাপর জনগোষ্ঠি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে"। ম্যাকাইভার ও পেজ্ বলেন, "সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায় সম্প্রদায়ের এমন এক খন্ডাংশ যা মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র। সামাজিক শ্রেণী প্রথমত, মর্যাদা অনুসারে উঁচু-নিচুভাবে অবস্থান করে; দ্বিতীয়ত, শ্রেণীর মর্যাদা সমাজস্বীকৃত হয় এবং শ্রেণী সদস্যরা ওই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকে; তৃতীয়ত, সামাজিক শ্রেণীর সাংগঠনিক স্থায়িত্ব থাকে"। প্রত্যেক শ্রেণীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক শ্রেণি- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না;  তবে প্রত্যেক শ্রেণি অন্য শ্রেণী থেকে উচ্চতর ভাবে বা নিম্নতর ভাবে সম্বন্ধের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থান করে।

   জাতি বা বর্ণ: স্যার এডওয়ার্ড ব্লাস্ট তাঁর 'Social Service in India' নামক নিবন্ধ সংকলন গ্রন্থে বলেছেন, 'জাতি হচ্ছে এমন এক জনগোষ্ঠি যাদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রথা প্রচলিত, যারা বংশপরম্পরায় এক সাধারণ পদবী গ্রহণ করে, যারা সামাজিক আচার আচরণের ক্ষেত্রে কতগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে, যারা গতানুগতিকভাবে পূর্বপুরুষের বৃত্তি গ্রহণ করে এবং যারা মনে করে যে তাদের আদি পূর্বপুরুষ একই ব্যক্তি এবং এভাবে যারা এক সুসংহত গোষ্ঠী জীবনে বসবাস করে।' জাতি এবং জাতিভেদ প্রথা কেবলমাত্র ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় -- ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে, এমনকি ভারতের বাইরে অনেক হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রথার প্রচলন আছে। প্রাচীনকালের মিশর জাপান প্রভৃতি দেশেও যে এই প্রথার প্রচলন ছিল, ইতিহাসে তার অনেক নজির পাওয়া যায়। বর্তমানে মাসাইদের মধ্যে, পূর্ব-হর্নের সোমালীদের মধ্যে, পলিনেশীয়দের মধ্যে, বর্মীদের মধ্যে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। তবে, জাতি ও জাতিভেদ প্রথা বলতে বিশেষ করে ভারতীয়দের এবং আরো বিশেষ করে ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সামাজিক শ্রেণীভেদ প্রথাকেই বোঝানো হয়, কেননা ভারতীয় সমাজে এই প্রথা অতিপ্রাচীন এবং সুপ্রাচীন হওয়ায় এই প্রথা ভারতীয় জনজীবনে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।
       জাত- ব্যবস্থা জন্ম ভিত্তিক। ব্যক্তি যে জাতে জন্মগ্রহণ করে সে জাতির সদস্য হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করে। প্রত্যেক জাতভুক্ত ব্যক্তিকে সেই জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। প্রত্যেকটি জাতির একটি পেশা বা বৃত্তি নির্দিষ্ট থাকে।

   সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতীয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা ----
  
    প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্ন স্তর ভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারা কে অনুসরণ করে, তাহলে সে ক্রমশই উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাবের জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নীত হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলে এই প্রথাকে নিশ্চল বলাই সঙ্গত।

    দ্বিতীয়ত,  জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতি বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।

    তৃতীয়ত, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
                            <<<<<>>>>>
Read More

Wednesday 16 May 2018

মাধ্যমিক শিক্ষায় হান্টার কমিশনের সুপারিশ আলোচনা কর।

Leave a Comment
প্রশ্ন:  মাধ্যমিক শিক্ষায় হান্টার কমিশনের (১৯৮২-৮৩) সুপারিশ আলোচনা কর।     ৫ নম্বর
   উঃ
         লর্ড রিপন 1882 খ্রিস্টাব্দে উয়িলিয়াম হান্টারের সভাপতিত্বে যে শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করেন সেটি হলো হান্টার কমিশন। এটি ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন। 

    মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে হান্টার কমিশনের সুপারিশ: মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হলো নিম্নরূপ -

  ১) মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালনায় সরকার সক্রিয় ভূমিকা নেবেন না।

   ২) বেসরকারি উদ্যোগে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহ গড়ে উঠবে।

  ৩) সরকারি অনুদানের সাহায্যে বিদ্যালয়গুলির আর্থিক সংকট মোচন করা হবে।

   ৪) পাঠ্যক্রমের বিভাজনে - A কোর্স ও B কোর্স করতে হবে।

   ৫) নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা হলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি।

   ৬) অনুন্নত অঞ্চলে বিদ্যালয় স্থাপনেরও সুপারিশ করেছেন কমিশন।

   ৭) মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
                       <<<<<>>>>>
Read More

Monday 14 May 2018

রাধাকৃষ্ণন কমিশনের (১৯৪৮) অর্থসংক্রান্ত সুপারিশগুলি কি কি?

Leave a Comment
    প্রশ্ন: রাধাকৃষ্ণন কমিশনের (১৯৪৮) অর্থসংক্রান্ত সুপারিশগুলি কি কি?                              ৫ নম্বর

উ:
        রাধাকৃষ্ণন কমিশনের অর্থসংক্রান্ত সুপারিশ:  কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থসংস্থান সম্পর্কে সুপারিশে বলেছে -

     ১) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর গৃহনির্মাণের জন্য অর্থ দান করতে হবে।

    ২) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হবে সেগুলি ক্রয় করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সাজ সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে। আর এই ক্রয়ের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হবে।

    ৩) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে সমস্ত শিক্ষার্থী দূর থেকে আসে তাদের জন্য ছাত্রাবাস তৈরি করতে হবে এই ছাত্রাবাস তৈরীর জন্য যে খরচ হবে তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।

    ৪) মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বেতন প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত সাহায্য দান করতে হবে।

      ৫) উচ্চ শিক্ষায় বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজকর্ম হয় এবং এর জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থের যোগান রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।

     ৬) মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য এবং বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রকে অর্থ প্রদান 
করতে হবে।
                                   <<<<<>>>>>
Read More

Sunday 13 May 2018

মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারী কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য কর

Leave a Comment
    প্রশ্ন: মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য কর।                ৫ নম্বর

       উত্তর: মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য:                        

   ১) মুদালিয়র কমিশনের নবম শ্রেণি থেকে বিশেষীকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে, কোঠারি কমিশনে একাদশ শ্রেণী থেকে বিশেষীকৃত শিক্ষার সংস্থান রয়েছে।

     ২) মুদালিয়র কমিশনে পাঠ্যক্রমে বিষয়গুলিকে মানবীয় বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, কারিগরি বিভাগ, কৃষি বিভাগ, বাণিজ্য, চারুকলা বিভাগ ও গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগ - এই সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অপরদিকে কোঠারী কমিশনে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ঐচ্ছিক বিষয়গুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি। শিক্ষার্থীর স্বাধীনভাবে যেকোন বিষয় নির্বাচন করার অধিকার আছে।

     ৩) মুদালিয়র কমিশনে পাঠ্যক্রমের একটি সুনির্দিষ্ট সংগঠিত রূপ রচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোঠারি কমিশনে পাঠ্যক্রমের একটি খসড়া কাঠামো ও কতগুলি নীতি প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    ৪) মুদালিয়ার কমিশনে হস্তশিল্পকে আংশিকভাবে অবশ্যিক করা হয়েছে। কিন্তু কোঠারি কমিশনে কর্ম অভিজ্ঞতাকে সর্বশেষ পর্যায় পর্যন্ত আবশ্যিক করা হয়েছে।

    ৫) কোঠারি কমিশনে সহপাঠ ক্রমিক কার্যাবলীকে সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপন করা হয়নি। কিন্তু কোঠারি কমিশনে সমাজসেবা, শারীর শিক্ষা ইত্যাদিতে আবশ্যিক করা হয়েছে।

  ৬) মুদালিয়র কমিশনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোঠারী কমিশনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
  
                            <<<<<>>>>>

Read More

Saturday 12 May 2018

পরিণমন বলতে কি বোঝ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

1 comment
পরিণমন বলতে কি বোঝ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উঃ
     পরিণমন: স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে যে পরিবর্তন হয় তাকে পরিণমন বলে।
       
       পরিণমন বলতে সেই সব আচরণের পরিবর্তনকে বোঝায় যা কোনো রকম অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ঘটে এবং যেগুলির জন্য কোন অনুশীলনের দরকার হয়না। যেমন, বিশেষ একটি বয়স হলে শিশুর মাংসপেশী শক্ত হয় এবং সে হাঁটতে শেখে। কিন্তু এই বয়সে তাকে সাইকেল চালানো শেখানো যাবে না। কোন শিখন কৌশল অবলম্বন করেও তা সম্ভব নয়।

    পরিণমনের বৈশিষ্ট্য: পরিণমনে নিম্নলিিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়়। 

    (১)  বিকাশের প্রক্রিয়া: পরিণমন শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেখা দেয়। শিশুর হাঁটা শেখা তার পরিণমনের ফল।

     (২) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: পরিণমনের জন্য অতীত অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তাই মনোবিদগণ একে স্বাভাবিক বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেন। 

    (৩) জৈবিক বিকাশ: পরিনমন মূলত ব্যক্তির জীবনের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির জৈবিক কেন্দ্রের বিকাশে কোন ত্রুটি থাকলে তার পরিণমনলব্ধ আচরণও ত্রুটিপূর্ণ হয়।

        (৪) অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া: পরিণমন সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। বাহ্যিক পরিবেশের উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত নয়।

         (৫)  দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া: পরিণমন মূলত বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তির দৈহিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

         (৬) সর্বজনীন: প্রতিটি বয়ঃস্তরে  প্রতিটি ব্যক্তির প্রায় একই রকমের পরিণমন ঘটতে দেখা যায়।

           (৭) সীমাবদ্ধ:  মাতৃগর্ভে ভ্রূণ সঞ্চারের সময়ে আরম্ভ হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিণমনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

          

    
Read More

Thursday 10 May 2018

১। সমাজবিদ্যার (Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

1 comment
 প্রশ্ন: সামাজিক গোষ্ঠী বলতে কী বোঝো? এর প্রকৃতি আলোচনা কর। সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর:
       সামাজিক গোষ্ঠী এবং তার স্বরূপ: কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগবদ্ধ জনসমষ্টিকে সামাজিক গোষ্ঠী বলা হয়। এ প্রসঙ্গে গিসবার্ট বলেন,  সামাজিক গোষ্ঠী হলো জনসমষ্টি, যাঁরা একটি স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে পরস্পরের উপর কার্য করে। যেমন পরিবার, ক্লাব বা কোন রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।

     ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, "গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।"

       অবশ্য কতগুলি ব্যক্তির সমষ্টি মাত্রকেই গোষ্ঠী বলা যায়না। সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে এই জাতীয় সমষ্টির সঙ্গে কোন দ্রব্যের সমষ্টির তফাৎ নেই; কারণ গোষ্ঠীর সভ্যদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক নেই।
সামাজিক গোষ্ঠীর কোন প্রকার অস্তিত্ব থাকে না যদি না ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। সামাজিক গোষ্ঠী আবির্ভাব তখনি হয় যখন সামগ্রীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুস্পষ্ট সামাজিক সম্পর্ক থাকে এবং কোন একটা স্বীকৃত সংগঠনের মধ্যে থেকে কোনো সাধারণ স্বার্থ বা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের উপর কার্য করে। মানসিক, সামাজিক, ঐক্য এবং যান্ত্রিক সমষ্টি থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হলো সামাজিক গোষ্ঠী।

      সামাজিক গোষ্ঠী এবং সমাজ এক নয়, কারণ যেকোনো সামাজিক গোষ্ঠীই সমাজ নয়। এছাড়া সামাজিক গোষ্ঠী অপেক্ষা সমাজ অনেক কম স্থায়ী।
আবার আপাত গোষ্ঠীকে সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে এক করে ফেললে ভুল হবে। আপাত গোষ্ঠীর কোনো স্বীকৃত সংগঠন নেই, কিন্তু সামাজিক গোষ্ঠীর একটি স্বীকৃত সংগঠন আছে। এটা স্বীকার করতেই হয় যে, আপাত গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বর্তমান। উদাহরণস্বরূপ, 1 ওই দলের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো জনসমষ্টি, যাদের উদ্দেশ্য একসঙ্গে মিলেমিশে হরিনাম করা--কিন্তু এদের নির্দিষ্ট কোন সংগঠন নেই। একই ব্যবসায়ে নিযুক্ত যে জনসমষ্টি, যাদের পেশাগত উদ্দেশ্য এক কিন্তু তাদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন নেই।
অবশ্য এইসব গোষ্ঠী যদি সংগঠনের মাধ্যমে নিজেকে সংগঠিত করে তবে আপাত গোষ্ঠী সামাজিক গোষ্ঠী তে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

           সামাজিক গোষ্ঠী কিভাবে সৃষ্টি হয়?

         এর উত্তরে বলা যায় যে, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে একটি দৃঢ় সংগঠনের দ্বারা নিজেদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, এর মাধ্যমেই সামাজিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে।

    সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে  সামাজিক গোষ্ঠীগুলির শ্রেণীবিভাগ করা হয়। কয়েকটি মুখ্য বিভাগের উল্লেখ করা হলো--

     ১। সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে সমাজতাত্ত্বিক কুলি দুই প্রকার সামাজিক গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন। যথা-

   (ক) প্রাথমিক গোষ্ঠী বা মুখ্য গোষ্ঠী: যখন সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষ এবং গভীর হয় এবং মুখোমুখি সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তরঙ্গ 'আমরা' অনুভূতির প্রকাশ পায়, তখন তাকে প্রাথমিক গোষ্ঠী বলে।  যেমন - পরিবার।

   (খ) গৌণ গোষ্ঠী বা মাধ্যমিক গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরোক্ষ বা গৌণ হলে, তখন তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। যেমন- রাজনৈতিক দল, ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক, বিদ্যালয় ইত্যাদি।

  ২। সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগ: গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

   (ক) অন্তর্গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা রয়েছে, সেই গোষ্ঠীকে বলা হয় অন্তর্গোষ্ঠী। যেমন- পরিবার, ছেলেদের অথবা মেয়েদের দল অন্তর্গোষ্ঠী।

      (খ) বহির্গোষ্ঠী: ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যে গোষ্ঠী সম্পর্কে সে বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করে, ব্যক্তির কাছে সেই গোষ্ঠী বহির্গোষ্ঠী। যেমন- এক পরিবারের সদস্যদের কাছে অন্য পরিবার, ছেলেদের দলের কাছে মেয়েদের দল বহির্গোষ্ঠী।

     ৩। স্থায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে: স্থায়িত্বের স্তর অনুসারে গিসবার্ট চার প্রকার গোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন।  যথা-

          (ক) অস্থায়ী গোষ্ঠী: এই সমস্ত গোষ্ঠী সংগঠনের কথা চিন্তা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভাব ঘটে। যেমন - রাস্তায় কোনো অঘটন ঘটলে কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখানে মিলিত হয় আবার কিছু সময় পরে তারা নিজ নিজ গন্তব্য পথে চলে যায়। এ প্রকার গোষ্ঠীকেই বলা হয় অস্থায়ী গোষ্ঠী।

         (খ) স্বল্পকাল স্থায়ী গোষ্ঠী: সংগঠনের দ্বিতীয় স্তরে দেখা যায় এমন এক গোষ্ঠী যার সদস্যরা পূর্বে থেকে চিন্তা করে দলবদ্ধ হয়। যেমন- ছাত্র সংসদ।

      (গ) দীর্ঘকাল স্থায়ী গোষ্ঠী:  এই গোষ্ঠীর উৎপত্তি সদস্যদের ইচ্ছাধীন নয়, তা নির্ভর করে সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের ওপর। যেমন- শ্রমিক সংসদ, শিক্ষক সমিতি।
(ঘ) চিরস্থায়ী গোষ্ঠী: চতুর্থ স্তরে এক বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী দেখা যায় যা চিরস্থায়ী গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এদের অস্তিত্ব অঘঠন ছাড়া (যেমন ভূমিকম্প, মহামারী, রাষ্ট্রবিপ্লব ইত্যাদি) বিঘ্নিত হয় না। যেমন- রাস্ট্র, গ্রাম সমাজ ইত্যাদি।

    ৪। কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে: কর্মপদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

        (ক) বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: গোষ্ঠীর সদস্যরা যখন নির্দিষ্ট বা বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসরণ করে গোষ্ঠী পরিচালিত করে তখন তাকে বিধিবদ্ধ গোষ্ঠী বলে। যেমন- শ্রেণিকক্ষ।

         (খ) অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী: যে গোষ্ঠীতে সদস্যদের উপর গোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং সদস্যরা কাজকর্মে ও চিন্তা-ভাবনায় সকল প্রকার স্বাধীনতা ভোগ করে তাকে অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন - ফুটবল ক্লাব।


Read More

Monday 7 May 2018

B. A part 1 Sociology (সমাজবিদ্যা) Suggestion 2018 (University of Gour Banga)

1 comment
SUGGESTION FOR 2018
B.A. part-I (University of Gour Banga)
SOCIOLOGY (General)
 Paper Code- 1- B
[New Syllabus]

Full marks :  100                  Time :   3 Hours

                              বিভাগ - ক

প্রতিটি অংশ থেকে ন্যূনতম একটি করে মোট পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও:                                 মান: 15

                                     অংশ -1

১) সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর।
২) সমাজতত্ত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।
৩) সভ্যতার সংজ্ঞা দাও। সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্য নিরূপণ কর।
৪) সম্প্রদায় বলতে কি বোঝো?  জনসম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
৫) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝো?  সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন মাধ্যম আলোচনা কর।
৬) সামাজিক দ্বন্দ্ব বলতে কি বোঝ? এর বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।

                                অংশ - 2

৭) পরিবার কাকে বলে?  উদাহরণসহ পরিবারের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
৮) সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কি বোঝ?  সামাজিক স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।
৯) বিবাহের সংজ্ঞা দাও।  উদাহরণসহ বিবাহের নিয়ম গুলি আলোচনা করো।
১০) আত্মীয়তা কাকে বলে? আত্মীয়তার ধরন বা প্রকার লেখ।
১১) সামাজিক পরিবর্তন কাকে বলে?  সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদান বা কারণগুলি আলোচনা কর।
১২) লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কি বোঝ? সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকারভেদ হিসাবে লিঙ্গবৈষম্যের সম্পর্কে  কর।

                                   অংশ - 3

১৩) গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে? গ্রামীণ সমাজের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
১৪) নগর সমাজ বলতে কি বোঝ? নগর সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
১৫) শিল্প শ্রমিক কাকে বলে? শিল্প শ্রমিক কাকে বলে সংগঠিত ও অসংগঠিত শিল্প শ্রমিকদের পার্থক্য নিরূপণ কর।
১৬) নগরায়ন বলতে কি বোঝ? নগরায়নের প্রকার গুলি আলোচনা করো।
১৭) বিশ্বায়ন কাকে বলে? বিশ্বায়নের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

                                বিভাগ - খ

                                  অংশ -1

প্রতিটি অংশ থেকে ন্যূনতম একটি করে মোট 5 টি প্রশ্নের উত্তর দাও :                                    মান : 5

১৮) লোকাচার ও লোক নীতির উপর  সংখিপ্ত টীকা লেখ।
১৯) দ্বন্দ্বের সামাজিক ভূমিকা আলোচনা কর।
২০) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিধিবদ্ধ মাধ্যম গুলি আলোচনা করো।
২১)  প্রতিষ্ঠান ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য রচনা কর।
২২) সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
২৩) সমাজতত্ত্ব ও দর্শনের সম্পর্ক আলোচনা কর।
২৪) সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে পার্থক্য লেখ।

                                   অংশ - 2

২৫) পরিবারের কার্যাবলী আলোচনা কর।
২৬) উদাহরণসহ বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
২৭) একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে?
২৮) গোত্র কাকে বলে? এর প্রকারভেদ গুলি কি কি?
২৯) 'সামাজিক বিবর্তন এবং প্রগতি বা উন্নতি' - এই ধারণা দুটির ব্যাখ্যা কর।
৩০) জাতির মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

                               অংশ - 3

৩১) গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য নিরূপণ কর।
৩২) ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে উদারীকরণের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
৩৩) ভারতে গ্রামীণ সমাজে গ্ৰামউন্নয়নের কর্মসূচির প্রভাবের মূল্যায়ন আলোচনা কর।
৩৪) ভারতীয় নগর সমাজে মিউনিসিপ্যালিটির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
৩৫) শিল্প সামাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
৩৬) নগর সমাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
৩৭) জাতীয় শ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।

বি: দ্র: [পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে  প্রতিটি অংশে  তিনটি করে প্রশ্ন থাকে।]
                          <<<<<<>>>>>>
Read More