Friday 18 May 2018

পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা করো। (INDIAN PHILOSOPHY)

Leave a Comment
প্রশ্ন: পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা কর।
উ: পঞ্চাবয়বী ন্যায়: ভারতীয় দার্শনিকরা মনে করেন পরার্থানুমান বা অন্যের কাছে কিছু প্রমাণের জন্য অনুমান করতে হলে অনুমানকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। কেননা, এ অনুমান হলো পরকে বোঝাবার জন্য। নৈয়ায়িকদের মতে, পরার্থানুমানকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি বচন বা অবয়বের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হলো- (১) প্রতিজ্ঞা, (২) হেতু, (৩) উদাহরণ, (৪) উপনয়, (৫) নিগমন। এই পাঁচটি অবয়বকে একত্রে বলা হয় পঞ্চাবয়বী ন্যায়। পরার্থানুমানের অবয়বগুলিকে যুক্তির আকারে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে-

(১)  পর্বতটি বহ্নিমান (প্রতিজ্ঞা)
(২) কারণ  পর্বতটি ধূমবান (হেতু)
(৩) যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি, যেমন- মহানস বা পাকশালা, কামারশালা ইত্যাদি (উদাহরণ)
(৪)  পর্বতটিও ধূমবান (উপনয়)
(৫) সুতরাং,  পর্বতটি বহ্নিমান (নিগমন বা সিদ্ধান্ত)।

    পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের প্রত্যেকটি অবয়বের পরিচয়, কার্য ও প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিজ্ঞা : যে অবয়ব বাক্যে বক্তা তার প্রতিবাদ্য বিষয়টিকে বাক্যের আকারে প্রকাশ করে তাকে প্রতিজ্ঞা বলে। প্রতিজ্ঞা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা হয় যে পক্ষে সাধ্য আছে। 'পর্বটি বহ্নিমান' - এই প্রতিজ্ঞা বাক্যে পর্বত = পক্ষ এবং বহ্নি = সাধ্য। এই বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে পক্ষ সাধ্যবিশিষ্ট। সুতরাং পর্বতটি যে বহ্নিবিশিষ্ট তা প্রতিপাদন করাই প্রতিজ্ঞার মূল কাজ। কাজেই পক্ষ জ্ঞানের জন্য প্রতিজ্ঞা বাক্যে প্রয়োজন হয়।

      হেতু : ন্যায়ের দ্বিতীয় অবয়ব বাক্যটি হল হেতুবাক্য। যা সাধ্যকে সাধন করে বা প্রমাণ করে তার নাম হেতু। এই হেতুর অপর নাম লিঙ্গ। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে বা লিঙ্গ প্রতিপাদন করে। তাই লিঙ্গ জ্ঞানের জন্যই হেতু বাক্যের প্রয়োজন হয়।

    উদাহরণ : ন্যায়ের তৃতীয় অবয়ব বাক্যটি হল উদাহরণ। যে বাক্য ব্যাপ্তি প্রতিপাদন করে তাকেই উদাহরণ বাক্য বলে। পরিচিত দৃষ্টান্ত সহযোগে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সার্বিক সম্পর্ক জ্ঞাপক অবয়ব হলো উদাহরণ। অর্থাৎ বাক্যের প্রতিজ্ঞা এবং হেতুর মধ্যে যে ব্যাপ্তি সেটিকে পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিপাদন করার জন্যই উদাহরণ বাক্যে প্রয়োজন হয়।

   উপনয় : যে বাক্যে ব্যাপ্তিবিশিষ্টি হেতু বা লিঙ্গের প্রতিপাদন করা হয়, তাকে উপনয় বাক্য বলা হয় । সাধ্যের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হেতুপদের ও পক্ষপদের সম্বন্ধজ্ঞাপক অবয়বই উপনয়। এই বাক্যে পক্ষে সাধ্যের ব্যাপ্তিবিশিষ্ট হেতুর প্রতিপাদন করা হয়। উপনয়ে সামান্য বচনটিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কাজেই, পক্ষধর্মতা জ্ঞানের জন্য উপনয় বাক্যের প্রয়োজন হয়।

     নিগমন : যে বাক্যে ব্যাপ্তি ও পক্ষধর্মতাবিশিষ্ট হেতুর দ্বারা পক্ষে সাধ্য আছে তা প্রতিপাদিত হয়, তাকে নিগমন বাক্য বলা হয় । নিগমন হলো সিদ্ধান্ত অবয়ব। পূর্ববর্তী বাক্যগুলির উপর নির্ভর করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তাকে নিগমন বলে। সুতরাং, প্রতিজ্ঞা বাক্য থেকে পাওয়া বিষয়টিকে প্রমাণ করা নিগম মনের কাজ।
                     <<<<<<>>>>>>
If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: