অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডিলাইটিস (Ankylosing Spondylitis) ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডিলাইটিস কী?
অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডিলাইটিস (AS) হলো এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত বাত ব্যথা, যা প্রধানত মেরুদণ্ড, কোমর ও নিতম্বের জয়েন্টকে প্রভাবিত করে। ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে যায় এবং শরীর বাঁকা হয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত তরুণ বয়সে শুরু হয় এবং পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
---
কারণ
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া – শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজের জয়েন্ট আক্রমণ করে।
বংশগত কারণ – HLA-B27 জিন বহনকারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
পরিবেশগত কারণ – সংক্রমণ বা ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা।
বয়স ও লিঙ্গ – ২০–৪০ বছরের পুরুষদের ঝুঁকি বেশি।
---
লক্ষণ
কোমর ও নিতম্বে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া
সকালে ঘুম থেকে উঠলে মেরুদণ্ড শক্ত লাগে (Morning Stiffness)
ব্যথা চলাফেরায় কমে, বিশ্রামে বাড়ে
মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে যাওয়া
বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট (পাঁজরের জয়েন্ট আক্রান্ত হলে)
দীর্ঘদিনে শরীরের ভঙ্গি (Posture) স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়
---
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডিলাইটিসের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি একটি কার্যকর ও নিরাপদ ব্যবস্থা। এটি প্রদাহ কমায়, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মেরুদণ্ডের শক্ত হয়ে যাওয়া ধীর করে।
প্রচলিত হোমিও ঔষধ
Kalmia Latifolia – ব্যথা দ্রুত এক জয়েন্ট থেকে অন্য জয়েন্টে চলে যায়।
Rhus Toxicodendron – সকালে বা বিশ্রামের পর ব্যথা বাড়ে, গরমে আরাম হয়।
Phosphoric Acid – দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও স্নায়বিক ক্লান্তিতে উপকারী।
Sulphur – ক্রনিক বাত ব্যথা ও চর্মরোগ থাকলে।
Aurum Metallicum – দীর্ঘস্থায়ী হাড়-জয়েন্ট প্রদাহে কার্যকর।
---
বায়োকেমিক চিকিৎসা
Kali Phos 6x – স্নায়ুর শক্তি বাড়ায় ও ব্যথা কমায়।
Mag Phos 6x – স্নায়বিক ক্র্যাম্প ও ব্যথা উপশমে কার্যকর।
Ferrum Phos 6x – প্রদাহের প্রাথমিক পর্যায়ে উপকারী।
Calcarea Fluor 6x – জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া ধীর করতে সাহায্য করে।
---
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া (দুধ, মাছ, ডিম)
অতিরিক্ত লাল মাংস ও তেল-চর্বি এড়িয়ে চলা
নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম (বিশেষ করে মেরুদণ্ডের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ)
ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পরিহার করা
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও ঘুমানো
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
---
হোমিওপ্যাথির গুরুত্ব
অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডিলাইটিস পুরোপুরি সারানো না গেলেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদে রোগের অগ্রগতি ধীর করে, প্রদাহ ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগীর জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলে। এটি নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।