Monday, 11 October 2021

কয়েকজন বিখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিকদের পরিচিতি (Class xi)

Leave a Comment

 কয়েকজন বিখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিকদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়


নাম : সক্রেটিস

জন্ম : 470 খ্রিস্টপূর্বাব্দ 

মৃত্যু : 399 খ্রিস্টপূর্বাব্দ

যুগ : প্রাচীন দর্শন

অবদান : সক্রেটীয় পদ্ধতি

ভাবগুরু : এথাক্সাগোরাস

বিখ্যাত উক্তি : “There is only one good, knowledge, and one evil ignorance."


সক্রেটিস (Socrates) (৪৭০-৩৯৯ খিস্টপূর্বাব্দ) : সক্রেটিস ৪৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের অন্তর্গত এথেন্স  নগরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসেই তাঁর মৃত্যু হয়। পিতা সফ্রোনিস্কাস ছিলেন দরিদ্র ভাস্কর শিল্পী এবং মাতা ফিনারেট ছিলেন একজন ধাত্রী। তিনি অসামান্য জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন এবং এই জ্ঞান তিনি নিজের চেষ্টাতেই অর্জন করেছিলেন। সক্রেটিস সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তত্ত্ব দর্শন প্রবর্তন করেননি, তিনি কেবল দর্শনের লক্ষ্য এবং আলোচনার পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর মতে, দর্শনের লক্ষ্য হল। সত্যজ্ঞান অনুসন্ধান এবং দর্শনের পদ্ধতি হল বুদ্ধি-বিচার বিশ্লেষণ। সক্রেটিসের পূর্বে গ্রিসের সোফিস্ট সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষকেই জ্ঞান বলতেন। কিন্তু সক্রেটিস সোফিস্টদের মত খণ্ডন করে বলেন—জান মাত্রেরই উৎস হল প্রত্যয় বা ধারণা এবং কেবল বুদ্ধির মাধ্যমেই প্রত্যয় বা সামান্য ধারণা গঠন করা সম্ভব। সক্রেটিস তাঁর দার্শনিক মতবাদকে লিপিবন্ধ করে কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। সক্রেটিসের সুযোগ্য শিষ্য প্লেটোর রচনার মাধ্যমেই আমরা সক্রেটিসের তত্ত্ব দর্শন সম্পর্কে অবহিত। হই। মূলত বিশুদ্ধ বুদ্ধিলব্ধজ্ঞান, সততা ও ন্যায়পরায়ণতাকে জীবনের আদর্শরূপে গ্রহণ করে সক্রেটিস এথেন্সের যুবসমাজকে ওই আদর্শে দীক্ষিত করতে প্রয়াসী হন। লক্ষ্য ছিল ওই যুবকবৃন্দ দেশকে কুসংস্কার ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করে দেশের উন্নতি ঘটাতে সমর্থ হবে। এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে এথেন্সের শাসকবর্গ সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। অন্যায়ের কাছে নত না-হয়ে হেমলকের মতো তীব্র বিষ পান করে সক্রেটিস সানন্দে মৃত্যুবরণ করেন।

নাম:  প্লেটো

জন্ম:  427 খ্রিস্টপূর্বাব্দ

মৃত্যু: 348 খ্রিস্টপূর্বাব্দ

অবদান: প্লেটোনীয় বস্তুবাদ

ভাবগুরু:  সক্রেটিস

গ্রন্থ: The Republic, Meno, Protagoras, Theactetus 

বিখ্যাত উক্তি:  Knowledge without justice ought to be called cunning rather than wisdom.


প্লেটো (Plato) (৪২৭-৩৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): সম্ভবত ৪২৭-৪২১ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে এথেন্সের এক অভিজাত পরিবারে প্লেটো জন্মগ্রহণ করেন এবং মাত্র ৮২ বৎসর বয়সে এথেঙ্গেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পিতার নাম অ্যারিস্টন (Ariston) ও মাতার নাম পরিকটাইওনি (Perictione)সের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক প্লেটো ৩৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্সে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাডেমির (Academy) প্রতিষ্ঠা করেন, যাকে পাশ্চাত্যের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়রূপে গণ্য করা - হয়। এই শিক্ষায়তনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সুসংবদ্ধভাবে দার্শনিক, গণিত এবং বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও গবেষণা করা।

  প্লেটোর মতে, বস্তুস্বরূপের বা সারসত্তার জ্ঞানলাভ করাই হল দর্শনের লক্ষ্য। প্লেটো তাঁর দর্শনে দুটি জগতের উল্লেখ করেছেন। একটি হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চিরচঞ্চল বিশেষ বিশেষ বস্তু ও ব্যক্তির জগৎ। আর অন্যটি হল বিশুদ্ধ বুদ্ধিলব্ধ ইন্দ্রিয়াতীত শাশ্বত ধারণার জগৎ, যেটি নিত্য ও শাশ্বত সত্য। প্লেটো বলেন, জগতের প্রতিটি বস্তু বা ব্যক্তি কোনো না কোনো জাতির অন্তর্গত। ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও জাতির কোনো  পরিবর্তন হয় না। জাতিই হল সত্য। ব্যক্তি হল জাতির অনুলিপি বা দৃষ্টান্তমাত্র। অনেকের মধ্যে যা সাধারণভাবে উপস্থিত থাকে তাই হল জাতি বা সামান্য, যাকে বিশুদ্ধ বুদ্ধির মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হয়। যেমন প্রতিটি মানুষ 'মনুষ্যত্ব' সামান্যের অনুলিপি। তাহলে জাতি বা ধারণা (ideas or concept) হল মূল আর চিরচঞ্চল জগতের সকল কিছুই সেই মূলের অনুলিপি। বস্তুজগৎ আসলে শাশ্বত ধারণা জগতের ছায়ামাত্র "তাই জগতের অন্তরালবর্তী চিরন্তন সত্যকে জানাই দর্শনের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্লেটোই প্রাচীন গ্রিসের প্রথম দার্শনিক, যিনি তাঁর দার্শনিক চিন্তাসমূহ সুসংবন্ধভাবে গ্রন্থ আকারে লিখে গিয়েছেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল- (i) The Republic', (ii) Theaetetus', (im) Protagoras (iv) 'Symposium (v) Phaedo', (vi) 'Meno' প্লেটো বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসাবে খ্যাত।


নাম: অ্যারিস্টটল

জন্ম:  384 খ্রিস্টপূর্বাব্দ

মৃত্যু: 322 খ্রিস্টপূর্বাঙ্গ 

যুগ:  প্রাচীন দর্শন

অবদান:  দ্রব্য সম্পর্কে মতবাদ

ভাবগুর: প্লেটো

গ্ৰন্থ: Logic, Metaphysics, Ethics 

বিখ্যাত উক্তি: The roots of education are bitter, but the fruit is sweet.


অ্যারিস্টটল (Aristotle) (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়াম অ্যারিস্টটল জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাত্র ৬২ বৎসর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। পিতা নিকোম্যাকাস (Nichoma chus) ছিলেন ম্যাসিডনের রাজপরিবারের একজন চিকিৎসক। শৈশবকালেই অ্যারিস্টটলকে তাঁর অভিভাবকগণ সর্বোত্তম শিক্ষালাভের জন্য প্লেটোর 'একাডেমি'-তে প্রেরণ করেন। প্লেটোর তত্ত্বাবধানে সেখানে তিনি ২০ বৎসর ধরে শিক্ষালাভ করেন। অ্যারিস্টটল ছিলেন একাধারে দার্শনিক, তর্কবিজ্ঞানী ও বৈজ্ঞানিক। জ্ঞানের এমন কোনো দিক ছিল না যার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হননি। এজন্য তাঁকে 'সর্ববিশারদ মহাজ্ঞানী' আখ্যা দেওয়া হত।


প্লেটোকে অনুসরণ করে অ্যারিস্টটলও বলেছেন-দর্শন ও অধিবিদ্যার লক্ষ্য মূলত এক ও অভিন্ন। তাঁর মতে, দর্শনের উদ্দেশ্য হল সব পদার্থের অন্তর্নিহিত সারসত্তার স্বরূপ উদ্ঘাটন। 'দর্শন হল পরম সত্তার বা বিশুদ্ধ সত্তার বিজ্ঞান' (Philosophy is the Science being qua being)। দর্শনের স্বরূপ সম্পর্কে অ্যারিস্টটল প্লেটোর মতকে সমর্থন করলেও প্লেটোর দ্বিজাগতিক তত্ত্বকে (two world theory) অগ্রাহ্য করেছেন। অর্থাৎ, অ্যারিস্টটল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগত ও অতীন্দ্রিয় জগৎ নামক দুইটি জগতের ভেদ স্বীকার করেননি। অ্যারিস্টটলের মতে, 'জাতি' ও 'ব্যক্তি' অর্থাৎ আকার ও উপাদান পৃথক পৃথকভাবে অস্তিত্বশীল নয়। ব্যক্তিমানুষকে বাদ দিয়ে মনুষ্যত্বের অস্তিত্ব যেমন কল্পনা করা যায় না, তেমনি মনুষ্যত্ব নামক গুণটিকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্ব ভাবা যায় না। তাই তাঁর সিদ্ধান্ত হল, সমস্ত অস্তিত্বশীল পদার্থই সামান্য (জাতি) ও বিশেষের (ব্যক্তি) সমন্বয়।" অ্যারিস্টটল রচিত দর্শনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল- (i) "The Meteorology (ii) De Anima, (iii) The Problemata'. (iv) The Dialogue of Philosophy (v) 'Metaphysics', (vi) The Nicomachean Ethics' ইত্যাদি।


নাম:  সেন্ট টমাস আকুইনাস 

জন্ম: 1225 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু : 1274 খ্রিস্টাব্দ

 যুগ:  মধ্যযুগ দর্শন

অবদান: ধর্মতত্ত্ব

ভাবগুরু : আলবার্ট দ্য গ্রেট


গ্রন্থ: Summa Theologica, Summa Contra Gentiles 

বিখ্যাত উক্তি:  By nature all men are equal in liberty, but not in other endowment.


নাম: সেন্ট অগাস্টিন

জন্ম : 354 খ্রিস্টাব্দ

 মৃত্যু: 430 খ্রিস্টাব্দ

যুগ : মধ্যযুগীয় দর্শন

অবদান:  ধর্মতত্ত্ব

ভাবগুরু : সেন্ট অ্যামব্রোজ

গ্রন্থ: Confessions, The City of God 

বিখ্যাত উক্তি : Patience is the Companion of Wisdom


নাম: রেনে দেকার্ত 

জন্ম: 1596 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু : 1650 খ্রিস্টাব্দ

 যুগ : আধুনিক দর্শন

অবদান : কার্তেজীয়বাদ

ভাবগুরু: প্লেটো-অ্যারিস্টটল

গ্ৰন্থ: The Discourse of Method, The Principles of Philosophy. The Meditation 

বিখ্যাত উক্তি : Cagito ergo Sum


রেনে দেকার্ত (Rena Descartes) (১৫৯৬-১৬৫০ খ্রিস্টাব্দ): ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ ফ্রান্সের তুরাইন প্রদেশের এক অভিজাত পরিবারে দেকার্ত জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি সুইডেনের স্টকহলমে তাঁর মৃত্যু হয়।

 দর্শনের প্রতি অনুরক্ত দেকার্ত শৈশব থেকেই অপরাপর পাঠ্যবিষয় অপেক্ষা গণিতশাস্ত্রের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং উপলব্ধি করেছিলেন যে, গাণিতিক জ্ঞানই প্রকৃষ্ট জ্ঞান, গাণিতিক পদ্ধতিই সর্বোত্তম পদ্ধতি। তাই দেকার্ত দর্শনের ক্ষেত্রে গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে দর্শনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।


পাশ্চাত্য দর্শনে দেকাতই সর্বপ্রথম দার্শনিক যিনি প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় জ্ঞানকে সন্দেহ বা সংশয় পোষণ করেন। তিনি সার্বিক সংশয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে এমন এক সংশয়াতীত জ্ঞানে বা বচনে উপনীত হতে প্রয়াসী হন যে জ্ঞান বা বচন থেকে অপরাপর সংশয়াতীত ও সুনিশ্চিত জ্ঞানকে নিষ্কাশন করা যায়। সংশয় পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে দেকার্ত দর্শনের ক্ষেত্রে প্রথম যে সংশয়াতীত বচনটি লাভ করেন তা হল 'আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি' (I think, therefore I exist)। এই সংশয়াতীত অস্তিত্বসূচক জ্ঞান থেকে অবরোহ পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি ঈশ্বর ও জড়জগতের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। দেকার্তকে এজন্য আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনকরূপে গণ্য করা হয়। একজন বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসাবে দেকার্ত দেহ ও মনের মধ্যে যে বিরুদ্ধভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন তা ‘দ্বৈতবাদ' নামে খ্যাত। দেকার্ত রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল- (i) The Discourse on Method (ii) 'The Meditation', (iii) The Principles of Philosophy' ইত্যাদি।

নাম: বেনেডিক্ট স্পিনোজা

জন্ম: 1632 খ্রিস্টাব্দ 

মৃত্যু: 1677 খ্রিস্টাব্দ

যুগ: আধুনিক দর্শনের যুগ 

অবদান:  সর্বেশ্বরবাদ

ভাবগুরু : দেকার্ত

গ্রন্থ: Ethica, Short Treatise on God, Man and Your patience Human Welfare, Thactus de Intellectus Emenditone 

বিখ্যাত উক্তি : Two things define you. Your patience when you have nothing, and your attitude when you have everything.


নাম : জন লক

জন্ম : 1632 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু : 1704 খ্রিস্টাব্দ

যুগ : আধুনিক দর্শন

অবদান : অভিজ্ঞতাবাদ

 ভাবগুরু : ফ্রন্সিস বেকন

গ্রন্থ : Essay on Human Understanding, Thought on Education, Treatise on Government 

বিখ্যাত উক্তি : The discipline of desire is the background of character.


নাম : জর্জ বার্কলে

জন্ম : 1685 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু : 1753 খ্রিস্টাব্দ

যুগ : আধুনিক দর্শন

অবদান : আত্মগত ভাববাদ 

ভাবগুরু : নিকোলাস মালিব্রাঞ্চ

গ্রন্থ : A Treastise Concerning the Principles of Human Knowledge, Three Dialogues between Hylas and Philonous 

বিখ্যাত উক্তি : We have first raised a dust and then complain we cannot see.


নাম : ডেভিড হিউম

জন্ম: 1711 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু : 1776 খ্রিস্টাব্দ

যুগ : আধুনিক দর্শন

অবদান : কার্যকারণ তত্ত্ব

ভাবগুরু : জর্জ বার্কলে


গ্রন্থ : A Treatise of Human Nature, An Enquiry Concerning Human Understanding

 বিখ্যাত উক্তি : A wise man proportions his belief to the evidence.


নাম : ইম্যানুয়েল কান্ট

জন্ম: 1724 খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যু: 1804 খ্রিস্টাব্দ

যুগ : আধুনিক যুগ

অবদান : বিচারবাদ

ভাবগুরু : লাইবনিজ

গ্রন্থ : The Critique of Pure Reason, The Critique of Practical Reason, The Critique of Judgement 

বিখ্যাত উক্তি : Science is organised knowledge, Wisdom is organised life.


<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>


If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: