ইউরিক এসিড (Uric Acid / গাউট) এর হোমিও ঔষধ
ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার কারণ
1. অতিরিক্ত পিউরিন (Purine) জাতীয় খাবার খাওয়া যেমন - লাল মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, মটরশুঁটি, মাশরুম ইত্যাদি।
2. কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
কিডনি ঠিকভাবে ইউরিক এসিড ছাঁকতে না পারলে শরীরে জমে যায়।
3. অতিরিক্ত মদ্যপান
বিশেষ করে বিয়ার ও ওয়াইন ইউরিক এসিড বাড়ায়।
4. স্থূলতা (Obesity)
অতিরিক্ত ওজন ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়।
5. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেমন: ডাইইউরেটিক (জল কমানোর ওষুধ), কেমোথেরাপি ইত্যাদি।
6. ডিহাইড্রেশন (জল কম খাওয়া)
শরীরে পর্যাপ্ত জল না থাকলে ইউরিক এসিড ঘনীভূত হয়ে জমে যায়।
. অন্যান্য রোগ
ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি ডিজিজ।
লক্ষণ: উচ্চ ইউরিক এসিডের ফলে গাউট বা জয়েন্টের প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
হঠাৎ ও তীব্র জয়েন্টে ব্যথা (বিশেষ করে বড় আঙুলের পায়ে)
জয়েন্টে লালচে বা ফোলা দেখা দেয়
চলতে বা হাটা কষ্টকর হয়
রাতে ব্যথা তীব্র হয়
কাঁধ, কনুই বা হাঁটুতে হঠাৎ ব্যথা
জয়েন্ট জ্বালা ও ফোলা
দুর্বলতা, ক্লান্তি, অনিদ্রা
কখনও কখনও জ্বর বা শরীরের অস্বস্তি
প্রধান হোমিওপ্যাথিক ঔষধ (লক্ষণভেদে):
1. অ্যাসিড ফসফরিকাস (Acidum Phosphoricum):
ইউরিক অ্যাসিড বেশি, শরীর দুর্বল, ক্লান্তি, অনিদ্রা, স্মৃতিশক্তি কম।
গাউটের ব্যথা অধিকাংশ সময় রাতের দিকে তীব্র হয়।
2. এলুমিনা (Alumina):
চলতে গেলে হাঁটুর ব্যথা, জয়েন্টে ঝিঁঝিঁ ঝাঁকুনি।
3. ব্রায়োনিয়া (Bryonia):
জয়েন্ট ব্যথা ছোঁয়াতে বা ছোটো আন্দোলনেও বৃদ্ধি পায়।
বিশ্রামে ব্যথা হ্রাস পায়।
4. রস টক্সিকোডেন্ড্রন (Rhus Toxicodendron):
শীতল আবহাওয়ায় ব্যথা বৃদ্ধি, গরমে আরাম।
হাঁটাচলা ও আন্দোলনের সাথে ব্যথা কমে।
5. ক্যালকেরিয়া ফ্লোর (Calcarea Fluorica):
দীর্ঘমেয়াদী জয়েন্টের কঠিনতা ও ব্যথার জন্য।
6. আর্জেন্ট নাইট্রিকাম (Argentum Nitricum):
হঠাৎ ব্যথা, জয়েন্ট লালচে, ফোলা।
রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধের নির্বাচন:
জয়েন্টে তীব্রতা বেশি, বিশ্রামে আরাম: Bryonia, Rhus tox
দুর্বলতা ও স্মৃতিশক্তি কম: Acidum Phos, Argent Nitricum
দীর্ঘমেয়াদী জয়েন্ট দুর্বলতা: Calcarea Fluorica, Alumina
Antidote (পাল্টা বা উপশমকারী ঔষধ):
ক্যামফর (Camphora), কফি (Coffea), স্ট্যাফিসাগ্রিয়া (Staphysagria)
পরবর্তী ওষুধ:
চায়না (China), ফেরুম (Ferrum), সেলিনি (Selenium), লাইকো (Lycopodium), নক্স ভমিকা (Nux Vomica), সলফার (Sulphur), বেলাডোনা (Belladonna), আর্সেনিকাম (Arsenicum Album)
ইউরিক এসিড (Uric Acid / Gout) খাদ্য নির্দেশিকা
১. সুপারিশকৃত খাদ্য (Allowed / Recommended Foods)
সবজি ও শাকসবজি: গাজর, শসা, লাউ, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি
ফলমূল: আপেল, কমলা, পেয়ারা, কলা, আঙ্গুর
দুধজাত দ্রব্য: দুধ, ছানা, দই (Low-fat preferred)
জল ও তরল: পর্যাপ্ত পানি (প্রতি দিন ৮–১০ গ্লাস), নারকেল পানি, সবুজ চা
আটা/ডাল: গম, চাল, যব, ছোলা, মসুর ডাল (পরিমাণমতো)
হালকা প্রোটিন: মাছ (কম পরিমাণে), মুরগি (কোনো তেল ছাড়া), ডিম (সীমিত)
২. এড়াতে হবে (Avoid / Restricted Foods)
মাংস ও প্রাণিজ খাবার: গরু, খাসি, মুরগি, বিশেষত অল্পপরিমাণে নয়, সসেজ, হ্যাম
সমুদ্রপণ্য: চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছের রুক্ষ অংশ (মাছের ক্যান/সৌফ)
অ্যালকোহল: বিয়ার, ভদকা, রাম, রেড ওয়াইন
মশলাদার ও তেলজাত খাবার: ভাজা, চিপস, তেলে ভাজা মাংস
চিনি ও মিষ্টি: কেক, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি
সোডা ও গ্যাসযুক্ত পানীয়: কোরা সরা ড্রিংক, কোমল পানীয়
৩. অতিরিক্ত নির্দেশনা
দিনে ৮–১০ গ্লাস জল পান করুন।
প্রোটিন গ্রহণ হালকাভাবে করুন; মাংস এবং মাছের পরিমাণ সীমিত রাখুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, অতিরিক্ত শরীরের চর্বি ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি করতে পারে।
হালকা ব্যায়াম ও নিয়মিত হাঁটাচলা করুন।
উপরের তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য যোগ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
0 comments:
Post a Comment