অষ্টম অধ্যায়
সাংকেতিক বা প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান(SYMBOLIC LOGIC)
সত্যাপেক্ষক বা অপেক্ষক (TRUTH FUNCTIONS)
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (মান -1)
১) সাংকেতিক বা প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান কাকে বলে?
উঃ যে যুক্তিবিজ্ঞান সংকেত বা প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তিকে প্রকাশ করে এবং যুক্তির বৈধতা বিচার করে, তাকে সাংকেতিক বা প্রতীকী প্রযুক্তিবিজ্ঞান বলে।
২) প্রতীক বা সংকেত বলতে কী বোঝায়?
উঃ প্রতীক বা সংকেত হলো প্রতিনিধিত্বমূলক চিহ্ন যার দ্বারা কোন বাক্য বা বচনকে অথবা তার কোন অংশকে নির্দেশ করা হয়। যেমন, ট্রাফিক সিগন্যালের লাল আলো দেখলে গাড়ি থেমে যায় আর সবুজ আলো দেখলে গাড়ি চলতে থাকে। এখানে লাল আলো গাড়ি থামার এবং সবুজ আলো গাড়ি চলার কৃত্রিম সংকেত।
৩) প্রতীক বা সংকেত কত প্রকার এবং কী কী?
উঃ দুই প্রকার যথা- শাব্দিক প্রতীক এবং অশাব্দিক প্রতীক।
৪) শাব্দিক প্রতীক কাকে বলে?
উঃ যখন আমরা বিভিন্ন বস্তু বা ক্রিয়া কি বোঝানোর চেষ্টা করি তখন বিভিন্ন প্রকার শব্দ প্রতীক বা সংকেত হিসাবে কাজ করে। যেমন- একটি প্রাণীকে দেখে যখন বলা হয় 'এটি একটি বিড়াল' তখন 'বিড়াল' শব্দটি একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রাণীকে বোঝাবার সংকেত হিসেবে কাজ করে। তেমনি চেয়ার, টেবিল, পুস্তক প্রভৃতি শব্দ প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। এগুলি হল শাব্দিক প্রতীক।
৫) অশাব্দিক প্রতীক বলতে কী বোঝ?
উঃ শব্দ নয় অথচ প্রতীক এমন যে সংকেত তাকেই বলা হয় অশাব্দিক। যেমন ইংরাজী বর্ণমালার বিভিন্ন বর্ণ a, b, c, d বা p, q, r, s কিংবা ক-খ-গ-ঘ ইত্যাদি বর্ণ হল অশাব্দিক প্রতীক। অনুরূপভাবে গণিতের +, -, ×, ÷ ইত্যাদি চিহ্ন অশাব্দিক প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
৬) প্রতীক এর গুরুত্ব কী?
উঃ সাংকেতিক যুক্তিবিজ্ঞানের অন্যতম প্রবক্তা আলফ্রেড নর্থ হােয়াইটহেডের (Whitehead) ভাষায় — প্রতীক বা সংকেত (Symbol) - এর সাহায্যে আমরা যুক্তির বিভিন্ন ধাপগুলাে এত দ্রুত সহজে অতিক্রম করতে পারি যেন মনে হয় শুধু যন্ত্রের মতােই চোখ কাজ করে যাচ্ছে, মগজের কোনাে দরকারই হচ্ছে না।
আবার Russell- এর মতে, সাধারণ ভাষা তর্কবিজ্ঞানের পক্ষে ঠিক যথাযথ নয়। এই ভাষার মাধ্যমে সেই কারণে তর্কবিজ্ঞানে সঠিক পথও পাওয়া যায় না। তর্কবিজ্ঞানে এই সঠিক, যথাযথ এবং আরও বিশ্লেষণাত্মক আলােচনার জন্য যুক্তিবিজ্ঞানে সংকেতের ব্যবহার অবশ্যই প্রয়ােজনীয়। সাধারণভাবে বিমূর্ত ধারণা (abstract idea) প্রকাশের ব্যাপারে সংকেতের ব্যবহার বিশেষ উপযােগী।
৭) নব্য যুক্তিবিজ্ঞানে গঠনের দিক থেকে বচনকে কয় ভাগে করাযায়?
উঃ নব্য যুক্তিবিজ্ঞানে গঠনের দিক থেকে বচনকে দুই ভাগে করা হয়েছে। যথা-
( i ) সরল বচন বা আণবিক বচন এবং ( ii ) যৌগিক বচন।
৮) সরল বচন বা আণবিক বচন কাকে বলে?
উঃ যে বচনের অন্তর্গত কোনাে অংশ স্বতন্ত্রভাবে বচন হিসাবে গণ্য হতে পারে না, অর্থাৎ, যে বচনে একটি মাত্র অবধারণ ক্রিয়া ব্যক্ত হয়, তাকে সরল বচন বলে। যেমন— সকল কাক হয় কালাে, রাম হয় বুদ্ধিমান, কোনাে কোনাে ছাত্র হয় সৎ প্রভৃতি বচনগুলি হল সরল বচন। কেননা, বচনগুলির কোনাে অংশই আলাদাভাবে বচন বলে গণ্য হতে পারে না।
৯) যৌগিক বচন কাকে বলে?
উঃ যে বচনের অন্তর্গত এক বা একাধিক অংশ স্বতন্ত্রভাবে বচন হিসাবে গণ্য হতে পারে, তাকে যৌগিক বচন বলে । যেমন— কবিতা গান করবে এবং সবিতা নাচবে, যদি বিদ্যুৎ থাকে তাহলে আলাে জ্বলবে, রাম সৎ এবং সাহসী, আমি ভাত খাব অথবা রুটি খাব, এমন নয় যে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয় প্রভৃতি বচনগুলি হল যৌগিক বচন। কেননা, এই বচনগুলির প্রত্যেকটিতে একের অধিক সরল বচন আছে। যেমন প্রথম উদাহরণটিতে ‘কবিতা গান করবে’ আর ‘সবিতা নাচবে’ — এই দুটি অংশ বা অঙ্গ স্বতন্ত্রভাবে বচন হিসাবে গণ্য হতে পারে। উল্লেখ্য , যৌগিক বচনে চারটি বা তার বেশি উপাদান বচন থাকাও সম্ভব।
১০) অঙ্গ বা অবয়ব বা উপাদান বচন কাকে বলে?
উঃ যে সকল বচন দিয়ে একটি যৌগিক বচন গঠিত হয়, তাকে যৌগিক বচনের অঙ্গ বা অবর বা উপাদান বচন বলে। যেমন— রাম আসবে এবং শ্যাম আসবে— এই বচনটিতে রাম আসবে আর শ্যাম আসবে এই দুটি হল অঙ্গ বা উপাদান বচন।
১১) যােজক কাকে বলে?
উঃ দুই বা ততােধিক সরল বচনের সমন্বয়ে একটি যৌগিক বচন গঠিত হয়। কাজেই, যৌগিক বচন গঠনের জন্য 'এবং’, ‘অথবা’ , ‘যদি - তাহলে’, ‘এমন নয় যে' প্রভৃতি শব্দ বা শব্দসমষ্টির প্রয়ােজন হয়। এই জাতীয় শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে ‘যােজক’ বলা হয়।
সংক্ষেপে, যেসব চিহ্নের মাধ্যমে যৌগিক বচনে অঙ্গবাক্যগুলিকে যুক্ত করা হয়, তাদের বলা হয় যােজক।
১২) গ্রাহক কাকে বলে?
উঃ যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত উপাদান বাক্য সরল বাক্যের পরিবর্তে p, q, r, s প্রভৃতি বর্ণ ব্যবহার করা হয়। এদের গ্রাহক বলে।
অর্থাৎ, যে প্রতীক চিহ্নের স্থানে আমরা যে কোন পদ বা বচন বসাতে পারি, তাকে বলে বচন গ্রাহক বা গ্রাহক প্রতীক বা সংক্ষেপে গ্রাহক।
১৩) যুক্তিবিজ্ঞানে গ্রাহক প্রতীককে কয় ভাগে ভাগ করা হয় এবং কী কী?
উঃ যুক্তিবিজ্ঞানে গ্রাহক প্রতীককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (i)পদগ্রাহক প্রতীক এবং (ii) বচনগ্রাহক প্রতীক।
১৪) পদগ্রাহক প্রতীক কাকে বলে?
উঃ যখন বলা হয় কোন S নয় P তখন S ও P হল পদগ্রাহক প্রতীক।
১৫) বচনগ্রাহক প্রতীক ।
উঃ যখন বলা হয়, 'যদি p তাহলে q' তখন ‘ p ’ ও ‘ q ' হল বচনগ্রাহক প্রতীক। কারণ- p ও q- এর স্থলে যে - কােন বচন বসানাে যায় অর্থাৎ, p, q যে - কোনাে বচনই গ্রহণ করতে পারে । যেমন— p- এর স্থলে “ আমি পরিশ্রম করি এবং q- এর স্থলে ‘ আমি সফল হব ’ বসানাে হয় তাহলে আমরা একটি যৌগিক বচন পাব– “ যদি আমি পরিশ্রম করি তাহলে আমি সফল হব'। স্মরণীয় যে , নব্য যুক্তিবিজ্ঞানে যুক্তির অন্তর্গত বচন প্রতীক হিসাবে ইংরাজি ছােটো হাতের অক্ষর p, q , r , s , t প্রভৃতি বর্ণগুলি ব্যবহৃত হয়।
১৬) ধ্রুবক কাকে বলে?
উঃ যৌগিক বাক্যের ক্ষেত্রে দুটি বা তার বেশি সরলবাক্যকে যুক্ত করার জন্য 'এবং', 'অথবা', 'যদি - তাহলে', 'যদি এই কেবল- যদি’ প্রভৃতি শব্দ বা শব্দসমষ্টি যােজক ( connective ) হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞানে এইসব যােজকের পরিবর্তে যথাক্রমে ডট (• ) , ভেল ( v) , হর্স শু (⊃) এবং ট্রিপলবার (≡) প্রভৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয় । যােজক জ্ঞাপক এই চিহ্নগুলিকে ধ্রুবক ( constan ) বলে ।
১৭) সত্যাপেক্ষ বচন কাকে বলে?
উঃ যে যৌগিক বচনের সামগ্রিক সত্য মূল্য তার অঙ্গ বচনগুলির সত্যমূল্যের উপর নির্ভরশীল, সেই যৌগিক বচনকে সত্যাপেক্ষ বচন বলে।
১৮) সত্যাপেক্ষক কাকে বলে?
উঃ সত্যাপেক্ষ বচনের আকারকে সত্যাপেক্ষক বলে। যেমন-- 'সে বুদ্ধিমান অথবা বোকা' -- সত্যাপেক্ষ এই বচনের আকারটি অর্থাৎ সত্যাপেক্ষকটি হল pv q ।
১৯) সত্যাপেক্ষ যুক্তি কাকে বলে?
উঃ যে যুক্তির অন্তত একটি অবয়ববাক্য যৌগিক বচন সেই যুক্তিকে সত্যাপেক্ষ যুক্তি বলে।
২০) সত্যসারণির নির্দেশক স্তন্ত কাকে বালে?
উঃ সত্যসারণির অঙ্গবচনগুলি নিয়ে যে সকল স্তম্ভ গড়ে ওঠে, তাদের বলা হয় নির্দেশক স্তম্ভ।
২১) ফলস্তম্ভ বলতে কী বােঝো ?
উঃ সত্যসারণির যে স্তম্ভটি থেকে বচনের সত্যমূল্য নির্ধারণ করা যায় তাকে ফলস্তম্ভ বলা হয়।
২২) যৌগিক বচন বা সত্যাপেক্ষ বচন কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ যৌগিক বচন মূলত পাঁচপ্রকার হতে পারে-
( i ) নিষেধক বচন
( ii ) সংযৌগিক বচন
( ii ) বৈকল্পিক বচন
(iv) প্রাকল্পিক বচন
( v ) দ্বিপ্রাকল্পিক বচন বা বস্তুগত সমমান বচন
২৩) নিষেধক বচন কাকে বলে?
উঃ কোন বচনে যা ঘোষণা করা হয় তাকে নিষেধ করলে বা অস্বীকার করলে যে বচনটি পাওয়া যায়, সেটিকে মূল বচনের নিষেধক বচন বলা হয়। যেমন-- 'পারদ কঠিন ধাতু' -- এই বচনটি অস্বীকার করা মানে 'পারদ কঠিন ধাতু নয়' --- বচনটিকে স্বীকার করে নেওয়া বোঝায়।
মূল বচনের সঙ্গে বাংলায় নয়, নহে, নি, না ইত্যাদি শব্দ যোগ করে এবং ইংরেজিতে no, not, by no means, do not ইত্যাদি শব্দ যুক্ত করে নিষেধক বচন গঠন করা হয়।
কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞানে নয়, না (no, not) ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার না করে কেবল একটি শব্দসমষ্টি মূল বচনের পূর্বে ব্যবহার করে নিষেধক বচন গঠন করা হয়। এই শব্দসমষ্টি হলো 'এমন নয় যে' (it is not the case that) যেমন--
এমন নয় যে, রাম বুদ্ধিমান।
এমন নয় যে, বরফ শীতল।
এমন নয় যে, মৃত ব্যক্তি কথা বলতে পারে।
২৪) সংযৌগিক বচন কাকে বলে?
উঃ যে যৌগিক বচনের দুই বা ততোধিক উপাদান বচন 'এবং', 'আর' বা অনুরূপ অর্থযুক্ত শব্দের দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত হয়, তাকে সংযৌগিক বচন বলে। সংযৌগিক বচনের অন্তর্গত উপাদান বচনগুলিকে বলা হয় সংযোগী। যেমন-
'শিশুরা সরল এবং বোকারা সরল' --- এটি একটি সংযৌগিক বচন। এখানে 'শিশুরা সরল' 'একটি সংযোগী ও 'বোকারা সরল' আর একটি সংযোগী। এই দুটি সংযোগী 'এবং' শব্দের দ্বারা যুক্ত হয়েছে।
এবং অর্থবোধক আরো কিছু শব্দ: বাংলা ভাষায় কিন্তু, ও, আর, তথাপি, যদিও, সত্ত্বেও, অধিকন্তু, আরও, তবুও, তা ছাড়া, অথচ, তার ওপর প্রভৃতি শব্দ 'এবং’ - এর সমার্থক হিসাবে যুক্তিবিজ্ঞানে গণ্য হয় ও যােজকের কাজ করে। যেমন— (i) সে দরিদ্র কিন্তু সৎ। (ii) রীতা শিক্ষিত অথচ বিনয়ী।
২৫) বৈকল্পিক বচন কাকে বলে?
উঃ যে যৌগিক বচনের অন্তর্গত দুই বা ততোধিক উপাদান বচনকে 'অথবা', 'নতুবা,' 'কিংবা' বা অনুরূপ অর্থবোধক শব্দের দ্বারা শর্তযুক্ত করা হয়, তাকে বৈকল্পিক বচন বলে।
যেমন-- 'আমি মাছ খাব অথবা মাংস খাব' --- এটি একটি বৈকল্পিক বচন। এই বচনের দুটি বিকল্প আছে - (১) আমি মাছ খাব, আর (২) আমি মাংস খাব। এক্ষেত্রে বিকল্প দুটি 'অথবা' শব্দের দ্বারা যুক্ত হয়েছে।
'অথবা' অর্থবোধক আরো কিছু শব্দ: 'কিংবা', 'বা', 'নতুবা', 'নচেৎ', না- হয়', 'পক্ষান্তরে', 'যদি - না' প্রকৃতির শব্দ বৈকল্পিক যোজক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
২৬) একটি বৈকল্পিক বচনে সর্বাধিক কয়টি বিকল্প থাকতে পারে?
উঃ দুই - এর অধিক বিকল্প থাকতে পারে ।
২৭) প্রাকল্পিক বচন বা সংশ্লেষকমূলক বচন কাকে বলে?
উঃ যে যৌগিক বচনের দুটি অঙ্গবচন বা উপাদান বাক্য 'যদি - তাহলে' বা এই জাতীয় কোন শর্তের দ্বারা যুক্ত হয়, তাকে প্রাকল্পিক বচন বলে। প্রাকল্পিক বচনের দুটি অংশ থাকে --পূর্বগ এবং অনুগ।
পূর্বগ: প্রাকল্পিক বচনের যে অংশে শর্তের উল্লেখ থাকে অর্থাৎ, 'যদি'-র পরে যে উপাদান বচনটি থাকে তাকে পূর্বগ বা পূর্বকল্প বলে।
অনুগ: প্রাকল্পিক বচনের যে অংশে মূল বক্তব্যটি উল্লিখিত হয় অর্থাৎ, 'তাহলে' -র পরে যে উপাদান বচনটি থাকে তাকে অনুগ বা অনুকল্প বলে।
উল্লেখ্য প্রাকল্পিক বাক্যে 'যদি' ও 'কেবল যদি' এই দুটি শব্দেরও ব্যবহার হয়। 'যদি' শব্দটি দুটি বাক্যের মাঝখানে থাকলে পূর্বগ ও অনুগ স্থান পরিবর্তন করে অর্থাৎ, 'যদি'-র ক্ষেত্রে 'যদি'-র সঙ্গে যুক্ত অংশটি পূর্বগ হয়। যেমন--
মাটি ভিজবে যদি বৃষ্টি হয়।
= যদি বৃষ্টি হয় তাহলে মাটি ভিজবে
কিন্তু 'কেবল যদি' শব্দটি দিয়ে দুটি বাক্য যুক্ত হলে পূর্বগ ও অনুগের কোন স্থান পরিবর্তন হবে না। যেমন--
রাম আসবে কেবল যদি শ্যাম আসে।
= যদি রাম আসে তাহলে শ্যাম আসবে।
২৭) দ্বিপ্রাকল্পিক বচন কাকে বলে ?
উঃ যে সত্যাপেক্ষ বচনের অঙ্গবাক্য দুটি ‘যদি এবং কেবল যদি’ শব্দ দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে দ্বিপ্রাকল্পিক বচন বলা হয় । যেমন — বৃষ্টি হবে যদি এবং কেবল যদি মেঘ করে।
২৮) নিষেধক বচনকে সত্যাপেক্ষ বচন বলা হয় কেন?
উঃ কারণ মূল বচনের সত্যমূল্য জানা থাকলে নিষেধক বচনের সত্যমুল্য সুনিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়।
২৯) নিষেধের নিষেধ কাকে বলা হয় ?
উঃ কোনো নিষেধক বচনকে পুনরায় নিষেধ করাকেই নিষেধের নিষেধ বলা হয়। যেমন — p এর নিষেধ ~ p । আবার ~p -এর নিষেধ অর্থাৎ নিষেধের নিষেধ হল ~~ p ।
৩০) সমমান বা সমসমান বচন কাকে বলে?
উঃ যদি দুটি বচন বা বচনাকারের সত্যমূল্য এক হয় অর্থাৎ যদি উভয়ই সত্য কিংবা উভয়েই মিথ্যা হয় তখন বচন দুটিকে সমমান বচন বলা হয়।
৩১) সত্যাপেক্ষক যােজক কাকে বলে?
সত্যাপেক্ষক বচনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সংযােজক বা যােজকগুলিকে সত্যাপেক্ষক যােজক বা সত্যাপেক্ষক সংযােজক বলে ।
৩১) সত্যাপেক্ষক যােজক হিসেবে ব্যবহৃত ধ্রুবক কয়টি ও কী কী ?
উঃ পাঁচটি । যথা— কার্ল বা নেগেশন ( ~ ), ডট ( • ), ভেল (v), হর্স শু ( ⊃) এবং ট্রিপলবার (≡)।
৩২) স্থায়ী সংকেতগুলি কী নামে পরিচিত ?
উঃ ধ্রুবক ।
৩৩) অস্থায়ী সংকেতগুলি কী নামে পরিচিত?
উঃ বর্ণপ্রতীক এবং বাক্য - প্রতীক।
৩৪) বচনাকার কাকে বলে?
উঃ একাধিক পদ-গ্রাহক প্রতীকের পর্যায়ক্রমকে বচনাকার বলে।
যেমন- p v q
39. নিবেশন দৃষ্টান্ত কাকে বলে ?
উঃ একটি বচনাকার থেকে প্রাপ্ত একাধিক বচনগুলিকে নিবেশন দৃষ্টান্ত বলা হয় । যেমন- p এই বচনাকার থেকে রাম হয় বিদ্বান, সকল ফুল হয় সুন্দর, সুমনা হয় বুদ্ধিমতী ইত্যাদি বচন পাওয়া যেতে পারে।
৪০) বচনের সত্যমূল্য বলতে কী বােঝায় ?
উঃ বচনের সত্যমূল্য বলতে বােঝায় বচনটির সত্যতা অথবা মিথ্যাত্বকে।
৪১) সংযৌগিক বচন কখন সত্য হয়?
উঃ সংযৌগিক বচনের সমস্ত সংযােগী সত্য হলে সংযৌগিক বচন সত্য হয়।
৪২) সংযৌগিক বচন কখন মিথ্যা হয়?
উঃ সংযৌগিক বচনের একটি সংযােগী মিথ্যা হলে সমগ্র সংযৌগিক বচনটি মিথ্যা হয়।
৪৩) বৈকল্পিক বচন কখন সত্য হয়?
উঃ বৈকল্পিক বচনের যে - কোনাে একটি বিকল্প সত্য হলে বৈকল্পিক বচন সত্য হয়।
৪৪) বৈকল্পিক বচন কখন মিথ্যা হয়?
উঃ বৈকল্পিক বচনের সমস্ত বিকল্পগুলি মিথ্যা হলে বৈকল্পিক বচন মিথ্যা হয়।
৪৫) প্রাকল্পিক বচন কখন সত্য হয়?
উঃ পূর্বর্গ সত্য ও অনুগ সত্য হলে অথবা পূর্বগ মিথ্যা ও অনুগ সত্য হলে অথবা পূর্বগ মিথ্যা ও অনুগ মিথ্যা হলে প্রাকল্পিক বচন সত্য হয়।
৪৬) প্রাকল্পিক বচন কখন মিথ্যা হয়?
উঃ প্রাকল্পিক বচনের পূর্বগ সত্য এবং অনুগ মিথ্যা হলে প্রাকল্পিক বচন মিথ্যা হয়।
৪৭) একটি দ্বিপ্রাকল্পিক বচন কখন সত্য হয়?
উঃ দ্বিপ্রাকল্পিক বচনের উভয় অঙ্গবাক্য একইসঙ্গে সত্য হলে বা একই সঙ্গে মিথ্যা হলে দ্বিপ্রাকল্পিক বচন সত্য হয়।
৪৮) কখন একটি দ্বিপ্রাকল্লিক বচন মিথ্যা হয় ?
উঃ দ্বিপ্রাকল্পিক বচনের একটি অঙ্গবাক্য সত্য এবং অন্যটি মিথ্যা হলে দ্বিপ্রাকল্পিক বচন মিথ্যা হয়।
৪৯) সমমান বচন কখন সত্য হয় ?
উঃ দুটি অংশই একসঙ্গে সত্য বা মিথ্যা হলে সমমান বচন সত্য হয়।
৫০) সমমান বচন কখন মিথ্যা হয়?
উঃ একটি অংশ সত্য বা মিথ্যা এবং অপর অংশ মিথ্যা বা সত্য হলে সমমান বচন মিথ্যা হয়।
৫১) একটি বৈকল্পিক বচনের নিষেধ কী বচন হয়?
উঃ সংযৌগিক বচন।
৫২) সংযেীগিক বচন কি সত্যাপেক্ষ বচন?
উঃ হ্যাঁ, সংযৌগিক বচন সত্যাপেক্ষ বচন। কেননা এর সত্যমূল্য বচনের দুটি সংযোগীর সত্যতা বা মিথ্যাত্বের উপর নির্ভরশীল।
৫৩) প্রাকল্পিক বচনকে সত্যাপেক্ষ বচন বলা হয় কেন?
উঃ প্রাকল্পিক বচনের সত্যতা বা মিথ্যাত্ব তার পূর্বগ ও অনুগের সত্যতা বা মিথ্যাত্বের উপর নির্ভর করে বলে একে সত্যাপেক্ষ বচন বলা হয়।
৫৪) সত্যসারণিতে চারটি গ্রাহক থাকলে কটি সারি হবে?
উঃ ১৬ টি সারি।
৫৫) সত্যমূল্য কয় প্রকার?
তিন প্রকার । যথা — সত্য , মিথ্যা ও আপতিক ।
৫৬) ‘এমন নয় যে' থাকলে যে প্রতীকচিহ্ন বসে তার নাম কী?
উঃ কার্ল বা নেগেশন ( ~ )।
৫৭) ~p- এর মান কখন সত্য হয়?
উঃ p- এর মান মিথ্যা হলে।
৫৮) p.q কখন সত্য হয়?
উঃ p ও q উভয়েই সত্য হলে।
৫৯) pvq কখন মিথ্যা হয়?
উঃ p ও q উভয়ই যখন মিথ্যা হয়।
৬০) স্বতঃসত্য বচনাকার কাকে বলে?
উঃ যে বচনাকারের অন্তর্গত সব নিবেশন দৃষ্টান্ত সত্য হয় অর্থাৎ, যে বচনাকারের সত্য ছাড়া মিথ্যা নিবেশন দৃষ্টান্ত হতে পারে না, তাকে স্বতঃসত্য বচনাকার বলা হয়। যেমন- p v ~p ' হল একটি স্বতঃসত্য বচনাকার।
৬১) স্বতঃমিথ্যা বচনাকার কাকে বলে?
উঃ যে বচনাকারের অন্তর্গত সব নিবেশন দৃষ্টান্ত মিথ্যা হয় অর্থাৎ যে বচনাকারের মিথ্যা ছাড়া সত্য নিকেশন দৃষ্টান্ত হতে পারে না, তাকে স্বতঃমিথ্যা বচনাকার বলা হয়। যেমন- ‘ p • ~ p ' হল একটি স্বতঃমিথ্যা বচনাকার।
৬২) আপতিক বা অনির্দিষ্ট মান বা পরতঃসাধ্য বচনাকার বলে?
উঃ যে বচনাকারের অন্তর্গত নিবেশন দৃষ্টান্ত ক্ষেত্র অনুসারে সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে, তাকে আপতিক বচনাকার বলে। অর্থাৎ, যে বচনাকারের সত্য ও মিথ্যা উভয়প্রকার নিবেশন দৃষ্টান্ত থাকে, তাকে আপতিক বচনাকার বলে। যেমন— p • q হল একটি আপতিক বচনাকার।