Friday, 11 December 2020

ন্যায় মতে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং শব্দ গুণের প্রত্যক্ষ কিভাবে হয় আলোচনা কর।

Leave a Comment

 ন্যায় মতে গুণ কী? ন্যায় মতে গুণ কয় প্রকার ও কী কী? ন্যায় মতে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং শব্দ গুণের প্রত্যক্ষ কিভাবে হয় আলোচনা কর।


       গুণ ( Quality : গুণ হল সেই পদার্থ যা দ্রব্যে সমবায় সম্পর্কে থাকে এবং যা দ্রব্য ও কর্ম থেকে ভিন্ন। দ্রব্যের গুণই গুণ। দ্রব্যের সঙ্গে গুণের সমবায় সম্বন্ধ। দ্রব্য থেকে গুণকে আলাদা করা যায় না, যদিও দ্রব্য ও গুণ ভিন্ন। গুণের কোন গুণ থাকে না। গুণ বস্তুর সমবায়ী কারণ হতে পারে না, বরং অসমবায়ী কারণ  হয়। যেমন, কাপড়টির নীল রঙ, কারণ ( অসমবায়ী ) হল কাপড়টির সুতাে নীল রঙের। গুণনিষ্ক্রিয় পদার্থ যা নিষ্ক্রিয় ভাবেই দ্রব্যে অবস্থান করে।


      গুণের প্রকার: ন্যায় মতে, গুণ ২৪ প্রকার, যথা — রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ, সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকত্ব,  সংযােগ, বিভাগ, পরত্ব , অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেয়, প্রযত্ন, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধর্ম ও অধর্ম। 

     

         রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং শব্দের প্রত্যক্ষ  : আমাদের চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক — এই পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয় আছে। এই পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ ও স্পর্শ এই পাঁচটি গুণ ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রত্যক্ষ করি। চক্ষু - ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য বিষয় হল রূপ, কর্ণ - ইন্দ্রিয়ের বিষয় হল শব্দ, নাসিকা - ইন্দ্রিয়ের বিষয় হল গন্ধ, জিহ্বা বা রসনা - ইন্দ্রিয়ের বিষয় হল রস ও ত্বক - ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য বিষয় হল স্পর্শ। 


         রূপ প্রত্যক্ষ : ‘গােলাপটি লাল’, ‘রুমালটি লাল’, ‘টিয়া সবুজ’ — চক্ষু - ইন্দ্রিয়ের সাহায্যেই এই রকম রূপ - রঙের প্রত্যক্ষ হয়। রূপ হল তেজ - গুণ এবং চক্ষু তেজ পরমাণু থেকেই উদ্ভূত। সােজাসুজি চক্ষু রূপ প্রত্যক্ষ করে না। গােলাপের লাল রঙ, রুমালটির লাল রঙ, টিয়াটির সবুজ রঙ প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে চক্ষুর সঙ্গে গােলাপ - রুমাল - টিয়ার সংযােগ ঘটে, আর ঐ চক্ষু সংযুক্ত সমবায়সন্নিকর্ষ থেকেই রূপের প্রত্যক্ষ হয়, অর্থাৎ বস্তুতে সমবেত রূপের সঙ্গে চক্ষুর সংযুক্ত সমবায়সন্নিকর্ষ ঘটে। অবশ্য রূপ প্রত্যক্ষের সময় দ্রব্যটি মহৎ পরিমাণ বিশিষ্ট হওয়া চাই। রুমালটিতে মহৎ পরিমাণ আছে বলেই আমরা রুমালটির নীল রঙ প্রত্যক্ষ করতে পারি। রূপ প্রত্যক্ষের সময় আলােক সংযােগেরও দরকার। অন্ধজন রূপ প্রত্যক্ষ করতে পারে না। দ্রব্যের সঙ্গে রূপের সমবায় সম্বন্ধ রয়েছে। 


        রস প্রত্যক্ষ :  'রসগােল্লা মিষ্ট ’, ‘তেঁতুল অম্ল' — জিহ্বা বা রসনা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যেই এই রকম স্বাদের প্রত্যক্ষ হয়। স্বাদ জলীয় গুণ আর জিহ্বা বা রসনা জল পরমাণু থেকে উদ্ভূত। সােজাসুজি জিহ্বা স্বাদ প্রত্যক্ষ করতে পারে না। রসগােল্লার মিষ্ট রসের স্বাদ, তেঁতুলের অম্ল স্বাদ গুণের প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে জিহ্বার সঙ্গে রসগােল্লা, তেঁতুলের সংযােগ ঘটে, আর ঐ জিহ্বা সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ থেকেই স্বাদ প্রত্যক্ষ হয়, অর্থাৎ বস্তুতে সমবেত রসের সঙ্গে জিহ্বা বা রসনার সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ ঘটে। অবশ্য রস প্রত্যক্ষের সময় গুণ যে দ্রব্যে সমবেত থাকে, সেই দ্রব্যটি মহৎ পরিমাণ বিশিষ্ট হওয়া চাই। 


      গন্ধ প্রত্যক্ষ: ধূপের গন্ধ প্রত্যক্ষ নাসিকা - ইন্দ্রিয়ের দ্বারাই সম্পন্ন হয়। গন্ধ হল ক্ষিতি বা পৃথিবী ভূতের গুণ এবং নাসিকা পৃথিবী পরমাণু থেকেই উদ্ভূত। সােজাসুজি নাসিকা বা ঘ্রাণ - ইন্দ্রিয় গন্ধ প্রত্যক্ষ করে না। ধূপের গন্ধ গুণ প্রত্যক্ষের সময় নাসিকার সঙ্গে ধূপের সংযােগ ঘটে, আর ঐ নাসিকা সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ থেকেই গন্ধের প্রত্যক্ষ হয়, অর্থাৎ, বস্তুতে সমবেত গন্ধের সঙ্গে নাসিকার বা ঘ্রাণ - ইন্দ্রিয়ের সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ ঘটে। অবশ্যই যাতে মহৎ পরিমাণ আছে, সেই দ্রব্যেরই গন্ধ প্রত্যক্ষ করা যায়। 


        স্পর্শ প্রত্যক্ষ: বরফের শীতল স্পর্শ প্রত্যক্ষ ত্বক - ইন্দ্রিয় দ্বারা হয়। স্পর্শ হল মরুৎ বা বায়ুর গুণ এবং ত্বক মরুৎ পরমাণু থেকেই উদ্ভূত। সােজাসুজি ত্বক স্পর্শ প্রত্যক্ষ করে না; বরফের শীতল গুণ প্রত্যক্ষের সময় ত্বকের সঙ্গে বরফের সংযােগ ঘটে, আর ঐ ত্বক সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ থেকেই স্পর্শের প্রত্যক্ষ হয়, অর্থাৎ বস্তুতে বস্তুতে সমবেত শীতলতার সঙ্গে ত্বকের সংযুক্ত - সমবায় সন্নিকর্ষ ঘটে। অবশ্যই যাতে মহৎ পরিমাণ আছে, সেই দ্রব্যেরই স্পর্শ প্রত্যক্ষ করা যায়। 


      শব্দ প্রত্যক্ষ : শব্দের প্রত্যক্ষ কর্ণ - ইন্দ্রিয়ের দ্বারা হয়। শব্দ ব্যোম বা আকাশ ভূতের গুণ, কিন্তু কর্ণ আকাশ পরমাণু থেকে উদ্ভূত নয়। আকাশ সর্বব্যাপী। কর্ণ - ইন্দ্রিয় হল কর্ণ গােলকের দ্বারা সীমিত আকাশ। আমরা শব্দ শুনি কান দিয়ে। শব্দ হল আকাশের গুণ। কান দিয়ে শব্দ শােনার সময় শব্দ গুণের আশ্রয় দ্রব্যরূপী আকাশের সঙ্গে সংযােগ প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই কানের সঙ্গে শব্দের সমবায় সন্নিকর্ষ ঘটে এবং এ থেকেই শব্দের প্রত্যক্ষ হয়। পুকুরে একটা বড় ঢিল পড়লে প্রথমে একটা ছােট্ট ঢেউ ওঠে, পরে সেটা আরও বড় হয়। এরপর এই ঢেউ আরও বাড়তে বাড়তে চারদিকে আবর্তিত হতে থাকে। ঠিক সে রকম কোন বােমার আওয়াজ হলে সেখান থেকে শব্দের তরঙ্গ বাড়তে বাড়তে যে শব্দ তরঙ্গ কানের বিবরে সৃষ্টি হবে, তাকে কান সমবায় সম্বন্ধে শুনবে। কোন শব্দ তরঙ্গই শােনা যাবে না যদি কান না থাকে।

If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: