Monday, 14 December 2020

Philosophy : ন্যায় মতে সন্নিকর্ষ কাকে বলে? সন্নিকর্ষ কয় প্রকার এবং কী কী? উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা কর।

Leave a Comment

                         ন্যায় দর্শন      প্রশ্ন: ন্যায় প্রশ্ন:  ন্যায়   মতে সন্নিকর্ষ কাকে বলে? সন্নিকর্ষ কয় প্রকার এবং কী কী? উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা কর।

        উঃ

       সন্নিকর্য : ন্যায়মতে, সন্নিকর্ষ মানে সম্বন্ধ। ইন্দ্রিয় এবং ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের সম্বন্ধ। নিজ নিজ গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধই সন্নিকর্য। উদাহরণস্বরূপ, নাসিকা - ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ফুলের সুগন্ধের সম্বন্ধ এক প্রকার সন্নিকর্ষ। যে বিষয়টি যে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা গ্রহণযােগ্য, সেই বিষয়ের সঙ্গে সেই ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষ  হলেই প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা প্রত্যক্ষ প্রমা উৎপন্ন হয়। সন্নিকর্ষ মানে হল - গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সেই সম্বন্ধ যা উক্ত বিষয়ের প্রত্যক্ষ জান দেয়। 

      এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, ‘সন্নিকর্ষ' বলতে এক্ষেত্রে লৌকিক সন্নিকর্যকে বােঝান হয়েছে। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে নানা প্রকার পদার্থকে প্রত্যক্ষ করি। এই বিভিন্ন প্রকার পদার্থের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের একই প্রকার সন্নিকর্ষ হতে পারে না। প্রাচীন ন্যাচার্য উদ্যোৎকরের মতে, লৌকিক সন্নিকর্ষ ছয় প্রকার: (১) সংযােগ - সন্নিকর্য, (২) সংযুক্ত - সমবায়সন্নিকর্য, (৩) সংযুক্ত - সমবেত - সমবায়সন্নিকর্য, (৪) সমবায় সন্নিকর্ষ, (৫) সমবেত - সমবায় সন্নিকর্য এবং (৬) বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। আমরা একে একে এই সন্নিকর্যগুলি আলোচনা করব: 

(১) সংযােগ - সন্নিকর্য : বাহ্য ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে একমাত্র চক্ষু এবং ত্বক দ্বারাই দ্রব্য - বিশেষের প্রত্যক্ষ জন্মে। সেই প্রত্যক্ষে সেই দ্রব্য - বিশেষের সঙ্গে চক্ষু এবং ত্বক ইন্দ্রিয়ের সংযােগ সম্বন্ধই হল ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষ। যেমন – ঘট প্রত্যক্ষকালে চক্ষুর সঙ্গে ঘটের যে সন্নিকর্ষ হয়, সেটি সংযােগ - সন্নিকর্ষের দৃষ্টান্ত।

      (২) সংযুক্ত - সমবায় - সন্নিকর্ষ : দ্রব্যের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ হল সংযােগ সন্নিকর্ষের । দ্রব্যস্থ গুণের প্রত্যক্ষের সময় ঐ গুণের সঙ্গে বিশেষ ইন্দ্রিয়ের যে সম্বন্ধ তার নাম সংযুক্ত - সমবায় - সন্নিক । যেমন -- চক্ষু - ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ঘটের রূপ, আকার ইত্যাদি গুণের যে সম্বন্ধ, তা হল সংযুক্ত - সমবায়-সন্নিকর্ষ। 

     (৩) সংযুক্ত - সমবেত - সমবায় - সন্নিকর্ষ : দ্রব্যস্থ গুণের জাতি বা সামান্যের (universal) প্রত্যক্ষের সময় ঐ জাতির সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যে সম্বন্ধ, তার নাম সংযুক্ত - সমবেত - সমবায়-সন্নিকর্ষ। একটি উদাহরণ নিলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন একটি শ্বেত বর্ণের ঘটের প্রত্যক্ষের সময় আমরা যখন ঘটের ‘শ্বেত' বর্ণটিকে প্রত্যক্ষ করি, তখন ঐ বিশেষ বর্ণটিতে যে ‘শ্বেতত্ব’ নামক জাতি বা সামান্য আছে, তাও প্রত্যক্ষ করি। এক্ষেত্রে, অর্থাৎ, এই ‘শ্বেত’ জাতির প্রত্যক্ষের সময় যে সনিকর্ষ জন্মে, তাকে বলা হয় সংযুক্ত - সমবেত - সমবায় - সন্নিকর্ষ।

     (৪) সমবায় সন্নিকর্ষ : কর্ণ - রূপ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দের প্রত্যক্ষ হয়। 'শব্দ’ প্রত্যক্ষের সময় শ্রবণেন্দ্রিয় বা কর্ণের সঙ্গে শব্দের যে সম্বন্ধ, তার নাম সমবায় সন্নিকর্ষ। নৈয়ায়িকদের মতে শ্রবণেন্দ্রিয় আকাশের গুণ। শব্দ এবং আকাশের মধ্যে সম্বন্ধ থাকার জন্য প্রত্যক্ষ করার সময় কর্ণের সঙ্গে শব্দের যে সন্নিকর্য গটে, তাকে বলে সমবায় সন্নিকর্ষ।

      (৫) সমবেত - সমবায় সন্নিকর্ষ : শব্দত্ব ধর্ম শব্দে থাকে। কর্ণ - রূপ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যেমন শব্দের প্রত্যক্ষ হয়, তেমনি 'শব্দত্ব’— এই জাতিরও প্রত্যক্ষ হয়। শব্দত্ব শব্দেই সমবেত থাকে। কাজেই কর্ণ দ্বারা 'শব্দত্ব’ জাতির প্রত্যক্ষের সময় যে সন্নিকর্ষ ঘটে, তাকে বলে সমবেত - সমবায় সন্নিকর্ষ।

       (৬) বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্য : নৈয়ায়িকদের মতে অভাব প্রত্যক্ষকালে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকে বলে বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। আমি যখন বলি -- ‘ভূতলে ঘটাভাব রয়েছে’ (অর্থাৎ, ভূতলে ঘট নেই), তখন চক্ষুর সঙ্গে ঘটের কোন সংযােগ হয় না। এক্ষেত্রে 'ভূতল' হচ্ছে বিশেষ্য এবং ‘ঘটাভাব’ হচ্ছে বিশেষণ। কাজেই এক্ষেত্রে বিশেষ্য ‘ভূত’ ঘটাভাবের দ্বারা বিশেষিত হচ্ছে। চক্ষু সংযুক্তভূতল, ঘটাভাবরূপ বিশেষণ যুক্ত হওয়ায় চক্ষুর সঙ্গে ঘটাভাবের যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকে বলে বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য যে, নৈয়ায়িকদের মতে ‘অভাব’ অস্তিত্বের মত একটি বাস্তব পদার্থ। 

If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: