Sunday, 13 December 2020

What is Inference? Explain the different kinds of Inference according to Nyaya philosophy. অনুমান এর শ্রেণীবিভাগ

Leave a Comment

                               ন্যায় দর্শন

প্রশ্ন: অনুমান কাকে বলে? ন্যায়দর্শন অনুযায়ী অনুমানের বিভিন্ন প্রকারভেদ আলোচনা কর। (What is Inference? Explain the different kinds of Inference according to Nyaya philosophy. 

উঃ

     অনুমান ( Inference ) : ‘অনু’ শব্দের অর্থ পশ্চাৎ ‘মান’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। সুতরাং ‘অনুমানের’ শব্দগত অর্থ হ’ল পশ্চাৎ জ্ঞান, অর্থাৎ যে জ্ঞান অন্য জ্ঞানের পরে হয়।

     অনুমান হল এক ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে কোন জ্ঞাত বিষয়ের ভিত্তিতে কোন অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। যেমন, পাহাড়ে আগুন আছে, যেহেতু পাহাড়ে ধোয়া আছে এবং যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে। এখানে ধোঁয়া ও আগুনের নিয়ত সম্বন্ধ সম্পর্কে আমাদের পূর্বে অর্জিত জ্ঞান এই অনুমানের ভিত্তি। তাই আমরা পাহাড়ে ধোঁয়া প্রত্যক্ষ করে সেখানে আগুনের অস্তিত্ব অনুমান করি। অনুমান হল প্রত্যক্ষজ্ঞাত বিষয় থেকে ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপর নির্ভর করে নতুন বিষয়ের জ্ঞান। অনুমান প্রত্যক্ষ জ্ঞান নয়, পরােক্ষ। তর্ক সংগ্রহে অনুমিতির করণকেই অনুমান বলা হয়েছে এবং অনুমিতির লক্ষণ প্রকাশ করা হয়েছে--- অনুমান হল পরামর্শ থেকে উৎপন্ন জ্ঞান।

      অনুমানে তিনটি পদ (Term) সাধ্য, পক্ষ ও হেতু অন্তত — তিনটি বচন (Proposition) থাকবেই। অনুমানের অঙ্গ বা অবয়ব বলতে আমরা সেই বচনগুলিকে বুঝি যেগুলির দ্বারা অনুমান গঠিত হয়। 

      অনুমানে যে তিনটি পদ থাকে সেই তিনটি পদ হল যথাক্রমে- সাধ্য পদ (Major Term), পক্ষ পদ ( Minor Term ) ও হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন ( Middle Term )। যে বস্তুটির অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তাকে ‘সাধ্য’, যার মধ্যে সাধ্যের অস্তিত্ব স্থির করা হয় তাকে ‘পক্ষ’ এবং যা সাধ্য ও পক্ষের মধ্যে যােগাযােগ করে তাকে ‘হেতু' বলা হয়। 

উদাহরণ : পাহাড়ে আগুন আছে, পাহাড়ে ধোয়া আছে। কেননা, যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে।

এখানে সাধ্য হল আগুন, কেননা আগুনের অস্তিত্ব অনুমান করা হয়েছে। পক্ষ হল পাহাড়, কেননা, পাহাড়ের মধ্যে আগুনের অস্তিত্ব অনুমিত হয়েছে। হেতু হল ধোঁয়া, কেননা ধোঁয়ার মাধ্যমে পাহাড় ও আগুনের ( পক্ষ ও সাধ্যের ) সম্পর্ক প্রমাণ করা হচ্ছে। 

অনুমানের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ : ভারতীয় নৈয়ায়িকগণ বিভিন্নভাবে অনুমানের শ্রেণীবিভাগ করেছে। 

তাঁরা অনুমান কি উদ্দেশ্য সাধন করে সেইদিক থেকে বিবেচনা করে অনুমানকে দু'ভাগে ভাগ করেছে 

(১) স্বার্থানুমান  

(২) পরার্থানুমান।

 (১) স্বার্থানুমান: নিজের জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে যে অনুমান করা হয়, তাকে স্বার্থানুমান বলে। আপন স্বার্থের জন্য এই অনুমান ব্যবহৃত হয় বলেই একে স্বার্থানুমান বলা হয়।

 (২) পরার্থানুমান: অন্যকে বােঝাবার জন্য বা অন্যের কাছে কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য যে অনুমান করা হয়, তাকে পরার্থানুমান বলে। পরের স্বার্থে এই অনুমান ব্যবহৃত হয় বলেই একে পরার্থানুমান বলা হয়। এইক্ষেত্রে অনুমানের পঞ্চাবয়ব ন্যায় বা ভারতীয় ন্যায়ের পাঁচটি অবয়ব ব্যবহৃত হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হল -

 (১) প্রতিজ্ঞা - ঐ পর্বতটি বহ্নিমান,

 (২) হেতু - কারণ, পর্বতটি ধূমবান,

 (৩) উদাহরণ--- যেখানে যেখানে ধূম, সেখানে সেখানে বহ্নি, যেমন- রান্নাঘর, 

( ৪ ) উপনয়--- ঐ পর্বতটিও ধূমবান,

 ( ৫ ) নিগমন--ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।

 উপরােক্ত অনুমানের সাহায্যে প্রতিবাদিত হেতু থেকে অপর ব্যক্তিও বহ্নির অস্তিত্ব অনুমান করতে পারেন। নৈয়ায়িকদের মতে, অন্যের চিত্তে অনুমান - লব্ধ জ্ঞান উৎপন্ন করার জন্য পরার্থানুমানের প্রয়ােজন হয়। পরার্থানুমানের ক্ষেত্রে উপরােক্ত পাঁচ প্রকার বাক্য দ্বারা রচিত একটি মহাবাক্য গঠন করতে হয়।

মহর্ষি গৌতম অপর একটি নীতি অনুসরণ করে অনুমানকে  তিন ভাগে ভাগ করেছেন— (১) পূর্ববৎ (২) শেষবৎ ও (৩) সামান্যতােদৃষ্ট। অনুমানের এই শ্রেণীবিভাগ ব্যাপ্তির সম্বন্ধের উপর ভিত্তি করে হয়েছে ।

(১) পূর্ববৎ অনুমানঃ জ্ঞাত কারণ থেকে অজ্ঞাত কার্যের অনুমানকেই পূর্ববৎ অনুমান বলে। আকাশভরা ঘন কালো মেঘ দেখে বৃষ্টি হবে অনুমান করা হয়। 

(২) শেষবৎ অনুমান : জ্ঞাত কার্য থেকে অজ্ঞাত কারণের অনুমানকেই শেষবৎ অনুমান বলে। সারা মাঠে জমা জল দেখে অনুমান করা হয় গতরাতে বৃষ্টি হয়েছিল। 

(৩) সামান্যতােদৃষ্ট অনুমানঃ শুধুমাত্র পূর্ব - অভিজ্ঞতা ও বর্তমানের সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় না করেই যে অনুমান করা হয়, তাকে সামান্যতােদৃষ্ট অনুমানবলে। আগে যতগুলাে মাথায় শিং - বেরুনো প্রাণী দেখেছি, সবগুলােরর চেরা খুর আছে। বর্তমানে একটি শিং - বেরুনাে প্রাণী দেখে অনুমান করা হল এই প্রাণীটিরও খুর চেরা। এখানে এই অনুমানে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কের কথা ভাবাই হয়নি, শুধু পূর্ব - অভিজ্ঞতা ও সাদৃশ্যই সম্বল। 

ন্যায়শাস্ত্রে অনুমানের আর একপ্রকার বিভাগ আছে । হেতু ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে নৈয়ায়িকগণ অনুমানকে তিনভাগে ভাগ করেছেন— (১) কেবলান্বয়ী (২) কেবল ব্যতিরেকী ও (৩) অন্বয় ব্যতিরেকী। 

(১) কেবলান্বয়ী : যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ শুধুমাত্র অন্বয় - নির্ভর তাকে কেবলান্বয়ী । অনুমান বলা হয়। এই অনুমান শুধুমাত্র অন্বয়ী দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু সেখানে সাধ্য। যেমন, 

সব জ্ঞেয় বস্তুই নামযুক্ত।

ঘট একটি জ্ঞেয় বস্তু ।

: . ঘট একটি নামযুক্ত বস্তু।

(২) কেবল ব্যতিরেকী: যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ শুধুমাত্র ব্যতিরেকী - নির্ভর তাকে কেবল ব্যতিরেকী অনুমান বলা হয়। এই অনুমান শুধুমাত্র ব্যতিৱেকী দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু নেই, সেখানে সাধ্য নেই। যেমন, 

যা বহ্নিযুক্ত নয় তা ধূমযুক্ত নয়, 

ঐ পর্বতটি ধূমযুক্ত, 

 : . ঐ পর্বতটি বহ্নিযুক্ত। 

(৩) অন্বয়-ব্যতিরেকী : যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ অন্বয় ও ব্যতিরেকী নির্ভর তাকে অন্বয়- ব্যতিরেকী অনুমান বলা হয়। এই অনুমান অন্বয় ও ব্যতিরেকী উভয় প্রকার দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু, সেখানে সাধ্য আছে, যেখানে হেতু নেই, সেখানে সাধ্যও নেই। যেমন, 

(ক) অন্বয়ী

 সমস্ত ধূমবান বস্তুই বহ্নিমান 

ঐ পর্বতটি ধূমবান, 

: . ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।


 (খ) ব্যতিরেকী

      কোন বহ্নিহীন বস্তু ধূমবান নয়,  

ঐ পর্বতটি ধূমবান, 

: . ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।

<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>

If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: