Friday 25 October 2019

একাদশ শ্রেণির দর্শনের প্রশ্ন উত্তর ( wbchse) অধ্যায়ঃ জ্ঞানের স্বরূপ

1 comment
প্রশ্ন: জ্ঞানের উৎস ও স্বরূপ সম্পর্কে দেকার্তের  মতবাদ সবিচার আলোচনা কর।

উত্তর:
       আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে প্রধান বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হলেন দেকার্ত, স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং ভলফ্। এদের মতে, বুদ্ধির মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞানই অনিবার্য এবং নিশ্চিত। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ হয় তা ভ্রান্ত, অযথার্থ ও অসঙ্গত।

     জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে দেকার্তের মত:  জ্ঞানের উৎসরূপে দেকার্ত তিন প্রকার ধারণার উল্লেখ করেছেন। যথা- (১) আগন্তুক ধারণা, (২) কৃত্রিম ধারণা ও (৩) সহজাত ধারণা।

    ১) আগন্তুক ধারণা: যেসব ধারণা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহ্য জগৎ থেকে মনোজগতে আসে, সেগুলিকে বলা হয় আগন্তুক ধারণা। যেমন- বই, নদী, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদির ধারণা।

  ২) কৃত্রিম ধারণা:  আমাদের মন বিভিন্ন ধারণাকে যুক্ত করে যেসব ধারণা গঠন করে, সেগুলিকে বলে কৃত্রিম ধারণা। যেমন- সোনার পাহাড়, মৎস্যকন্যা, পক্ষীরাজ ঘোড়া ইত্যাদি।

  ৩) সহজাত ধারণা: আর যেসব ধারণা জন্মগত, ঈশ্বর আমাদের  জন্মের সময় মনে গেঁথে দিয়েছেন সেগুলি হল সহজাত ধারণা। যেমন- দেশ-কাল, কার্যকারণ, নিত্যতা, অসীমতা, পূর্ণতা, ঈশ্বর ইত্যাদির ধারণা। এইসব সহজাত ধারণা স্পষ্ট, স্বচ্ছ, এবং স্বতঃসিদ্ধ। এগুলি অভিজ্ঞতালব্ধ নয়।

  জ্ঞানের  স্বরূপ সম্পর্কে দেকার্তের মত: ডেকার্ট ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন প্রখ্যাত গণিতবিদ। তাঁর মতে, গাণিতিক জ্ঞান প্রকৃষ্ট জ্ঞান। কেননা, গাণিতিক জ্ঞান কেবল সুনিশ্চিত ও সর্বজনগ্রাহ্য হয়। যেহেতু দর্শনের কোন সিদ্ধান্ত সর্বজনস্বীকৃত নয়, সেহেতু গণিতের মতো দর্শনেও সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভের আশায় দেকার্ত গণিত শাস্ত্রের অভ্রান্ততাকে দার্শনিক চিন্তার আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে দেকার্ত দেখিয়েছেন যে, গণিতে যেমন কতগুলি স্বতঃসিদ্ধ মূলসূত্র থেকে অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় তেমনি দর্শনেও কতগুলি স্বতঃসিদ্ধ ও মৌলিক সহজাত ধারণা থেকে অবরোহ পদ্ধতি অনুসারে বুদ্ধির সাহায্যে অনিবার্যভাবে আত্মা, ঈশ্বর ও জগতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত ও যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায়।

সংশয় পদ্ধতি: ডেকার্ট স্বতঃসিদ্ধ সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে সার্বিক সংশয় পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এই পদ্ধতি অনুসারে, দর্শন আলোচনার শুরুতেই দেকার্ত প্রচলিত সকল জ্ঞান, বিশ্বাস এবং সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব সন্দেহ বা সংশয় করতে থাকেন। কিন্তু জগতের সবকিছুকে এইভাবে সংশয় করতে করতে তিনি এই সত্যে উপনীত হন যে, একটি বিষয়কে কোনভাবেই সন্দেহ বা সংশয় করা যায় না। সেই বিষয়টি হলো সংশয়ক্রিয়া ও সংশয়কারীর বা সন্দেহ কর্তার নিজের অস্তিত্ব সন্দেহাতীত বা সুনিশ্চিত। সংশয় করা মানেই এক প্রকার চিন্তা করা, আর 'চিন্তা করা' মানেই 'অস্তিত্ববান হওয়া'। কাজেই, আমি সংশয় করছি অথচ আমি অস্তিত্ববান নই- এরূপ ধারণা স্ববিরোধী। এইভাবে দেকার্ত তাঁর দর্শনে প্রথম সংশয়াতীত বচন 'আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি' - প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতএব আত্মার অস্তিত্ব সংশয়াতীত। কেবলমাত্র বুদ্ধির সাহায্যেই আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। আত্মার ধারণা স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট।

সমালোচনা:
    
     ১) দেকার্তের মতে, গণিতের জ্ঞান হলো আদর্শ জ্ঞান। কিন্তু এই প্রকার জ্ঞান হল পুনরুক্তিমূলক এবং এর থেকে বাস্তব জগত সংক্রান্ত জ্ঞান নিঃসৃত হয় না। তাছাড়া দর্শনের জ্ঞান ও গণিতের জ্ঞান এক নয়। দর্শনের জ্ঞান মূর্ত, কিন্তু গণিতের জ্ঞান অমূর্ত। কাজেই গাণিতিক পদ্ধতি কখনোই দর্শনের পদ্ধতি হতে পারে না।

    ২) দেকার্তের বুদ্ধিবাদ মুখ্যত সহজাত ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সহজাত ধারণার অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন। অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক লক বলেন, সর্বজনস্বীকৃত কোন সহজাত ধারণার অস্তিত্ব নেই।

  ৩) ডেকার্ট বলেন, বুদ্ধির সাহায্যে অভিজ্ঞতাপূর্ব সহজাত ধারণা থেকে অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যথার্থ ও সুনিশ্চিত জ্ঞান পাওয়া যায়। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে জ্ঞানের ক্ষেত্রে এত ভুলভ্রান্তি দেখা দেয় কেন? এর ব্যাখ্যা দেকার্তের মত থেকে পাওয়া যায় না।
<<<<<<<>>>>>>
If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

1 comments:

Unknown said...

Thank you so much for this valuable notes 😊