Friday, 20 September 2019

HS PHILOSOPHY, উচ্চমাধ্যমিক দর্শন( wbchse) মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি

Leave a Comment

মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।  1+2+1+2+2
      সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত, সুবিধা (দুটি) অসুবিধা (দুটি)।
অথবা,
"থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদনের ফলে বুদ্ধি ক্ষীণ হয়। সুতরাং, থাইরয়েড গ্রন্থি বুদ্ধির কারণ।" -- এই দৃষ্টান্তে মিলের কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে পদ্ধতিটির ব্যাখ্যা কর। 
 চিহ্নিতকরণ, সংজ্ঞা, আকার, সুবিধা (দুটি), অসুবিধা (দুটি)।        ১+২+১+২+২

উঃ চিহ্নিতকরণ: এখানে মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ( 'অথবা' প্রশ্নটির জন্য)

সূত্র বা সংজ্ঞা: মিল ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটিকে ব্যক্ত করেছেন এইভাবে - "আলোচ্য ঘটনাটি যদি একটি মাত্র দৃষ্টান্ত উপস্থিত থাকে ও অন্য একটি দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে এবং দৃষ্টান্ত দুটির মধ্যে যদি একটি মাত্র ঘটনা ছাড়া আর সব বিষয়ে মিল থাকে, তাহলে যে ঘটনাটি প্রথম দৃষ্টান্ত উপস্থিত থাকে ও দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে, সেটি হবে আলোচ্য ঘটনার কার্য বা কারণ বা কারণের অপরিহার্য অংশ।"

তর্ক বিজ্ঞানী মেলোন আরও সহজভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করেছেন -- "যখন একটি বিষয়কে যোগ করলে অপর একটি ঘটনা আবির্ভূত হয় কিংবা একটি বিষয়কে বাদ দিলে অপর একটি ঘটনা অন্তর্হিত হয় কিন্তু অন্যান্য সকল অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, তখন সেই বিষয়টি ঘটনার সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্কে যুক্ত থাকে।"

ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকার বা সাংকেতিক উদাহরণ:

১) দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা      অনুবর্তী  ঘটনা
 সদর্থক           ABC                    abc
নঞর্থক          BC                       bc

                       A হল a এর কারণ।

২) দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা      অনুবর্তী  ঘটনা
নঞর্থক          BC                       bc
 সদর্থক           ABC                    abc

                         A হল a এর কারণ।

    ( এখানে প্রথম উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনা থেকে 'A' কে বাদ দেওয়ার ফলে অনুবর্তী ঘটনা থেকে 'a' অন্তর্হিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনার সঙ্গে 'A' কে যোগ করার ফলে অনুবর্তী ঘটনাতে 'a' আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সকল আনুষঙ্গিক অবস্থা (অর্থাৎ, BC এবং bc) দুটি ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত আছে। উভয় উদাহরণে দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে যেটুকু পার্থক্য তাহল 'A' কে এবং 'a' কে নিয়ে। অর্থাৎ উভয়েই একসঙ্গে উপস্থিত এবং উভয়েই একসঙ্গে অনুপস্থিত। কাজেই দেখা গেল অন্য সকল অবস্থা এক থাকা সত্ত্বেও 'A' নামক অগ্রবর্তী ঘটনাটি না ঘটলে 'a'  নামক অনুবর্তী ঘটনাটি ঘটছে না। অতএব 'A'  হল 'a' এর কারণ।) এই অংশ লিখতেও পারো, নাও লিখতে পারো।

বাস্তব উদাহরণ বা মূর্ত দৃষ্টান্ত

দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা                     অনুবর্তী  ঘটনা
দৃষ্টান্ত       থাইরয়েড গ্রন্থি আছে                      বুদ্ধি  প্রখর আছে
নঞর্থক   থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদন করা হলো        বুদ্ধি ক্ষীণ হল

    সুতরাং,   থাইরয়েড গ্রন্থি হল বুদ্ধির কারণ।



    সুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি সুবিধা হল --

  ১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য মাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন। একটি সদর্থক অন্যটি নঞর্থক। তাই এই পদ্ধতির প্রয়োগ খুবই সহজ।

 ২) ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রমাণের পদ্ধতি হাওয়ায় সুনিশ্চিতভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারে।

                     অতিরিক্ত

  ৩) বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি  বিশেষ সহায়ক।

  ৪) অন্বয়ী পদ্ধতি কিংবা অন্যান্য পরীক্ষামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে সেই সকল সিদ্ধান্তকে যাচাই করা হয়।


     অসুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি অসুবিধ হল --

  ১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল পরীক্ষণের পদ্ধতি। তাই আমরা কেবলমাত্র কারণ থেকে কার্যে অগ্রসর হতে পারি কিন্তু কার্য থেকে কারণে যেতে পারি না।

  ২) ব্যতিরেকী পদ্ধতি সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে না পারলে কাকতালীয় দোষ ঘটতে পারে।

অতিরিক্ত:

  ৩) ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে কারণ এবং শর্তের মধ্যে কোন পার্থক্য করা যায় না।

  ৪) ব্যতিরেকী পদ্ধতি বহুকারণ দোষের সম্ভাবনা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয়।

  ৫) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে বাস্তবে প্রয়োগ করা খুবই কষ্টসাধ্য এবং প্রায় অসাধ্য।

  ৬) স্থায়ী কারণ বা চিরন্তন কারণের ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না।

   মূল্যায়ন: পরীক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্য অনস্বীকার্য। প্রকৃতিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান বা অন্যান্য ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত উপনীত হন। তাই এই পদ্ধতির সাফল্য বা ব্যর্থতার উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেকটা নির্ভরশীল। এইজন্য মিল এই পদ্ধতিকে সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি বলেছেন।

Read More

Wednesday, 18 September 2019

শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রশ্ন এবং উত্তর / Question and answer of education ( B. A. 3rd year, ugb)

Leave a Comment
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন বলতে কী বোঝ? নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ছকের সাহায্যে শ্রেণীবিভাগ করে প্রত্যেকটি ভাগের বর্ণনা দাও।

উঃ

     ভূমিকা:   প্রচলিত রচনাধর্মী পরীক্ষার ব্যক্তিকতার প্রভাব থেকে গতানুগতিক পরীক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে মূল্যায়ন মনীষীরা এমন একটি অভীক্ষার কথা তুলে ধরেন যেখানে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মনোভাব প্রকাশের কোন স্থান থাকে না এবং যেখানে পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা, যথার্থতা ও ব্যবহারযোগ্যতা অতিমাত্রায় রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে বস্তুধর্মী বা নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা।

     নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা: যে সব পরীক্ষার প্রশ্ন শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষক উভয়ের ব্যক্তিগত প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং নম্বর দানের পার্থক্য হবার সুযোগ থাকে না তাকে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা বলে। এইসব পরীক্ষার প্রশ্নগুলি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন।

    নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: যে প্রশ্নগুলি পরীক্ষার্থীদের কয়েকটি শব্দে উত্তর দিতে হয় এবং কতিপয় কয়েকটি বিকল্প উত্তর থেকে সঠিক উত্তরটি নির্দিষ্ট করতে হয়, সেই সব প্রশ্নগুলি হল নৈর্ব্যক্তিক।

     নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য: ১) ব্যক্তি নির্ভর নয়। (২) পরীক্ষক এবং পরীক্ষার্থী উভয়ের  কোন ব্যক্তিগত প্রভাব থাকে না (3) মান নির্ণয় অপেক্ষাকৃত সহজ (4) প্রশ্ন গঠন পরিশ্রমসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ (5) শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের সামগ্রিক পরিমাপ করা যায়।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ: নিম্নে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হল-

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন মূলত দুই প্রকার।
 যথা-
  (ক) সরবরাহ প্রকৃতি এবং (খ) নির্বাচন প্রকৃতি।

১) সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন: যে সকল প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রের দেওয়া থাকে না। শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি কি হবে তা চিন্তা করে উত্তর দিতে হয় তাকে সরবরাহ প্রকৃতির প্রশ্ন বলে।

সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন তিন ধরনের হয়। যথা -
ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন
 খ) প্রশ্নোত্তর
গ) উপমান

ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন: এখানে প্রশ্নটিই অসম্পূর্ণ থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক প্রশ্নোত্তরটি সরবরাহ করে সম্পূর্ণ করতে হয়। যেমন-

 ভারতের উত্তরে ...............পর্বত অবস্থিত।

   খ) প্রশ্নোত্তর: এখানে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন দুই একটি  শব্দে উত্তর লিখতে হয়। যেমন-
 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি?

   গ) উপমান: এখানে দুটি বস্তু বা বিষয়ের নাম দেওয়া থাকে এবং তার পাশে আরও একটি বিষয় দেওয়া থাকে প্রথম দুটি বিষয়ের সঙ্গে অনুসরণ করে তৃতীয় বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় লিখতে হয়। যেমন-
 বাঙালি : ভাত : বিহারী : ?
 চোখ : দেখা : কান : ?

    ২) নির্বাচন প্রকৃতির প্রশ্ন: যেসব প্রশ্নের উত্তর দানের সময় শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত কতগুলি উত্তরের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে হয় তাদের নির্বাচন প্রকৃতি প্রশ্ন বলে।

 নির্বাচন প্রকৃতির  প্রশ্নগুলি চার ধরনের হয়। যথা-

     (ক) সত্য-মিথ্যা নিরূপণ: এই ধরনের প্রশ্নে প্রশ্নটির পাশে একটি সঠিক উত্তর ও একটি ভুল উত্তর থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরের পাশে হ্যাঁ বা না লিখতে হয়। কখনো কোনো বিবরণ দিয়ে তার সত্য-মিথ্যা নির্ভর করতে বলা হয়। যেমন-

১) হিমালয় ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত। (হ্যাঁ বা না লেখ)
২) ভারতের রাজধানী দিল্লি। (সত্য না মিথ্যা)

  খ)  সজ্জিতকরণ: যে প্রশ্নে বিভিন্ন এলোমেলো ঘটনাকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হয় তাকে সজ্জিতকরণ প্রশ্ন বলে। যেমন-

 জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, বাবর, আকবর, হুমায়ুন

    গ)  সামঞ্জস্য নির্ণয়: এখানে সমান্তরাল দুটি স্তম্ভ থাকে, প্রথম স্তম্ভে প্রশ্নটিকে উপস্থাপনা করা হয় এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ প্রশ্নের উত্তরগুলি উল্টেপাল্টে দেওয়া থাকে। শিক্ষার্থীকে দুটি স্তম্ভ মেলাতে বলা হয়। যেমন-

প্রথম স্তম্ভ                           দ্বিতীয় স্তম্ভ

১) রবীন্দ্রনাথ                       (  ) ফুটবল খেলোয়ার
২) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু   (  )  বিশ্বকবি
৩) পেলে                             (  )  বিজ্ঞানী

    ঘ) বহুমুখী নির্বাচন: এখানে একটি প্রশ্নের একাধিক সম্ভাব্য উত্তর এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করতে বলা হয়।
যেমন-

 পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হচ্ছে দিল্লি /কলকাতা/ বর্ধমান।

    ঙ) শ্রেণীকরণ:  এই ধরনের প্রশ্নে একসাথে অনেকগুলো বস্তু বা বিষয়ের নাম থেকে যেটি ওই শ্রেণির নয় তাকে পৃথক করতে হয়।
 যেমন-
 কালো, সাদা, লাল, নদী

    মন্তব্য  উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে,  রচনাধর্মী প্রশ্ন অপেক্ষা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নগুলি অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিক সংখ্যক ঘটনা, তথ্য বা বিষয়ের জ্ঞান পরিমাপ করতে পারে। তাই রচনাধর্মী পরীক্ষার পাশাপাশি নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে রচনাধর্মী পরীক্ষার সংস্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরী।

           <<<<<সমাপ্ত>>>>>


Read More

শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি প্রশ্ন ও উত্তর/ A question and answer of education ( B.A 3rd year , Gour Banga University)

Leave a Comment
মূল্যায়ন বলতে কি বোঝ?  শিক্ষায় মূল্যায়নের পরিধি আলোচনা করো।

উঃ

    ভূমিকা:  শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের বিশেষ তাৎপর্য এবং গভীর গুরুত্বের বিষয়টি আজ সর্বজনবিদিত। শিক্ষাকে গতিশীল জীবন্ত প্রক্রিয়া হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে, শিক্ষাধারার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির জীবনে কাম্য ও বাঞ্ছিত আচরণ ধারা প্রকৃত পথে মূর্ত করে তুলতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান, বোধ, সামর্থ্য, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ, লক্ষ্যভিত্তিক সঠিক পথে পৌঁছালো কিনা তা জানতে এবং শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনে উদ্দেশ্য মাফিক পরিবর্তন ও পরিমার্জন এলো কিনা তা বুঝে নিতে মূল্যায়নের প্রয়োজন।

   মূল্যায়ন:  মূল্যায়ন বলতে আজকাল একটি বিরতিহীন প্রক্রিয়া বলে  ধরা হয় যেটি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূল্যায়ন একদিকে শিক্ষার্থীর পঠন-পাঠনের উপর নজর রাখে অপরদিকে শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতির উপরও বিশেষ জোর দেয়।

    কুইনেল ও হ্যান্না মূল্যায়নের যে স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন তা হল -

১) মূল্যায়ন শিশুর আচরণের সামগ্রিক বিবেচনার কৌশল নির্ধারণ করে।
২)  শিশু নিয়ত পরিবর্তনশীল বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেয়।
৩) এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া।
৪) শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই তিনের  সহযোগিতায় মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নির্ভর করে।

      মনোবিদ ওয়েসলে বলেন, মূল্যায়ন হল এমন সব প্রচেষ্টা যার সাহায্যে আকাঙ্খিত উদ্দেশ্য গুলি পরিমাণগত ও গুণগতভাবে কতখানি বাস্তবায়িত হয়েছে তা পরিমাপ করে। নৈর্ব্যক্তিক ও ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ উভয় এই প্রচেষ্টার অন্তর্গত।

       অধ্যাপক শ্রীনিবাস এর মতে- মূল্যায়ন হচ্ছে-
ক) ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশের মূল্য ও মাত্রা নির্ধারণ, (খ) ব্যক্তির বৌদ্ধিক, সামাজিক ও অন্যান্য বিকাশের ধারা নির্ণয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিমাপ এবং (গ) শিক্ষার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের প্রগতির বিচার-বিশ্লেষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিশীল সামগ্রিক পরিমাপ প্রক্রিয়া।

  মূল্যায়নের পরিধি: মূল্যায়নের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বর্তমানে মূল্যায়ন কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বিচার করে না বরং সমগ্র শিক্ষা পদ্ধতির প্রতিটি উপাদানের পরিবর্তনের মূল্যায়ন করে থাকে।

   নিম্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যায়নের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হল -

    ১) শিক্ষার উদ্দেশ্য: বিদ্যালয়ের বয়সের শিক্ষার্থীদের বিকাশ গত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা মূল্যায়নের একটি প্রধান কাজ। শিক্ষার নির্ধারিত উদ্দেশ্যগুলি, শিক্ষার্থীর আচরণের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কতখানি ঘটেছে তা নির্ধারণ করা মূল্যায়নের পরিধির অন্তর্গত।

      ২) পাঠ্যক্রম: বর্তমান পাঠক্রম বৈচিত্র্যপূর্ণ। সমস্ত শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীকে অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রভাবিত করে। এই পাঠ্যক্রমের যথার্থতাও মূল্যায়নের মাধ্যমে জানা যায়। তাই পাঠ্যক্রমের বিজ্ঞানসম্মত গঠন ও পুনর্বিন্যাস মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

    ৩) শিক্ষা- শিক্ষণ পদ্ধতি: প্রচলিত নির্দিষ্ট শিক্ষাদান পদ্ধতির মধ্যে কতখানি পরিবর্তন আনতে হবে বা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্থভাব এবং সঠিক মাত্রায় পরিবর্তন ঘটাতে হলে পাঠদান পদ্ধতির আরো উন্নতি সাধন কিভাবে করা যায় তা নির্দেশ করা মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

    ৪) নির্দেশনা: শিক্ষার্থীর দক্ষতা, আগ্রহ ও মনোযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে ভবিষ্যতের শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান করা যায়। বর্তমানে শিক্ষকরা শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে উপরিউক্ত নির্দেশনাগুলো কাজ করে থাকে।

  ৫) শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ: শিক্ষা প্রক্রিয়া কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে না, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা বিশ্লেষণ করে। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করে। অতীত ও বর্তমানের গতি ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়াও মূল্যায়ন এর অন্তর্গত।

   ৬)  শিক্ষকের গুণাবলী: শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভূমিকা ও যোগ্যতা কতখানি সার্থক তা নির্ণয় করা মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

 ৭) পরিমাপ: একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত পারদর্শিতার পরিমাপের সাথে তার বুদ্ধি, আগ্রহ, প্রবণতা, ব্যক্তিসত্তা প্রভৃতি মানসিক বৈশিষ্ট্যের পরিমাপও মূল্যায়ন এর কাজ।

 ৮) মূল্যায়ন ও  সু-শিখন: বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীর শিখনে অবাঞ্চিত প্রভাব বিস্তার করছে। এর সংস্কার সাধন করে কিভাবে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞানের সাথে দক্ষতা, ব্যবহারিক প্রয়োগ ক্ষমতা প্রভৃতি গড়ে তুলতে মূল্যায়ন সাহায্য করে যা শিক্ষার্থীর সু- শিখনে কাজে লাগে।

 মন্তব্য: আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিমাপক হিসেবে মূল্যায়ন পদ্ধতি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত। মূল্যায়ন হল একটি সার্বিক প্রক্রিয়া যা শিক্ষার প্রতিটি উপাদানের গুণগত ও পরিমাণগত পরিমাপ নির্দেশ করে থাকে।



 <<<<<<<<<সমাপ্ত>>>>>>>>

Read More