১) প্রক্ষোভ কী? প্রক্ষোভ এর বৈশিষ্ট্য লেখ। এর শিক্ষাগত গুরুত্ব কী?
উঃ
প্রক্ষোভ: প্রক্ষোভের ভাষাভিত্তিক অর্থ হচ্ছে আলোড়ন বা উত্তেজনা বা আবেগ।
প্রক্ষোভের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া যেতে পারে-- প্রক্ষোভ বা আবেগ হল এমন এক ধরনের জটিল অনুভূতি যার মূলে কতগুলি সহজাত প্রবৃত্তি বর্তমান, কোন বিশেষ বস্তু বা ধারণা একে জাগরিত করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের জন্য এমন কতকগুলি বিশেষ ধরনের দৈহিক প্রকাশ ঘটে যার জন্য আমরা নানা রকম কাজে প্রবৃত্ত হই।
প্রক্ষোভ এর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ম্যাকডুগাল বলেছেন-- " It is the regarded as a made of experiences which accompanies the working within is of instinctive impulses."
সুতরাং এক কথায় বলা যায় যে- প্রক্ষোভ হল মনের সেই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশমান অবস্থা যা ব্যক্তিকে দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে বিচলিত করে
প্রক্ষোভ এর বৈশিষ্ট্য: প্রক্ষোভ বা আবেগের বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপ--
১) প্রক্ষোভ উদ্দীপক নির্ভর।
২) তীব্র প্রক্ষোভ প্রকাশে কখনো কখনো জৈবিক প্রভাব সৃষ্টি হয়, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৩) বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রক্ষোভের আচরণের রূপ এবং রং সমাজ অনুগামী হয়।
৪) প্রক্ষোভের ধর্ম হল ব্যাপকতা।
৫) খুব সহজেই এর জাগরণ, প্রশমন ও নির্ধারণ লক্ষ করা যায়।
৬) সব বয়সেই প্রক্ষোভের অস্তিত্ব বজায় থাকে।
৭) প্রক্ষোভ এর ফলে শিশুর যে দৈহিক পরিবর্তন ঘটে তারই ফলে তার মধ্যে বিভিন্ন অভিব্যক্তি ও আচরণ ধারা প্রকট হয়ে ওঠে।
৮) প্রক্ষোভের স্বাভাবিক বিকাশ সঠিক পথে না ঘটলে বিভিন্ন রকম মানসিক ব্যাধির আক্রমণ লক্ষ করা যায় এবং জীবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক ও অসংগতিপূর্ণ আচরণ মূর্ত হয়ে ওঠে।
প্রক্ষোভ এর শিক্ষাগত গুরুত্ব: শিক্ষাক্ষেত্রে প্রক্ষোভ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। যেমন--
১) শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত কাজে শিক্ষার্থীকে প্রেরণা জাগাতে প্রক্ষোভ বিশেষ সাহায্য করে।
২) শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি দূর করার ক্ষেত্রে প্রক্ষোভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩) বিদ্যালয় পরিবেশে সম্পূর্ণভাবে মানিয়ে চলতে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে প্রক্ষোভ।
৪) শিক্ষার্থীর সার্বিক প্রয়োজন যেগুলো তার শিক্ষার পরিবেশকে উপযুক্ত করে তোলে তার পেছনেও প্রক্ষোভ বিশেষভাবে কাজ করে।
মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায় যে- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যক্তি শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভ মূলক আচরণ যেমন পৃথকীকরণ হয়, তেমনি আবার কিছু প্রক্ষোভ একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীর আচরণ ধারাকে প্রভাবিত করে।
২) অভ্যাস গঠনের সূত্র গুলি বর্ণনা কর।
উঃ
ভূমিকা: আমাদের সব রকম কার্যকে সাধারণত ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক এই দুটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি। অনৈচ্ছিক কাজ কর্মের জন্য কোনরকম সচেতন মানসিক ইচ্ছার প্রয়োজন হয়। কাজেই, কোনো অনৈচ্ছিক কাজ যখন ঐচ্ছিক কাজে পরিণত হয়, তাকে বলা হয় অভ্যাস।
অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী: নিম্নোক্ত নিয়ম বা সূত্রগুলো শিক্ষার্থীদের অভ্যাস গঠনে যথেষ্টভাবে সাহায্য করে।
১) মানসিক প্রস্তুতি গঠন: অভ্যাস গঠনের জন্য মানসিক দৃঢ়তা ও মানসিক প্রত্যয় খুবই প্রয়োজন। উদ্দেশ্য স্থির করে সঠিক অভ্যাসটিকে বেছে নিতে হবে। তারপর মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মপ্রত্যয়সহ সেই অভ্যাসটিকে সুদৃঢ় করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২) পুনঃ পুনঃ আচরণ: অভ্যাস গঠনের পরেও অভ্যাস জনিত কাজের পুনঃ পুনঃ অনুশীলন নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। এর দ্বারাই একমাত্র কাজের স্বয়ংক্রিয়তা ও স্বতঃশ্চলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে।
৩) জটিল অনুশীলন: জটিল ধরনের অভ্যাস গঠনের জন্য জটিল ধরনের অনুশীলন মেনে চলার নিয়মকে গ্রহণ করতে হবে।
৪) ধারাবাহিকতা: অভ্যাস গঠনের জন্য কাজের অনুশীলন এবং কাজের চর্চা ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষন করতে হবে।
৫) অনুকূল পরিবেশ: উপযুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীর অভ্যাস খুব সহজেই গঠিত হতে পারে।
৬) অনুশীলনঃ বারবার কোন কাজ করলে অর্থাৎ চর্চা করলে স্নায়বিক বাঁধা কমে যায় এবং সেই কাজটি খুব সহজেই করা যায়।
৭) তৎপরতা: অভ্যাস গঠন করতে হলে মানসিক তৎপরতার প্রয়োজন। যেমন ভোরবেলা ওঠার অভ্যাস গঠন করবো মনে করে সেটা আজ থেকে না করে আগামী মাসের ১লা তারিখ থেকে শুরু করব। এইরকম ভেবে রাখলে অভ্যাস কখনো গঠিত হবে না।
মন্তব্য: কাজেই, দেখা যাচ্ছে শিক্ষার অগ্রগতির জন্য অভ্যাস গঠন অপরিহার্য। কারণ, শিক্ষণীয় আচরণগুলি যতই অভ্যাসে পরিণত হবে, ততই নতুন শিক্ষা গ্রহণ সহজ হবে।