লক কিভাবে মুখ্য গুণ ও গৌণগুণের পার্থক্য করেছেন?
উঃ লক জড়বস্তুর দুটি গুণের উল্লেখ করেছেন। যথা - (১) মুখ্য গুণ এবং (২) গৌণ গুণ।
১) মুখ্য গুণ: লকের মতে, যে গুণগুলি প্রকৃতই বস্তুতে বর্তমান থাকে সেই গুণগুলিকে মুখ্য গুণ বলে। মুখ্য গুণগুলি বস্তুগত। যেমন- আকার, আয়তন, গতি, বিস্তৃতি ইত্যাদি।
২) গৌণ গুণ: যে গুণগুলি প্রকৃতপক্ষে বস্তুতে বর্তমান থাকে না অথচ ব্যক্তি মন বস্তুতে আরোপ করে, সেই গুনগুলিকে গৌণগুণ বলে। গৌণ গুণগুলি ব্যক্তিগত বা মনোগত। যেমন- রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, স্বাদ ইত্যাদি।
মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্য: লক মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্যের স্বপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি দেখিয়েছেন।
১) মুখ্য গুণ বস্তুগত। এগুলি বস্তুর নিজস্ব গুণ। যেমন- আকার, আয়তন, গতি, বিস্তৃতি প্রভৃতি। ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়া মুখ্য গুণগুলি থাকতে পারে। অপরদিকে, গৌণ গুণগুলি হল মনোগত বা ব্যক্তিগত। এগুলি বস্তুর নিজস্ব গুণ নয়। আমাদের ইন্দ্রিয় ছাড়া গৌণ গুণগুলি থাকতে পারে না। যেমন- জিহ্বা ছাড়া স্বাদ, কর্ণ ছাড়া শব্দ, চক্ষু ছাড়া বর্ণ থাকতে পারে না।
২) মুখ্য গুণগুলি পরিবর্তনশীল নয়। কিন্তু, গৌণ গুণগুলি পরিবর্তনশীল। যেমন- একটি গোলাপ ফুলের লাল বর্ণ ও সুগন্ধ আছে। ফুলটি শুকিয়ে গেলেও তার একটি আকার বা বিস্তৃতি অর্থাৎ মুখ্য গুণ বর্তমান থাকে; কিন্তু ফুলটির বর্ণ এবং গন্ধ অর্থাৎ গৌণ গুণ উভয়েই বিনষ্ট হয়ে যায়।
৩) মুখ্য গুণগুলি ব্যক্তিভেদে পৃথক হয় না। যেমন কোন বস্তুর আকার, গতি, বিস্তৃতি প্রভৃতি গুণ সকলের কাছে একই রকম বলে অনুভূত হয়। কিন্তু গৌণ গুণগুলি ব্যক্তিভেদে পৃথক হয়। যেমন- একই খাবার কারো কাছে সুস্বাদু আবার কারো কাছে বিস্বাদ বলে মনে হয়।
৪) মুখ্য গুণ হলো বস্তুর অবিচ্ছেদ্য গুন। অর্থাৎ, বস্তু থেকে মুখ্য গুণকে কোন ভাবেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। অপরদিকে গৌণ গুণ হল বিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ গৌণ গুণকে বস্তু থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন বা বিলুপ্ত করা যায়।
৫) মুখ্য গুণগুলি পরিমাপ করা যায়। কিন্তু গৌণ গুণগুলি পরিমাপ করা যায় না।
৬) মুখ্য গুণের ধারণার সঙ্গে বস্তুর ধর্মের সাদৃশ্য বা অনুরূপতা আছে। কিন্তু গৌণ গুণের ধারণার সঙ্গে বস্তুর ধর্মের সাদৃশ্য থাকে না।
<<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>
0 comments:
Post a Comment