প্রশ্ন: শিক্ষা চিন্তায় ঋষি অরবিন্দের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ
ভূমিকা: ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাধনার ক্ষেত্রে ঋষি অরবিন্দ এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। জীবনের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি জীবনের চরম লক্ষ্যে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর প্রথাগত শিক্ষার বেশিরভাগ সময়কাল ইংল্যান্ডে কাটে। তাই তিনি ইউরোপীয় ধারণা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। ভারতবর্ষে ফিরে এসে তিনি বরোদা কলেজে যোগ দেন। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তিনি ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়েন। ১৯১০ সালে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মধারা ত্যাগ করে পন্ডিচেরিতে চলে যান এবং পরবর্তী জীবনে সাধনার মাধ্যমে এক সমন্বয়ী মতাদর্শ গঠন করেন। শ্রী অরবিন্দের শিক্ষা চিন্তা, ওই সমন্বয়ী মতাদর্শেরই ফলশ্রুতি।
শিক্ষার লক্ষ্য: অরবিন্দের শিক্ষা চিন্তার লক্ষ্য ছিল মানবজীবনের দিব্য জ্ঞানের জন্য প্রস্তুত করা, যে শিক্ষা ধারা অনুসরণ করে মানুষ একদিন দিব্য জ্ঞানের অধিকারী হবে। তাঁর মতে, "ব্যক্তি হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশ্ব আত্মার সচেতন বিকাশ ও প্রতিফলন" যা মানুষের আধ্যাত্মিক অগ্রগতির উন্নতিতে সাহায্য করবে এবং অতি মানবে পরিনত করবে।
পাঠ্যক্রম: শ্রী অরবিন্দের শিক্ষা চিন্তায় পাঠক্রম সম্পর্কে নতুন কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কিন্তু পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তু নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যক্তির বিশ্ব চেতনার চারটি বিশেষ দিক আছে। যথা- প্রেম, জ্ঞান, শক্তি ও সৌন্দর্য। অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিসত্তা সংঘটিত হবে, তার দ্বারা তার আত্মা প্রকৃত প্রেমানন্দে আপ্লুত হবে, মন হবে শাশ্বত জ্ঞানের অধিকারী, জীবন শক্তি গতিবান হবে এবং দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং এই জাতীয় বিকাশে সহায়তা করতে হলে শিক্ষার্থীদের চতুর্মুখী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করতে হবে। তাই চার শ্রেণীর অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন--
১) শারীর শিক্ষা যার মাধ্যমে শিশুর দৈহিক বিকাশ হবে; (২) জীবন দায়ী শিক্ষা যার মাধ্যমে শিশুর প্রাক্ষোভিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটবে বা তার জীবন শক্তির বিকাশ ঘটবে; (৩) মানসিক শিক্ষা যার মাধ্যমে শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশ হবে এবং (৪) আধ্যাত্মিক শিক্ষা যার মাধ্যমে শিশুর আত্মার বিকাশ ঘটবে। এছাড়া তিনি শিশুর পাঠ্যক্রমের মধ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতি ছিলেন। আশ্রম বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে সংগীত, শিল্পকলা, নাটক, অভিনয় ইত্যাদির মতো কার্যাবলীও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষণ পদ্ধতি: ইউরোপীয় শিক্ষণ পদ্ধতিকে অরবিন্দ মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে মনে করেন নি। শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি কতগুলি নীতির উল্লেখ করেছেন যেগুলি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, শিক্ষকের কাজ শিক্ষা দেওয়া নয়, কারণ কিছুই শেখানো যায় না। শিক্ষকের কাজ হলো সাহায্য করা বা নির্দেশনা দেওয়া। অর্থাৎ যে শিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার্থীকে আত্ম শিখনে সহায়তা করবে, তাই হবে আদর্শ পদ্ধতি।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষণ পদ্ধতি অবশ্যই মনোবিজ্ঞান সম্মত হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব প্রকৃতি অনুযায়ী বিকাশের সুযোগ দেবে যে পদ্ধতি তাই হবে আদর্শ শিক্ষন পদ্ধতি।
তৃতীয়ত, শিক্ষনের সময় শিক্ষার্থীকে নিকট থেকে দূরে অথবা জানা থেকে অজানার দিকে পরিচালিত করতে হবে। অর্থাৎ আদর্শ শিক্ষন পদ্ধতি তাকে বলা হবে, যা শিক্ষার্থীর বর্তমান কৃষ্টিমূলক অভিজ্ঞতাকে উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে রচিত হবে।
শিক্ষকের দায়িত্ব: শ্রী অরবিন্দ তাঁর শিক্ষা চিন্তায়, শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষক নির্দেশদাতা হবেন না, তিনি সহায়ক ও নির্দেশকের ভূমিকা গ্রহণ করবেন। শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীদের কাছে কোন কিছু প্রস্তাব করা; তাদের ওপর জোর করে তাঁর নিজের ধ্যান-ধারণা চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষকের দায়িত্ব নয়। নিজের মন ও ইন্দ্রিয়গুলিকে কিভাবে জ্ঞান আহরণের জন্য প্রস্তুত করতে হয়, তাই শিক্ষক শিক্ষার্থী জানাবেন, প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান সরবরাহ করবেন না। অরবিন্দের মতে, "শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীদের কৌশল দিয়ে সাহায্য করা, যে কৌশলগুলি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই জ্ঞান আহরণ করতে সক্ষম হয়।"
মন্তব্য: শ্রী অরবিন্দের শিক্ষানীতি পরিপূর্ণভাবে পরীক্ষামূলক স্তর অতিক্রম করেছে, একথা বলা যায় না। শিক্ষা সম্পর্কে তার ধারণা ও আধুনিক পাশ্চাত্য ধারনার মধ্যে বিশেষ বিরোধ নেই। পাশ্চাত্য শিক্ষার নীতির মধ্যে যে ত্রুটি ও বৈপরীত্য আছে, সেগুলি দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অর্থে শ্রী অরবিন্দের শিক্ষা চিন্তা, আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণার পরিপূরক।
Translation
Question: Discuss the role of Rishi Aurobindo in education thought.
Ans:
Introduction: Sage Aurobindo is an unforgettable personality in the Indian culture and pursuit. Through many different experiences in life, he was able to reach the ultimate goal of life. Most of his formal education was spent in England. So he was quite aware of European ideas. Returning to India, he joined Baroda College. He got his etymology in several Indian languages. He was also involved in the partition of Bengal. In 1910, he abandoned his political career and moved to Pondicherry, and in later life pursued a cohesive ideology. The thought of Sri Aurobindo's education is the result of that cohesive ideology.
Purpose of education: The aim of Aurobindo's education thought was to prepare for the cognition of human life, that following the education system, people will one day possess the knowledge of Divya. According to him, "the person is the conscious development and reflection of the world spirit of the natural environment" which will help to improve the spiritual progress of the people and result in greater respect.
Curriculum: There is no new explanation for the curriculum in Sri Aurobindo's educational thinking. But he has expressed his views on choosing the content of the curriculum. He says there are four special aspects of a person's world consciousness. Namely - love, knowledge, energy and beauty. That is, through education, individuality will take place, by which his soul will be implanted in true love, the mind will possess eternal knowledge, the life force will be accelerated and the beauty of the body will be increased. So, to help with this national development, the students will have to experience the quadrilateral. So it is important to include four classes of experience -
1) physical education through which the child will develop physically; (2) life-long education through which the child's retrospective and social development develops or his life force develops; (3) the mental education through which the child's cognitive development will develop and (3) the spiritual education through which the child's soul develops. In addition, he was biased to include vocational training in the child's curriculum. The functions of music, art, drama, acting etc. are also included in the curriculum of the Ashram school.
Teaching Methods: Aurobindo did not consider the European teaching method to be a psychological method. He outlined several principles about the education system that are particularly important.
First, the teacher's job is not to teach, because nothing can be taught. The teacher's job is to help or to instruct. That is, the teaching method that will assist the student in self-learning, would be the ideal method.
Second, the teaching methodology must agree with psychology. That will give each student the opportunity to develop according to his or her own nature.
Thirdly, during the course of teaching, the student has to be drawn from near or unknown to unknown. That is, he will be called the ideal teaching method, which will be tailored to the student's current agricultural experience.
Teacher's Responsibility: Shri Aurobindo mentioned in his thought, teaching and responsibilities of the teacher. The teacher will not be a mentor, he will assume the role of assistant and mentor. The teacher's job is to offer something to the students; It is not the responsibility of the teacher to force his own meditation on them. How to prepare your mind and senses for the acquisition of knowledge, so the teacher will inform the students, do not provide knowledge directly. According to Aurobindo, "the task of the teacher in the field is to help the students through the techniques, by applying the techniques that the students are able to draw on their own knowledge."
Comment: It cannot be said that Sri Aurobindo's education policy has completely crossed the experimental level. There is no special conflict between his ideas about education and the modern Western ideas. Efforts have been made to eliminate the flaws and contradictions in Western education policy. In this sense, Sri Aurobindo's education is complementary to the thinking of modern education.
<<<<<<<<>>>>>>>>
0 comments:
Post a Comment