Sunday, 12 December 2021

HS শিক্ষাবিজ্ঞান ( Education) অধ্যায়: শিখন -- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

Leave a Comment

 শিক্ষা বিজ্ঞান ( Education)

            শিখন (Learning)

     দ্বাদশ শ্রেণী (Class xii) (wbchse)


অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (মান-1)


১। 'শিখন' কী?

  উঃ অনুশীলন প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রাণীর কোনো আচরণের পরিবর্তনের ঘটনাই হল 'শিখন'।

অথবা,  

যে মানসিক প্রক্রিয়া অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রগতিশীল আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজনে সাহায্য করে, তাই হল শিখন।


২। ‘শিখন’-এর একটি কার্যকরী সংজ্ঞা দাও।

 উঃ সক্রিয় অনুশীলন, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের প্রভাবে প্রাণীর মানসিক ও বাহ্যিক আচরণের পরিবর্তন সাধিত হয় যে প্রক্রিয়ায় তাকে 'শিখন' বলে।   

৩।  আধুনিক অর্থে ‘শিখন' বলতে কী বোঝায়?

 উঃ  যে শিক্ষালব্ধ পদ্ধতিতে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্ম সম্পাদনের ক্ষমতালাভের মাধ্যমে প্রাণীর মানসিক ও দৈহিক আচরণে উৎকর্ষতা আসে, সেই পদ্ধতিই ‘শিখন' নামে পরিচিত।


৪। মনোবিজ্ঞানী জে পি গিলফোর্ড ‘'শিখন'-এর কী সংজ্ঞা দিয়েছেন?

 উঃ মনোবিজ্ঞানী জে পি গিলফোর্ড-এর মতে, “Learning is change in behaviour resulting from behaviour.” অর্থাৎ ‘শিখন’ হল আচরণ থেকে ফলজাত আচরণের পরিবর্তন প্রক্রিয়া। 


৫। থর্নডাইক ‘শিখন’ সম্বন্ধে কী বলেছেন? 

 উঃ মনোবিদ থর্নডাইক বলেছেন, 'শিখন' হল উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যথার্থ ও কার্যকরী সম্বন্ধ স্থাপনের প্রক্রিয়া।


৬। ম্যাকডুগালের মতে ‘শিখন' কী?

 উঃ মনোবিদ ম্যাকডুগালের মতে, উদ্দেশ্যসাধনের উপযোগী উপায় নির্বাচনের ক্ষমতা অর্জন করাই হল শিখন।


৭। শিখনের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উঃ শিখনের প্রধান বৈশিষ্ট্য দুটি হল-

 ১) শিখন প্রক্রিয়া উদ্দেশ্যমুখী ও ক্রমবিকাশমান।

২) শিখন পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করতে সহায়তা করে। 


৮। মনোবিদ রবার্ট এম গ্যাগনের মতানুসারে শিখনের শ্রেণিবিভাগ করো।

উঃ মনোবিদ রবার্ট এম গ্যাগনের মতানুসারে শিখনকে ৮টি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল- 

(i)সংকেত শিখন,  (ii) উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া শিখন, (iii)সমস্যাসমাধানমূলক শিখন, (iv) ভাষাগত সংযোগসাধনমূলক শিখন, (v) শৃঙ্খলিতকরণ শিখন, (vi)ধারণা শিখন, (vii) নিয়ম শিখন এবং (viii) বৈষম্যমূলক শিখন।


৯। গ্যাগনের কোন গ্রন্থে শিখনের আটটি প্রকারের উল্লেখ পাওয়া যায়?

উঃ রবার্ট গ্যাগনে তাঁর The Conditions of Learning গ্রন্থে আট প্রকারের শিখনের উল্লেখ করেছেন।


১০। গ্যাগনের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী সব থেকে উচ্চ পর্যায়ের শিখন কোন্‌টি? 

উঃ গ্যাগনের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী সবথেকে উচ্চ পর্যায়ের শিখন হল সমস্যাসমাধানমূলক শিখন।


১১। 'প্রজ্ঞামূলক শিখন' কাকে বলে? 

উঃ যখন কোনো ব্যক্তির জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে শিখন সাধিত হয় তখন ওই শিখনকে বলা  'প্রজ্ঞামূলক শিখন'।


১২। দক্ষতামূলক শিখন' কী?

উঃ যে শিখনের দ্বারা ব্যক্তির দক্ষতা বা সামর্থ্যের বিকাশ ঘটে, তাকে দক্ষতামুলক শিখন বলে।


১৩। প্রক্ষোভমূলক শিখন' বলতে কী বোঝো?

উঃ শিশুর মধ্যে আদর্শগত প্রক্ষোভ গঠনের জন্য যে শিখন কার্য পরিচালিত হয়, তাকে প্রক্ষোভ মূলক শিখন বলে।


 ১৪। নৈতিক শিখন' বলতে কী বোঝো?

উঃ শিক্ষার্থীর চারিত্রিক সংগঠন ও মূল্যবোধের বিকাশের জন্য যে শিখন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়, তাকে ‘নৈতিক শিখন' বলে।


১৫। 'দেহসঞ্চালনগত শিখন' কাকে বলে?

উঃ যে শিখন প্রক্রিয়ার দ্বারা শিশুর দেহসঞ্চালন ক্রিয়ার পরিবর্তন ও ক্রমোন্নয়ন ঘটে, সেই শিখন প্রক্রিয়াকে 'দেহসঞ্চালনগত শিখন' বলা হয়। 


১৬। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র কোন্ শিখনকে নিয়ন্ত্রিত করে?

উঃ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্মৃতিমূলক শিখন বা স্মরণক্রিয়ার দ্বারা শিখনকে নিয়ন্ত্রিত করে।


১৭। স্মৃতি' বা 'স্মরণক্রিয়া' কাকে বলে?

উঃ যে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা পূর্বার্জিত ও সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাকে প্রয়োজনমতো যথার্থ সময়ে সঠিক স্থানে স্মরণ করা যায়, সেই মানসিক প্রক্রিয়াকেই ‘স্মৃতি' বা 'স্মরণক্রিয়া' বলা হয়।


১৮। 'বিস্মৃতি' কী?

উঃ স্মৃতির অভাবই হল 'বিস্মৃতি'। এটি স্মরণক্রিয়ার বিপরীত একটি প্রক্রিয়া। এর সাধারণ অর্থ কোনো বিষয় ভুলে যাওয়া।


১৯। শিখনের পর্যায় বা স্তরগুলি কী কী?

 উঃ শিখনের স্তর বা পর্যায়গুলি হল তিন প্রকার। যথা- অভিজ্ঞতা অর্জন, সংরক্ষণ এবং পুনরুত্থাপন। এই শেষ পর্যায়টিকে অর্থাৎ পুনরুত্থাপনকে আবার দুটি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। যথা- পুর্নরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞা। 


২০। সংরক্ষণ বা ধারণ বলতে কী বোঝো?

উঃ সংরক্ষণ' বা 'ধারণ' হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বাইরে থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে দীর্ঘকাল ধরে স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় বা মনে রাখা যায়।


২১। পুনরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞার মধ্যে প্রভেদ কোথায়?

উঃ যে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা পূর্বে অর্জিত অভিজ্ঞতা সংরক্ষণের স্তর থেকে মানুষের চেতনায় আসে অর্থাৎ কোনো পুরোনো কথা মানুষের মনে পড়ে, তাকেই 'পুনরুদ্রেক' বলা হয়। অন্যদিকে, পূর্বে অর্জিত অভিজ্ঞতা যখন মানুষের সামনে কোনো মূর্ত প্রতিরূপের সাহায্যে পুনরুত্থাপিত হয়, তখন তাকে 'প্রত্যভিজ্ঞা' বলা হয়। 'প্রত্যভিজ্ঞা' কথার অর্থ হল পূর্ব অভিজ্ঞতাকে প্রত্যক্ষ করা বা চিনে নেওয়া। 


২২। পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়াটির সঙ্গে কোন্ তিনটি বিষয় বিশেষভাবে যুক্ত? 

উঃ পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে যুক্ত, সেগুলি হল-  সান্নিধ্যের সূত্র, সাদৃশ্যের সূত্র এবং বৈসাদৃশ্যের সূত্র। 


২৩। সান্নিধ্যের সূত্রটি কী?

উঃ যে সূত্রের কারণে পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়, তাকে সান্নিধ্যের সূত্র' বলা হয়।


২৪। সাদৃশ্যের সূত্রটি লেখো।

উঃ পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলে একটি মনে করলে অপরটিও মনে পড়ে যায়। একেই ‘সাদৃশ্যের সূত্র' হিসেবে ধরা হয়। 


২৫  বৈসাদৃশ্যের সূত্রটি কী?

উঃ পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলে একটি মনে করলে অপরটিও মনে পড়ে যায়। একেই 'বৈসাদৃশ্যের সুত্র' ধরা হয়।


২৬। 'শিখন'-এর সংযোজনবাদী তত্ত্বের প্রবক্তা কে?

উঃ থর্নডাইক। 


২৭। 'শিখন'-এর গেস্টান্ট তত্ত্বের মূল দুজন প্রবক্তা কে ছিলেন?

উঃ 'শিখন'-এর গেস্টান্ট তত্ত্বের মূল দুই প্রবক্তা হলেন ম্যাক্স ওয়ারদাইমার এবং কফকা।


২৮। প্রাচীন অনুবর্তনের আবিষ্কারক কে? 

উঃ প্রাচীন অনুবর্তনের আবিষ্কারক হলেন মনোবিদ আইভান প্যাভলভ।


 ২৯। সক্রিয় অনুবর্তনের উদ্ভাবন করেন কে?

উঃ সক্রিয় অনুবর্তনের উদ্ভাবক হলেন মনোবিদ বি এফ স্কিনার।


৩০। 'শিখন'-এর মাত্রা কার উপর নির্ভর করে? 

উঃ ‘শিখন’-এর মাত্রা নির্ভর করে প্রচেষ্টার সংখ্যার উপর। প্রচেষ্টার সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, শিখনের হারও তত বৃদ্ধি পাবে। 


৩১। শিখন'-এর প্রকৃতি কীসের মাধ্যমে প্রকাশ পায় ?

উঃ ‘শিখন’-এর প্রকৃতি প্রকাশ পায় পরিণমনের মাধ্যমে। 


৩২। ‘শিখন'-এর দুটি সহজ উপায় লেখো।

উঃ শিখনের পদ্ধতিগুলির মধ্যে দুটি সহজ উপায় হল - আবৃত্তি পদ্ধতি এবং অর্থ অনুধাবন করে পাঠের পদ্ধতি।


৩৩। শিক্ষার্থীর শিখনে শিক্ষকের প্রধান ভূমিকা কী?

উঃ শিক্ষার্থীর শিখনে শিক্ষকের প্রধান ভূমিকা হল- শিক্ষার্থী শিখনকার্যকে সহজ করে তোলা বা facilitate করা; যার অর্থ হল to make a process easier. 


৩৪। 'Survey-Q-3R'  কী?

উঃ কোনো পাঠ্য বিষয়বস্তু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে অধ্যাপক ফ্রান্সিস পি রবিনসন যে নিয়ম উদ্ভাবন করেছেন, তাকে 'Survey Q-3R' বলা হয়। এর সম্পূর্ণ কথাটি হল- Survey, Question, Read Recite, Review। অর্থাৎ কোনো বিষয়কে সহজে আয়ত্ত করার জন্য পর্যবেক্ষণ, প্রশ্নকরণ, পঠনপাঠন, আবৃত্তি পাঠ ও পর্যালোচনার প্রয়োজন।


৩৫। 'শিখন' ও 'শিক্ষণ'-এর মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়? 

উঃ 'শিখন' হল ব্যক্তির নিজের ও সমাজের কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্যে কোনো বিষয়কে আয়ত্ত করা বা শেখা। আর 'শিক্ষণ' হল ব্যক্তির সহজাত সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জ্ঞান প্রদান করা অর্থাৎ শিক্ষাদান।


৩৬। শিখন'-এর উপাদানগুলি কী কী? অথবা, 'শিখন' কী কী বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়? 

উঃ শিখনের উপাদানগুলি হল পরিণমন, প্রেষণা, আগ্রহ, মনোযোগ ও সামর্থ্য। এই বিষয়গুলিই শিখনকে প্রভাবিত করে।


৩৭। 'পরিণমন' কী?

উঃ ‘পরিণমন' হল এমন একটি স্বাভাবিক জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রাণীর জন্মগত সম্ভাবনাগুলির স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ ঘটে এবং সেইসঙ্গে তার আচরণের গুণগত ও পরিমাণগত উভয় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়।

অথবা,

পরিণমন হল জন্মগত একটি স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জৈবিক প্রক্রিয়া, যার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘটে থাকে।


 ৩৮। মনোবিদ ম্যাকগিয়ক ‘পরিণমন'-এর সংজ্ঞায় কী বলেছেন?

উঃ মনোবিদ ম্যাকগিয়ক-এর মতে, অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জৈবিক কারণে শিশুর আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হল 'পরিণমন'।


৩৯। পরিণমনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।”

উঃ পরিণমনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল – (ক) পরিণমন একটি স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়া এবং (খ) পরিণমনের ফলে ব্যক্তির দৈহিক আচরণের পরিবর্তন ঘটে।


৪০। শিখন ও পরিণমনের দুটি সাদৃশ্য লেখো। শিখন ও পরিণমনের দুটি উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য হল

উঃ (i) শিখন ও পরিণমন উভয়ই ব্যক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া। (ii) শিখন ও পরিণমন উভয়ই ব্যক্তির আচরণে পরিবর্তন ঘটায়।


 ৪১। শিখন ও পরিণমনের একটি পার্থক্য লেখো। 

উঃ শিখন ও পরিণমনের একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হল শিখন একটি অনুশীলননির্ভর কৃত্রিম প্রক্রিয়া; কিন্তু পরিণমন একটি স্বাভাবিক জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া।


৪২।  'প্রেষণা' কী?' 

উঃ 'প্রেযণা' হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কর্মউদ্দীপনাকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য তার মধ্যে একটি তাগিদ সৃষ্টি করে এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

অথবা,

প্রেষণা হল এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কর্মোদ্দীপনা জাগ্রত করে এবং বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও সেটিকে নিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্যের অভিমুখে নিয়ে যায়।


৪৩।  'প্রেষণা' শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে?

উঃ 'প্রেষণা' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Motivation'। এই শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'Moveers' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'to move' অর্থাৎ 'চলনক্রিয়া'। 


৪৪। 'প্রেষণা চক্র' বলতে কী বোঝায়? অথবা, প্রেষণা চক্রের চারটি ধাপ কী কী? 

উঃ যে স্তরগুলি অতিক্রম করলে বা যে স্তরগুলি চক্রাকারে আবর্তিত হলে প্রেষণা সৃষ্টি হয়, সেই স্তরগুলির এই আবর্তনকে 'প্রেষণা চক্র' বলা হয়। প্রেষণা চক্রের মূল চারটি স্তর হল— চাহিদা, তাড়না, উদ্দেশ্যমুখী আচরণ এবং উদ্দেশ্যপুরণ।


৪৫। প্রেষণা চক্রের প্রথম ও শেষ স্তরগুলি কী কী?

উঃ প্রেষণা চক্রের প্রথম স্তর হল চাহিদা বা অভাববোধ এবং শেষ স্তর হল উদ্দেশ্যপুরণ।


৪৬। প্রেষণার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ প্রেষণার দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল—(i) শিখনে আগ্রহ বুদ্ধি করে এবং (ii) লক্ষ্যাভিমুখী আচরণ নির্দিষ্ট করে। 


৪৭। প্রেষণার শ্রেণিবিন্যাস করো।

উঃ প্রেষণাকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— জৈবিক প্রেষণা, ব্যক্তিগত বা মানসিক প্রেষণা এবং সামাজিক প্রেষণা


৪৮। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষকের কী কী কর্তব্য পালন করা উচিত?

উঃ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের উচিত তাদের কর্মোদ্যোগী করে তোলা, প্রশংসার মাধ্যমে নতুন কাজে উৎসাহ দান করা, তাদের সফলতার জন্য পুরস্কার প্রদান করা ইত্যাদি।


৪৯। প্রেষণা হ্রাসের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উঃ প্রেষণা হ্রাসের দুটি কারণ হলো -- (i) কৌতুহল বা অনুরাগ এর অভাব এবং (ii) চাহিদা পূরণ না হওয়া।


৫০। মনোযোগ কী?

উঃ যে মানসিক প্রক্রিয়া ব্যক্তির চেতনার পরিধিকে সংকীর্ণ করে, তাকে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত করে সেই মানসিক প্রক্রিয়া কে মনোযোগ বলে।


৫১। মনোযোগের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উঃ মনোযোগের একটি বৈশিষ্ট্য হল -- মনোযোগ একটি নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া।


৫২। মনোযোগ এর মূল শর্ত বা নির্ধারকগুলি কী কী?

উঃ মনোযোগ এর মূল শর্ত বা নির্ধারক গুলি হল -- (i) বিষয়কেন্দ্রিক বা বস্তুগত শর্ত (ii) মনোগত শর্ত য়এবং (iii) দৈহিক বা বাহ্যিক শর্ত।


৫৩। মনোযোগের বিষয়কেন্দ্রিক শর্তগুলি কী কী?  অথবা মনোযোগের দুটি বস্তুগত নির্ধারকের নাম লেখ।

উঃ মনোযোগের বিষয়কেন্দ্রিক শর্তগুলি হল--- তীব্রতা, আকৃতি, পুনরাবৃত্তি, নতুনত্ব, গতিশীলতা, বৈপরীত্য ইত্যাদি।


৫৪। মনোযোগের মনোগত শর্তগুলি কী কী? অথবা মনোযোগের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক এর নাম লেখ

উঃ মনোযোগের মনোগত শর্তগুলি হল -- আবেগ, অভ্যাস, আগ্রহ, প্রক্ষোভ, মানসিক প্রবণতা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি।


৫৫। মনোযোগের দৈহিক শর্ত গুলি কী কী? 

উঃ মনোযোগের দৈহিক শর্তগুলি হল --ইন্দ্রিয়সমূহের বিশেষ অবস্থা, আচরণের পরিবর্তন, ব্যক্তিগত বিশেষত্ব ইত্যাদি।


৫৬। মনোযোগ এর বিস্তারমাপক যন্ত্র টির নাম কী?

উঃ মনোযোগের বিস্তার মাপক যন্ত্র টির নাম ট্যাচিসটোস্কোপ ( Tachistoscope)।


৫৭। কোন যন্ত্রের সাহায্যে শ্রবণগত মনোযোগ এর বিস্তার মাপা হয়?

উঃ মেট্রোনোম (Metronome) নামক যন্ত্রের সাহায্যে শ্রবণ গত মনোযোগের বিস্তার পরিমাপ করা হয়।


৫৮। আগ্রহ বা অনুরাগ কী?

উঃ আগ্রহ বা অনুরাগ হল বাস্তব বা কাল্পনিক কোনো বস্তু, ঘটনা বা অবস্থার প্রতি এক বিশেষ কৌতূহল, অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে ওই বিষয়টি সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করে ও তাকে মনোযোগী করে তোলে।


৫৯। 'আগ্রহ' বা 'Interest' শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে? 

উঃ ‘আগ্রহ’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Interest’ একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হল ‘it concerns' or 'it matters'


 ৬০। কোন্ মনোবিদ আগ্রহকে ‘সুপ্ত মনোযোগ’ বলেছেন?

উঃ মনোবিদ ম্যাকডুগাল আগ্রহকে ‘সুপ্ত মনোযোগ’ বলেছেন। 


৬১। আগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। অথবা, আগ্রহের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।”

উঃ আগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (i) আগ্রহ একটি অনুভূতিনির্ভর প্রক্রিয়া এবং (ii)মনোযোগের পূর্ব শর্ত বা প্রাথমিক শর্তই হল আগ্রহ।


৬২। স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্বটি প্রথম কত খ্রিস্টাব্দে, কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

উঃ স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্বটি প্রথম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে 'আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকোলজি'-তে প্রকাশিত হয়।


৬৩। স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতার তত্ত্বটি কী নামে পরিচিত এবং এটি কোন্ প্রবন্ধাকারে প্রকাশ পায়।

উঃ স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতার তত্ত্বটি 'দ্বি-উপাদান তত্ত্ব' নামে পরিচিত এবং এটি 'General Intelligence Objectively Determined and Measured' নামক প্রবন্ধাকারে প্রকাশ পায়।

 

৬৪। সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বলতে কী বোঝো? অথবা, স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বে g উপাদান বলতে কী বোঝো? 

উঃ যে মানসিক ক্ষমতা জন্মগত ও সহজাত এবং যে-কোনো কাজেই কমবেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বলে। স্পিয়ারম্যান তাঁর তত্ত্বে এই ক্ষমতাকে 'G-factor' বা g-উপাদান বলে উল্লেখ করেছেন। 


৬৫। স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্বে উল্লিখিত সাধারণ উপাদানের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্বে উল্লিখিত সাধারণ উপাদানের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল -- (i) সাধারণ উপাদান হল জন্মগত ও (ii) এই উপাদান সর্বজনীন।


৬৬। বিশেষ মানসিক ক্ষমতা কী?*

উঃ যখন কোনো একটি কাজের জন্য ব্যক্তির সাধারণ মানসিক ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো বিশেষ সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়। এবং ওই কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে তা ব্যবহৃত হয় না, তাকে 'বিশেষ মানসিক ক্ষমতা' বলে। স্পিয়ারম্যান তাঁর তত্ত্বে এই ক্ষমতাকে 'S-factor' বলেছেন। 


৬৭। বিশেষ ক্ষমতার যে-কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ বিশেষ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য দুটি বৈশিষ্ট্য হল – (i) বিশেষ উপাদানের সংখ্যা একাধিক এবং (ii)বিশেষ উপাদান ব্যক্তিকেন্দ্রিক।


 ৬৮। সাধারণ মানসিক ক্ষমতার সঙ্গে বিশেষ মানসিক ক্ষমতার দুটি পার্থক্য দেখাও। 

উঃ (i)সাধারণ মানসিক ক্ষমতা একটি সর্বজনীন ক্ষমতা; কিন্তু বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বিশিষ্ট ক্ষমতা, সর্বজনীন নয়।

(ii) সাধারণ মানসিক ক্ষমতা জন্মগত; আর বিশেষ মানসিক ক্ষমতা অর্জিত।


৬৯। 'সহগতি' বলতে কী বোঝো?

উঃ রাশিবিজ্ঞানের ভাষায়, দুই বা ততোধিক চলের মধ্যে শিখন পারস্পরিক যে সম্বন্ধ, তাকেই 'সহগতি' বলা হয়। যেমন বৃষ্টি ও জলস্তর হ্রাসবৃদ্ধির সম্বন্ধ। 


৭০। ‘শূন্য সহগতি' কাকে বলে? 

উঃ যখন দুটি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত চলরাশির একটির হ্রাস বা বৃদ্ধি অপরটির উপর কোনো প্রভাব ফেলে না, তখন ওই দুটি চলের মধ্যে যে সম্বন্ধ থাকে, তাকে 'শূন্য সহগতি' বলা হয়। যেমন- কোনো ব্যক্তির বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র বিদ্যুৎ চলে যাওয়া।


৭১।  'সহগতির সহগাঙ্ক' বলতে কী বোঝায়?

উঃ যে সাংখ্যমান দ্বারা দুটি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত চলরাশির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়, তাকে 'সহগতির সহগাঙ্ক' বলে। সহগতির সহগাঙ্ককে স্পিয়ারম্যান তাঁর তত্ত্বে 'r' দ্বারা প্রকাশ করেছেন। 


৭২। টেট্রাড সমীকরণের ক্ষেত্রে r, a, b, p. q-এর মাধ্যমে কোন্ কোন্ বিষয়কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে? 

অথবা, স্পিয়ারম্যানের টেট্রাড সমীকরণে ‘r' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উঃ টেট্রাড সমীকরণের ক্ষেত্রে 'r' হল সহগতির সহগাঙ্ক, 'a' হল বৈপরীত্য, ‘b’ হল পার্থক্যকরণ, 'p' হল সম্পূর্ণকরণ এবং 'q' হল বাতিলকরণ।


৭৩। প্রাথমিক বা দলগত উপাদান তত্ত্বটি কবে, কোন্ গ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়?

উঃ প্রাথমিক বা দলগত উপাদান তত্ত্বটি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে 'The Nature of Intelligence' গ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়।


৭৪। থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্বে ক-টি মৌলিক সামর্থ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় ও কী কী? অথবা,  তত্ত্ব অনুযায়ী যে-কোনো দুটি প্রাথমিক মানসিক ক্ষমতার নাম লেখো।" 

উঃ  থার্স্টোনের দলগত উপাদান তত্ত্বে সাতটি মৌলিক সামর্থ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

সেগুলি হল- (i)আঙ্কিক বা সংখ্যাগত সামর্থ্য বা N. (ii) স্থানগত সম্বন্ধ নির্ণয়ের সামর্থ্য বা S (iii) স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়ার সামর্থ্য বা M. (iv) বাচনিক সামর্থ্য বা V. (v) নির্ভুল প্রত্যক্ষণের সামর্থ্য বা P,  (vi) যুক্তি বা বিচারক্ষমতার সামর্থ্য বা R এবং (vii) উপযুক্ত বাক্য বা শব্দ ব্যবহারের সামর্থ্য বা W।


 ৭৫। থার্স্টোনের বহু উপাদান তত্ত্বে 's' বলতে কী বোঝানো হয়?

উঃ থার্স্টোনের বহু উপাদান তত্ত্বে 's' বলতে স্থানগত নির্ণয়ের সামর্থ্যকে বোঝানো হয়।


৭৬। স্পিয়ারম্যানের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্ব ও থার্স্টোনের মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্বের মধ্যে দুটি পার্থক্য ব্যক্ত করো।

উঃ দ্বি-উপাদান তত্ত্ব ও দলগত উপাদান তত্ত্বের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ :

 (i) দ্বি-উপাদান তত্ত্বে দুটি মানসিকক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দলগত উপাদান তত্ত্বে  সাতটি প্রাথমিক ক্ষমতা বা উপাদানের কথা বলা হয়েছে।

(ii) দ্বি-উপাদান তত্ত্বে  জন্মগত ও  অর্জিত উভয় ধরনের মানসিক ক্ষমতাই কার্যকরী হয়।  কিন্তু দলগত উপাদান তত্ত্বের প্রতিটি মানসিক ক্ষমতা জন্মগত।


৭৭। কত খ্রিস্টাব্দে কোন বইতে মনোবিদ গার্ডেনার তার সাতটি বুদ্ধির কথা প্রচার করেন?

উঃ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে 'Theory of Intelligence নামক বইতে মনোবিদ গার্ডেনার তাঁর সাতটি বুদ্ধির কথা প্রচার করেন।


৭৮। 'কার্যকরী বুদ্ধি’ বলতে কী বোঝো? 

উঃ দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবমুখী কাজ করার ক্ষমতা বা সামর্থ্যকেই অনেক মনোবিদ 'কার্যকরী বুদ্ধি’ বলেছেন।


৭৯। বুদ্ধির একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ বুদ্ধির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- বুদ্ধি হল ব্যক্তির একটি সহজাত বা মৌলিক ক্ষমতা, যা অনুশীলন দ্বারা কার্যকরী হয়ে থাকে। 


৮০। বুদ্ধির অভীক্ষা কী?*

উঃ বুদ্ধি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলিকে বুদ্ধির অভীক্ষা বলা হয়। 


৮১।  বুদ্ধ্যঙ্ক কী?

উঃ বুদ্ধ্যঙ্ক হল কোনো ব্যক্তির বুদ্ধির মান নির্দেশক একক। কোনো ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের জন্য তার মানসিক বয়স ও তার জন্মবয়সের অনুপাত নির্ণয় করা প্রয়োজন।


৮২।  বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের সমীকরণটি লেখো।” 

উঃ বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের সমীকরণটি হল

                মানসিক বয়স

বুদ্ধ্যঙ্ক =    -------------------            x 100

                     জন্মবয়স


[ বুদ্ধ্যঙ্কের মান যাতে ভগ্নাংশে না হয়, সেজন্য এই অনুপাতকে 100 দিয়ে গুণ করতে হয়।]


৮৩। বুদ্ধ্যঙ্ক বা Intelligence Quotient-এর উদ্ভাবক কে?

উঃ বুদ্ধ্যঙ্ক বা Intelligence Quotient বা IQ-এর উদ্ভাবক ছিলেন মনোবিদ উইলিয়ম স্টার্ন।


৮৪। বুদ্ধির বাছাই তত্ত্ব বা Sampling Theory-এর প্রবক্তা হলেন।

উঃ মনোবিদ থম্পসন।














If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: