Friday, 25 October 2019

একাদশ শ্রেণীর দর্শন( wbchse) নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন এবং উত্তর

1 comment
দ্বিতীয় অধ্যায়: জ্ঞানের স্বরূপ এবং জ্ঞান সম্পর্কিত তত্ত্ব ( Nature and Theory of Knowledge)

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর             [প্রতিটি প্রশ্নের মান 1]

১) বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত কয়টি? উঃ তিনটি

২) সত্যতা  বাচনিক জ্ঞানের কোন শর্ত? উঃ আবশ্যিক শর্ত।

৩) বিশ্বাসযোগ্যতা বাচনিক জ্ঞানের কিরূপ শর্ত? উঃ আবশ্যিক শর্ত।

৪) বাচনিক জ্ঞানের প্রথম শর্ত কি? উঃ সত্যতা।

৫) বাচনিক জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্ত কি? উঃ বিশ্বাস।

৬) বাচনিক জ্ঞানের তৃতীয় শর্ত কি? উঃ বিশ্বাসের সমর্থনে পর্যাপ্ত যুক্তি।

৭) 'আমি সাঁতার কাটতে জানি'-- এখানে জানা ক্রিয়াপদটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? উঃ সামর্থ্য অর্থে বা কর্মকৌশল অর্থ।

৮) 'আমি সচিন তেন্ডুলকরকে জানি' - এটি কোন প্রকারের জ্ঞান? উঃ পরিচিতি জ্ঞান।

৯) 'আমি জানি যে, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হল কলকাতা' - এখানে 'জানা' ক্রিয়াপদটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? উঃ বাচনিক অর্থে।

১০) সততা, বিশ্বাস এবং বিশ্বাসযোগ্যতা এই তিনটি একত্রে  বাচনিক জ্ঞানের কোন শর্ত? উঃ পর্যাপ্ত শর্ত।

১১) যে বাক্যের অর্থ বুঝলেই বাক্যটি সত্য না মিথ্যা তা বোঝা যায় তাকে বলে------- উঃ অবশ্যম্ভব বাক্য।

১২) যেসব বাক্যের সত্যতা বা মিথ্যাত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না তাদের বলে --------- উঃ আপতিক বাক্য।

১৩) যে বাক্যের সত্যতা নির্ধারণের জন্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করতে হয় তাকে বলে ------- উঃ পরতঃসাধ্য বাক্য।

১৪) যে বাক্যের সত্যতা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার পূর্বেই সিদ্ধ তাকে বলে ------- উঃ পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্য।

১৫) যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদের ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদের ধারণাকে পাওয়া যায় সেটি হলো -------- উঃ বিশ্লেষক বাক্য।

১৬) যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদের ধারনাকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদের ধারণা পাওয়া যায় না সেটি হল ------- উঃ সংশ্লেষক বাক্য।

১৭) আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক কে? উঃ দেকার্ত।

১৮) 'গণিতের জ্ঞান হল আদর্শ জ্ঞান' - কে বলেছেন? উঃ দেকার্ত।

১৯) 'আমাদের কোন কোন ধারনা সহজাত' -- কোন দার্শনিক এর উক্তি? উঃ দেকার্ত।

২০) 'আমাদের সকল ধারনা সহজাত' - কে বলেছেন? উঃ লাইবনিজ।

২১) 'কোন ধারনাই সহজাত নয়'--কে বলেছেন? উঃ লক।

২২) ধারণা 3 প্রকার --- আগন্তুক, কৃত্রিম, সহজাত ---- কে বলেছেন? উঃ দেকার্ত।

২৩) 'আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি' ---- কোন দার্শনিক এর সিদ্ধান্ত? উঃ দেকার্ত।

২৪) "বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ছিল না, কেবলমাত্র বুদ্ধি ছাড়া" ---কে বলেছেন? উঃ লাইবনিজ।

২৫) "বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ছিল না" ---- কে বলেছেন? উঃ লক।

২৬) আধুনিক অভিজ্ঞতা বাদের প্রবর্তক কে? উঃ জন লক।

২৭) 'An Essay Concerning Human Understanding' গ্রন্থটির রচয়িতা কে? উঃ লক।

২৮) 'ধারণা গ্রহণের সময় আমাদের মন নিষ্ক্রিয় থাকে' --- কে বলেছেন? উঃ লক।

২৯) 'জন্মের সময় আমাদের মন থাকে একটি সাদা অলিখিত কাগজের মত' (Tabula Rasa) উক্তিটি কার? উঃ লকের।

৩০) ধারণা দুই প্রকার যথা সরল ধারণা ও জটিল ধারণা ---- কে বলেছেন? উঃ লক।

৩১) 'জ্ঞান হলো দুই বা ততোধিক ধারণার মধ্যে মিল ও অমিল প্রত্যক্ষ করা' -- এটি কোন দার্শনিক এর উক্তি? উঃ লক।

৩২) "অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর" -- কে বলেছেন? উঃ বার্কলে।

৩৩) 'আমাদের সমস্ত জ্ঞানের উদ্ভব হয় অভি মুদ্রণ এবং ধারণা থেকে' ----কে বলেছেন? উঃ হিউম।

৩৪) ইন্দ্রিয়জের তুলনায় ধারণা অধিকতর সজীব ও স্পষ্ট ----- কার উক্তি? উঃ হিউমের।

৩৫) ধারণাকে ইন্দ্রিয়জ এর প্রতিরোধ বলেছেন কে? উঃ হিউম।

৩৬) কোন দার্শনিক এর অভিমত সংশয়বাদ নামে পরিচিত? হিউম।

৩৭) বিমুর্ত সামান্য ধারণার খণ্ডন করেছেন কোন দার্শনিক? উঃ বার্কলে।

৩৮) কান্টের মতবাদ দর্শন কি নামে পরিচিত? উঃ বিচারবাদ।
৩৯) কোন দার্শনিক অভিজ্ঞতাবাদ ও বুদ্ধিবাদ এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন? উঃ দার্শনিক কান্ট।

৪০) কোন দার্শনিক এর মতে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব? উঃ কান্ট।

৪১) '৭+৫=১২' ---- এই বাক্যটি হলো ------- উঃ পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক।

৪২) কোন দার্শনিকদের মতে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব নয়? উঃ অভিজ্ঞতাবাদী।

৪৩) 'জ্ঞানে নতুনত্ব থাকা চাই' --- কে বলেছেন? উঃ কান্ট।

৪৪) কোন দার্শনিক এর মতে আমাদের সব জ্ঞান আপতিক? উঃ মিল।

৪৫) কার মতে মনাড হলো গবাক্ষহীন চিৎপরমানু? উঃ লাইবনিজ।

Translation

Chapter 2: Nature and Theory of Knowledge



 1) What are the essential conditions of cognitive knowledge?  A. Three



 2) What is the condition of authentic knowledge?  A. Mandatory conditions.



 3) Credibility What is the condition of academic knowledge?  A. Mandatory conditions.



 4) What is the first condition of cognitive knowledge?  A. The truth.



 5) What is the second condition of cognitive knowledge?  A. Faith.



 6) What is the third condition of cognitive knowledge?  A. Adequate reasoning in support of faith.



 7) 'I know how to swim' - In what sense is the verb known here?  A. Capacity means or operational meaning.



 8) 'I know Sachin Tendulkar' - what kind of knowledge is this?  A. Introduction to knowledge.



 9) 'I know that the capital of West Bengal is Kolkata' - in what sense is the verb 'know' here?  A. In the botanical sense.



 10. What are the three conditions of honesty, trust and credibility?  A. Adequate conditions.



 11) The sentence which can be understood as true or false without understanding its meaning ------- A. It is an impossible sentence.



 12) Says those words which cannot be definitively stated as true or false --------- accidental sentences.



 13) To determine the truth of a sentence, one has to rely on direct experience ------- A. The most difficult sentence.



 14) The truth of a sentence is said before the experience of the senses ------- A. Pre-perfected sentence.



 15) The purpose of the sentence is to analyze the concept of the word when the purpose of the sentence is to be -------- A. Analyst sentence.



 16) The purpose of a sentence when analyzing the meaning of a sentence does not make sense.



 17) Who is the father of modern Western philosophy?  A. Descartes.



 18) Who said 'knowledge of mathematics is ideal knowledge'?  A. Descartes.



 19) 'Some of our ideas are innate' - the motto of which philosopher?  A. Descartes.



 20) Who says 'all our ideas are innate'?  A. Leibniz.



 21) Who says 'no ideas are innate'?  A. Lock.



 22) Ideas 3 Types - Newcomers, Artificial, Inherent - Who said?  A. Descartes.



 23) 'I think, therefore I am' ---- Which philosopher's decision?  A. Descartes.



 24) "There is nothing in the intellect that was not in the sense before, only without the intellect"?  A. Leibniz.



 25) "There is nothing in the intellect that has not been in the senses before" ---- who says?  A. Lock.



 26) Who is the promoter of modern experience Bad?  A. John Locke.



27) Who is the author of the book 'An Essay Concerning Human Understanding'?  A. Lock.



 28) Who says "our mind is inactive when it comes to ideas"?  A. Lock.



 29) At birth we have a mind like a white unwritten paper (Tabula Rasa).  A. Locker.



 30) There are two types of ideas, namely simple ideas and complex ideas ---- who said that?  A. Lock.



 31) "Knowledge is the realization of similarities and differences between two or more concepts" - which is the statement of a philosopher?  A. Lock.



 32) Who says "existence is directly dependent"?  A. Berkeley.



 33) Who says "All our knowledge originates from print and concept"?  A. Hume.



 34) The idea is more vibrant and clear than the senses ----- whose words?  A. Hume.



 35) Who has said the resistance of the concept to the senses?  A. Hume.



 36) Which philosopher's opinion is known as skepticism?  Hume.



 37) Which philosopher has disputed the notion of abstraction?  A. Berkeley.



38) What is known as Kant's philosophy of philosophy?  A. Judaism.

 39) Which philosopher coordinates between empiricism and intellectualism?  A. The philosopher Kant.



 40) According to which philosopher is it possible to make pre-synthesized syntheses?  A. Kant.



 41) '1 + 1 = 12' ---- This sentence is ------- A. A pre-synthesizer.



 42) According to which philosophers, it is not possible to make a pre-synthesized synthesizer?  A. Empiricist.



 43) Who wants to have "innovation in knowledge"?  A. Kant.



 44) Which philosopher believes that all our knowledge is accidental?  A. Mill.



 45) According to whom the monad is a voiceless voice?  A. Leibniz.


Read More

একাদশ শ্রেণীর দর্শনের প্রশ্ন উত্তর (wbchse) অধ্যায়ঃ জ্ঞানের স্বরূপ ও জ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ

1 comment
জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে লাইবনিজের মতবাদ সবিচার আলোচনা কর।

উত্তর:

      প্রাচীন বুদ্ধিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে পারমিনাইডিস, সক্রেটিস এবং প্লেটোর নাম উল্লেখযোগ্য। আর আধুনিককালের উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হলেন - ডেকার্ট, স্পিনোজা, লাইবনিজ প্রমূখ।

   নিম্নে জ্ঞানের উৎপত্তি সম্পর্কে আধুনিক বুদ্ধিবাদী  দার্শনিক লাইবনিজের মতবাদ আলোচনা করা হলো -

   লাইবনিজ-এর মতবাদ: দেকার্তের পরবর্তী এবং স্পিনোজার সমসাময়িক জার্মান দার্শনিক লাইবনিজ বুদ্ধিবাদী হওয়া সত্ত্বেও দেকার্ত ও স্পিনোজা থেকে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। দেকার্ত ও স্পিনোজার মতে আমাদের কোন কোন ধারনা সহজাত। কিন্তু লাইবনিজ বলেন,  'আমাদের সকল ধারনাই সহজাত বা অন্তর ধারনা'। উল্লেখ্য, এখানে সহজাত বলতে লাইবনিজ বুঝিয়েছেন -- আমাদের মনের মধ্যেই সমস্ত জ্ঞানের সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। একখণ্ড প্রস্তরের মধ্যে যেমন মর্মর মূর্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে, মানুষের মনের সমস্ত ধারণা ঠিক তেমনি ভাবে মনের মধ্যে সুপ্ত থাকে। মনের ক্রিয়ার মাধ্যমেই সেগুলি ব্যক্ত হয়। আমাদের এই জড়জগৎ মনের সহজাত ধারণার মূর্ত প্রকাশ মাত্র।

 লাইবনিজ দুই প্রকার জ্ঞানের কথা বলেছেন- জাগতিক বিষয় সংক্রান্ত সত্য এবং বুদ্ধি লব্ধ সত্য। তাঁর মতে জাগতিক বিষয় সংক্রান্ত সত্য হলো অভিজ্ঞতালব্ধ এবং সেই কারণে তার সার্বিক ও স্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য নয়। কিন্তু বুদ্ধি লব্ধ সত্যটি অবশ্যই বুদ্ধি লব্ধ এবং সেই কারণেই তা সার্বিক ও স্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য। সুতরাং, কেবলমাত্র বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারাই নিয়ত, সার্বিক, শাশ্বত জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে লাইবনিজ মনে করেন ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান ও বুদ্ধিজাত জ্ঞান -- এদুটি বিজাতীয় জ্ঞান নয়। পার্থক্য এই যে, ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞান অপেক্ষা অস্পষ্ট ও কম প্রামাণ্য যুক্ত হয়। ইন্দ্রিয় বুদ্ধিরই এক অনুন্নত রূপ মাত্র। কিন্তু ইন্দ্রিয় কখনোই সার্বিক ও আবশ্যিক জ্ঞান যোগাতে পারে না। লাইবনিজ এ প্রসঙ্গে লকের জ্ঞানতত্ত্বকে খন্ডন করে যথার্থই বলেছেন - "বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা, পূর্বে ইন্ডিয়ার মধ্যে ছিল না, কেবলমাত্র বুদ্ধি ছাড়া"।

   লাইবনিজের মতে, এই বিশ্ব জগত হলো অসংখ্য চিৎপরমাণু বা চিদনুর  সমন্বয়। সেখানে জড় বলে বাস্তবিক কিছুই নেই। প্রতিটি চিৎপরমাণু বা মনাড চেতন গুণসম্পন্ন এক একটি আত্মা এবং এই আত্মা বা মনাড সংখ্যায় অসংখ্য বা বহু। লাইবনিজ বলেন, মনাড বা চিৎপরমাণু হলো আধ্যাত্মিক দ্রব্য, যেখানে চেতনা সুপ্ত  অবস্থায় নিহিত থাকে। আধ্যাত্বিক দ্রব্য হিসেবে প্রতিটি মনাড সমগ্র বিশ্বজগতকে প্রতিবিম্বিত করে। প্রতিটি মনাড এক একটি জীবন্ত দর্পণ এবং নিজে নিজে ক্রিয়াশীল। প্রতিটি মনাড স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় তা গবাক্ষহীন এবং নিশ্চিদ্র হওয়ায় কোন কিছু যেমন মনাড থেকে নির্গত হতে পারে না, তেমনি বাইরে থেকে কোন কিছু মনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা। কাজেই, সমস্ত ধারণা অন্তর বা সহজাত, বহিরাগত ধারণা বলে কিছু নেই। এইরূপ মত পোষণ করার জন্য লাইবনিজকে অনেকে চরমপন্থী বুদ্ধিবাদী বলে থাকেন। তবে লাইবনিজকে নরমপন্থী বুদ্ধিবাদী বলাই সঙ্গত।

সমালোচনা:

১) লাইবনিজ যে চিৎপরমাণুর উল্লেখ করেছেন তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কেননা, চিৎপরমাণু প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য নয়।

২) লাইবনিজের মতে, জড় বা জড়জগৎ বলে কিছু নেই। জড়জগতের প্রত্যক্ষ ভ্রমাত্মক। কিন্তু নিশ্চেতন জগতের অস্তিত্বকে এই ভাবে অস্বীকার করা যায় না।

৩) লাইবনিজ আত্মা বা মনাডকে বহু বলেছেন কিন্তু বহুর মধ্যে কোন ঐক্য বিধায়ক শক্তির উল্লেখ করতে পারেননি। ফলে তাঁর মতবাদ চরম বহুত্ববাদে পর্যবসিত হয়েছে।
Read More

একাদশ শ্রেণির দর্শনের প্রশ্ন উত্তর ( wbchse) অধ্যায়ঃ জ্ঞানের স্বরূপ

1 comment
প্রশ্ন: জ্ঞানের উৎস ও স্বরূপ সম্পর্কে দেকার্তের  মতবাদ সবিচার আলোচনা কর।

উত্তর:
       আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে প্রধান বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হলেন দেকার্ত, স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং ভলফ্। এদের মতে, বুদ্ধির মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞানই অনিবার্য এবং নিশ্চিত। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ হয় তা ভ্রান্ত, অযথার্থ ও অসঙ্গত।

     জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে দেকার্তের মত:  জ্ঞানের উৎসরূপে দেকার্ত তিন প্রকার ধারণার উল্লেখ করেছেন। যথা- (১) আগন্তুক ধারণা, (২) কৃত্রিম ধারণা ও (৩) সহজাত ধারণা।

    ১) আগন্তুক ধারণা: যেসব ধারণা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহ্য জগৎ থেকে মনোজগতে আসে, সেগুলিকে বলা হয় আগন্তুক ধারণা। যেমন- বই, নদী, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদির ধারণা।

  ২) কৃত্রিম ধারণা:  আমাদের মন বিভিন্ন ধারণাকে যুক্ত করে যেসব ধারণা গঠন করে, সেগুলিকে বলে কৃত্রিম ধারণা। যেমন- সোনার পাহাড়, মৎস্যকন্যা, পক্ষীরাজ ঘোড়া ইত্যাদি।

  ৩) সহজাত ধারণা: আর যেসব ধারণা জন্মগত, ঈশ্বর আমাদের  জন্মের সময় মনে গেঁথে দিয়েছেন সেগুলি হল সহজাত ধারণা। যেমন- দেশ-কাল, কার্যকারণ, নিত্যতা, অসীমতা, পূর্ণতা, ঈশ্বর ইত্যাদির ধারণা। এইসব সহজাত ধারণা স্পষ্ট, স্বচ্ছ, এবং স্বতঃসিদ্ধ। এগুলি অভিজ্ঞতালব্ধ নয়।

  জ্ঞানের  স্বরূপ সম্পর্কে দেকার্তের মত: ডেকার্ট ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন প্রখ্যাত গণিতবিদ। তাঁর মতে, গাণিতিক জ্ঞান প্রকৃষ্ট জ্ঞান। কেননা, গাণিতিক জ্ঞান কেবল সুনিশ্চিত ও সর্বজনগ্রাহ্য হয়। যেহেতু দর্শনের কোন সিদ্ধান্ত সর্বজনস্বীকৃত নয়, সেহেতু গণিতের মতো দর্শনেও সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভের আশায় দেকার্ত গণিত শাস্ত্রের অভ্রান্ততাকে দার্শনিক চিন্তার আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে দেকার্ত দেখিয়েছেন যে, গণিতে যেমন কতগুলি স্বতঃসিদ্ধ মূলসূত্র থেকে অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় তেমনি দর্শনেও কতগুলি স্বতঃসিদ্ধ ও মৌলিক সহজাত ধারণা থেকে অবরোহ পদ্ধতি অনুসারে বুদ্ধির সাহায্যে অনিবার্যভাবে আত্মা, ঈশ্বর ও জগতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত ও যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায়।

সংশয় পদ্ধতি: ডেকার্ট স্বতঃসিদ্ধ সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে সার্বিক সংশয় পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এই পদ্ধতি অনুসারে, দর্শন আলোচনার শুরুতেই দেকার্ত প্রচলিত সকল জ্ঞান, বিশ্বাস এবং সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব সন্দেহ বা সংশয় করতে থাকেন। কিন্তু জগতের সবকিছুকে এইভাবে সংশয় করতে করতে তিনি এই সত্যে উপনীত হন যে, একটি বিষয়কে কোনভাবেই সন্দেহ বা সংশয় করা যায় না। সেই বিষয়টি হলো সংশয়ক্রিয়া ও সংশয়কারীর বা সন্দেহ কর্তার নিজের অস্তিত্ব সন্দেহাতীত বা সুনিশ্চিত। সংশয় করা মানেই এক প্রকার চিন্তা করা, আর 'চিন্তা করা' মানেই 'অস্তিত্ববান হওয়া'। কাজেই, আমি সংশয় করছি অথচ আমি অস্তিত্ববান নই- এরূপ ধারণা স্ববিরোধী। এইভাবে দেকার্ত তাঁর দর্শনে প্রথম সংশয়াতীত বচন 'আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি' - প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতএব আত্মার অস্তিত্ব সংশয়াতীত। কেবলমাত্র বুদ্ধির সাহায্যেই আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। আত্মার ধারণা স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট।

সমালোচনা:
    
     ১) দেকার্তের মতে, গণিতের জ্ঞান হলো আদর্শ জ্ঞান। কিন্তু এই প্রকার জ্ঞান হল পুনরুক্তিমূলক এবং এর থেকে বাস্তব জগত সংক্রান্ত জ্ঞান নিঃসৃত হয় না। তাছাড়া দর্শনের জ্ঞান ও গণিতের জ্ঞান এক নয়। দর্শনের জ্ঞান মূর্ত, কিন্তু গণিতের জ্ঞান অমূর্ত। কাজেই গাণিতিক পদ্ধতি কখনোই দর্শনের পদ্ধতি হতে পারে না।

    ২) দেকার্তের বুদ্ধিবাদ মুখ্যত সহজাত ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সহজাত ধারণার অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন। অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক লক বলেন, সর্বজনস্বীকৃত কোন সহজাত ধারণার অস্তিত্ব নেই।

  ৩) ডেকার্ট বলেন, বুদ্ধির সাহায্যে অভিজ্ঞতাপূর্ব সহজাত ধারণা থেকে অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যথার্থ ও সুনিশ্চিত জ্ঞান পাওয়া যায়। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে জ্ঞানের ক্ষেত্রে এত ভুলভ্রান্তি দেখা দেয় কেন? এর ব্যাখ্যা দেকার্তের মত থেকে পাওয়া যায় না।
<<<<<<<>>>>>>
Read More

Thursday, 24 October 2019

A question and answer of Strong Roots ---APJ Abdul Kalam. (Class xii of wbchse)

Leave a Comment
"I was born into a middle-class Tamil family ..." ("আমি একটি মধ্যবিত্ত তামিল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলাম ...")

 Who is the speaker here? Where did the family live ? How was the life style of the parents of the speaker? (এখানে বক্তা কে?  পরিবারটি কোথায় থাকতেন?  বক্তার বাবা-মা’র জীবনযাত্রা কেমন ছিল?)  (1 + 1 + 4)

 Ans. APJ Abdul Kalam is the speaker here.

      The family lived in the island town of Rameswaram in the erstwhile Madras state.

     The parents of the speaker were Jainulabdeen and Ashiamma. They belonged to middle-class Tamil family. Jainulabdeen had not much wealth. He found an ideal helpmate in Ashiamma. He was very simple, and avoided any kind of inessential comfort and luxury in life. He was always dutiful, and therefore, he provided all necessities like food, medicine and clothing to everyone of his family. Ashiamma was also a kind-hearted lady. In a word, they lived a happy life.

বঙ্গানুবাদ

 উঃ  এপিজে আবদুল কালাম এখানে বক্তা।

  পরিবারটি পূর্ববর্তী মাদ্রাজ রাজ্যের দ্বীপপুঞ্জের রামেশ্বর শহরে বাস করত।

  বক্তার বাবা-মা ছিলেন জৈনুলআবদীন এবং আশিয়াম্ম্ম।  তাঁরা মধ্যবিত্ত তামিল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিল।  জৈনুলআবদীনের তেমন সম্পদ ছিল না।  তিনি আশিয়াম্মার মধ্যে এক আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছিলেন।  তিনি খুব সাধারণ ছিলেন, এবং জীবনে যেকোনও ধরণের অপ্রয়োজনীয় স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিলাসিতা এড়িয়ে চলতেন।  তিনি সর্বদা দায়িত্বশীল ছিলেন এবং তাই তিনি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে খাবার, ওষুধ এবং পোশাকের মতো সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছিলেন।  আশিয়াম্মাও ছিলেন এক মমতাময়ী মহিলা।  এক কথায় তারা সুখী জীবন কাটিয়েছিল।
Read More

Friday, 20 September 2019

HS PHILOSOPHY, উচ্চমাধ্যমিক দর্শন( wbchse) মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি

Leave a Comment

মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।  1+2+1+2+2
      সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত, সুবিধা (দুটি) অসুবিধা (দুটি)।
অথবা,
"থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদনের ফলে বুদ্ধি ক্ষীণ হয়। সুতরাং, থাইরয়েড গ্রন্থি বুদ্ধির কারণ।" -- এই দৃষ্টান্তে মিলের কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে পদ্ধতিটির ব্যাখ্যা কর। 
 চিহ্নিতকরণ, সংজ্ঞা, আকার, সুবিধা (দুটি), অসুবিধা (দুটি)।        ১+২+১+২+২

উঃ চিহ্নিতকরণ: এখানে মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ( 'অথবা' প্রশ্নটির জন্য)

সূত্র বা সংজ্ঞা: মিল ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটিকে ব্যক্ত করেছেন এইভাবে - "আলোচ্য ঘটনাটি যদি একটি মাত্র দৃষ্টান্ত উপস্থিত থাকে ও অন্য একটি দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে এবং দৃষ্টান্ত দুটির মধ্যে যদি একটি মাত্র ঘটনা ছাড়া আর সব বিষয়ে মিল থাকে, তাহলে যে ঘটনাটি প্রথম দৃষ্টান্ত উপস্থিত থাকে ও দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত থাকে, সেটি হবে আলোচ্য ঘটনার কার্য বা কারণ বা কারণের অপরিহার্য অংশ।"

তর্ক বিজ্ঞানী মেলোন আরও সহজভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করেছেন -- "যখন একটি বিষয়কে যোগ করলে অপর একটি ঘটনা আবির্ভূত হয় কিংবা একটি বিষয়কে বাদ দিলে অপর একটি ঘটনা অন্তর্হিত হয় কিন্তু অন্যান্য সকল অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, তখন সেই বিষয়টি ঘটনার সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্কে যুক্ত থাকে।"

ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকার বা সাংকেতিক উদাহরণ:

১) দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা      অনুবর্তী  ঘটনা
 সদর্থক           ABC                    abc
নঞর্থক          BC                       bc

                       A হল a এর কারণ।

২) দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা      অনুবর্তী  ঘটনা
নঞর্থক          BC                       bc
 সদর্থক           ABC                    abc

                         A হল a এর কারণ।

    ( এখানে প্রথম উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনা থেকে 'A' কে বাদ দেওয়ার ফলে অনুবর্তী ঘটনা থেকে 'a' অন্তর্হিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনার সঙ্গে 'A' কে যোগ করার ফলে অনুবর্তী ঘটনাতে 'a' আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সকল আনুষঙ্গিক অবস্থা (অর্থাৎ, BC এবং bc) দুটি ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত আছে। উভয় উদাহরণে দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে যেটুকু পার্থক্য তাহল 'A' কে এবং 'a' কে নিয়ে। অর্থাৎ উভয়েই একসঙ্গে উপস্থিত এবং উভয়েই একসঙ্গে অনুপস্থিত। কাজেই দেখা গেল অন্য সকল অবস্থা এক থাকা সত্ত্বেও 'A' নামক অগ্রবর্তী ঘটনাটি না ঘটলে 'a'  নামক অনুবর্তী ঘটনাটি ঘটছে না। অতএব 'A'  হল 'a' এর কারণ।) এই অংশ লিখতেও পারো, নাও লিখতে পারো।

বাস্তব উদাহরণ বা মূর্ত দৃষ্টান্ত

দৃষ্টান্ত       অগ্রবর্তী ঘটনা                     অনুবর্তী  ঘটনা
দৃষ্টান্ত       থাইরয়েড গ্রন্থি আছে                      বুদ্ধি  প্রখর আছে
নঞর্থক   থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদন করা হলো        বুদ্ধি ক্ষীণ হল

    সুতরাং,   থাইরয়েড গ্রন্থি হল বুদ্ধির কারণ।



    সুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি সুবিধা হল --

  ১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য মাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন। একটি সদর্থক অন্যটি নঞর্থক। তাই এই পদ্ধতির প্রয়োগ খুবই সহজ।

 ২) ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রমাণের পদ্ধতি হাওয়ায় সুনিশ্চিতভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারে।

                     অতিরিক্ত

  ৩) বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি  বিশেষ সহায়ক।

  ৪) অন্বয়ী পদ্ধতি কিংবা অন্যান্য পরীক্ষামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে সেই সকল সিদ্ধান্তকে যাচাই করা হয়।


     অসুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি অসুবিধ হল --

  ১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল পরীক্ষণের পদ্ধতি। তাই আমরা কেবলমাত্র কারণ থেকে কার্যে অগ্রসর হতে পারি কিন্তু কার্য থেকে কারণে যেতে পারি না।

  ২) ব্যতিরেকী পদ্ধতি সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে না পারলে কাকতালীয় দোষ ঘটতে পারে।

অতিরিক্ত:

  ৩) ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে কারণ এবং শর্তের মধ্যে কোন পার্থক্য করা যায় না।

  ৪) ব্যতিরেকী পদ্ধতি বহুকারণ দোষের সম্ভাবনা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয়।

  ৫) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে বাস্তবে প্রয়োগ করা খুবই কষ্টসাধ্য এবং প্রায় অসাধ্য।

  ৬) স্থায়ী কারণ বা চিরন্তন কারণের ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না।

   মূল্যায়ন: পরীক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্য অনস্বীকার্য। প্রকৃতিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান বা অন্যান্য ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত উপনীত হন। তাই এই পদ্ধতির সাফল্য বা ব্যর্থতার উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেকটা নির্ভরশীল। এইজন্য মিল এই পদ্ধতিকে সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি বলেছেন।

Read More

Wednesday, 18 September 2019

শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রশ্ন এবং উত্তর / Question and answer of education ( B. A. 3rd year, ugb)

Leave a Comment
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন বলতে কী বোঝ? নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ছকের সাহায্যে শ্রেণীবিভাগ করে প্রত্যেকটি ভাগের বর্ণনা দাও।

উঃ

     ভূমিকা:   প্রচলিত রচনাধর্মী পরীক্ষার ব্যক্তিকতার প্রভাব থেকে গতানুগতিক পরীক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে মূল্যায়ন মনীষীরা এমন একটি অভীক্ষার কথা তুলে ধরেন যেখানে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মনোভাব প্রকাশের কোন স্থান থাকে না এবং যেখানে পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা, যথার্থতা ও ব্যবহারযোগ্যতা অতিমাত্রায় রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে বস্তুধর্মী বা নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা।

     নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা: যে সব পরীক্ষার প্রশ্ন শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষক উভয়ের ব্যক্তিগত প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং নম্বর দানের পার্থক্য হবার সুযোগ থাকে না তাকে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা বলে। এইসব পরীক্ষার প্রশ্নগুলি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন।

    নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: যে প্রশ্নগুলি পরীক্ষার্থীদের কয়েকটি শব্দে উত্তর দিতে হয় এবং কতিপয় কয়েকটি বিকল্প উত্তর থেকে সঠিক উত্তরটি নির্দিষ্ট করতে হয়, সেই সব প্রশ্নগুলি হল নৈর্ব্যক্তিক।

     নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য: ১) ব্যক্তি নির্ভর নয়। (২) পরীক্ষক এবং পরীক্ষার্থী উভয়ের  কোন ব্যক্তিগত প্রভাব থাকে না (3) মান নির্ণয় অপেক্ষাকৃত সহজ (4) প্রশ্ন গঠন পরিশ্রমসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ (5) শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের সামগ্রিক পরিমাপ করা যায়।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ: নিম্নে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হল-

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন মূলত দুই প্রকার।
 যথা-
  (ক) সরবরাহ প্রকৃতি এবং (খ) নির্বাচন প্রকৃতি।

১) সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন: যে সকল প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রের দেওয়া থাকে না। শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি কি হবে তা চিন্তা করে উত্তর দিতে হয় তাকে সরবরাহ প্রকৃতির প্রশ্ন বলে।

সরবরাহ প্রকৃতি প্রশ্ন তিন ধরনের হয়। যথা -
ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন
 খ) প্রশ্নোত্তর
গ) উপমান

ক) সম্পূর্ণকরণ প্রশ্ন: এখানে প্রশ্নটিই অসম্পূর্ণ থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক প্রশ্নোত্তরটি সরবরাহ করে সম্পূর্ণ করতে হয়। যেমন-

 ভারতের উত্তরে ...............পর্বত অবস্থিত।

   খ) প্রশ্নোত্তর: এখানে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন দুই একটি  শব্দে উত্তর লিখতে হয়। যেমন-
 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি?

   গ) উপমান: এখানে দুটি বস্তু বা বিষয়ের নাম দেওয়া থাকে এবং তার পাশে আরও একটি বিষয় দেওয়া থাকে প্রথম দুটি বিষয়ের সঙ্গে অনুসরণ করে তৃতীয় বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় লিখতে হয়। যেমন-
 বাঙালি : ভাত : বিহারী : ?
 চোখ : দেখা : কান : ?

    ২) নির্বাচন প্রকৃতির প্রশ্ন: যেসব প্রশ্নের উত্তর দানের সময় শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত কতগুলি উত্তরের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে হয় তাদের নির্বাচন প্রকৃতি প্রশ্ন বলে।

 নির্বাচন প্রকৃতির  প্রশ্নগুলি চার ধরনের হয়। যথা-

     (ক) সত্য-মিথ্যা নিরূপণ: এই ধরনের প্রশ্নে প্রশ্নটির পাশে একটি সঠিক উত্তর ও একটি ভুল উত্তর থাকে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরের পাশে হ্যাঁ বা না লিখতে হয়। কখনো কোনো বিবরণ দিয়ে তার সত্য-মিথ্যা নির্ভর করতে বলা হয়। যেমন-

১) হিমালয় ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত। (হ্যাঁ বা না লেখ)
২) ভারতের রাজধানী দিল্লি। (সত্য না মিথ্যা)

  খ)  সজ্জিতকরণ: যে প্রশ্নে বিভিন্ন এলোমেলো ঘটনাকে ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হয় তাকে সজ্জিতকরণ প্রশ্ন বলে। যেমন-

 জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, বাবর, আকবর, হুমায়ুন

    গ)  সামঞ্জস্য নির্ণয়: এখানে সমান্তরাল দুটি স্তম্ভ থাকে, প্রথম স্তম্ভে প্রশ্নটিকে উপস্থাপনা করা হয় এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ প্রশ্নের উত্তরগুলি উল্টেপাল্টে দেওয়া থাকে। শিক্ষার্থীকে দুটি স্তম্ভ মেলাতে বলা হয়। যেমন-

প্রথম স্তম্ভ                           দ্বিতীয় স্তম্ভ

১) রবীন্দ্রনাথ                       (  ) ফুটবল খেলোয়ার
২) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু   (  )  বিশ্বকবি
৩) পেলে                             (  )  বিজ্ঞানী

    ঘ) বহুমুখী নির্বাচন: এখানে একটি প্রশ্নের একাধিক সম্ভাব্য উত্তর এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করতে বলা হয়।
যেমন-

 পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হচ্ছে দিল্লি /কলকাতা/ বর্ধমান।

    ঙ) শ্রেণীকরণ:  এই ধরনের প্রশ্নে একসাথে অনেকগুলো বস্তু বা বিষয়ের নাম থেকে যেটি ওই শ্রেণির নয় তাকে পৃথক করতে হয়।
 যেমন-
 কালো, সাদা, লাল, নদী

    মন্তব্য  উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে,  রচনাধর্মী প্রশ্ন অপেক্ষা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নগুলি অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিক সংখ্যক ঘটনা, তথ্য বা বিষয়ের জ্ঞান পরিমাপ করতে পারে। তাই রচনাধর্মী পরীক্ষার পাশাপাশি নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে রচনাধর্মী পরীক্ষার সংস্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরী।

           <<<<<সমাপ্ত>>>>>


Read More

শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি প্রশ্ন ও উত্তর/ A question and answer of education ( B.A 3rd year , Gour Banga University)

Leave a Comment
মূল্যায়ন বলতে কি বোঝ?  শিক্ষায় মূল্যায়নের পরিধি আলোচনা করো।

উঃ

    ভূমিকা:  শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের বিশেষ তাৎপর্য এবং গভীর গুরুত্বের বিষয়টি আজ সর্বজনবিদিত। শিক্ষাকে গতিশীল জীবন্ত প্রক্রিয়া হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে, শিক্ষাধারার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির জীবনে কাম্য ও বাঞ্ছিত আচরণ ধারা প্রকৃত পথে মূর্ত করে তুলতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান, বোধ, সামর্থ্য, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ, লক্ষ্যভিত্তিক সঠিক পথে পৌঁছালো কিনা তা জানতে এবং শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনে উদ্দেশ্য মাফিক পরিবর্তন ও পরিমার্জন এলো কিনা তা বুঝে নিতে মূল্যায়নের প্রয়োজন।

   মূল্যায়ন:  মূল্যায়ন বলতে আজকাল একটি বিরতিহীন প্রক্রিয়া বলে  ধরা হয় যেটি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূল্যায়ন একদিকে শিক্ষার্থীর পঠন-পাঠনের উপর নজর রাখে অপরদিকে শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতির উপরও বিশেষ জোর দেয়।

    কুইনেল ও হ্যান্না মূল্যায়নের যে স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন তা হল -

১) মূল্যায়ন শিশুর আচরণের সামগ্রিক বিবেচনার কৌশল নির্ধারণ করে।
২)  শিশু নিয়ত পরিবর্তনশীল বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেয়।
৩) এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া।
৪) শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই তিনের  সহযোগিতায় মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নির্ভর করে।

      মনোবিদ ওয়েসলে বলেন, মূল্যায়ন হল এমন সব প্রচেষ্টা যার সাহায্যে আকাঙ্খিত উদ্দেশ্য গুলি পরিমাণগত ও গুণগতভাবে কতখানি বাস্তবায়িত হয়েছে তা পরিমাপ করে। নৈর্ব্যক্তিক ও ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ উভয় এই প্রচেষ্টার অন্তর্গত।

       অধ্যাপক শ্রীনিবাস এর মতে- মূল্যায়ন হচ্ছে-
ক) ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশের মূল্য ও মাত্রা নির্ধারণ, (খ) ব্যক্তির বৌদ্ধিক, সামাজিক ও অন্যান্য বিকাশের ধারা নির্ণয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিমাপ এবং (গ) শিক্ষার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের প্রগতির বিচার-বিশ্লেষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিশীল সামগ্রিক পরিমাপ প্রক্রিয়া।

  মূল্যায়নের পরিধি: মূল্যায়নের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বর্তমানে মূল্যায়ন কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বিচার করে না বরং সমগ্র শিক্ষা পদ্ধতির প্রতিটি উপাদানের পরিবর্তনের মূল্যায়ন করে থাকে।

   নিম্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যায়নের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হল -

    ১) শিক্ষার উদ্দেশ্য: বিদ্যালয়ের বয়সের শিক্ষার্থীদের বিকাশ গত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা মূল্যায়নের একটি প্রধান কাজ। শিক্ষার নির্ধারিত উদ্দেশ্যগুলি, শিক্ষার্থীর আচরণের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কতখানি ঘটেছে তা নির্ধারণ করা মূল্যায়নের পরিধির অন্তর্গত।

      ২) পাঠ্যক্রম: বর্তমান পাঠক্রম বৈচিত্র্যপূর্ণ। সমস্ত শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীকে অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রভাবিত করে। এই পাঠ্যক্রমের যথার্থতাও মূল্যায়নের মাধ্যমে জানা যায়। তাই পাঠ্যক্রমের বিজ্ঞানসম্মত গঠন ও পুনর্বিন্যাস মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

    ৩) শিক্ষা- শিক্ষণ পদ্ধতি: প্রচলিত নির্দিষ্ট শিক্ষাদান পদ্ধতির মধ্যে কতখানি পরিবর্তন আনতে হবে বা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্থভাব এবং সঠিক মাত্রায় পরিবর্তন ঘটাতে হলে পাঠদান পদ্ধতির আরো উন্নতি সাধন কিভাবে করা যায় তা নির্দেশ করা মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

    ৪) নির্দেশনা: শিক্ষার্থীর দক্ষতা, আগ্রহ ও মনোযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে ভবিষ্যতের শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান করা যায়। বর্তমানে শিক্ষকরা শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে উপরিউক্ত নির্দেশনাগুলো কাজ করে থাকে।

  ৫) শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ: শিক্ষা প্রক্রিয়া কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে না, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা বিশ্লেষণ করে। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করে। অতীত ও বর্তমানের গতি ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়াও মূল্যায়ন এর অন্তর্গত।

   ৬)  শিক্ষকের গুণাবলী: শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভূমিকা ও যোগ্যতা কতখানি সার্থক তা নির্ণয় করা মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত।

 ৭) পরিমাপ: একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত পারদর্শিতার পরিমাপের সাথে তার বুদ্ধি, আগ্রহ, প্রবণতা, ব্যক্তিসত্তা প্রভৃতি মানসিক বৈশিষ্ট্যের পরিমাপও মূল্যায়ন এর কাজ।

 ৮) মূল্যায়ন ও  সু-শিখন: বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীর শিখনে অবাঞ্চিত প্রভাব বিস্তার করছে। এর সংস্কার সাধন করে কিভাবে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞানের সাথে দক্ষতা, ব্যবহারিক প্রয়োগ ক্ষমতা প্রভৃতি গড়ে তুলতে মূল্যায়ন সাহায্য করে যা শিক্ষার্থীর সু- শিখনে কাজে লাগে।

 মন্তব্য: আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিমাপক হিসেবে মূল্যায়ন পদ্ধতি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় মূল্যায়নের পরিধি অন্তর্গত। মূল্যায়ন হল একটি সার্বিক প্রক্রিয়া যা শিক্ষার প্রতিটি উপাদানের গুণগত ও পরিমাণগত পরিমাপ নির্দেশ করে থাকে।



 <<<<<<<<<সমাপ্ত>>>>>>>>

Read More