তৃতীয় অধ্যায়
অমাধ্যম অনুমান
আবর্তন কাকে বলে? আবর্তনের নিয়মগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা
আবর্তন কাকে বলে? আবর্তনের নিয়মগুলি কী কী? আবর্তনের নিয়মগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর। O বচনের আবর্তন সম্ভব নয় কেন? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর। O বচনের নিষেধমূলক আবর্তন উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উঃ
আবর্তন: যে অমাধ্যম অনুমানে আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তের বিধেয় হয় এবং আশ্রয়বাক্যের বিধেয় পদ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হয় এবং আশ্রয়বাক্য এবং সিদ্ধান্তের গুণ অপরিবর্তিত থাকে, তাকে আবর্তন বলে। আবর্তনের ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যকে আবর্তনীয় এবং সিদ্ধান্তকে আবর্তিত বলে। যেমন,
আশ্রয়বাক্য: E কোনাে পশু নয় কবি। (আবর্তনীয়)
সিদ্ধান্ত: E = কোনাে কবি নয় পশু। ( আবর্তিত )
*আবর্তনের নিয়ম ( Rules of Conversion ) :
(১) আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্যপদ সিদ্ধান্তের বিধেয়পদ হবে।
(২) আশ্রয়বাক্যের বিধেয়পদ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্যপদ হবে।
(৩) আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ অভিন্ন হবে। অর্থাৎ, আশ্রয়বাক্য যদি সদর্থক হয় তাহলে সিদ্ধান্তও সদর্থক হবে এবং আশ্রয়বাক্যে নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তও নঞর্থক হবে। এই নিয়মটিকে বলা হয় আবর্তনের গুণের নিযম।
(৪) যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয়, সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। এই নিয়মটিকে বলা হয় ব্যাপ্যতার নিয়ম।
আবর্তনের নিয়মগুলির প্রয়ােগ: আবর্তনের নিয়মগুলি অনুসরণ করে A , E , I , O বচনকে আবর্তন করা যাক-
( i ) A বচনের আবর্তন ( Conversion of A ) :
দৃষ্টান্ত:
A - সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব - আবর্তনীয়
I - কোনাে কোনাে মরণশীল জীব হয় মানুষ — আবর্তিত
ব্যাখ্যা: এই অনুমানে হেতুবাক্যের উদ্দেশ্যপদ সিদ্ধান্তের বিধেয়পদ হয়েছে এবং হেতুবাক্যের বিধেয়পদ সিধান্ত্রে উদ্দেশ্যপদ হয়েছে । আবর্তনের তৃতীয় নিয়ম অনুসারে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ এক হবে। দৃষ্টান্তে আবর্তনীয় ও আবর্তিত বচন উভয়ে সদর্থক । আবর্তনের চতুর্থ নিয়মে বলা হয়েছে, যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। দৃষ্টান্তে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ সিদ্ধান্ত 'I' বচনে কোনাে পদই ব্যাপ্য নয়। কারণ, যুক্তিটির আশ্রয়বাক্য সার্বিক কিন্তু সিদ্ধান্ত বিশেষ বচন। কিন্তু যদি A- বচনকে A- বচনে আবর্তন করা হত তবে আবর্তনের তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করা হত।
সুতরাং A বচনের আবর্তিত রূপ I
(ii) E – বচনের আবর্তন ঃ
E - কোনাে ঘােড়া নয় গােরু — আবর্তনীয়
E - কোনাে গােরু নয় ঘােড়া — আবর্তিত
ব্যাখ্যা: উল্লিখিত দৃষ্টান্তে আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্যপদ ও বিধেয়পদ যথাক্রমে সিদ্ধান্তের বিধেয়পদ ও উদ্দেশ্যপদ হয়েছে। তৃতীয় নিয়ম অনুসারে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত উভয় বচনই নঞর্থক। চতুর্থ নিয়ম যথাযথভাবে পালিত হয়েছে। কেননা, আশ্রয়বাক্যের দুটি পদ ব্যাপ্য এবং সিদ্ধান্তেরও দুটি পদ ব্যাপ্য। E বচনকে আবর্তিত করে 0 বচন করলে আবর্তনের কোনাে নিয়ম লঙ্ঘিত হয় না ঠিক। কিন্তু এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, যেখানে সামান্য বচন থেকে সামান্য সিদ্ধান্ত সম্ভব, সেখানে বিশেষ সিদ্ধান্তে যাওয়া কাম্য নয় বলে ‘ E'- কে আবর্তন করে O বচন করা বাঞ্ছনীয় নয়।
সুতরাং E বচনের আবর্তিত রূপ E
(iii) I বচনের আবর্তন :
দৃষ্টান্ত:
আবর্তনীয় : 'I' কোনাে কোনাে ছাত্র হয় পরিশ্রমী।
আবর্ত: 'I' কোন কোন পরিশ্রমী ব্যক্তি হয় ছাত্র।
ব্যাখ্যা: উল্লিখিত দৃষ্টান্তে 'I' বচনের আবর্তন বৈধ। কারণ আবর্তনের কোনাে নিয়ম এই ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হয়নি। আবর্তনীয় ও আবর্তিত উভয় বচনই সদর্থক । দুটি বচনের কোনাে পদ ব্যাপ্য নয় ।
সুতরাং I বচনের আবর্তিত রূপ I
0 বচনের আবর্তন : O বচনকে আবর্তন করা যায় না। কেন 0 বচনের আবর্তন করা যায় না তার আলােচনা করা যাক।
0 বচনটি নঞর্থক। কাজেই এর আবর্তিত বচন বা সিদ্ধান্তকে নঞর্থক হতেই হবে (৩ নং নিয়ম অনুসারে)। যেহেতু A এবং I সদর্থক বচন, সেহেতু O বচনকে আবর্তিত করে কোনােমতেই A বা I বচন পাওয়া যেতে পারে না । কাজেই O বচনকে আবর্তিত করলে E বা 0 বচন করা দরকার। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা একই। 0 বচনের উদ্দেশ্য অব্যাপ্য। 0 বচনকে আবর্তিত করে যদি E বচন করা হয় তাহলে 0 বচনের উদ্দেশ্যটি সিদ্ধান্তে E বচনের বিধেয় হিসেবে ব্যাপ্য হবে। এর ফলে আবর্তনের চতুর্থ নিয়মটি লঙ্ঘিত হবে। আবার, O বচনকে আবর্তিত করে যদি 0 বচন করা হয়, সেক্ষেত্রেও 'O' বচনের অব্যাপ্য উদ্দেশ্যটি সিদ্ধান্তে 0 বচনের বিধেয় হিসেবে ব্যাপ্য হবে এবং এর ফলে আবর্তনের চতুর্থ নিয়মটি লঙ্ঘিত হবে । কাজেই 0 বচনের আবর্তন কোনাে মতেই সম্ভবপর নয়।
0 বচনের নিষেধমূলক আবর্তন: আমরা দেখেছি O, বচনকে আবর্তন করতে গেলে আবর্তনের নিয়ম লঙ্ঘন করতে হয়। কোনাে কোনাে তর্কবিদ একটি বিশেষ উপায়ে O বচনের আবর্তন করার চেষ্টা করেছেন । তাঁরা প্রথমে 0 বচনের নঞর্থক চিহ্নটিকে বিধেয়ের সঙ্গে যুক্ত করে বচনটিকে I বচনে পরিণত করেন এবং তারপর এই বচনটি আবর্তিত করেন। যেমন-
O— কোনাে কোনাে মানুষ নয় সৎ
I— কোনাে কোনাে মানুষ হয় অসৎ (আবর্তনীয়)
I— কোনাে কোনাে অসৎ ব্যক্তি হয় মানুষ (আবর্ত)
এই রকমের আবর্তনকে নিষেধমূলক আবর্তন বলা হয়। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে এ ধরনের আবর্তনকে আবর্তন বলা যায় না। আবর্তনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নিয়ম এক্ষেত্রে মানা হয়নি। এখানে আবর্তনীয়ের বিধেয়কে আবর্তিতের উদ্দেশ্য করা হয়নি, বিধেয় পদের বিরুদ্ধপদকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এখানে গুণের পরিবর্তন করা হয়েছে — আবর্তনীয় নঞর্থক, কিন্তু আবর্তিত সদর্থক। এটা আবর্তনের তৃতীয় নিয়মের বিরােধী।
কাজেই O বচনের আবর্তন কোন মতেই সম্ভব নয়।
<<<<<<<<>>>>>>