প্রশ্ন: মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
[সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত সুবিধা (২টি), অসুবিধা (২টি)] (মান 1 + 2 + 1 + 2 + 2)
অথবা,
"থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে বাদ দিলে বুদ্ধি ভোতা হয়ে যায় । সুতরাং , থাইরয়েড গ্রন্থিই বুদ্ধির কারণ।" এখানে মিলের কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে? পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা কর।
[চিহ্নিতকরণ, সংজ্ঞা, আকার, সুবিধা (২টি), অসুবিধা (২টি)] (মান 1 + 2 + 1 + 2 + 2)
উঃ
চিহ্নিতকরণ: এখানে মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
মিল প্রদত্ত ব্যতিরেকী পদধতির সূত্র/ সংজ্ঞা: “যদি আলােচ্য ঘটনাটি একটিমাত্র দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকে এবং অপর একটি দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত থাকে এবং এইরূপ দুটি দৃষ্টান্তে যদি একটিমাত্র ঘটনা ছাড়া আর সব বিষয়ে সম্পূর্ণ মিল থাকে, আর যে ঘটনাতে মিল নেই সেটি যদি শুধুমাত্র প্রথম দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকে তবে যে ঘটনাটির জন্য দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে পার্থক্য সেই ঘটনাটি আলোচ্য ঘটনার কারণ (বা কাৰ্য) বা কারণের অনিবার্য অংশ।”
ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকার বা সাংকেতিক উদাহরণ:
1) দৃষ্টান্ত অগ্রবর্তী ঘটনা অনুবর্তী ঘটনা
সদর্থক ABC abc
নঞর্থক BC bc
. ' . A হল a- এর কারণ।
2) দৃষ্টান্ত অগ্রবর্তী ঘটনা অনুবর্তী ঘটনা
নঞর্থক BC bc
সদর্থক ABC abc
. ' . A হল a- এর কারণ।
ব্যাখ্যা: এখানে প্রথম উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনা থেকে ‘A’- কে বাদ দেওয়ার ফলে অনুবর্তী ঘটনা থেকে ‘a' অন্তর্হিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণে অগ্রবর্তী ঘটনার সঙ্গে ‘A’- কে যােগ করার ফলে অনুবর্তী ঘটনাতে ‘a' আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু, অন্যান্য সকল আনুষঙ্গিক অবস্থা (অর্থাৎ, BC এবং bc ) দুটি ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত আছে। উভয় উদাহরণে দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে যেটুকু পার্থক্য তা হল 'A' এবং 'a'- কে নিয়ে। অর্থাৎ, উভয়ই একসঙ্গে উপস্থিত এবং উভয়ই একসঙ্গে অনুপস্থিত। কাজেই, দেখা গেল, অন্য সকল অবস্থা এক থাকা সত্ত্বেও ‘A’ নামক অগ্রবর্তী ঘটনাটি না ঘটলে ‘a' নামক অনুবর্তী ঘটনাটি ঘটছে না। অতএব ‘A’ হল ‘a'- এর কারণ।
দৃষ্টান্ত/বাস্তব উদাহরণ: থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে বাদ দিলে বুদ্ধি ভোতা হয়ে যায় । সুতরাং , থাইরয়েড গ্রন্থিই বুদ্ধির কারণ ।
যুক্তি বিশ্লেষণ :
দৃষ্টান্ত অগ্রবর্তী ঘটনা অনুবর্তী ঘটনা
সদর্থক থাইরয়েড গ্রন্থি থাকা -- বুদ্ধি স্বাভাবিক থাকা ।
নঞর্থক থাইরয়েড গ্রন্থি না থাকা --- বুদ্ধি স্বাভাবিক না থাকা ।
: . থাইরয়েড গ্রন্থি = কারণ।
বুদ্ধি = কার্য ।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধা:
( ১ ) ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়ােগ খুবই সহজ ও সরল। কেননা, এই পদ্ধতি প্রয়ােগের জন্য মাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়ােহন হয়। একটিমাত্র সদর্থক ও একটিমাত্র নঞর্থক দৃষ্টান্ত ।
( ২ ) ব্যতিরেকী পদ্ধতি পরীক্ষণের পদ্ধতি। অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়ােগ করে যে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা হয় এই পদ্ধতির সাহায্যে তা যাচাই বা প্রমাণ করা যায়। এইজন্যই মিল ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণের পদ্ধতি বলেছেন।
(৩) মিল দাবি করেছেন যে, ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে কার্য থেকে কারণ এবং কারণ থেকে কার্য আবিস্কার করা যায়। তাই এ পদ্ধতির প্রয়ােগক্ষেত্র খুবই ব্যাপক ।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা :
(১) ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়ােগের জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়ােজন হয়। সাধারণ মানুষ এই পদ্ধতির অপপ্রয়ােগঘটাতে পারে। ফলে কাকতালীয় দোষ ঘটতে পারে।
(২) ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণ পদ্ধতি। তাই এই পদ্ধতি কারণ থেকে কার্য আবিষ্কার ও প্রমাণ করতে পারে কিন্তু কার্য থেকে কারণ আবিষ্কার ও প্রমাণ করতে পারে না।
মূল্যায়ন : পরীক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্য অনস্বীকার্য। প্রকৃতিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান বা অন্যান্য ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়ােগ করে বিজ্ঞানীরা সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তাই এই পদ্ধতির সাফল্য বা ব্যর্থতার ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেকটা নির্ভরশীল। এজন্য মিল এই পদ্ধতিকে সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি বলেছেন ।
<<<<<<<<<>>>>>>>>>
0 comments:
Post a Comment