Monday 18 January 2021

Education ( শিক্ষাবিজ্ঞান) প্রশ্ন : শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক লক্ষ্য, ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য এবং সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যগুলির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

Leave a Comment

 প্রশ্ন : শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক লক্ষ্য, ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য এবং সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যগুলির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

OR, শিক্ষার  বৃত্তিমূলক  লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

 OR, শিক্ষার   গণতান্ত্রিক  লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

OR, শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

OR, শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।

উঃ 

ভূমিকা : শিক্ষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া এবং এই গতিশীল প্রক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট। কোনাে লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। তাই বিভিন্ন দেশের মনীষীরা বিভিন্ন দিকের উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের লক্ষ্যের কথা বলেছেন। যেমন বৃত্তিমূলক লক্ষ্য, সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক লক্ষ্য, ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ইত্যাদি।

 বৃত্তিমূলক লক্ষ্য : প্রাচীনকালের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল। তাই জীবন  ধারণের জন্য জটিল কৌশল আয়ত্ত করতে হতাে না। কিন্তু বর্তমানকালে সমাজে জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের অধিক অভিজ্ঞতার প্রয়ােজন পড়ছে। পিতামাতার একার পক্ষে এই জটিল পরিস্থিতির জন্য স্বার্থক অভিযােজনের শিক্ষাপ্রদান সম্ভব না হওয়ার ফলে শিক্ষা হয়ে উঠল নিয়মতান্ত্রিক। বর্তমানকালে যে সকল অভিজ্ঞতাগুলি শিক্ষার্থীকে গ্রহণ করতে হয়, তাদের মধ্যে বৃত্তির উপযােগী করে গড়ে তােলার শিক্ষা হলাে অন্যতম। 

শিক্ষার যে সমস্ত লক্ষ্য শিশুকে ভবিষ্যতের বৃত্তি অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে তােলে তাকেই বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে। এই লক্ষ্যের মূল উদ্দেশ্যই হলাে শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিকে উপার্জনক্ষম করে তােলা। অথাৎ শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিকে এমন কতকগুলি কর্মদক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা যার দ্বারা সে জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয়। 

শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্যের সুবিধা : বৃত্তিমূলক লক্ষ্যের সুবিধাগুলি হলাে—

 ক) এই ধরনের শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনা ও বজায় রাখা  সম্ভব হয়। সমালােচক সুশীল রায় বলেছেন, এই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ফলে স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে, তার উদারতা আসবে এবং তার মধ্যে নীতিবােধ জাগ্রত হবে।

 খ) বৃত্তিমূলক লক্ষ্য শিক্ষাকে বহুলাংশে মনােবিদ্যাসম্মত করে তােলে। মনােবিদগণের মতে, ব্যক্তি যখন নিজে তার কাজের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতন হন তাহলে ব্যক্তিব মধ্যে সেই কাজ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সমালােচক সুশীল রায় বলেছেন, বৃত্তিমুখী লক্ষ্য, শিক্ষার্থীর শিক্ষাকালীন আচরণকে তার কাছে অনেক বেশী অর্থপূর্ণ এবং সহজ করে তােলে।

 গ) শিশুকে কর্মকেন্দ্রিক এবং কর্মের প্রতি মর্যাদাবােধের বিকাশে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সকলপ্রকার শিশুদের ক্ষেত্রেই এই শিক্ষা বিশেষ উপযােগী।

ঘ) সমালােচক সুশীল রায়ের ভাষায় বলা যায়, শিক্ষা যদি বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যাভিমুখী হয়, তাহলে সেই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সামাজিক যােগ্যতাসম্পন ব্যক্তিত্বেও রূপান্তরিত করা সহজ হয়। কারণ এই শিক্ষার সহায়তায় শিক্ষার্থী পরবর্তীজীবনে সফলভাবে সামাজিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে তার প্রয়ােজনীয়তাকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।

শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্যের অসুবিধা বা ত্রুটি: বৃত্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্যের সীমাবদ্ধতাগুলি হলাে— 

ক) উপার্জনশীল হওয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, কিছু অতিরিক্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা মানুষের দিগন্তকে সীমিত করে তােলে। 

খ) সার্থক জীবনযাপন বলতে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যকেই বােঝানাে হয় — যা কখনই সুষ্ঠু সমাজের কাম্য নয়। 

গণতান্ত্রিক লক্ষ্য : গণতন্ত্র বলতে বােঝায় সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই আমাদের দেশ তথা ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে পরিচিত। অর্থাৎ এই দেশের সকল নাগরিকেরই সমান অধিকারের সাথে এবং স্বাধীনভাবে একত্রিত হয়ে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। তাই এই দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই কর্তব্য হলাে এই সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা বজায় রাখা, যা শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। অথাৎ দেশের নাগরিকদের মধ্যে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা বােধের বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। 

সুতরাং শিক্ষার গণতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে বােঝায়, দেশের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক  সৌহার্দ্য ও সমতা বজায় রাখার ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটানাে, সুষ্ঠু নাগরিক প্রস্তুত করা এবং সুনাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত সুষ্ঠু দেশ গঠন করা ।

শিক্ষার গণতান্ত্রিক লক্ষের সুবিধা : গণতান্ত্রিক শিক্ষার সুবিধাগুলি হলাে—

 ক) এই শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যহীন মনােভাব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। 

খ) পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের মনােভাব গঠনে গণতান্ত্রিক শিক্ষা বিশেষভাবে পালন করে। 

গ) দেশের সম্পদকে সুষ্ঠভাবে ব্যবহারের শিক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে।

 ঘ) গণতান্ত্রিক শিক্ষা এক শােষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

চ) প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দেশের সুযােগ্য নাগরিক রূপে গড়ে তুলতে এবং দেশের ঐতিহ্যের প্রতি মর্যাদা সৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শিক্ষার গণতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা বা ত্রুটি : গণতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার দিকগুলি হলাে— 

ক)  সমাজ ও দেশের সুখ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ব্যক্তি - স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। 

খ) অতিরিক্ত পরিমাণে দেশপ্রীতি মানুষকে স্বার্থপর ও নিজের ভৌগােলিক সীমাকেন্দ্রিক করে তােলে।


শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য : শিক্ষার লক্ষ্য এক নয়, বহু। যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী এবং সমাজতন্ত্রবাদী — এই দুটি গােষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছে। যেসব শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিকাশকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বলা হয় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদীদের মত অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তির সম্ভাবনাময় ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশসাধন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং বৃত্তিমূলক দিকের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে শিক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে ব্যক্তি। তাই বলা হয় , শিক্ষার যে লক্ষ্য ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক হয় এবং ব্যক্তির যাবতীয় প্রয়ােজন বা চাহিদাপূরণে সাহায্য করে , তাকেই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থকদের মধ্যে  রয়েছেন স্যার পার্সি নান, বাট্রান্ড রাসেল, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ। 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের যেসব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় সেগুলি হল—

 (১) শিক্ষার লক্ষ্য নিরূপণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি হল কেন্দ্রবিন্দু, (২) ব্যক্তিগত পার্থক্যকে গুরুত্ব দেওয়া, (৩) শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করা এবং (৪) ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে তার বিকাশ ঘটানাের চেষ্টা।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা:

 (1) মানবশিশু পৃথিবীতে জন্মলাভ করে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে কতকগুলি সাধারণ এবং কতকগুলি বিশেষ প্রকৃতির হয়। কেবলমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষাই বিশেষ প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলিকে বিকশিত করতে এবং সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়। 

(2) শিশু পৃথিবীতে আবির্ভাবের মুহূর্তে সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ অবস্থায় থাকে। পরিবেশই তাকে কলুষিত করে। তাই সমাজ - পরিবেশের বাইরে তাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত করলে সে উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে। 

(3) প্রতিটি ব্যক্তিই একক সত্তা। দলগত পদ্ধতির সাহায্যে সকলকে একসাথে না পড়িয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতির সাহায্যে পাঠদান করলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বকীয়তা বজায় থাকে এবং তারা নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার সুযােগ পায়।

 (4) মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল আত্মােপলদ্ধি। আত্মােপলদ্ধি দ্বারাই ব্যক্তির মধ্যে পরিপূর্ণতা আসে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে এই কাজটি ( আত্মােপলব্ধি ) সহজেই সম্পন্ন করা যায়। 

(5) ব্যক্তির দ্বারা সমাজ গঠিত হয়। তাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নতি ঘটলে সমাজেরই উন্নতি হবে। 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা বা ত্রুটি :

(1) অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যক্তিকে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তােলে। ব্যক্তি তখন সমাজের কল্যাণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত কল্যাণকে বড়াে করে দেখে ।

(2) ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষায় ব্যক্তিকে সর্বপ্রকার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে। 

(3) সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা অসম্ভব। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা সমাজের মধ্যেই ঘটে, তাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা পরােক্ষভাবে সমাজের ওপর নির্ভরশীল।

 (4) ব্যক্তিকেন্দ্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে মনােবিজ্ঞানের যে তত্ত্ব রয়েছে তা ত্রুটিমুক্ত নয়। কারণ ব্যক্তি ও সমাজের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব হয়। 

(5) প্রত্যেকের জন্য পৃথক শিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল। শিক্ষার ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিকাশের সুবিধা ও অসুবিধাগুলির সাপেক্ষে এই কথা বলা যায় যে, কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার আধুনিক লক্ষ্যপূরণ তথা জাতীয় বিকাশ সম্ভব নয়।

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য : শিক্ষার লক্ষ্য এক নয়, বহু। যুগে যুগে বহু দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী এবং সমাজতন্ত্রবাদী — এই দুই গােষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছেন। যেসব শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক দিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তাদের বলা হয় সমাজতবাদী। তাঁরা মনে করেন সমাজের বাইরে ব্যক্তির পৃথক কোনাে অস্তিত্ব নেই। সামাজিক চাহিদা ও প্রত্যাশাপূরণের মধ্য দিয়েই ব্যক্তির চাহিদা ও প্রত্যাশাপূরণ সম্ভব। একইভাবে সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়ন হলেই ব্যক্তির অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। তাই সমাজই হবে শিক্ষার লক্ষ্যের ভিত্তি। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক মতবাদের সমর্থকদের মধ্যে হাবার্ট স্পেনসার, রস, ডিউই, গান্ধিজি প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

1) সমাজকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির আলাদা অস্তিত্ব নেই। তাই সমাজের যা লক্ষ্য ব্যক্তি লক্ষ্যও তাই হবে। 

2) সমাজের কল্যাণ হলে ব্যক্তির কল্যাণ হবে।

 3) সমাজই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতে পারে।

 4) সামাজিক চাহিদা এবং আশা - আকাঙ্ক্ষা পূরণই হবে শিক্ষার কাজ।

  শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা

(1) সমাজজীবন ব্যক্তিকে সবধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয় এবং তার সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। 

(2) সমাজ পরিবেশই বংশানুক্রমে অর্জিত অতীতের সুন্দর ও সফল অভিজ্ঞতাগুলি ব্যক্তি সামনে  অনুশীনের জন্য তুলে ধরে। 

(3) সামাজিক রীতিনীতি এবং অনুশাসনগুলি ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধন করে।

 (4) সমাজের সভ্য হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তি সমাজের যাবতীয় সুযােগসুবিধা ভােগ করে। শুধু তাই নয়, এই সুযােগ সুবিধাকে ব্যক্তি তার আশা - আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তির কাজে ব্যবহার করে। 

(5) সমাজ দুর্বল এবং সর্বল সব ধরনের ব্যক্তিকেই আশ্রয় দেয় এবং সবারই মঙ্গল কামনা করে। 

(6) এমন কতকগুলি দায়িত্ব থাকে যা এককভাবে কোনাে ব্যক্তির পক্ষেই সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সমাজ বা রাষ্ট্র ওই কাজের দায়িত্ব নেয়। ফলে সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যই বলবৎ হয়।

 শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রুটি বা অসুবিধা : 

(1) শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে সমাজের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যক্তির সামর্থ্য, চাহিদা, ইচ্ছা - অনিচ্ছা অবহেলিত হয়। এর ফলে ব্যক্তির যেমন কল্যাণ হয় না, তেমনি সমাজেরও কল্যাণ সাধিত হয় না। 

(2) শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রাধান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযােগ করে দেয়, গণতন্ত্র অবহেলিত হয়। এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক, ছাত্র — সকলের মধ্যেই স্বেচ্ছাচারিতার মানসিকতা তৈরি হয়। 

(3) শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিকতার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। ব্যক্তির সৃজনশীলতা বিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। 

(4) পুরােপুরি সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ হয়, ফলে ব্যক্তির মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়। সমস্ত মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত এই ক্ষোভ পরে বিদ্রোহের আকার ধারণ করতে পারে ।


<<<<<<<<<<<<<< The End >>>>>>>>>>>>

If You Enjoyed This, Take 5 Seconds To Share It

0 comments: