Wednesday, 16 December 2020

HS Philosophy - 60 টি বাক্যের বচনে রূপান্তর

1 comment

 দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বাদশ শ্রেণী ( wbchse)

বচন (Proposition)


 নিম্নোক্ত বাক্যগুলিকে যুক্তিবিজ্ঞানসম্মত বচনে রূপান্তর কর।

১) কেবলমাত্র পরিশ্রমী ব্যক্তি জীবনে সফল হয়।

L.F. : A - সকল ব্যক্তি যারা জীবনে সফল হয়, হয় পরিশ্রমী ব্যক্তি।

২। শােষকেরা কখনােই সাম্যবাদী হতে পারে না।

 L.F. : E- কোনাে শােষক নয় সাম্যবাদী ব্যক্তি। 

 ৩। ধার্মিক ব্যক্তি কদাচিৎ সুখী হয় না। 

L.F.  ( I) কোনাে কোনাে ধার্মিক ব্যক্তি হয় সুখী। 

৪। বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী ধার্মিক নয় ।  

L.F. (O) কোনাে কোনাে তীর্থযাত্রী নয় ধার্মিক ব্যক্তি । 

 ৫। মানুষ কখনও দেবতা হতে পারে না । 

L.F. (E) কোনাে মানুষ নয় দেবতা। 

 ৬। শতকরা ৮০ জন ছাত্র অঙ্কে পাশ করেছে । 

L.F. (I) কোনাে কোনাে ছাত্র হয় এমন ব্যক্তি যারা অঙ্কে পাশ করেছে । 

৭। ভালাে খেলােয়াড় কদাচ খেলায় হারে ।

L.F. (I) কোনাে কোনাে ভালাে খেলােয়াড় নয় এমন ব্যক্তি যারা খেলায় হারে । 

 ৮। বিজ্ঞানীরা মােটের উপর কুসংস্কার মুক্ত ।

 L.F. (I) কোনাে কোনাে বিজ্ঞানী হন কুসংস্কারমুক্ত ব্যক্তি। 

 ৯। সব মানুষ গরিব নয়। 

L.F. (O) কোনাে কোনাে মানুষ নয় গরিব ব্যক্তি । 

১০। সব ভালাে যার শেষ ভালাে। 

L.F. (A) সকল বিষয় যার শেষ ভালো হয় ভালো বিষয়।

১১। সচরাচর দার্শনিকেরা উদার হন।

 L.F (I)  কোনাে কোনাে দার্শনিক হয় উদার ব্যক্তি। 

১২। যারা প্রশংসা করে তাদের সবাই বন্ধু নয়। 

L.F. (O) কোনো কোনাে ব্যক্তি যারা প্রশংসা করে নয় বন্ধু। 

১৩। গােল চতুষ্কোণ বস্তু নেই। 

L.F. :  E- কোনাে চতুষ্কোণ বস্তু নয় গােল । 

১৪। যদি কোনাে কিছু জড় হয় তাহলে তার ওজন আছে। 

L.F. : A- সকল জড়বস্তু হয় এমন যার ওজন আছে। 

১৫। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। 

L.F. : A- সকল বাঘের ভয়ের ক্ষেত্র হয়  সন্ধ্যা হওয়ার ক্ষেত্র। 

১৬। যে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সে তার নিজের ছায়া দেখতে পায় না।

L.F. :  E- কোনাে ব্যক্তি যে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে নয় এমন ব্যক্তি যে তার নিজের ছায়া দেখতে পায়। 

 ১৭। যে আয়নার দিকে তাকায় সে তার মুখের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। 

L.F. : A— সকল ব্যক্তি যারা আয়নার দিকে তাকায় হয় এমন ব্যক্তি যারা তাদের মুখের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। 

১৮। সকলেই সাধু নয় যারা গীর্জায় যায়। 

L.F. : O — কোনাে কোনাে ব্যক্তি যারা গীর্জায় যায় নয় সাধু। 

১৯। সাদা হাতি নেই। 

 L.F. : (E) কোনাে হাতি নয় সাদা প্রাণী। 

 ২০। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।

L.F. : (A) সকল ক্ষেত্রে যখন চোর পালায় হয় এমন ক্ষেত্র যখন বুদ্ধি বাড়ে। 

২১। ৩ X ৩ অবশ্যই ৯ হবে । 

L.F. — সকল ক্ষেত্রে ৩ এবং ৩ - এর গুণফল হয় ৯ (A)

 ২২। ৭ + ৫ = ১২ ।  

L.F. :  A— সকল ক্ষেত্রে ৭ এবং ৫ - এর যােগফল হয়  বার।

২৩। যখনই বাজেটের ঘােষণা হয় তখনই জিনিসের দাম বাড়ে। 

L.F. :  A— সকল সময় যখন বাজেট ঘােষণা হয়, হয় সময় যখন জিনিসের দাম বাড়ে। 

২৪। সাদা বাঘ আছে। 

L.F. :   I— কোনাে কোনাে বাঘ হয় সাদা প্রাণী। 

 ২৫। মৎস্যকন্যা নেই। 

L.F. :  E- কোনাে মৎস্যকন্যা নয় অস্তিত্বশীল জীব। 

 ২৬। ঈশ্বর আছেন। 

L.F. :  A— ঈশ্বর হন অস্তিত্ববান। 

 ২৭। রেগে গেলে তার মুখ লাল হয়ে যায়। 

L.F. :  A— সকল সময় যখন সে রেগে যায় হয় এমন সময় যখন তার মুখ লাল হয়ে যায়। 

২৮। কোনাে জিনিস যুগপৎ সাদা এবং কালাে নয়। 

 L.F. :  E- কোনাে সাদা জিনিস নয় কালাে জিনিস। 

২৯। যদি কোনাে প্রাণী অমেরুদণ্ডী হয় তাহলে সেই প্রাণী স্তন্যপায়ী নয়। 

L.F. :  কোনাে অমেরুদণ্ডী প্রাণী নয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। (E)

 ৩০। যেখানে ধূম সেখানেই বহ্নি । 

L.F : সকল স্থান যেখানে ধুম থাকে হয় এমন স্থান যেখানে বহ্নি থাকে (A)

৩১) সমাজবাদী মাত্রই শান্তিবাদী।

L.F. : A- সকল সমাজবাদী ব্যক্তি হয় শান্তিবাদী ব্যক্তি।

৩২) মানুষ কদাচ সুখী হয়।

L.F. :  O - কোনো কোনো মানুষ নয় সুখী ব্যক্তি।

৩৩) অশিক্ষিত ব্যক্তিও বুদ্ধিমান হয়।

L.F. :  I - কোন কোন অশিক্ষিত ব্যক্তি হয় বুদ্ধিমান ব্যক্তি।

৩৪) একমাত্র চতুষ্পদ প্রাণী ঘোড়া।

L.F.  :  A- সকল ঘোড়া হয় চতুষ্পদ প্রাণী।

৩৫) চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।

L.F.  :  A- চন্দ্র হয় এমন উপগ্রহ যা পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।

৩৬) তার বক্তৃতা বোঝা যায় না।

L.F.  :  A- সে নয় এমন ব্যক্তি যার বক্তৃতা বোঝা যায়।

৩৭) বিদ্যাসাগর পন্ডিত ছিলেন।

L.F.  :  A- বিদ্যাসাগর হন এমন ব্যক্তি যিনি পন্ডিত ছিলেন।

৩৮) চার্বাকরা জড়বাদী।

L.F.  :  A - সকল চার্বাক হয় জড়বাদী ব্যক্তি।

৩৯) বাক্য মাত্রই বচন নয়।

L.F.  :  O - কোন কোন বাক্য নয় বচন।

৩৯) ভালো খেলোয়াড় কদাচিৎ খেলায় হারে।

L.F.  :  O - কোন কোন ভালো খেলোয়াড় নয় এমন ব্যক্তি যারা খেলায় হারে।

৪০) খুব কম লোকই জ্ঞানী।

L.F.  :  O - কোন কোন লোক নয় জ্ঞানী ব্যক্তি।

৪১) যদি কেউ মানুষ হয় তবে সে অমর নয়।

L.F.  :  E - কোনো মানুষ নয় ওমর।

৪২) খুব অল্প রাজনীতিবিদ সৎ।

L.F.  :  O - কোন কোন রাজনীতিবিদ নয় সৎ ব্যক্তি

৪৩) চকচক করলেই সোনা হয় না।

L.F.  :  O - কোন কোন চকচকে বস্তু নয় সোনা।

৪৪) একটি ছাড়া সব ফুল গন্ধ যুক্ত।

L.F.  :  I - কোন কোন ফুল হয় গন্ধযুক্ত বস্তু।

৪৫) কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই সমাজ সংস্কারক হয়।

L.F.  :  A- সকল সমাজ সংস্কারক ব্যক্তি হয় জ্ঞানী ব্যক্তি।

৪৬)  গোলাকার চতুর্ভুজ নেই।

L.F.  :  E - কোন চতুর্ভুজ নয় গোলাকার ক্ষেত্র।

৪৭) মিথ্যাবাদীরা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

L.F.  :  E - কোন মিথ্যাবাদী নয় বিশ্বাস যোগ্য ব্যক্তি

৪৮) মন্ত্রীরাই কেবলমাত্র সুখী।

L.F.  :  A - সকল মন্ত্রী হয় সুখী ব্যক্তি।

৪৯) জাতিভেদ প্রথা কখনো কাম্য নয়।

L.F.  :  E - কোন জাতিভেদ প্রথা নয় কাম্য বিষয়।

৫০) ভাববাদী দার্শনিক আছে।

L.F.  :  I- কোন কোন দার্শনিক হয় ভাববাদী।

৫১) নিরামিষাশী বাঘ নেই।

L.F.  :  E - কোন বাঘ নয় নিরামিষাশী প্রাণী।

৫২) শিশুরা সরল।

L.F.  :  A- সকল শিশু হয় সরল ব্যক্তি।

৫৩) তুমি দীর্ঘায়ু হও।

L.F.  :  A - তোমার দীর্ঘায়ু হওয়া হয় আমার ইচ্ছা।

৫৪) কি মনোরম দৃশ্য!

L.F.  :  A - দৃশ্যটি হয় মনোরম।

৫৫) মন্ত্রীরা কি সর্বশক্তিমান?

L.F.  :  E - কোন মন্ত্রী নন সর্বশক্তিমান।

৫৬) পারদ ছাড়া সব ধাতু কঠিন।

L.F.  :  A - সকল ধাতু (পারদ ছাড়া) হয় কঠিন বস্তু।

৫৭) অধিকাংশ রাজনীতিবিদ দরিদ্র নয়।

L.F.  :  O - কোন কোন রাজনীতিবিদ নয় দরিদ্র ব্যক্তি।

৫৮) ফুল সুগন্ধি।

L.F.  :  I - কোন কোন ফুল হয় সুগন্ধি।

৫৯) মূর্খ ব্যতীত আর কেউ নিজেদের মহান মনে করে না।

L.F.  :  A - সকল ব্যক্তি যারা নিজেদের মহান মনে করে হয় মূর্খ ব্যক্তি।

৬০) আমি দুর্বল নই।

L.F.  :  A - আমি নই দুর্বল ব্যক্তি।


Read More

Tuesday, 15 December 2020

A question and answer of The Place of Art in Education (Class xi)

Leave a Comment

 The Place of Art in Education

Question: "... art training should have the same status and importance as reading and writing" - How does the author justify this? [লেখক কীভাবে এটিকে ব্যাখ্যা করেন?] 

Or, 

Why does Nandalal Bose want to include art training in our traditional educational system? [কেন নন্দলাল বসু আমাদের প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতিতে শিল্প শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে চান?] 

Answer:

Reading and writing are very important in our education system. Art education is neglected.  As a result, total development does not occur.  Nandalal Bose believes that for total development, art education is as important as reading and writing.   Education in art develops many faculties in an individual. People perceive the outside world with their senses and minds.  Art education develops aesthetics in her.  Lack of taste highlights our cultural degradation and economic backwardness.  Art training develops the learners' power of observation.  It will give them better insight into literature, philosophy and science.  In addition to aesthetic pleasure, it can provide us with  means of livelihood. Development of the sense of beauty  is good for an individual as well as for the society at large.  

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় পড়া ও লেখাকে। শিল্প শিক্ষা উপেক্ষিত হয়। ফলে সামগ্রিক বিকাশ ঘটে না। নন্দলাল বসু মনে করেন যে সামগ্রিক বিকাশের জন্য শিল্প শিক্ষার ততটাই প্রয়ােজন যতটা প্রয়ােজন লেখা ও পড়ার৷ শিল্প শিক্ষা ব্যক্তিসত্তার নানাবিধ দিকের বিকাশ ঘটায়। মানুষ বাইরের জগতকে উপলদ্ধি করে ইন্দ্রিয় ও মন দিয়ে। শিল্প শিক্ষা তার মধ্যে সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটায়। রুচির অভাব আমাদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতাকে তুলে ধরে। শিল্প প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তােলে। এটি তার সাহিত্যচর্চা, দর্শনচর্চা ও বিজ্ঞানচর্চার উপযােগী অন্তর্দৃষ্টি গড়ে দেয়। নান্দনিক আনন্দের পাশাপাশি এটি আমাদের রুজিরােজগারের ব্যবস্থা করে দেয়৷ এই সৌন্দর্যবােধের বিকাশ একজন ব্যক্তি এবং বৃহত্তর সমাজের পক্ষে কল্যাণকর। 

Read More

Write a letter to the editor of an English daily expressing your concern about the increase in the number of road accidents these days.

Leave a Comment

 Write a letter to the editor of an English daily expressing your concern about the increase in the number of road accidents these days.

And.

 To 

 The Editor 

 The Times of India 

Kolkata 700001

                      Sub: Increase Road Accidents. 

Sir, 

I shall be highly obliged if you kindly  publish the the following matter in your daily newspaper in the interest of common people. 

       Recently road accidents are a very common news. Most of us just look at the headlines and passout. We take it granted that we can't avoid them. This, I think, is a passive mentality. Are we not responsible for these accidents to some extent in many cases? People riding bikes do not want to wear helmates. They sometime refuse to follow the road signals. We also drive cars and two-wheelers at high speed. Practically speaking, we violate the rules of the road. 

        I, therefore, appeal to the people at large to abide by the traffic rules and act sensible. Always remember safe drive saves life. 

Thank you. 

                                       Yours faithfully, 

                                        P. K. Roy

11/1, Chittaranjan Colony

 Kolkata - 700 032 

15-12-2020 


Read More

Monday, 14 December 2020

Philosophy : ন্যায় মতে সন্নিকর্ষ কাকে বলে? সন্নিকর্ষ কয় প্রকার এবং কী কী? উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা কর।

Leave a Comment

                         ন্যায় দর্শন      প্রশ্ন: ন্যায় প্রশ্ন:  ন্যায়   মতে সন্নিকর্ষ কাকে বলে? সন্নিকর্ষ কয় প্রকার এবং কী কী? উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা কর।

        উঃ

       সন্নিকর্য : ন্যায়মতে, সন্নিকর্ষ মানে সম্বন্ধ। ইন্দ্রিয় এবং ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের সম্বন্ধ। নিজ নিজ গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধই সন্নিকর্য। উদাহরণস্বরূপ, নাসিকা - ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে ফুলের সুগন্ধের সম্বন্ধ এক প্রকার সন্নিকর্ষ। যে বিষয়টি যে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা গ্রহণযােগ্য, সেই বিষয়ের সঙ্গে সেই ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষ  হলেই প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা প্রত্যক্ষ প্রমা উৎপন্ন হয়। সন্নিকর্ষ মানে হল - গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সেই সম্বন্ধ যা উক্ত বিষয়ের প্রত্যক্ষ জান দেয়। 

      এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, ‘সন্নিকর্ষ' বলতে এক্ষেত্রে লৌকিক সন্নিকর্যকে বােঝান হয়েছে। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে নানা প্রকার পদার্থকে প্রত্যক্ষ করি। এই বিভিন্ন প্রকার পদার্থের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের একই প্রকার সন্নিকর্ষ হতে পারে না। প্রাচীন ন্যাচার্য উদ্যোৎকরের মতে, লৌকিক সন্নিকর্ষ ছয় প্রকার: (১) সংযােগ - সন্নিকর্য, (২) সংযুক্ত - সমবায়সন্নিকর্য, (৩) সংযুক্ত - সমবেত - সমবায়সন্নিকর্য, (৪) সমবায় সন্নিকর্ষ, (৫) সমবেত - সমবায় সন্নিকর্য এবং (৬) বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। আমরা একে একে এই সন্নিকর্যগুলি আলোচনা করব: 

(১) সংযােগ - সন্নিকর্য : বাহ্য ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে একমাত্র চক্ষু এবং ত্বক দ্বারাই দ্রব্য - বিশেষের প্রত্যক্ষ জন্মে। সেই প্রত্যক্ষে সেই দ্রব্য - বিশেষের সঙ্গে চক্ষু এবং ত্বক ইন্দ্রিয়ের সংযােগ সম্বন্ধই হল ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষ। যেমন – ঘট প্রত্যক্ষকালে চক্ষুর সঙ্গে ঘটের যে সন্নিকর্ষ হয়, সেটি সংযােগ - সন্নিকর্ষের দৃষ্টান্ত।

      (২) সংযুক্ত - সমবায় - সন্নিকর্ষ : দ্রব্যের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ হল সংযােগ সন্নিকর্ষের । দ্রব্যস্থ গুণের প্রত্যক্ষের সময় ঐ গুণের সঙ্গে বিশেষ ইন্দ্রিয়ের যে সম্বন্ধ তার নাম সংযুক্ত - সমবায় - সন্নিক । যেমন -- চক্ষু - ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ঘটের রূপ, আকার ইত্যাদি গুণের যে সম্বন্ধ, তা হল সংযুক্ত - সমবায়-সন্নিকর্ষ। 

     (৩) সংযুক্ত - সমবেত - সমবায় - সন্নিকর্ষ : দ্রব্যস্থ গুণের জাতি বা সামান্যের (universal) প্রত্যক্ষের সময় ঐ জাতির সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যে সম্বন্ধ, তার নাম সংযুক্ত - সমবেত - সমবায়-সন্নিকর্ষ। একটি উদাহরণ নিলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন একটি শ্বেত বর্ণের ঘটের প্রত্যক্ষের সময় আমরা যখন ঘটের ‘শ্বেত' বর্ণটিকে প্রত্যক্ষ করি, তখন ঐ বিশেষ বর্ণটিতে যে ‘শ্বেতত্ব’ নামক জাতি বা সামান্য আছে, তাও প্রত্যক্ষ করি। এক্ষেত্রে, অর্থাৎ, এই ‘শ্বেত’ জাতির প্রত্যক্ষের সময় যে সনিকর্ষ জন্মে, তাকে বলা হয় সংযুক্ত - সমবেত - সমবায় - সন্নিকর্ষ।

     (৪) সমবায় সন্নিকর্ষ : কর্ণ - রূপ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দের প্রত্যক্ষ হয়। 'শব্দ’ প্রত্যক্ষের সময় শ্রবণেন্দ্রিয় বা কর্ণের সঙ্গে শব্দের যে সম্বন্ধ, তার নাম সমবায় সন্নিকর্ষ। নৈয়ায়িকদের মতে শ্রবণেন্দ্রিয় আকাশের গুণ। শব্দ এবং আকাশের মধ্যে সম্বন্ধ থাকার জন্য প্রত্যক্ষ করার সময় কর্ণের সঙ্গে শব্দের যে সন্নিকর্য গটে, তাকে বলে সমবায় সন্নিকর্ষ।

      (৫) সমবেত - সমবায় সন্নিকর্ষ : শব্দত্ব ধর্ম শব্দে থাকে। কর্ণ - রূপ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যেমন শব্দের প্রত্যক্ষ হয়, তেমনি 'শব্দত্ব’— এই জাতিরও প্রত্যক্ষ হয়। শব্দত্ব শব্দেই সমবেত থাকে। কাজেই কর্ণ দ্বারা 'শব্দত্ব’ জাতির প্রত্যক্ষের সময় যে সন্নিকর্ষ ঘটে, তাকে বলে সমবেত - সমবায় সন্নিকর্ষ।

       (৬) বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্য : নৈয়ায়িকদের মতে অভাব প্রত্যক্ষকালে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকে বলে বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। আমি যখন বলি -- ‘ভূতলে ঘটাভাব রয়েছে’ (অর্থাৎ, ভূতলে ঘট নেই), তখন চক্ষুর সঙ্গে ঘটের কোন সংযােগ হয় না। এক্ষেত্রে 'ভূতল' হচ্ছে বিশেষ্য এবং ‘ঘটাভাব’ হচ্ছে বিশেষণ। কাজেই এক্ষেত্রে বিশেষ্য ‘ভূত’ ঘটাভাবের দ্বারা বিশেষিত হচ্ছে। চক্ষু সংযুক্তভূতল, ঘটাভাবরূপ বিশেষণ যুক্ত হওয়ায় চক্ষুর সঙ্গে ঘটাভাবের যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকে বলে বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব - সন্নিকর্ষ। এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য যে, নৈয়ায়িকদের মতে ‘অভাব’ অস্তিত্বের মত একটি বাস্তব পদার্থ। 

Read More

Sunday, 13 December 2020

What is Inference? Explain the different kinds of Inference according to Nyaya philosophy. অনুমান এর শ্রেণীবিভাগ

Leave a Comment

                               ন্যায় দর্শন

প্রশ্ন: অনুমান কাকে বলে? ন্যায়দর্শন অনুযায়ী অনুমানের বিভিন্ন প্রকারভেদ আলোচনা কর। (What is Inference? Explain the different kinds of Inference according to Nyaya philosophy. 

উঃ

     অনুমান ( Inference ) : ‘অনু’ শব্দের অর্থ পশ্চাৎ ‘মান’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। সুতরাং ‘অনুমানের’ শব্দগত অর্থ হ’ল পশ্চাৎ জ্ঞান, অর্থাৎ যে জ্ঞান অন্য জ্ঞানের পরে হয়।

     অনুমান হল এক ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে কোন জ্ঞাত বিষয়ের ভিত্তিতে কোন অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। যেমন, পাহাড়ে আগুন আছে, যেহেতু পাহাড়ে ধোয়া আছে এবং যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে। এখানে ধোঁয়া ও আগুনের নিয়ত সম্বন্ধ সম্পর্কে আমাদের পূর্বে অর্জিত জ্ঞান এই অনুমানের ভিত্তি। তাই আমরা পাহাড়ে ধোঁয়া প্রত্যক্ষ করে সেখানে আগুনের অস্তিত্ব অনুমান করি। অনুমান হল প্রত্যক্ষজ্ঞাত বিষয় থেকে ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপর নির্ভর করে নতুন বিষয়ের জ্ঞান। অনুমান প্রত্যক্ষ জ্ঞান নয়, পরােক্ষ। তর্ক সংগ্রহে অনুমিতির করণকেই অনুমান বলা হয়েছে এবং অনুমিতির লক্ষণ প্রকাশ করা হয়েছে--- অনুমান হল পরামর্শ থেকে উৎপন্ন জ্ঞান।

      অনুমানে তিনটি পদ (Term) সাধ্য, পক্ষ ও হেতু অন্তত — তিনটি বচন (Proposition) থাকবেই। অনুমানের অঙ্গ বা অবয়ব বলতে আমরা সেই বচনগুলিকে বুঝি যেগুলির দ্বারা অনুমান গঠিত হয়। 

      অনুমানে যে তিনটি পদ থাকে সেই তিনটি পদ হল যথাক্রমে- সাধ্য পদ (Major Term), পক্ষ পদ ( Minor Term ) ও হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন ( Middle Term )। যে বস্তুটির অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তাকে ‘সাধ্য’, যার মধ্যে সাধ্যের অস্তিত্ব স্থির করা হয় তাকে ‘পক্ষ’ এবং যা সাধ্য ও পক্ষের মধ্যে যােগাযােগ করে তাকে ‘হেতু' বলা হয়। 

উদাহরণ : পাহাড়ে আগুন আছে, পাহাড়ে ধোয়া আছে। কেননা, যেখানে ধোঁয়া আছে, সেখানে আগুন আছে।

এখানে সাধ্য হল আগুন, কেননা আগুনের অস্তিত্ব অনুমান করা হয়েছে। পক্ষ হল পাহাড়, কেননা, পাহাড়ের মধ্যে আগুনের অস্তিত্ব অনুমিত হয়েছে। হেতু হল ধোঁয়া, কেননা ধোঁয়ার মাধ্যমে পাহাড় ও আগুনের ( পক্ষ ও সাধ্যের ) সম্পর্ক প্রমাণ করা হচ্ছে। 

অনুমানের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ : ভারতীয় নৈয়ায়িকগণ বিভিন্নভাবে অনুমানের শ্রেণীবিভাগ করেছে। 

তাঁরা অনুমান কি উদ্দেশ্য সাধন করে সেইদিক থেকে বিবেচনা করে অনুমানকে দু'ভাগে ভাগ করেছে 

(১) স্বার্থানুমান  

(২) পরার্থানুমান।

 (১) স্বার্থানুমান: নিজের জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে যে অনুমান করা হয়, তাকে স্বার্থানুমান বলে। আপন স্বার্থের জন্য এই অনুমান ব্যবহৃত হয় বলেই একে স্বার্থানুমান বলা হয়।

 (২) পরার্থানুমান: অন্যকে বােঝাবার জন্য বা অন্যের কাছে কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য যে অনুমান করা হয়, তাকে পরার্থানুমান বলে। পরের স্বার্থে এই অনুমান ব্যবহৃত হয় বলেই একে পরার্থানুমান বলা হয়। এইক্ষেত্রে অনুমানের পঞ্চাবয়ব ন্যায় বা ভারতীয় ন্যায়ের পাঁচটি অবয়ব ব্যবহৃত হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হল -

 (১) প্রতিজ্ঞা - ঐ পর্বতটি বহ্নিমান,

 (২) হেতু - কারণ, পর্বতটি ধূমবান,

 (৩) উদাহরণ--- যেখানে যেখানে ধূম, সেখানে সেখানে বহ্নি, যেমন- রান্নাঘর, 

( ৪ ) উপনয়--- ঐ পর্বতটিও ধূমবান,

 ( ৫ ) নিগমন--ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।

 উপরােক্ত অনুমানের সাহায্যে প্রতিবাদিত হেতু থেকে অপর ব্যক্তিও বহ্নির অস্তিত্ব অনুমান করতে পারেন। নৈয়ায়িকদের মতে, অন্যের চিত্তে অনুমান - লব্ধ জ্ঞান উৎপন্ন করার জন্য পরার্থানুমানের প্রয়ােজন হয়। পরার্থানুমানের ক্ষেত্রে উপরােক্ত পাঁচ প্রকার বাক্য দ্বারা রচিত একটি মহাবাক্য গঠন করতে হয়।

মহর্ষি গৌতম অপর একটি নীতি অনুসরণ করে অনুমানকে  তিন ভাগে ভাগ করেছেন— (১) পূর্ববৎ (২) শেষবৎ ও (৩) সামান্যতােদৃষ্ট। অনুমানের এই শ্রেণীবিভাগ ব্যাপ্তির সম্বন্ধের উপর ভিত্তি করে হয়েছে ।

(১) পূর্ববৎ অনুমানঃ জ্ঞাত কারণ থেকে অজ্ঞাত কার্যের অনুমানকেই পূর্ববৎ অনুমান বলে। আকাশভরা ঘন কালো মেঘ দেখে বৃষ্টি হবে অনুমান করা হয়। 

(২) শেষবৎ অনুমান : জ্ঞাত কার্য থেকে অজ্ঞাত কারণের অনুমানকেই শেষবৎ অনুমান বলে। সারা মাঠে জমা জল দেখে অনুমান করা হয় গতরাতে বৃষ্টি হয়েছিল। 

(৩) সামান্যতােদৃষ্ট অনুমানঃ শুধুমাত্র পূর্ব - অভিজ্ঞতা ও বর্তমানের সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় না করেই যে অনুমান করা হয়, তাকে সামান্যতােদৃষ্ট অনুমানবলে। আগে যতগুলাে মাথায় শিং - বেরুনো প্রাণী দেখেছি, সবগুলােরর চেরা খুর আছে। বর্তমানে একটি শিং - বেরুনাে প্রাণী দেখে অনুমান করা হল এই প্রাণীটিরও খুর চেরা। এখানে এই অনুমানে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কের কথা ভাবাই হয়নি, শুধু পূর্ব - অভিজ্ঞতা ও সাদৃশ্যই সম্বল। 

ন্যায়শাস্ত্রে অনুমানের আর একপ্রকার বিভাগ আছে । হেতু ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে নৈয়ায়িকগণ অনুমানকে তিনভাগে ভাগ করেছেন— (১) কেবলান্বয়ী (২) কেবল ব্যতিরেকী ও (৩) অন্বয় ব্যতিরেকী। 

(১) কেবলান্বয়ী : যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ শুধুমাত্র অন্বয় - নির্ভর তাকে কেবলান্বয়ী । অনুমান বলা হয়। এই অনুমান শুধুমাত্র অন্বয়ী দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু সেখানে সাধ্য। যেমন, 

সব জ্ঞেয় বস্তুই নামযুক্ত।

ঘট একটি জ্ঞেয় বস্তু ।

: . ঘট একটি নামযুক্ত বস্তু।

(২) কেবল ব্যতিরেকী: যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ শুধুমাত্র ব্যতিরেকী - নির্ভর তাকে কেবল ব্যতিরেকী অনুমান বলা হয়। এই অনুমান শুধুমাত্র ব্যতিৱেকী দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু নেই, সেখানে সাধ্য নেই। যেমন, 

যা বহ্নিযুক্ত নয় তা ধূমযুক্ত নয়, 

ঐ পর্বতটি ধূমযুক্ত, 

 : . ঐ পর্বতটি বহ্নিযুক্ত। 

(৩) অন্বয়-ব্যতিরেকী : যে অনুমানের ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ অন্বয় ও ব্যতিরেকী নির্ভর তাকে অন্বয়- ব্যতিরেকী অনুমান বলা হয়। এই অনুমান অন্বয় ও ব্যতিরেকী উভয় প্রকার দৃষ্টান্তের উপর নির্ভরশীল, যেখানে হেতু, সেখানে সাধ্য আছে, যেখানে হেতু নেই, সেখানে সাধ্যও নেই। যেমন, 

(ক) অন্বয়ী

 সমস্ত ধূমবান বস্তুই বহ্নিমান 

ঐ পর্বতটি ধূমবান, 

: . ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।


 (খ) ব্যতিরেকী

      কোন বহ্নিহীন বস্তু ধূমবান নয়,  

ঐ পর্বতটি ধূমবান, 

: . ঐ পর্বতটি বহ্নিমান।

<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>

Read More

ব্যাপ্তি কাকে বলে? কিভাবে নৈয়ায়িকগণ ব্যাপ্তি প্রমাণ করেন? (What is Vyapti? What is the Naya method of establishing it?)

2 comments

                             ন্যায় দর্শন

প্রশ্ন:  ব্যাপ্তি কাকে বলে? কিভাবে নৈয়ায়িকগণ ব্যাপ্তি প্রমাণ করেন? (What is Vyapti? What is the Naya method of establishing it?)

উঃ

ব্যাপ্তি: হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত অব্যভিচারী অনৌপাধিক সহচার সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি বলা হয়। অন্নভট্ট তাঁর ‘তর্ক সংগ্রহ' গ্রন্থে ব্যাপ্তি সম্পর্কে বলেছেন— “যত্র ধূমঃ তত্র অগ্নি ইতি সাহচৰ্য্য নিয়মঃ ব্যাপ্তি।” অর্থাৎ যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি, এই যে ধূমের সঙ্গে বহ্নির সাহচর্য বা সহ - অবস্থান, তার নিয়মই ব্যাপ্তি। ধুম (হেতু) ও বহ্নি (সাধ্য) -র মধ্যে এই ব্যাপ্তি সম্বন্ধে (ক) ধূম ও বহ্নি সহচার সম্বন্ধে আবদ্ধ, অর্থাৎ ধূম ও বহ্নি একসঙ্গে সহাবস্থান করে, (খ) ধূম ও বহ্নির মধ্যে অব্যভিচারী সম্বন্ধ আছে, অর্থাৎ ধূম আছে অথচ, বহ্নি নেই, এরকম হতে পারে না এবং  গ) ধূম ও বহ্নির মধ্যে অনৌপাধিক সম্বন্ধ বিদ্যমান, অর্থাৎ উভয়ের সম্বন্ধ কোন শর্ত - নির্ভর নয়। ব্যাপক অর্থে ব্যাপ্তি হলেও বােঝায় যে কোন দুটি বিষয়ের নিয়ত সাহচর্য। সংকীর্ণ অর্থে ব্যাপ্তি বলতে বােঝায় হেতু ও সাধ্যের নিয়ত সাহচর্য সম্পর্ক।

        ব্যাপ্তির প্রকার: ব্যাপ্তি দু'প্রকার — (১) সমব্যাপ্তি ; (২) অসমব্যাপ্তি বা বিষয়ব্যাপ্তি ।

      (১) সমব্যাপ্তি : সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, 'যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে'। উৎপত্তি হওয়া বস্ত্ত ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি - বিশিষ্ট।

(২) অসমব্যপ্তি বা বিষমব্যাপ্তি: অসমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে অসমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান নয়। যেমন, যেখানে ধূম আছে, সেখানে বহ্নি আছে। ধূম ও বহির বিস্তৃতি সমান নয়। ধূম থাকলে বহ্নি থাকবেই। কিন্তু যেখানে বহ্নি, সেখানে সব সময় ধূম নাও থাকতে পারে। তাহলেই বহ্নির বিস্তৃতি ধূমের চেয়ে ব্যাপক। তাই দুটি পদের ব্যাপকতা যেখানে ভিন্ন, এই ব্যাপ্তি হল অসমব্যাপ্তি বা বিষয়ব্যাপ্তি।

       সাধারণত নৈয়ায়িকগণ নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যাপ্তি নির্ণয় করেন ।

     (১) অন্বয়: দুটি বস্তুর একটি থাকলে অপরটি থাকে লক্ষ্য করা যায়। যেমন, 'যেখানে ধূম, সেখানে বহ্নি'। দুটি বস্তুর একসঙ্গে উপস্থিতি হল অন্বয়। 

    (২) ব্যতিরেকঃ দুটি বস্তুর একটি যদি না থাকে, অপরটি থাকে না। যেমন, যেখানে বহ্নি নেই, সেখানে ধূম নেই। দুটি বস্তুর একসঙ্গে অনুপস্থিতি হল ব্যতিরেক। অন্বয় ও ব্যতিরেক - এর দিক থেকে দুটি বস্তুর মধ্যে সাহচর্য থাকা দরকার, তা না  হলে দুটি বস্তুর মধ্যে ব্যাপ্তি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

    (৩) ব্যভিচারাগ্ৰহ: ব্যাপ্তি নির্ণয় প্রণালীর তৃতীয় স্তরে আমরা ব্যভিচারাগ্রহ পাই, যখন কোন বিপরীত দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করি না। অন্বয় ও ব্যতিরেক - এর দ্বারা যে দুই বস্তুর মধ্যে নিয়মিত সহচার সম্বন্ধ আছে মনে করা হয়, সেক্ষেত্রে এমন কোন ব্যভিচার (ব্যতিক্রম - দর্শন) হবে না, সেক্ষেত্রে একটি বস্তু উপস্থিত আছে, অথচ অন্য বস্তু অনুপস্থিত থাকে। দুটি বস্তুর একটি আছে, অথচ অপরটি নেই, এমন কোন দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। যেমন, ধূম আছে, অথচ বহ্নি নেই, এমন কোন দৃষ্টান্তের নজির নেই। একে ব্যভিচারাগ্রহ (ব্যভিচার মানে বিপরীত দৃষ্টান্ত; অগ্ৰহ মানে অদর্শন) বলা হয়। এই স্তর অবধি দেখে আমরা ভাবতে পারি যে, ধূম ও বহ্নির ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে। কিন্তু এই সম্বন্ধ অনৌপাধিক না উপাধিযুক্ত দেখা দরকার, কেননা উপাধিযুক্ত সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি বলা যায় না।

     (৪) উপাধিনিরাস : উপরােক্ত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করেও নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, ব্যাপ্তি - সম্বন্ধটি কোন উপাধি বা শর্ত থেকে মুক্ত কিনা। তাই সম্বন্ধটি যে অনৌপাধিক বা শর্তশূন্য এবিষয়ে আমরা স্থির হতে চাই। সেজন্য আমরা উপাধি নিরাস করতে অগ্রসর হই। 'উপাধি' শব্দটির অর্থ শর্ত এবং 'নিরাস’ শব্দটির অর্থ অপসারণ করা। নৈয়ায়িকগণ মনে করেন, ব্যাপ্তিসম্বন্ধ হল উপাধিহীন বা শর্তহীন সম্বন্ধ। তাই নৈয়ায়িকগণ বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষিত বিষয় দুটির মধ্যে উপাধিহীন সম্বন্ধ আছে কিনা তা জানার জন্য ভুয়ােদর্শন প্রয়ােজন। একটির উপস্থিতিতে আর একটি উপস্থিত আছে এবং একটির অনুপস্থিতিতে আর একটি  অনুপস্থিত আছে — এ সম্বন্ধ বারবার প্রত্যক্ষ করার নাম ভূয়ােদর্শন। যদি বার বার দেখা যায়, ধূম থাকলেই বহ্নি থাকে এবং বহ্নি না থাকলে ধূম থাকে না, তখন আমরা মনে করি - ধূমের সঙ্গে বহ্নির যে সম্পর্ক তা হল উপাধি বা শর্তশূন্য । 

উপাধিনিরসন পদ্ধতির সাহায্যে ব্যাপ্তি নির্ণয় সত্ত্বেও সংশয়বাদীরা সংশয় প্রকাশ করতে পারেন এবং বলতে পারেন যে, ভবিষ্যতে এই নিয়ত সম্পর্কের ব্যতিক্রম হতে পারে। তাই সংশয়বাদীদের সন্দেহ ভঞ্জন করার জন্য নৈয়ায়িকগণ তর্ক ও সামান্যলক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যবহার করেছেন। 

       (৫) তর্ক: ব্যাপ্তি - সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার জন্য নৈয়ায়িকগণ তর্কের সাহায্য গ্রহণ করেন। তর্ক হল এমন এক পদ্ধতি যার দ্বারা মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের বিরুদ্ধ বচনকে  অসত্য প্রমাণ করে মূল বাক্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। 'সকল ধূমবান বস্তুই বহ্নিমান’ – যদি এই বচনটি সত্য না হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধ বচন ‘কোন কোন ধূমবান বস্তু বহ্নিমান নয়’– নিশ্চয়ই সত্য হবে। তা যদি হয়, তাহলে বহ্নি বা আগুন ছাড়াও ধূম উৎপন্ন হবে। কিন্তু এরূপ অনুমান সর্বজনস্বীকৃত কার্যকারণ - নীতির বিরােধী। কেননা, বহ্নি ছাড়া ধূমের অন্য কোন কারণ আমাদের জানা নেই। যদি বহ্নি ছাড়া ধূম উৎপন্ন হয়, তাহলে তার তাৎপর্য হবে — কারণ ছাড়াই কার্য ঘটতে পারে। কিন্তু এরূপ বক্তব্য কোন মানুষের কাছেই গ্রহণযােগ্য নয়। কাজেই ‘কোন কোন ধূমবান বস্তু বহ্নিমান নয়’ - এই বচনটি অসত্য বলে এর বিরুদ্ধ বচন, অর্থাৎ , মূল ব্যাপ্তি বচন 'সকল ধূমবান বস্তুই বহ্নিমান' - সত্য বলে স্বীকৃত হবে।

     (৬) সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ:  ব্যাপ্তিজ্ঞানের সমস্তু সংশয় দূর করার জন্য নৈয়ায়িকেরা সর্বশেষে সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষের কথা বলেছেন। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যখন আমরা ধূমের সঙ্গে বহ্নির সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করি, তখন আমরা ধূমের সামান্যধর্ম ধূমত্বকে এবং বহ্নির সামান্যধর্ম বহ্নিত্বকে প্রত্যক্ষ করি; এবং সেই সময় ধূমত্বের সঙ্গে বহ্নিত্বের সম্পর্কও প্রত্যক্ষ করে থাকি। 'বিশেষ’ - এর মধ্যে সামান্য বা জাতিধর্মকে অলৌকিকভাবে প্রত্যক্ষ করার নাম সামান্য - লক্ষণ প্রত্যক্ষ। ধূমত্ব এবং বহ্নিত্বের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত ধূম এবং সমস্ত বহ্নির প্রত্যক্ষ হয় বলে আমরা 'সকল ধূমবান বস্তুই বহ্নিমান ’ -- এরূপ ব্যাপ্তি - জ্ঞানবাক সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করতে পারি। কাজেই দুটি জিনিষের অব্যভিচারী নিয়ত অনৌপাধিক সম্পর্ক বা ব্যাপ্তি নিশ্চিতভাবে স্থাপন করতে হলে দুটি জিনিসের সহচার সম্পর্কের কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখলেই চলবে না, এই দৃষ্টান্তের মধ্য থেকে দুটি জিনিসের সামান্যও প্রত্যক্ষ করতে হবে।

 

Read More

বৈশেষিক মতে, অভাব কি? অভাব কয় প্রকার? অভাবকে কি ভাবে জানা যায় ? ( What is Abhava according to to Vaisesika? What are its different kinds? How Abhava is known?) Philosophy

1 comment

                            বৈশেষিক দর্শন

     প্রশ্ন: বৈশেষিক মতে, অভাব কি? অভাব কয় প্রকার? অভাবকে কি ভাবে জানা যায় ? ( What is Abhava according to to Vaisesika? What are its different kinds? How Abhava is known?)

উঃ

      অভাব: অভাব মানে কোন কিছু নেই। যার অস্তিত্ব নেই, তাই অভাব। কোন কিছু নেই এটা তাে অস্বীকার করা যায় না। দিনের আকাশে তারা নেই, অমাবস্যায় চাদ নেই, গরমকালে শীত নেই: —কোন - না - কোন কিছুর অভাব কোনা কোন সময় বােঝা যায়ই। তাই অভাবকে না মেনে উপায় নেই। শীতের বেলায় গাছের শাখার দিকে তাকিয়ে ডালগুলি আছে বুঝি কিন্তু পাতার অভাব তাে অস্বীকার করা যায় না। তাই ভাবপদার্থ যেমন আছে অভাবকেও পদার্থ হিসাবে স্বীকার করতেই হয়।

        অভাবের প্রকার: অভাব দু'প্রকার, যথা — সংসৰ্গাভাব ও অন্যোন্যাভাব।

        সংসৰ্গাভাব: সংসৰ্গাভাব বলতে কোন বস্তুতে অন্য বস্তুর অভাব বােঝায়। যেমন, 'কলসীতে জল নেই' — এখানে কলসীতে জলের অভাব রয়েছে বা কলসীর সঙ্গে জলের সংসর্গের অভাব প্রকাশ পাচ্ছে।

      অন্যোন্যাভাব: অন্যোন্যাভাব বলতে এক বস্তু আর এক বস্তু নয় ( ক — খ নয় ) বােঝায়। অন্যোন্যাভাব হল দুটি স্বতন্ত্র বস্তুর মধ্যে অভিন্নতার অভাব। যেমন , হাতি - ঘােড়া নয়, চেয়ার - টেবিল নয়। 

সংসর্গাভাব তিন প্রকার— (ক) প্রাগভাব, (খ) ধ্বংসাভাব ও (গ) অত্যন্তাভাব ।

        (ক) প্রাগভাব: প্রাক বা পূর্ববর্তী অভাবই প্রাগভাব। কোন বস্তু সৃষ্ট বা উৎপন্ন হওয়ার পূর্বে বস্তুর যে অভাব থাকে, তাই প্রাগভাব। যেমন — সিমেন্ট, বালি, ইট, লােহা দিয়ে পাকাবাড়ি তৈরি হবে। সুতরাং এখন পাকাবাড়ি নেই। নির্মিত হওয়ার  পূর্বে সিমেন্ট, বালি, ইট, লােহার মধ্যে পাকাবাড়ির যে অভাব আছে, তাই হল প্রাগভাব। প্রাগভাবের আদি নেই, অথচ অন্ত আছে। পাকাবাড়ি নির্মিত হওয়ার পূর্বে উপরিউক্ত উপাদানের মধ্যে পাকাবাড়ির অস্তিত্ব ছিল না। পাকাবাড়ি নির্মিত হওয়ার পূর্বে পাকাবাড়ির অভাবের কোন আদি নেই। কিন্তু যেই বাড়িটি নির্মিত হল, সেই মুহূর্তে পাকাবাড়ির প্রাগভাব লােপ পেয়ে গেল, তাই প্রাগভাবের অন্ত বা শেষ আছে।

       (খ) ধ্বংসাভাব  ঃ  উৎপন্ন হওয়ার পর কোন বস্তু ধ্বংস হয়ে গেলে তার যে অভাব, তাই ধ্বংসাভাব। একটি মাটির কলসী ভেঙে গেলে কলসীটির ধ্বংসাভাব ঘটে। কলসীটি ভেঙে গিয়ে টুকরোগুলি ছিটিয়ে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু টুকরােগুলির মধ্যে কলসী নেই। ধ্বংসাভাবের যদিও আদি আছে, তবু অন্ত নেই । কলসীটি কোন এক সময়ে ধ্বংস হয়েছে, তাই কলসীটির উৎপত্তির আরম্ভ বা আদি আছে। কিন্তু কলসীটির অন্ত নেই, কেননা সেই কলসীটি আর তৈরি করা যাবে, যেটি ভেঙে গেল। যদিও একই রকম আর একটি নতুন মাটির কলসী তৈরি করা যায়, কিন্তু যে মাটির কলসী ভেঙে গেল, ঠিক সেই কলসীটিকে তৈরি করা সম্ভব নয়। বস্তুর ধ্বংসজনিত অভাব রয়ে যায়, ধ্বংসাভাবের অন্ত বা শেষ নেই। 

(গ) অত্যন্তাভাবঃ কোন একটি বস্তুতে অন্য একটি বস্তুর চিরকালের অভাবকে অত্যন্তাভাব বলা হয়। অত্যন্তভাব ত্ৰৈকালিক বা তিন কালের অভাব - অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও থাকে। অত্যন্তভাব অনাদি ও অনন্ত অর্থাৎ এই অভাবের আদি বা আরম্ভ নেই , অন্ত বা শেষ নেই। যেমন, বায়ুতে বর্ণের অভাব অত্যন্তভাব , যা তিন কালেই থাকে । খরগােশে শিঙের অভাব চিরকালের। ঘটেতে চেতনার অভাব চিরদিনের। 

       অনন্যান্যাভাব :  দুই বস্তুর পারস্পরিক ভেদ বা ভিন্নতাই অন্যোন্যাভাব । যেমন, ঘট পট নয়। ঘটের মধ্যে পটের রূপ থাকতে পারে না। অন্যোন্যাভাব হল ঘটে পটের অভাব, পটে ঘটের অভাব। সংসৰ্গাভাব বলতে বােঝায় দুই বস্তুর মধ্যে সংযােগের অভাব, অন্যোন্যাভাব বলতে বােঝায় দুই বস্তুর মধ্যে অভিন্নতার অভাব। অন্যোন্যাভাব নিত্য। অন্যোন্যাভাবের আদি নেই, অন্তও নেই। 

        অভাবকে কিভাবে জানা যায়? :  অভাব বিষয়ক একটি সুচিন্তিত প্রশ্ন : অভাবকে কিভাবে জানা যায়? ন্যায় - বৈশেষিকগণ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, প্রত্যক্ষে দ্বারাই অভাবকে জানা যায় । তর্ক সংগ্রহে অন্নমভট্ট এরকম বক্তব্য রেখেছে যে, অভাবের প্রত্যক্ষ বহু সময় যে কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ — ভূতলে ঘটাভাব প্রত্যক্ষ করছি, এই প্রত্যক্ষ কোন সন্নিকর্য নির্ভরশীল। এখন মনে হতে পারে, সন্নিকর্যটি কি যার উপর অভাব - জ্ঞানের নির্ভরতা? ন্যায় - বৈশেষিকগণ এর উত্তর দিয়েছেন এভাবে যে, ‘বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব' হল ঐ সন্নিকর্ষ। ভূতলে ঘটাভাব প্রত্যক্ষ করার সময় ভূতলের সঙ্গে চক্ষু - ইন্দ্রিয় সংযুক্ত হয়, যে ভূতল ঘটাভাবের দ্বারা বিশেষিত। সুতরাং চক্ষু - ইন্দ্রিয় ও ঘটাভাবের মধ্যে সম্পর্ককে ‘যার সঙ্গে সংযুক্ত তার বিশেষণতা' বলা হয়। এই বিশেষণতাই হল 'সংযুক্ত বিশেষণতা'।

        ‘ভূতলে ঘটাভাব' — এখানে ভূতল ‘বিশেয্য' এবং ঘটাভাব ‘বিশেষণ'। সুতরাং ভূতলে  ঘটাভাব প্রত্যক্ষ করার বিষয়ে উভয়ের সম্বন্ধ হল ‘বিশেষণ - বিশেষ্য - ভাব'। অভাব প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ন্যায় - বৈশেষিকগণ এইভাবে ‘বিশেষণতা’ নামক যষ্ঠ প্রকার সন্নিকর্যের স্বীকৃতি দিয়ে বক্তব্য রাখলেন যে, অভাব জ্ঞানের উৎস হল প্রত্যক্ষ বা অভাবকে প্রত্যক্ষের দ্বারাই জানা যায়। 

        ভাট্ট মীমাংসকগণ উপরিউক্ত মতের বিরােধিতা করে বলেছেন যে, প্রত্যক্ত অভাবের জ্ঞানে প্রমাণস্বরূপ নয় বা অভাব কখনও প্রত্যক্ষের বিষয় নয়। এর কারণ হল: প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর সঙ্গে ইন্দ্রিয় - সন্নিকর্ষ নিশ্চিতভাবে ঘটে, কিন্তু কোন অভাবের সঙ্গে ইন্দ্রিয় - সন্নিকর্ষ  বা সংযােগ ঘটে না । ভাট্ট মতে, অভাবকে জানা গেলেও অভাব জ্ঞানের উৎস হল অনুপলব্ধি। যখন আমরা বিছানার উপর বালিশের অভাবের কথা বলি, তখন আমরা কেবল বিছানাই প্রত্যক্ষ করি, বালিশ প্রত্যক্ষ করি না। কাজেই বালিশের অভাব হল অনুপলব্ধির বিষয়। অবশ্য এই অনুপলব্ধিকে যােগ্য হতে হবে, তা না হলে প্রমাণরূপে ধার্য হবে না। ভাট্ট মতে, শুধুমাত্র যােগ্যানুপলব্ধিই হল অভাব জ্ঞানের প্রমাণস্বরূপ। 

        ন্যায় বৈশেষিক দার্শনিকগণ যােগ্যানুপলব্ধিকে স্বীকার করেন। অনুপলব্ধি অভাব জ্ঞানের ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও যে আধারের মধ্যে কোন বিষয়ের অভাব নিহিত, সেই আধার বা আশ্রয়ের সঙ্গে আমাদের ইন্দ্রিয় - সন্নিকর্য নিশ্চিতভাবে বর্তমান থাকে। সুতরাং অভাব জ্ঞানের মধ্যে ইন্দ্রিয়ের সংযােগ অপরিহার্য বলেই ইন্দ্রিয়ই অভাবের মুখ্য প্রমাণ-স্বরূপ। অবশ্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যােগ্যানুপলব্ধির সহকারিত্ব অভাব - জ্ঞানের জন্য নিশ্চয়ই থাকবে। কাজেই ন্যায় - বৈশেষিক মতে, অভাব প্রত্যক্ষের বিষয় অর্থাৎ প্রত্যক্ষের সাহায্যেই অভাবকে জানা যায়। 

Read More