বৌদ্ধ দর্শনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। (Give a brief sketch of Bauddha Philosophy.)
উঃ খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নগরে এক রাজ পরিবারে জন্ম নিলেন বুদ্ধ। পরিবার থেকে নাম রাখা হল গৌতম। রাজা ঐশ্বর্যের মাঝে গৌতম হাপিয়ে উঠলেন দিনের পর দিন। জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তাঁর উপলব্ধি হল এ সংসার দুঃখময়। একদিন চোখের সামনে দাঁড়াল এক সন্ন্যাসী- সৌম্য, দিব্য, আনন্দময়। মুগ্ধ হলেন গৌতম। ভাবলেন সন্ন্যাস গ্রহণই দুঃখ-বেদনা থেকে মুক্তির উপায়। রাজার কুমার রাজপ্রসাদ থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন তাঁর ঊনত্রিশ বছর বয়স। এরপর দীর্ঘকাল গয়ায় বোধিবৃক্ষতলে গভীর ধ্যান ও সাধনার মাধ্যমে সত্যের সন্ধান পেলেন। দুঃখের রহস্য উন্মোচিত হল। সম্যক জ্ঞান লাভ করলেন তিনি। সত্যের স্বরূপ জেনে তিনি হলেন তথাগত। বিশ্ববাসীকে দুঃখকষ্ট থেকে চিরমুক্ত করার জন্য তিনি তাঁর ধ্যানলব্ধ জ্ঞান প্রচারে হলেন অগ্রণী। তাঁর ধর্মবাণী ছড়িয়ে পড়ল দিক-দিগন্তে। অহিংসা, প্রেম করুণার ধারায় শুচিস্নান করল পৃথিবী। আশি বছর বয়সে তিনি নির্বাণ লাভ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বৌদ্ধধর্ম ধীরে ধীরে এক বিশ্বধর্মে পরিণত হল।
দার্শনিক বলতে আমরা সাধারণভাবে যা বুঝে থাকি, বুদ্ধদের ঠিক সেই অর্থে দার্শনিক নন। করুনাঘন মুগ্ধ ছিলেন ধর্ম ও নীতিতত্ত্বের প্রচারক। তাত্ত্বিক আলোচনায় বুদ্ধদের উৎসাহী ছিলেন না। বুদ্ধদেব ছিলেন সত্যদ্রষ্টা। আধ্যাত্মিক চেতনার গভীরে তার দৃষ্টি ছিল সমাহিত। তিনি ছিলেন জীবনবাদী মহাপুরুষ। জগতের সৃষ্টি তত্ত্বের যে সব দার্শনিক প্রশ্ন রয়েছে, তা নিয়ে কালহরণ না করে তিনি দুঃখজর্জর মানুষকে মুক্তির উপায় বলে দিতেন।
বুদ্ধদেবের নিজের রচিত কোন গ্রন্থ ছিল না। তিনি কথোপকথনের মাধ্যমে শিষ্যদের উপদেশ দিতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তার উপদেশগুলি শিষ্যরা পালি ভাষায় গ্রন্থের আকারে ধরে রাখলেন। গ্রন্থগুলি হল 'পিটক। এই পিটকের সংখ্যা তিনটি—বিনয় পিটিক, সুত্র পিটক ও অভিধৰ্ম্ম পিটক। এগুলিকে ত্রিপিটক বলা হয়।
সাধনার শীর্ষে গিয়ে বুদ্ধদের চারটি সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন। বৌদ্ধ দর্শনে এ চারটি সত্য চারটি আসিতা আর্যসত্য নামে পরিচিত। এ চারটি সত্য হল : (১) দুঃখ, (2) দুঃখ- সমুদায়, (৩) দুঃখ-নিরোধ ও (৪) দুঃখ-নিরোধ মার্গ।
প্রথম আর্যসত্য : 'সর্বং দুঃখম্'—সবই দুঃখময়। জনমে মরণে দুঃখ। আকাঙ্ক্ষায়, উৎকণ্ঠায়, হতাশায় দুঃখ। প্রিয়-বিচ্ছেদে, অপ্রিয়-সংযোগে দুঃখ। যা অনিত্য তা দুঃখে ভরা। কোথাও আনন্দ নেই, সুখ নেই। সুখের মাঝেই দুঃখের বীজ লুকিয়ে রয়েছে। সমস্ত পৃথিবীটাই একটা বিরাট আগুনের কুণ্ড। সমস্ত জীব জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর দুঃখের আগুনে পুড়ে পুড়ে মরছে।
দ্বিতীয় আর্যসত্য : দুঃখ সমুদায়' বা দুঃখের কারণ আছে। বুদ্ধদেবের দ্বিতীয় আর্যসত্যটি 'প্রতীত্যসমুৎপাদ' বা কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতীত্যসমুৎপাদ নিয়ম অনুযায়ী এ পৃথিবীতে যে কোন ঘটনার পশ্চাতেই কোন-না-কোন কারণ আছে। কারণ ছাড়া কোন ঘটনা ঘটতে পারে না। দুঃখেরও কারণ আছে। জরা মরণের কারণ হল জাতি (জন্ম)। জাতির কারণ হল ভব (পুনরায় জন্মগ্রহণের বাসনা)। ভব'র কারণ হল উপাদান (সাংসারিক বস্তুর প্রতি আসক্তি)। উপাদানের কারণ হল তৃষ্ণা (বিষয় ভোগের ইচ্ছা)। তৃষ্ণার কারণ বেদনা (পূর্ববর্তী ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা)। বেদনার কারণ স্পর্শ (বস্তুর সাথে ইন্দ্রিয়ের সংযোগ)। স্পর্শের কারণ ঘড়ায়তন (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন)। ষড়ায়তনের কারণ হল নামরূপ (দেহ-মন গ্রন্থি)। নামরূপের কারণ হল বিজ্ঞান (চৈতন্য)। বিজ্ঞানের কারণ হল সংস্কার (পূর্ব জীবনের অভিজ্ঞতার ছাপ)। সংস্কারের কারণ হল অবিদ্যা (চারটি আর্যসত্তা বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞানের অভাব)। কার্যকারণ শৃঙ্খলের এই বারোটি অঙ্গকে 'দ্বাদশ নিদান' বলা হয়।
তৃতীয় আর্যসত্য : ‘দুঃখ-নিরোধ'। দুঃখের যে সব কারণ আছে সেই কারণগুলি দূর করলেই দুঃখ-নিরোধ সম্ভব। দুঃখ নিবৃত্তিই নির্বাণ। নির্বাণ হল মুক্তি — দুঃখ থেকে চিরমুক্তি। এ জীবনেই নির্বাণ লাভ করা যায়।
চতুর্থ আর্যসত্য : 'দুঃখ-নিরোধ মার্গ। যে পথ ধরে নির্বাণ লাভ করা যায় বা দুঃখ থেকে চিরমুক্তি পাওয়া যায়, তাই হল দুঃখ-নিরোধ মার্গ। এ পথের নাম 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই মার্গের আটটি স্তর হল: (১) সম্যক দৃষ্টি। চারটি আর্যসত্যের প্রকৃত জ্ঞানই সম্যক দৃষ্টি। (২) সম্যক সঙ্কল্প। সত্যের জ্ঞানালোকে জীবন নিয়ন্ত্রণ করা ও কর্ম করার দৃঢ় ইচ্ছাই সম্যক সঙ্কল্প। (৩) সম্যক বাক্য। সত্য ভাষণ, প্রিয় কথন, শিষ্ট আলোচনা, সংযত আলাপ, মধুর বাক্য বিনিময়ই বাক্ সংযমের লক্ষণ। (৪) সম্যক কর্মান্ত। জীবহত্যা, চুরি করা, ইন্দ্রিয় সেবা থেকে বিরত হওয়া। (৫) সম্যক আজীব। উদ্দেশ্য ও উপায় উভয়কেই সৎভাবে রেখে জীবনযাত্রা নির্বাহ করা। (৬) সম্যক ব্যায়াম। মনে সৎ চিন্তার উদয় ও স্থিতিতে প্রযত্ন ও প্রচেষ্টা। (৭) সম্যক স্মৃতি। জীবন ক্ষণস্থায়ী, জগৎ অনিত্য, সব কিছু পরিবর্তনশীল—এ বিষয় জ্ঞানে-স্মরণে-মননে ধরে রাখা। (৮) সমাক সমাধি। একাগ্রচিত্তে মনঃসংযোগের নামই সমাধি।
যদিও বুদ্ধদেব তাত্ত্বিক আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করতেন না তবুও তাঁর নৈতিক শিক্ষার মূলে কতকগুলি দার্শনিক তত্ত্ব নিহিত, যেগুলি হল— (১) প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি, (২) কর্মবাদ, (৩) অনিত্যবাদ (৪) নৈরাত্ম্যবাদ
(১) প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি অনুসারে জগতের প্রতিটি বস্তু বা ঘটনার পূর্ববর্তী 'কারণ' আছে। জগতে কোন কিছুই আকস্মিক ভাবে ঘটে না। জগতের কোন পরিণতির কারণ থাকতে পারে না।
(২) কর্মবাদ অনুসারে সংসারে যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন কর্মফল ভোগ করবে। কর্ম দুই প্রকার—সকাম ও নিষ্কাম। সকাম কর্ম মোহযুক্ত ও নিষ্কাম কর্ম মোহমুক্ত। সকাম কর্ম ফলপ্রসূ হয়, কিন্তু নিষ্কাম কর্ম ফলপ্রসূ হয় না।
(৩) অনিত্যবাদ অনুসারে জগতে কোন কিছুই চিরন্তন নয়। সবই অনিতা, সবই ধ্বংসশীল। পরবর্তীকালে বুদ্ধ অনুগামীরা বুদ্ধদেবের অনিত্যবাদকে ক্ষণিকবাদে পরিণত করেন। ক্ষণিকবাদের বক্তব্য বিষয় হল, এক ক্ষণের বেশি কোন কিছুই স্থায়ী হয় না (সর্বং ক্ষণিকং সত্তাৎ)।
(৪) নৈরাত্ম্যবাদ অনুসারে কোন নিত্য বা চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব নেই, যেহেতু সব কিছুই অনিত্য। আত্মা হল চেতনার বিরামবিহীন প্রবাহ। এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে মানসিক প্রক্রিয়া প্রবাহিত, তাই এ জীবন থেকে পরবর্তী জীবনে উত্তরণ ঘটার স্বাভাবিকতাতেই জন্মান্তর স্বীকৃত। কিন্তু জন্মান্তর মানে এরকম নয় যে নিত্য আত্মার নতুন দেহ ধারণ। চেতনার অবিরত প্রবাহের আড়ালে কোন নিত্য আত্মার অস্তিত্ব থাকাতে পারে না।
বৌদ্ধ দর্শনে ঈশ্বরকে স্বীকার করা হয় না। বৌদ্ধমত হল কোন অপরিণামী কারণ হিসাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে সাধারণত যে সব প্রমাণ দেওয়া হয় সেগুলি বৌদ্ধমত অনুযায়ী যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কি নৈতিক প্রগতির জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করার কোন প্রয়োজন নেই। মোক্ষলাভের জন্যও মোক্ষদাতারূপে ঈশ্বরকে মেনে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই, যেহেতু অষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুসরণই মোক্ষলাভের উপায়।
বুদ্ধদের যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তাঁর শিষ্যমণ্ডলী তার নির্দেশ অনুসরণ করে দার্শনিক তত্ত্বের আলোচনা থেকে বিরত ছিলেন। তাঁর তিরোভাবের পর বুদ্ধের শিক্ষা ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে নানা দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছিল। বুদ্ধের শিষ্যমণ্ডলী বৌদ্ধ ধর্মকে দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করলেন এবং এর ফলে চারটি উল্লেখযোগ্য দার্শনিক সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। সম্প্রদায়গুলি হল যথাক্রমে- (১) মাধ্যমিক বা শূন্যবাদী সম্প্রদায়, (২) যোগাচার সম্প্রদায়, (৩) সৌত্রান্তিক সম্প্রদায় ও (৪) বৈভাষিক সম্প্রদায়।
(১) মাধ্যমিক বা শূন্যবাদী সম্প্রদায় : এই সম্প্রদায়ের মতে জড়জগৎ ও মনোজগৎ কোন কিছুরই সত্তা নেই—সবই শূন্য। পাশ্চাত্ত্য দার্শনিক ডেভিড হিউম (Hume)-এর মতবাদের সঙ্গে এই মতবাদের যথেষ্ট সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়। মাধ্যমিক দর্শনের প্রবর্তক হলেন নাগার্জুন।
(২) যোগাচার সম্প্রদায় : এই সম্প্রদায় অনুসারে বাহ্যবস্তুর স্বতন্ত্র সত্তা নেই। চেতনার সত্তা আছে। চেতনার বাইরে বস্তুর অস্তিত্ব আছে মনে করলে তা চেতনারই ভাব বা ধারণা মাত্র। চিন্তার সত্যতা প্রমাণ করতে গেলেও চেতনা বা মনের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতেই হবে। চিত্ত বা মন হল বিজ্ঞান-ধারা। জ্ঞানের বিষয় ব্যক্তি মনের ভাব ছাড়া আর কিছু নয়। যোগাচার মতকে বিজ্ঞানবাদ বলা হয়। এই মতবাদের সঙ্গে পাশ্চাত্য দার্শনিক বার্কলি (Berkeley)-র মতবাদের যথেষ্ট মিল আছে। অসঙ্গ, বসুবন্ধু প্রভৃতি দার্শনিকগণ যোগাচারবাদের প্রতিষ্ঠাতা।
(৩) সৌত্রান্তিক সম্প্রদায় ঃ সৌত্রান্তিকগণ সর্বাস্তিবাদী। এঁরা বাহ্যবস্তু ও মন উভয়েরই স্বতন্ত্র সত্তা স্বীকার করেন। সৌত্রান্তিকগণ বলেন, বাহ্যবস্তুর মনোনিরপেক্ষ সত্তা আছে। বাহ্যবস্তুর প্রকৃত অস্তিত্ব না থাকলে বাহ্যবস্তু সম্পর্কে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাহাবস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকলে বিভিন্ন চেতনার পার্থক্য ব্যাখ্যা করা যায় না। বাহ্যবস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আছে তা না হলে বস্তুর ধারণা বস্তু অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা কিভাবে বোঝা যাবে? যেহেতু বস্তু আমাদের প্রয়োজন সিদ্ধ করে, তাই বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব মেনে না নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। যেহেতু ঘট ও ঘটের চেতনা সমকালীন, এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত নয় যে, ঘট (বস্তু) ও ঘটের চেতনা (বস্তুর চেতনা) অভিন্ন। অতএব বস্তু আছে বলেই আমরা বস্তুর ধারণা করি। এই মতবাদই বাহ্যানুমেয়বাদ। পাশ্চাত্য দার্শনিক জন লক (Locke) এই ধরনের মতবাদ প্রচার করেছেন। সৌত্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে কুমার লাত-এর নাম প্রসিদ্ধ।
(৪) বৈভাষিক সম্প্রদায় : বৈভাষিক সম্প্রদায় বাহ্যবস্তু ও মন উভয়েরই অস্তিত্ব স্বীকার করেন। সৌত্রান্তিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে এঁরা একমত। এঁদের মধ্যে ভিন্ন মত হল একটি প্রধান বিষয় নিয়ে ঃ সৌত্রান্তিকগণ যেখানে বলেন বাহ্যবস্তুকে প্রত্যক্ষ করা যায় না, তার অস্তিত্ব অনুমানের সাহায্যে জানতে পারা যায়। বৈভাষিকগণ সেখানে বলেন বাহ্যবস্তু প্রত্যক্ষগ্রাহ্য – অর্থাৎ সাক্ষাৎভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়, কিন্তু অনুমানসিদ্ধ নয়। বৈভাষিকদের বাহ্যপ্রত্যক্ষবাদ বলা হয়। পাশ্চাত্য দর্শনে সরল স্বাতন্ত্রবাদীদের (Naive Realists) মতবাদের সঙ্গে এই মতবাদের সামঞ্জস্য আছে।
কালক্রমে বৌদ্ধরা ধর্মের দিক থেকে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যান— হীনযান ও মহাযান। প্রাচীনপন্থীরা হলেন হীনযান, যারা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আচার-আচরণের বিধিগত কঠোরতা শিথিল করতে নারাজ। প্রাচীনপন্থীদের থেকে সরে এসে উদারপন্থীরা ধর্মের দিক থেকে মহাযান সম্প্রদায় গড়ে তুললেন। হীনযানদের ধর্মসাহিত্য রচিত হল পালি ভাষায় আর সংস্কৃত ভাষায় রচিত হল মহাযানদের ধর্মসাহিত্য। হীনযানীদের কাছে আত্মমুক্তি নির্বাণলাতের উদ্দেশ্য, মহাযানীদের কাছে সবার মুক্তি নির্বাণলাভের উদ্দেশ্য। মহাযানীরা মনে করেন, পরন জ্ঞান লাভ করাই নির্বাণের লক্ষ্য এবং ঐ পরম জ্ঞানের দ্বারা দুঃখ জর্জর মানুষের মুক্তিলাভে সহায়তা করাই নির্বাণের আদর্শ। হীনযানীদের প্রাধান্য বিস্তার ঘটেছিল সিংহল, শ্যাম ও ব্রহ্মাদেশে, মহাযানীদের প্রসার ঘটে তিব্বত, চীন, জাপানে।
<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>