Showing posts with label Philosophy. Show all posts
Showing posts with label Philosophy. Show all posts

Sunday 16 May 2021

পাশ্চাত্য দর্শন: দর্শনের আলোচ্য বিষয় বা পরিসর (Scope of Philosophy) আলোচনা করো.

Leave a Comment

 প্রশ্ন: দর্শনের আলোচ্য বিষয় বা পরিসর (Scope of Philosophy) আলোচনা করো.

উত্তর: 

দর্শনের আলােচ্য বিষয় বা পরিসর: দর্শনের আলােচ্য বিষয়গুলিকে নিয়েই দর্শনের পরিসর বা পরিধি। জড়, জীবন, ইন্দ্রিয়, মন, প্রাণ, জীবাত্মা, পরমাত্মা — সবই দার্শনিক আলােচনার বিষয়। 

এদিক থেকে দেখতে গেলে দর্শনের আলােচনার পরিধি বিরাট। সমগ্র জগই দর্শনের আলােচনার বিষয়। জগৎ সম্পর্কে ন্যায়সঙ্গত বিচার - বিশ্লেষণ করে, মানুষের জীবনের প্রকৃত মূল্যায়ন করে বিশ্বের সাথে তার সম্পর্ক নির্ণয় করা দর্শনের কাজ।  জনৈক পাশ্চাত্য দার্শনিক মন্তব্য করেছেন যে স্বর্গ ও মর্ত্যের এমন কোন  বিষয় নেই যা দার্শনিক আলােচনার গণ্ডীর বাইরে বা যা নিয়ে দার্শনিক অনুসন্ধান চালানাে যায় না। সমাজ, শিক্ষা, কলা, বিজ্ঞান, ধর্ম, নীতি, অহিংসা, শান্তি প্রভৃতি বিষয়সমূহের ওপরেও দার্শনিক ব্যাখ্যা এগিয়ে যেতে পারে। এখন দর্শনের আলোচ্য বিষয়বস্তুকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।

(১) অবভাস সংক্রান্ত আলােচনা : বাহ্যজগতের প্রতিটি বস্তুর দুটি রূপ আছে। একটি হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ বা অবভাস এবং অপরটি হল বস্তুম্বরূপ। আমরা বস্তু বা বিষয়ের যে বাহ্যরূপ প্রত্যক্ষ করি সেটি হল বস্তুর অবভাস (Appearance)। বস্তুর এই অবভাস সংক্রান্ত আলােচনা করে রূপবিদ্যা বা প্রতিভাস বিজ্ঞান ( Phenomenology )। বস্তুত ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার জগৎ তথা অবভাসিক জগৎ নিয়ে আলােচনা করতে গিয়ে দর্শনকে বিভিন্ন প্রতিভাস বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হয়। এইসব সিদ্ধান্তকে বিচারবিশ্লেষণ করে তাদের সমন্বিত বা ঐক্যবদ্ধ করাই হল দর্শনের লক্ষ্য। 

(২) বস্তুম্বরূপ সংক্রান্ত বা অধিবিদ্যা বিষয়ক আলােচনা:  বস্তুর আসল রূপকে বলা হয় বস্তুস্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে বস্তুর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা অবভাসিত রূপের অন্তরালে তার একটি প্রকৃত সত্তা (Reality) আছে, যাকে বাইরে থেকে আমরা দেখতে পাই না। বস্তুর এরূপ সত্তাই হল বস্তুসত্তা বা তত্ত্ব। অবভাস পরিবর্তনশীল কিন্তু বস্তুস্বরূপ নিত্য বা অপরিবর্তনীয়। দর্শনের অন্যতম শাখা হিসাবে অধিবিদ্যা (Metaphysics) বস্তুর স্বরূপ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। অর্থাৎ জড়, প্রাণ, মন, আত্মা, ঈশ্বর, পরমসত্তা, দেশ, কাল, কার্যকারণ সম্পর্ক প্রভৃতির যথার্থ স্বরূপ সম্পর্কিত সমস্যাগুলির আলােচনা করে দর্শনের যে শাখা তার নাম অধিবিদ্যা। 

(৩) জ্ঞান সংক্রান্ত আলােচনা: দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জ্ঞান সম্পর্কিত আলােচনা। জ্ঞানের স্বরূপ, জ্ঞানের উৎস, জ্ঞানের সীমা, জ্ঞানের শর্ত, যথার্থ জ্ঞান আদৌ সম্ভব কিনা — এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা করে দর্শনের যে শাখা, তাকে বলা হয় জ্ঞানবিদ্যা ( Epistemology)। 

(৪) আদর্শ বা মূল্যের স্বরূপ বিষয়ক আলােচনা: মানবজীবনের মূল আদর্শ বা পরমমূল্য হিসাবে সত্য, শিব ও সুন্দরের আলােচনা করে যে শাস্ত্র, তাকে বলা হয় মূল্যবিদ্যা (Aviology)। সত্য বলতে চিন্তার আদর্শকে, ‘শিব’ বলতে মহৎ আচরণের আদর্শকে এবং ‘সুন্দর’ বলতে অনুভূতির আদর্শকে বােঝানাে হয়। দর্শন এই তিনটি পরমমূল্যের সাহায্যে পরম সত্তার স্বরূপ এবং জগৎ ও জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলির মূল্য অবধারণ করে থাকে। কাজেই মূল্যবিদ্যা সংক্রান্ত আলােচনা দর্শনের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। 

(৫) ধর্ম সম্পর্কিত আলােচনা: জীবনের সত্যকে যা ধারণ করে রাখে তাই হল ধর্ম। তাই ধর্ম সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল অপরিসীম। এই ধর্ম - বিষয়ক বিভিন্ন ধারণা যেমন — ঈশ্বর, ধর্মীয় চেতনা, আত্মার স্বরূপ, অমঙ্গল প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যুক্তিগ্রাহ্য আলােচনা করে দর্শনের যে শাখা, তাকে বলা হয় ধর্মদর্শন। 

(৬) সমাজ বিষয়ক আলােচনা: সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে মানুষ সামাজিক জীবনযাপনের জন্য বিভিন্নপ্রকার সংঘ, প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে। সমাজের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং এই সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলির স্বরূপ, বৈশিষ্ট্য, সামাজিক ভূমিকা প্রভৃতি আলােচনা করা দর্শনের কাজ। দর্শনের যে শাখায় এই বিষয়সমূহ আলােচিত হয়, তাকে বলা হয় সমাজদর্শন।

 (৭) রাষ্ট্রসম্পর্কীয় আলােচনা: দর্শনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসাবে রাষ্ট্রদর্শন রাষ্ট্রের উৎপত্তি, রাজনৈতিক আদর্শ, রাজনৈতিক ঘটনার মূল্যায়ন, শাসনব্যবস্থা, স্বাধীনতা, সাম্য, গণতন্ত্র প্রভৃতি প্রত্যয়গুলির বিশ্লেষণ ও অর্থ নির্ণয় করে। 

অবশেষে বলা যায়, আমরা যে জগতে বসবাস করি তা বিচিত্র রহস্যে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ গতিতে ভরপুর। এই পরিদৃশ্যমান জগৎ নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই জগৎ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতাও পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন বিজ্ঞান এই সমস্ত অভিজ্ঞতার এক একটি দিক নিয়ে আলােচনা করে মাত্র। কিন্তু দর্শন আমাদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে তার আলােচ্য বিষয় সূচির অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ , জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মানুষের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও দর্শনের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।

<<<<<<<<<<<<<<<<<The End>>>>>>>>>>>>>

Read More

Thursday 29 April 2021

Philosophy, দর্শনের প্রশ্ন উত্তর (জ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি অধ্যায় থেকে)

Leave a Comment

 প্রশ্ন: সহজাত ধারণা কী? সহজাত ধারণাবাদের স্বপক্ষে ও বিপক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি কী কী?

অথবা 

সহজাত ধারণার স্বপক্ষে যুক্তিগুলি বিবৃত কর।

অথবা 

সহজাত ধারণা প্রসঙ্গে দেকার্তের মত আলোচনা কর।

অথবা

 লক কেমনভাবে সহজাত ধারণা নস্যাৎ করেছেন? আলোচনা কর।

অথবা 

লক কিভাবে সহজাত ধারণার অস্তিত্ব খন্ডন করেছেন তা যুক্তিসহ আলোচনা করো।

অথবা 

"আমাদের কোনো ধারণাই সহজাত নয়" ---- এই মন্তব্যটি কোন দার্শনিকের? বক্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

 সহজাত ধারণাবাদ: “সহজাত” বলতে বােঝায় যা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার সাহায্য ছাড়াই নিজের দ্বারা নিজেই প্রমাণিত। এটা বুদ্ধিতেই সম্ভব। যা বুদ্ধির সাহায্যে লাভ করা যায় বা যা বুদ্ধিগম্য, তাই সহজাত। 'সহজাত' কথাটির মানে ঠিক জন্মগত বােঝায় না। সহজাত ধারণা অভিজ্ঞতাপূর্ব বা পূর্বতসিদ্ধ(apriori)। চিন্তাক্ষেত্রে মানুষ বুদ্ধির দ্বারা কতকগুলি ধারণাকে স্পষ্ট করে তােলে। তাই সহজাত ধারণা আবশ্যিক বা নিশ্চয়ত্মক। পূর্ণতা, অসীমতা ইত্যাদির ধারণা সহজাত, তার কারণ অভিজ্ঞতা - নিরপেক্ষ অবস্থায় বুদ্ধির মাধ্যমে আমরা এইসব ধারণা লাভ করতে পারি। সহজাত ধারণার ক্ষেত্রে বিপরীত চিন্তা করা যায় না। অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণার ক্ষেত্রে বিপরীত চিন্তা করা যায়। আমরা একটা চেয়ারকে লােহার চেয়ার না বলে কাঠের চেয়ারও বলতে পারি। এটা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সম্ভব। কিন্তু সহজাত ধারণার ক্ষেত্রে এরকম হয় না। যেমন ডেকার্ট বলেছেন, 'আমি চিন্তা করি, আমার অস্তিত্ব আছে। এক্ষেত্রে 'আমার অস্তিত্ব নেই’ — একথা বলতে পারি না। কেননা আমি না থাকলে 'আমি চিন্তা করি’ একথা বলতে পারতাম না। এই যে আমার আত্মার ধারণা, আমার চিন্তার অস্তিত্ব এটাই বুদ্ধিগম্য ও সহজাত। সমস্ত নিত্য সত্যই সহজাত। যেমন, 'শূন্য থেকে শূন্যই সৃষ্টি হয়”, “অভাব থেকে অভাবেরই জন্ম হয়”। ঈশ্বরের ধারণা হল সহজাত। পূর্ণ সত্তা বিশিষ্ট ঈশ্বরের ধারণার কারণ ঈশ্বর নিজেই। অসীমতার ধারণা আমাদের মনে থাকে বলেই আমরা বুঝি যে আমরা সসীম।

সহজাত ধারণার স্বপক্ষে যুক্তি: দেকার্ত, স্পিনােজা, লাইবনিজ প্রভৃতি বদ্ধিবাদী দার্শনিকরা অন্তর ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। ডেকার্ট ও স্পিনােজার মতে আমাদের কিছু কিছু ধারণা হল অন্তর বা সহজাত। কিন্তু লাইবনিজের মতে, আমাদের মনের সকল ধারণাই হল অন্তর বা সহজাত। অন্তর বা সহজাত ধারণা যে সম্ভব তাঁর সপক্ষে বুদ্ধিবাদীরা কয়েকটি যুক্তির অবতারণা করেছেন। সেগুলাে নিম্নরপ:

(১) অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণার বিপরীত ভাবা যায়, কিন্তু এমন ধারণা আছে যার বিপরীত ভাবা যায় না। ২ + ২ = ৪ - এ জাতীয় জ্ঞানের বিপরীত ভাবা যায় না এবং এর সম্পর্কে কোন মতভেদ দেখা যায় না। বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বলেন , এ জাতীয় জ্ঞান বা ধারণা অভিজ্ঞতালব্ধ নয়, অন্তর বা সহজাত।

 (২) অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা অভিজ্ঞতার পূর্বে থাকতে পারে না, কিন্তু কার্যকারণ সম্বন্ধ, দেশ, কাল প্রভৃতি ধারণা অভিজ্ঞতাপূর্ব। তাই এই সকল ধারণা সহজাত। 

(৩) অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তর্কবিজ্ঞানে আমরা এমন কতকগুলি চিন্তার মূল সূত্ৰ পাই যাদের সম্বন্ধে কোনরূপ মতবিরােধ থাকতে পারে না। এগুলো অন্তর বা সহজাত অভিজ্ঞতালব্ধ নয়। 

(৪) অসীমতা, নিত্যতা, পূর্ণতা, ঈশ্বর সম্পর্কীয়, ধারণা ও নৈতিকতা সম্পর্কীয় ধারণা ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের সাহায্যে কখনও পাওয়া যায় না। এগুলো সহজাত এবং মনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে, বুদ্ধির সাহায্যেই এগুলো প্রকাশ্যে ব্যক্ত হয় ।

সহজাত ধারণাবাদের বিরুদ্ধে লকের যুক্তি: ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক বুদ্ধিবাদীদের সহজাত ধারণাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বলেন সহজাত বা অন্তর ধারণা বলে কিছু নেই। আমাদের কোন ধারনাই সহজাত নয়। এই প্রসঙ্গে লকের যুক্তিগুলি নিম্নরূপ:

(১) অন্তর ধারণা যদি প্রকৃতই থাকে, তাহলে সেগুলাে সবজনস্বীকৃত হয়। কিন্তু অসীমতা, নিত্যতা, পূর্ণতা, কার্যকারণ সম্বন্ধীয় তথাকথিত অন্তর ধারণা সম্বন্ধে শিশু, নির্বোধ ও অশিক্ষিত ব্যক্তিরা সচেতন নয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সর্বজন স্বীকৃত অন্তর ধারণার কোন অস্তিত্ব নেই।

 (২) অন্তর বা সহজাত ধারণা যদি অস্তিত্বশীল হয়, তাহলে সকলের মনে এই ধারণাগুলাে সমানভাবে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু ঈশ্বর, নৈতিক নিয়ম প্রভৃতি ধারণা সম্বন্ধে সকলে একই মত পোষণ করে না। বিভিন্ন দেশে ও কালে ঈশ্বর সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন ধারণার প্রচলন দেখা যায়। সুতরাং অন্তর ধারণা বলে কিছু থাকতে পারে না।

(৩) কোনো ধারণার সর্বজনীনতা প্রমাণ করে না যে সেই ধারণা হলো অন্তর বা সহজাত। আগুন সম্পর্কে সকলের মনে একই ধারণা থাকতে পারি। কিন্তু তথাপি তাকে অন্তর ধারণা বলা চলে না। কোন কোন ধারণা সকলের স্বীকৃতি লাভ করলেও তাতে প্রমাণ হয় না যে সে ধারণা অন্তর।

(৪) সহজাত ধারণা বলতে অভিজ্ঞতাপূর্ব ধারণা বোঝায়। কিন্তু যে অবস্থার সম্বন্ধে আমাদের কোন বোধই নেই, সেইরূপ অবস্থার সহজাত ধারণার অস্তিত্ব কিভাবে মেনে নেওয়া যাবে।

(৫) চিন্তার মৌলিক নিয়মগুলি যথা- তাদাত্ম নিয়ম, বিরোধবাধক নিয়ম প্রভৃতি তথাকথিত সহজাত ধারণা সম্পর্কে সচেতন না হয়েও সাধারণ মানুষ বোঝে যে লাল ফুল লাল হবে কিংবা মা টক তার মিষ্টি হবে না ইত্যাদি। কাজেই সহজাত ধারণা বলে কিছু নেই।

এইভাবে লক সহজাত ধারণা বাদ খন্ডন করেছেন। লক বলতে চান যে, 'মনের মধ্যে এমন কিছু নেই যা পূর্বে ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ছিল না।'

Read More

Wednesday 28 April 2021

A Question & Answer of Philosophy (দ্রব্য: বুদ্ধিবাদ)

Leave a Comment

 প্রশ্ন: দ্রব্য বলতে কি বুঝায়? দ্রব্যের স্বরূপ সম্বন্ধে বুদ্ধিবাদীদের অভিমত সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা কর।

অথবা

দ্রব্য সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের বক্তব্য কী? এই বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য?

অথবা

দ্রব্যের প্রকৃতি সম্বন্ধে বুদ্ধিবাদীদের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। এই মতবাদ কি সন্তোষজনক? বিচার কর।

উত্তর: 

দ্রব্য: নানা পরিবর্তনের মধ্যেও বস্তুর অপরিবর্তনীয় সত্তাকে দ্রব্য বলা হয়। দ্রব্য হল বস্তুর সেই সত্তা যা শত পরিবর্তনের মধ্যেও অপরিবর্তিত থাকে, যা সবকিছু ক্রিয়াশীলতার উৎস এবং যা গুণের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে। দ্রব্য হল গুণ এর আধার। দ্রব্য ঐক্য ও অখন্ডতাকে সূচিত করে।

বুদ্ধিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে ডেকার্ট, স্পিনোজা এবং লাইবোনিজ প্রভৃতি দার্শনিকদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 দ্রব্য সম্পর্কে বুদ্ধিবাদী মতবাদ : ডেকার্টের মত ( Descartes ) : দ্রব্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ডেকার্ট বলেছেন, যাকে স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপর কিছুর উপর নির্ভর করতে হয় না, তাই হল দ্রব্য। ডেকার্টের মতে স্ব - নির্ভরতা দ্রব্যের লক্ষণ। ডেকার্টের এই সংজ্ঞা মেনে নিলে একটি মাত্র দ্রব্যেরই অস্তিত্ব থাকতে পারে তা হল ঈশ্বর। ঈশ্বরই একমাত্র স্বনির্ভর দ্রব্য। কেননা, ঈশ্বর অসীম; তার বাইরে কিছু নেই। অপরদিকে, যা সসীম তা কোন - না - কোনভাবে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপর বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। তাই সসীম কোন কিছুকেই ডেকার্টের সংজ্ঞা অনুযায়ী দ্রব্য আখ্যা দেওয়া যায় না। কিন্তু ডেকার্ট ঈশ্বর ছাড়া অন্য দুটি দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। এই দুটি দ্রব্য হল— মন এবং জড়। মন এবং জড় ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। কারণ, ঈশ্বরই এদের স্রষ্টা। ঈশ্বরই একমাত্র অন্য নিরপেক্ষ দ্রব্য, জড় ও মন ঈশ্বর সাপেক্ষ; তবে অন্য সমস্ত বস্তু নিরপেক্ষ। ডেকার্ট একজন দ্বৈতবাদী। দর্শনে তারাই দ্বৈবাদী হিসেবে খ্যাত যাঁরা মনে করেন যে এই জগতে দুটি মৌলিক উপাদান আছে মন ও জড় এবং জগতের সব অস্তিত্বশীল বস্তুকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়— জড়াত্মক এবং মানসিক। দ্বৈতবাদী হিসেবে ডেকার্ট বিশ্বাস করেন যে জড় ও মন পরস্পরবিরােধী দ্রব্য। তাঁর মতে মনের গুণ বা সারধর্ম  হল চেতনা এবং জড়ের গুণ বা সারধর্ম হল বিস্তৃতি। কোন অচেতন মন নেই এবং কোন বিস্তৃতিহীন জড় নেই।

     ডেকার্টের মতে দ্রব্যের অতি প্রয়ােজনীয় ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যা অনিবার্যভাবে দ্রব্যে নিহিত থাকে তাকেই গুণ বলে। এই অতি প্রয়ােজনীয় গুণগুলি ছাড়াও কতকগুলি গৌণ গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলি সর্বদা দ্রব্যে উপস্থিত থাকে না। দ্রব্যের গৌণগুণ বা বৈশিষ্ট্যগুলিকে ডেকার্ট প্রত্যংশ বা রূপান্তর (modes) নামে অভিহিত করেছেন। মনের গুণ হল চিন্তন। ইচ্ছা, অনুভূতি, কামনা প্রভৃতি হল মনের প্রত্যংশ বা রূপান্তর। অনুরূপভাবে, বিস্তৃতি হল জড়ের গুণ এবং অবস্থান, আকৃতি, গতি প্রভৃতি জড়ের প্রত্যংশ বা রূপান্তর। ডেকার্টের মতে ঈশ্বরের কোন প্রত্যংশ বা রূপান্তর নেই; কারণ তিনি নিত্য বা অপরিবর্তনীয়। 

      ডেকার্ট বিশ্বাস করেন, দ্রব্যের ধারণা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাওয়া যায় না। এ ধারণা হল, অভিজ্ঞতা - পূর্ব (a - priori)। তাঁর মতে দ্রব্যের ধারণা সহজাত বা অন্তর। আমরা জন্মগ্রহণের সময় এই ধারণাগুলি নিয়ে জন্মাই। ডেকার্ট আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে ‘সহজাত ধারণা’ ( Innate ideas ) তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। 

স্পিনােজার (Spinoza) অভিমত: ডেকার্টের পরবর্তী দার্শনিক স্পিনােজা দ্রব্য সম্পর্কে ডেকার্টের সংজ্ঞাকেই মেনে নিলেন। কিন্তু তিনি ডেকার্টের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত হতে পারলেন না। তাই ডেকাট - প্রদত্ত দ্রব্যের সংজ্ঞার সংশােধন করে স্পিনােজা দ্রব্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা হল:  “যা নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল এবং যাকে নিজের সাহায্যেই বোঝা যায়, অর্থাৎ অপর কোন ধারণার সাহায্য না নিয়ে যার সম্পর্কে ধারণা গঠন করা যায় তাই হল দ্রব্য”। স্পিনােজার এই সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে বােঝা যায় যে, স্পিনােজার  মতে দ্রব্যের অপরিহার্য গুণ  দুটি— স্বনির্ভরতা  এবং স্ববেদ্যতা ( self - intelligibility )। যা অস্তিত্বের জন্য অন্য কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়, তাকে বলে স্ব - নির্ভর। আর, যাকে নিজের সাহায্যেই বােঝা যায়, তা হল স্ববেদ্য। স্ব - নির্ভরতা এবং স্ববেদ্যতা— এই উভয় গুণ থাকলে, তবে, স্পিনােজার মতে, কোন বস্তুকে দ্রব্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে।

      স্পিনােজা বলেন যে, দ্রব্যের সংজ্ঞা থেকে অনিবার্যভাবেই কতকগুলি সিদ্ধান্ত এসে পড়ে। 

     প্রথমতঃ, দ্রব্য স্বয়ম্ভু বা নিজেই নিজের কারণ। দ্রব্যের যদি কারণ থাকত, তাহলে দ্রব্য অন্য কিছুর দ্বারা উৎপন্ন হত এবং সেক্ষেত্রে সংজ্ঞানুযায়ী তাকে দ্রব্য আখ্যা দেওয়া যেত না। দ্রব্য সম্পূর্ণ স্বাধীন। সকলের অস্তিত্ব দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু দ্রব্যের অস্তিত্ব কারাের উপর নির্ভরশীল নয়।

    দ্বিতীয়তঃ, দ্রব্য অসীম। দ্রব্য অসীম বা অনন্ত না হলে একে সীমিত করতে পারে এমন আরও অন্যান্য বস্তুর সম্ভাবনা থেকে যায় এবং দ্রব্য তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েবে। 

তৃতীয়তঃ, দ্রব্য এক এবং শাশ্বত। দ্রব্য বহু হলে পরম্পর পরস্পরের দ্বারা সীমিত হয়ে পড়ত এবং স্বাধীনতা হারাত। তাছাড়া দ্রব্য শাশ্বত বা কালাতীত। যদি দ্রব্য শাশ্বত না হয়ে ক্ষণস্থায়ী হয়, তাহলে পূর্ববর্তী কোন কিছুর দ্বারা দ্রব্য উৎপন্ন হয়েছে এই সিদ্ধান্ত করতে হয়। সেক্ষেত্রে দ্রব্য অসীমত্ব হারাবে। এই এক, অদ্বিতীয়, অসীম ও স্বয়ম্ভ দ্রব্যকে স্পিনােজা ‘ঈশ্বর’ আখ্যা দিয়েছেন। আবার, তাঁর মতে ঈশ্বরই প্রকৃতি। 

স্পিনােজার দর্শনে তিনটি পদ— দ্রব্য, ঈশ্বর এবং প্রকৃতি— অভিন্ন হয়ে গেছে। ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতি (বা বিশ্বজগৎ) থেকে দ্রব্য স্বতন্ত্র নয়; কেননা, সেক্ষেত্রে দ্রব্য আর এক থাকবে না। স্পিনােজা মনে করেন, এই দ্রব্য নির্গুণ ও নির্বিশেষ সত্তা। 

স্পিনােজা মনে করেন, মন এবং জড় দ্রব্য নয়; কেননা, এরা স্বনির্ভর নয়। মন (যার সারধর্ম চেতনা) এবং জড় (যার সারধর্ম বিস্তৃতি) ঈশ্বরের অসংখ্য গুণের মধ্যে দুটি গুণ। সমস্ত জীব ঈশ্বরের চেতনার প্রকাশ এবং সমস্ত জড়দ্রব্য ঈশ্বরের বিস্তৃতির প্রকাশ। সমুদ্র ছাড়া যেমন তরঙ্গ  অস্তিত্বশীল হতে পারে না, ঠিক তেমনভাবে ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে জীব ও জড়দ্রব্যের কোন স্বতন্ত্র সত্তা নেই। তারা মিথ্যা, মায়ামাত্র। জীবের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নেই। জীবের কর্ম ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জড়জগতেও যা কিছু ঘটে ঈশ্বরই তার কারণ। এইভাবে স্পিনােজা বিশ্বের চরম সত্যতা অস্বীকার করলেন। 


লাইবনিজের ( Leibnitz ) অভিমত : লাইবনিজ ডেকার্ট ও স্পিনােজার মতই বিশ্বাস করেন যে, দ্রব্য তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু তাঁর মতে স্ব - নির্ভরতা দ্রব্যের স্বরূপ লক্ষণ নয়; দ্রব্যের স্বরূপ - লক্ষণ হল— আত্মসক্রিয়তা, বা স্বাধীনভাবে ক্রিয়া করার ক্ষমতা। যা দ্রব্য তা অপরের সাহায্য ছাড়া স্বাধীনভাবে ক্রিয়া করতে পারে। লাইবনিজের মতে দ্রব্য এক নয় ( যা স্পিনােজার মত ), তিন নয় ( যা ডেকার্টের মত ), দ্রব্য অসংখ্য ও অগণিত। 

লাইবনিজ বিশ্বাস করেন যে, দ্রব্য সরল বা অবিভাজ্য। এই মানদণ্ড অনুযায়ী কোন যৌগিক বস্তুকেই দ্রব্য হিসেবে স্বীকার করা যায় না। গ্রীসদেশে এক সম্প্রদায়ের দার্শনিক ছিলেন, যারা পরমাণুবাদী  নামে খ্যাত। তারা বিশ্বাস করতেন যে , জড়বস্তুকে  ক্রমাগত ভাগ করে গেলে শেষ পর্যন্ত আমরা এমন একটি ন্যূনতম অংশে পৌছাব, যাকে আর ভাগ করা যায় না। এই অবিভাজ্য অংশের নাম পরমাণু। তারা বিশ্বাস করতেন পরমাণু অবিভাজ্য, কিন্তু বিস্তৃতিসম্পন্ন। পরমাণুবাদী দার্শনিকদের মতে কেবলমাত্র অবিভাজ্য পরমাণুই দ্রব্য হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। 

লাইবনিজ বলেন, পরমাণু কখনও অবিভাজ্য হতে পারে না। কেননা, পরমাণু বিস্তৃতিসম্পন্ন। যার বিস্তৃতি আছে, তা যত ক্ষুদ্রই হােক না কেন, অবশ্যই বিভাজ্য। বাস্তবে বিভাজ্য না হলেও কল্পনাতে বিভাজ্য। কাজেই পরমাণু দ্রব্য লাইবনিজের বক্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে না। লাইবনিজের বিশ্বাস হল— যে উপাদান দিয়ে বিশ্বসংসার গঠিত তা জড়াত্মক পরমাণু নয়; তা অন্য এক জাতের পরমাণু। এই পরমাণুকে লাইবনিজ 'মনাড’ (Monad) নামে অভিহিত করেছেন। আমরা মনাডের প্রতিশব্দ হিসেবে ‘চিৎপরমাণু' কথাটি ব্যবহার করব। এই মনাড বা চিৎপরমাণু জগতের সমস্ত বস্তুর মূল উপাদান এবং লাইবনিজের মতে কেবলমাত্র মনাডকেই দ্রব্য বলে অভিহিত করা যায়। মনাড বা চিৎপরমাণু সংখ্যায় অগণিত। এরা যৌগিক নয়, সরল। এদের বিস্তৃতি নেই। এদের স্বভাব হল যে এরা স্বাধীনভাবে ক্রিয়া করতে পারে। এরা গবাক্ষহীন; তাই এরা একে অন্যের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এরা অচেতন নয়, চেতন। এরা আধ্যাত্মিক বিন্দু। এরা প্রত্যেকে এক একটি শক্তিকেন্দ্র।

লাইবনিজ বলেন যে, মনাড বা চিৎপরমাণুগুলিকে তাদের শক্তি ও ক্রিয়া অনুসারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজালে সকলের শীর্ষদেশে যে মনাড বা দ্রব্যকে পাওয়া যাবে তিনিই ঈশ্বর। লাইবনিজ বিশ্বাস করেন যে, এই অসংখ্য চিৎপরমাণু বা মনাড কাজ করে চলেছে, তাদের যিনি স্রস্টা— সেই ঈশ্বরের ইচ্ছা - সঙ্কেতে। তার ইচ্ছাতেই তারা সকলে স্বতন্ত্র স্বাধীন পথে চলেও একই সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্বের অধিবাসী। লাইবনিজ মনে করেন, অনন্ত বৈচিত্র্যের ভিতর এই সামঞ্জস্য - সর্বশক্তিমান্ স্রষ্টার আদিম ইচ্ছারই অপরিহার্য ফল।


সমালােচনা : 

(১) ডেকার্টের পরবর্তী দার্শনিক স্পিনােজা  দ্রব্য সম্পর্কে ডেকার্টের সংজ্ঞাকেই মেনে নিলেন। কিন্তু তিনি ডেকার্টের মতের সমালােচনা করে বললেন যে স্ব - নির্ভরতাই যদি দ্রব্যের লক্ষণ হয়, তা হলে ঈশ্বরই একমাত্র দ্রব্য। মন এবং জড় দ্রব্য হতে পারে না। কেননা, তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। স্পিনােজার মতে যা সসীম এবং পরনির্ভর তা কখনই দ্রব্য হতে পারে না। 

(২) তাছাড়া, ডেকার্ট মন এবং জড়ের পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করে যে দ্বৈতবাদ ( dualism ) সৃষ্টি করেছেন, তা গ্রহণযােগ্য নয়। দার্শনিক মতবাদ হিসেবে দ্বৈতবাদ ক্রটিপূর্ণ। এই মতবাদের প্রধান ক্রটি হল যে, মন এবং জড় যদি বিজাতীয় দ্রব্য হয়, তাহলে তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া কিভাবে সম্ভব? যদি দুটি দ্রব্য সমজাতীয় হয়, তবেই তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া সম্ভবপর হয়। ডেকার্টের দ্বৈতবাদের ত্রুটি দূর করতে গিয়েই স্পিনােজার অদ্বৈতবাদের ( Monism ) উদ্ভব হয় । 

      (৩) খ্যাতনামা বুদ্ধিবাদী দার্শনিক লাইবনিজ (Leibnitz) ডেকার্ট প্রদত্ত দ্রব্যের সংজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে মানতে চান না। তাঁর মতে স্বনির্ভরতা দ্রব্যের প্রধান লক্ষণ নয়। নিজে নিজেই ক্রিয়াশীল হওয়াটাই দ্রব্যের প্রধান লক্ষণ। তার মতে দ্রব্য অনন্ত সংখ্যক এবং দ্রব্যগুলি ক্রিয়াশীল। এই দ্রব্যকেই তিনি ‘ মনাড ’ ( Monad ) বা চিৎপরমাণু আখ্যা দিয়েছেন। এই দ্রব্যগুলি স্বয়ংশাসিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ। 

(৪) ডেকার্টের দ্রব্যতত্ত্ব সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে না। তার কারণ, দ্রব্যের স্বরূপ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসগুলি তিনি খুঁটিয়ে দেখেননি। দ্রব্যের সঙ্গে গুণের সম্বন্ধ নিয়ে যে সমস্যা তাও তিনি ভালভাবে আলােচনা করেননি। আসলে, এই মতবাদ একটি দার্শনিক সমস্যাকে সরলীকরণের একটি বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত।


(৫) স্পিনােজার বক্তব্য নানা কারণে গ্রহণযােগ্য নয়। তিনি ঈশ্বরকে একমাত্র দ্রব্য বললেও যুক্তির সাহায্যে তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি। স্পিনােজার মতে দ্রব্য হল নিবিশেষ এবং ভেদবর্জিত। এরূপ দ্রব্যের সাহায্যে জগতের বৈচিত্র্য ও পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায় না। তাছাড়া দ্রব্য যদি ভেদ - বর্জিত নিবিশেষ ঐক্য হয়, তাহলে জগত্রে উৎপত্তি কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এর সদুত্তর পিনােজার দর্শনে পাওয়া যায় না। স্পিনােজা বলেন জড় ও মন সমপর্যায়ের। কিন্তু একথা ঠিক নয়। 

(৬) লাইবনিজ বলেন, চিৎপরমাণু বা মনাড হল দ্রব্য। এরা গবাক্ষহীন। একটি চিৎপরমাণ; আর একটির ওপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। ঈশ্বর হলেন  সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎ পরমাণ। তাহলে ঈশ্বর অন্য কোন চিৎপরমাণুর ওপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন? এর উত্তর লাইবনিজ দিতে পারেন না। লাইবনিজের চিৎপরমাণ; বােধগম্য নয়। এরপ বিষয়ের অনুভব সম্ভব নয়। চিৎপরমাণ  যৌগিক জড়বস্তর ব্যাখ্যা সঙ্গতভাবে দিতে পারে না। লাইবনিজ বহুত্ববাদী। তিনি বহুত্ব ঐক্যের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করতে পারেন নি। তাঁর মতবাদ আত্মবিরােধিতায় পরিপূর্ণণ। 

 সুতরাং দেখা যাচ্ছে বুদ্ধিবাদীদের দ্রব্য সম্পর্কে মতবাদ সন্তোষজনক নয়। প্রত্যেকের বক্তব্যের মধ্যেই কোন না কোন এটি আছে।

Read More

Friday 19 February 2021

Philosophy:“চার্বাক মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ" — চার্বাকদের এই উক্তি ব্যাখ্যা ও বিচার করাে।

Leave a Comment

 'Perception is the only source of knowledge' - Explain and examine this statement of the Carvaka.

“চার্বাক মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ" — চার্বাকদের এই উক্তি ব্যাখ্যা ও বিচার করাে‌।

 উত্তর

প্রত্যক্ষ প্রমাণের স্বরূপ: চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব সমগ্র চার্বাকদর্শনের যৌক্তিক ভিত্তি। জ্ঞানের উৎস নির্ণয় করা জ্ঞানতত্ত্বের একটি মৌলিক কাজ। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা, বিশেষ করে নৈয়ায়িকরা যথার্থ জ্ঞানের উৎসরূপে চারটি প্রমাণ স্বীকার করেন। যথা— প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ। জড়বাদী চার্বাকরা কেবলমাত্র প্রত্যক্ষকে যথার্থ জ্ঞানের উৎসরূপে, অর্থাৎ প্রমাণরূপে স্বীকার করেন। এই মতে অনুমান, উপমান ও শব্দ যথার্থ জ্ঞান বা প্রমা উৎপন্ন করতে পারে না। 

প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ । প্রত্যক্ষ দু - প্রকার – মানসপ্রত্যক্ষ ও বাহ্যপ্রত্যক্ষ । সুখ, দুঃখ, বেদনা প্রভৃতি মানস অবস্থার জ্ঞানকে আন্তর বা মানসপ্রত্যক্ষ বলে। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাহ্যবস্তুর জ্ঞান হয়। এই ক্ষেত্রে পাঁচটি ইন্দ্রিয় নিজ নিজ বিষয়ের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয়। এজন্য ইন্দ্রিয়কে প্রমাণ বলা হয়। এই প্রমাণের নাম প্রত্যক্ষ প্রমাণ। প্রত্যক্ষ প্রমাণের দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞান হল প্রত্যক্ষ জ্ঞান। 'ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষজন্য জ্ঞান' প্রত্যক্ষের লক্ষণ। ইন্দ্রিয় এবং অর্থের (বিষয়) সন্নিকর্ষের (সম্বন্ধযুক্ত হওয়ার) ফলে প্রত্যক্ষ জ্ঞান পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ বা প্রমা, এই প্ৰমার করণকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ বলা হয়েছে।

 চার্বাক ছাড়া ভারতীয় দর্শনের অন্য সম্প্রদায়গুলি প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়াও অনুমান, উপমান ও শব্দকে অতিরিক্ত প্রমাণ হিসাবে স্বীকার করেন। চার্বাকমতে অনুমান প্রমাণ নয়। এটি প্রমা উৎপন্ন করতে পারে না। অনুমানের সাহায্যে পাওয়া জ্ঞান নির্দোষ বা সংশয়মুক্ত নয়। তা ছাড়া প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে অনুমান প্রমাণ গঠন করা হয় বলে প্রত্যক্ষ প্রমাণকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ বলা যায়। উপমান ও শব্দ প্রমাণ অনুমানের উপর নির্ভর করে। এইজন্য এই দুটিকে সার্থক প্রমাণ বলা যায় না। সুতরাং অনুমান উপমান ও শব্দ এদের কোনােটি যথার্থ জ্ঞান দিতে পারে না। 


প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ বলার স্বপক্ষে চার্বাকদের যুক্তি :

প্রথমতঃ প্রত্যক্ষের মাধ্যমে বস্তুর অস্তিত্ব সূচিত হয়: প্রত্যক্ষ হল বস্তুর অস্তিত্বসূচক। যে বস্তুকে প্রত্যক্ষ করা যায় না তার অস্তিত্ব আছে — একথা বলা অর্থহীন। যা প্রত্যক্ষলব্ধ তাই বাস্তব এবং যা প্রত্যক্ষের বহির্ভূত তা অবাস্তব। একটি বৃক্ষকে প্রত্যক্ষ করা যায়, তাই বৃক্ষ অস্তিত্বশীল। এজন্য চার্বাকরা প্রত্যক্ষকেই প্রমাণ বলেন।

 দ্বিতীয়তঃ প্রত্যক্ষ জ্ঞান স্পষ্ট ও অভ্রান্ত হয়:  চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান স্পষ্ট ও অভ্রান্ত হয়। প্রত্যক্ষ হল সাক্ষাৎ অনুভব। এখানে ইন্দ্রিয় ও বিষয়ের মধ্যে সরাসরি সংযােগ হয়। এরূপ অভিজ্ঞতা অন্য কোনাে অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান স্পষ্ট, এই স্পষ্টতা অন্য কোনাে প্রমাণের থাকে না। তাই কেবল  প্রত্যক্ষকেই প্রমাণ বলতে হয়। 

তৃতীয়তঃ প্রত্যক্ষ জ্ঞান সংশয়মুক্ত: চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান নিশ্চিত ও সংশয়শূন্য। তাই একমাত্র প্রত্যক্ষের সাহায্যেই আমরা যথার্থ ও নিঃসন্ধিগ্ধ জ্ঞান লাভ করতে পারি। আমরা আমাদের চক্ষু, কর্ণ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যা জানি তাতে কোনােরূপ সংশয় পােষণ করি না বলেই এই জ্ঞান নিঃসন্ধিগ্ধ ও যথার্থ হয়। অনুমান ও শব্দের মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, তা সন্দেহমুক্ত নয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞান এতই স্পষ্ট যে, এর যাথার্থ্য সম্পর্কে কোনাে সংশয়ের অবকাশ থাকে না। 

চতুর্থতঃ প্রত্যক্ষই মূল প্রমাণ: চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ হল সকল প্রমাণের মূল প্রমাণ। প্রত্যক্ষকে ভিত্তি করেই অনুমান, উপমান, শব্দ প্রভৃতি অন্যান্য প্রমাণগুলি গড়ে উঠেছে। তাই প্রত্যক্ষকে শ্রেষ্ঠ ও মূল প্রমাণ বলে স্বীকার করতে হবে। 

পঞ্চমত, প্রত্যক্ষই সর্বাপেক্ষা বলবান প্রমাণ ও প্রত্যক্ষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার প্রমাণের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ও উপজীব্য প্রমাণ। অন্য প্রমাণগুলি যেমন — শব্দ প্রমাণ, অনুমান প্রমাণ প্রভৃতি সম্পর্কে কোনাে সংশয় দেখা দিলে সেই সংশয় দূর করার জন্য প্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ কারণে প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমাণ বলাই সংগত। 

ষষ্ঠত, নির্দোষ ইন্দ্রিয়জাত প্রত্যক্ষ জ্ঞান সঠিক হয় : চার্বাক দার্শনিকদের মতে, প্রত্যক্ষকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনাে মতবিরােধ নেই। অবশ্য মাঝেমধ্যে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ভ্রান্তি দেখা দেয়। কিন্তু সেই ভ্রান্তির কারণ প্রত্যক্ষ নয়। যে দেশে ও কালে বস্তুটি প্রতীয়মান হয়, সেই দেশ ও কালে বস্তুটি নেই বলেই ভ্রান্তি। প্রকৃতপক্ষে, নির্দোষ ইন্দ্রিয়জাত প্রত্যক্ষ জ্ঞান সঠিক, সুপ্রমাণিত ও বিশ্বাসযােগ্য হয়। এই সকল কারণে চার্বাক দার্শনিকগণ প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমাণ হিসাবে স্বীকার করেছেন।

 সমালােচনা: ‘প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ’ — চার্বাকদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নানা আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। 

) চার্বাকদের মতানুযায়ী 'প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ’ — একথা বললে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষকে প্রমাণ হিসাবে বােঝায়। কিন্তু অতীত ও ভবিষ্যৎ ঘটনার প্রত্যক্ষ কখনােই সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে অনুমানের ওপর নির্ভর করতে হয় বা শব্দ প্রমাণের সাহায্য নিতে হয়।

২) চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান আমরা সাক্ষাৎভাবে বা সরাসরি লাভ করি অর্থাৎ এই জ্ঞান পরােক্ষ জ্ঞান নয়। তাই প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ হয়। কিন্তু জৈন মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান সাক্ষাৎ নয় বা স্বনির্ভর নয়। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয়নির্ভর। কাজেই, অনুমানের মতাে প্রত্যক্ষজ্ঞানও অযথার্থ হয়।

৩) চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান আমরা সাক্ষাৎভাবে বা সরাসরি লাভ করি অর্থাৎ এই জ্ঞান পরােক্ষ জ্ঞান নয়। তাই প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ হয়। কিন্তু জৈন মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান সাক্ষাৎ নয় বা স্বনির্ভর নয়। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয়নির্ভর। কাজেই, অনুমানের মতাে প্রত্যক্ষজ্ঞানও অযথার্থ হয়। 

৪) প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ বলা হলে জ্ঞানের পরিসর অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়বে। কেননা, বৈচিত্র্যময় জগতের অধিকাংশ বিষয়ই প্রত্যক্ষের পরিসরের বাইরে অবস্থিত। তাই জগতের বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে হলে প্রত্যক্ষের অতিরিক্ত অনুমান, শব্দ ইত্যাদিকে প্রমাণ হিসাবে স্বীকার করে নিতে হয়। 

৫) যে সকল যুক্তির সাহায্যে চার্বাকগণ অনুমান এবং শব্দকে প্রমাণ হিসাবে অস্বীকার করেছেন, সেই একই যুক্তির সাহায্যে দেখানাে যায় যে প্রত্যক্ষ প্রমাণ নয়। অনুমান ও শব্দের মতাে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রেও অনেক সময় ভ্রান্তি ঘটে। যেমন — রজুতে সর্পভ্রম, শুক্তিতে রজতভ্রম ইত্যাদি। কাজেই, অনুমান প্রভৃতি ভ্রান্ত হয় বলে যদি প্রমাণ না - বলা যায় তাহলে প্রত্যক্ষকেও প্রমাণ বলা যাবে না। 

৬) আধ্যাত্মবাদী ভারতীয় দর্শনের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই অতীন্দ্রিয় বিষয় সম্পর্কিত। এইসব অতীন্দ্রিয় বিষয়ের ( যেমন — ঈশ্বর, আত্মা, পরলােক ইত্যাদি ) ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ সম্ভব নয়। কাজেই, প্রত্যক্ষ সম্ভব না - হওয়ার জন্য এইসব বিষয়ের জ্ঞান দান করার ব্যাপারে ভারতীয় দার্শনিকগণ অনুমান প্রভৃতি অন্যান্য প্রমাণের সাহায্য নিয়েছেন। সুতরাং, প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ বলে স্বীকার করা যায় না।

<<<<<<<<<<>>>>>>>>>
Read More

Thursday 11 February 2021

SAQ | কারণ (CAUSE) Class- XII (wbchse)

Leave a Comment

 কারণ (CAUSE)

Class- XII (wbchse)

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর [(SAQ) ( মান -1 ) ]

১) কার্য কী ও কারণ কী? 

উঃ কার্য ও কারণ দুটি হল জাগতিক ঘটনা। যে ঘটনাটি আগে ঘটে তাকে বলে কারণ এবং কারণ দ্বারা যে ঘটনাটি উৎপন্ন হয় তাকে বলে কার্য।

দার্শনিক মিলের মতে, "যদি একটি ঘটনা শর্তহীনভাবে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে অগ্রবর্তী কোন ঘটনা বা ঘটনার সংমিশ্রণকে অনুসরণ করে, তবে অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনাকে কার্য বলা হবে।"

     দার্শনিক কাৰ্ভেথ রিড - এর মতে, "গুণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের অব্যবহিত, শর্তান্তরহীন, অপরিবর্তনীয়, পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিমাণের দিক থেকে কারণ হলো কার্যের সমান।"


২) কাৰ্ভেৰ্থ রিড কারণেৱ কটি লক্ষণের উল্লেখ করেছেন ও কী? 

উঃ কার্ভেথ রিড কারণের দুটি লক্ষণের উল্লেখ করেছেন --  (১) গুণগত লক্ষণ এবং (২) পরিমাণগত লক্ষণ। 

৩) কারণের গুণগত লক্ষণগুলি লেখাে। 

উঃ গুণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের নিয়ত বা অপরিবর্তনীয়, শর্তান্তরহীন, অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা। (Qualitatively, cause is the invariable, unconditional and immediate antecedent to the effect.)

৪) কারণের পরিমাণগত লক্ষণ লেখাে। 

উঃ  পরিমাণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের সমান। (Quantitatively, the cause is equal to the effect.)

৫) স্থায়ী কারণ কী? 

উঃ যেসব ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব নয়, দার্শনিক মিল তাদের নাম দিয়েছেন স্থায়ী কারণ। যেমন — উত্তাপ, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ইত্যাদি। 

৬) কারণের পরিমাণগত লক্ষণের ভিত্তি কী? 

 উঃ কারণের পরিমাণগত লক্ষণের ভিত্তি হল— (১) জড়ের সংরক্ষণ নীতি এবং (২) শক্তির নিত্যতা নীতি ।

৭) কারণের পরিমাণগত লক্ষণটি কোন দুটি নিয়মের উপর  প্রতিষ্ঠিত ? 

উঃ

(১) ভরের নিত্যতা সূত্র এবং (২) শক্তির নিত্যতা সূত্র । 

৮) কার্যকারণ সম্পর্ক আরােহ অনুমানের কীরূপ ভিত্তি ? 

উঃ আকারগত ভিত্তি । 

৯) কারণ সম্পর্কে লৌকিক অভিমত কী? 

উঃ কারণ সম্পর্কে লৌকিক অভিমত হল — কারণ হল এমন একটি পূর্ববর্তী ঘটনা, যা অন্য একটি ঘটনাকে ঘটতে সাহায্য করে। 

১০) কারণ ও কার্যের মধ্যে কোনাে আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। এ কথা কে বলেন ? 

উঃ ডেভিড হিউম।

১১)  শক্তির নিত্যতা সূত্র কী ? 

উঃ এই জগতে শক্তির পরিমাণ অপরিবর্তিত। যে পরিবর্তন আমরা লক্ষ করি, তা হল শক্তির বিশেষ রূপের পরিবর্তন। যেমন— কয়লার দহনের ফলে তাপ সৃষ্টি হয়। আবার তাপ বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 

Or,

উঃ শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে জগতে মােট শক্তির কোনাে হ্রাসবৃদ্ধি হয় না, শক্তির রূপান্তর ঘটে মাত্র। কারণ - শক্তি কার্য - শক্তিতে রূপান্তর হয় মাত্র।

১২) ভরের নিত্যতা নিয়মটি কী ?

 উঃ ভরের নিত্যতা সূত্র অনুসারে জগতে মােট ভর সর্বদা একই থাকে, বাড়ে না, কমেও না। কারণ থেকে কার্যের রূপান্তর ঘটে, তখন কারণ ও কার্যের আকারগত পরিবর্তন হয় মাত্র। কারণের যা ভর ছিল কার্যেরও সেই ভর থাকবে। তাই পরিমাণের দিক থেকে কারণ ও কার্য সমান। 

১৩) কারণের প্রকৃতি সম্পর্কে কার্ভেথ রিড কী বলেছেন ? 

উঃ গুণের দিক থেকে কারণ হল , কার্যের অব্যবহিত শর্তান্তরহীন অপরিবর্তণীয় পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিমাণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের সমান ।


১৪) কারণ হল সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি ’ - কে বলেছেন ? 

উঃ দার্শনিক মিল কারণকে সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি বলেছেন। 

১৫) শর্ত কী ?  

উঃ শর্ত হল কারণের এমন এক অপরিহার্য অংশ, যা কার্য সৃষ্টি করার পক্ষে একান্ত প্রয়ােজনীয়। 

১৬) শর্ত কত প্রকার ও কী কী?

উঃ শর্ত দুই প্রকার। যথা— সদর্থক শর্ত ও নঞর্থক শর্ত। 

১৭) কারণের সদর্থক শর্ত কাকে বলে ? 

উঃ যে শর্ত উপস্থিত না থাকলে কার্যটি উৎপন্ন হতে পারে না, তাকে সদর্থক শর্ত বলা হয়। অর্থাৎ কোনো কার্যকে সংঘটিত করার জন্য যে সকল শর্তের উপস্থিতি প্রয়োজন, সেই শর্তগুলিকে বলা হয় সদর্থক শর্ত।

 ১৮)  কারণের নঞর্থক শর্ত কাকে বলে ? 

উঃ যে শর্ত উপস্থিত থাকলে কার্য উৎপন্ন হতে পারে না, তাকে নঞর্থক শর্ত বলা হয় । অর্থাৎ কোনো কার্যকে সংঘঠিত করার জন্যে যে সকল শর্তের অনুপস্থিতি প্রয়োজন হয় তাকে বলা হয় নঞর্থক শর্ত।

১৯) কারণ ও শর্তের সম্বন্ধ কী ? 

 উঃ কারণ হল শর্তের সমষ্টি এবং শর্ত হল কারণের অংশ। 

২০) কারণ ও শর্তের মধ্যে পার্থক্য কী? 

উঃ ১) কারণ হলো ঘটনার সংগঠন যা কার্যকে ঘটায়। অপরপক্ষে, শর্ত হল কারণের এমন এক অপরিহার্য অংশ, যা কার্য সৃষ্টির পক্ষে একান্ত প্রয়ােজনীয় । 

২) একটি কার্যের একটি কারণ থাকে। অপরপক্ষে, একটি কার্যের একাধিক শর্ত থাকতে পারে।

২১) 'কারণ’ কথাটি কী কী অর্থে ব্যবহৃত হয়? 

উঃ 'কারণ’ কথাটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা -- (১) আবশ্যিক অর্থে, (২)  পর্যাপ্ত অর্থে, (৩) আবশ্যিক - পর্যাপ্ত অর্থে । 

২২) কারণের আবশ্যিক বা অনিবার্য শর্ত কাকে বলে?

উঃ যে শর্তটি অনুপস্থিত থাকলে আলোচ্য ঘটনাটি ঘটা সম্ভব নয়, সেই শর্তকে উক্ত ঘটনার আবশ্যিক শর্ত বলা হয়। 

Or,

যে শর্ত অনুপস্থিত থাকলে কোনাে কার্য ঘটে না কিন্তু উপস্থিত থাকলে কার্যটি নাও ঘটতে পারে সেই শর্তকে বলা হয় আবশ্যিক শর্ত ।

সাংকেতিক আকার: যদি ক না ঘটে তাহলে খ ঘটে না, কিন্তু ক ঘটলে খ  নাও ঘটতে পারে। সুতরাং, ক হলো খ- এর আবশ্যিক শর্ত।

বাস্তব উদাহরণ: অক্সিজেনের উপস্থিতি হল দহনক্রিয়ার আবশ্যিক শর্ত।

২৩) কারণের পর্যাপ্ত শর্ত কাকে বলে ? 

উঃ যে শর্তটি উপস্থিত থাকলে আলোচ্য ঘটনাটি ঘটবেই, সেই শর্তকে উক্ত ঘটনার পর্যাপ্ত শর্ত বলা হয়।

Or,

কারণের যে শর্ত উপস্থিত থাকলে কার্য ঘটে কিন্তু অনুপস্থিত থাকলে কার্য ঘটতেও পারে সেই শর্তকে বলা হয়  পর্যাপ্ত শর্ত।

সাংকেতিক আকার: যদি ক ঘটে তাহলে খ ঘটে কিন্তু ক না ঘটলেও খ ঘটতে পারে। সুতরাং ক হল খ - এর পর্যাপ্ত শর্ত।

বাস্তব উদাহরণ: বিষপান করা হল মৃত্যু ঘটার পর্যাপ্ত শর্ত।

 ২৪) আবশ্যিক শর্ত ও পর্যাপ্ত শর্তের একটি পার্থক্য দেখাও । 

উঃ যে শর্ত অনুপস্থিত থাকলে কোনাে বিশেষ কার্য ঘটে না এবং উপস্থিত থাকলে কার্যটি নাও ঘটতে পারে, তাকে আবশ্যিক শর্ত বলে। যেমন— অক্সিজেন না থাকলে আগুন জ্বলবে না, আবার অক্সিজেন থাকলেও আগুন নাও জ্বলতে পারে। 

Or,

যে শর্ত উপস্থিত থাকলে কার্য ঘটে ও অনুপস্থিত থাকলেও কার্য ঘটতে পারে, তাকে পর্যাপ্ত শর্ত বলে। যেমন— বিষপান করলেই মৃত্যু হবে, আবার বিষপান না করলেও মৃত্যু হতে পারে। 

২৫) আবশ্যিক শর্তরূপে কারণ কী?

 উঃ কারণ হল এমন ঘটনা, যা না ঘটলে কাৰ্য ঘটে না। 

২৬) পর্যাপ্ত শর্তরূপে কারণ কী? 

উঃ কারণ হল এমন ঘটনা, যা ঘটলে কার্যটি অবশ্যই ঘটবে এবং যা না ঘটলেও কার্যটি ঘটতে পারে। 

২৭) আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত কাকে বলে ? ( What is Necessary and Sufficient Condition ) 

উঃ “ যদি দুটি ঘটনার সম্বন্ধ এমন হয় যে , এদের প্রথমটি না ঘটলে দ্বিতীয়টি ঘটে না এবং প্রথমটি ঘটলেই দ্বিতীয়টি ঘটে, তাহলে প্রথম ঘটনাটিকে দ্বিতীয় ঘটনাটির আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত বলা হবে। ”

 ২৮) যুক্তিবিজ্ঞানী মিল কারণের গুণগত লক্ষণ কী দিয়েছেন ? 

উঃ যুক্তিবিজ্ঞানী মিল কারণের গুণগত লক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন যে , যদি একটি ঘটনা শর্তান্তরহীনভাবে ও অপরিবর্তনীয়ভাবে পূর্ববর্তী কোনাে ঘটনার অনুগমন করে তবে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ ও অনুবর্তী ঘটনাকে কার্য বলা হয় । 

২৯। কার্ভেদ রিড কারণের গুণগত লক্ষণ ও পরিমাণগত লক্ষণ কী দিয়েছেন? 

উঃ কার্ভেদ রিড কারণের গুণগত লক্ষণ ও পরিমাণগত লক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন যে, গুণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের অব্যবহিত, শর্তান্তরহীন, অপরিবর্তনীয় (নিয়ত) পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পরিমাণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের সমান। 

৩০) শর্ত কত প্রকার ও কী কী ?

উঃ শর্ত তিনপ্রকার । যেমন – (১) আবশ্যিক শর্ত , (২) পর্যাপ্ত শর্ত এবং (৩) আবশ্যিক - পর্যাপ্ত শর্ত।

  ৩১) আবশ্যিক শর্তের একটি বাস্তব উদাহরণ দাও।

উঃ আবশ্যিক শর্তের একটি বাস্তব উদাহরণ হল – যদি অক্সিজেন না - থাকে তবে আগুন জ্বলবে না। কিন্তু যদি অক্সিজেন থাকে তবে আগুন নাও জ্বলতে পারে, তাই অক্সিজেন হল আগুন জ্বলার আবশ্যিক শর্ত।

 ৩২) A, B- এর আবশ্যিক শর্ত - এই কথার অর্থ কী? 

উঃ A, B- এর আবশ্যিক শর্ত – এই কথার অর্থ হল – যদি A না - ঘটে তবে B ঘটবে না কিন্তু যদি A ঘটে তবে B নাও ঘটতে পারে। 

৩৩)  কারণকে আবশ্যিক শর্ত অর্থে গ্রহণ করলে কী অসুবিধা ?

 উঃ যদি কারণকে আবশ্যিক শর্ত অর্থে ধরা হয় তবে কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায়, কিন্তু কারণ থেকে কার্য অনুমান করা যায় না।

৩৪) কোন্ দার্শনিক 'কারণ’ শব্দটিকে আবশ্যিক শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন? 

উঃ ডেভিড হিউম 'কারণ' শব্দটি আবশ্যিক শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন।

 ৩৫) পর্যাপ্ত শর্তের একটি বাস্তব উদাহরণ দাও । 

উঃ পর্যাপ্ত শর্তের একটি বাস্তব উদাহরণ হল – যদি বৃষ্টি হয় তবে মাটি অবশ্যই ভিজবে । কিন্তু যদি বৃষ্টি না - হয় তবে মাটি ভিজতে পারে । তাই বৃষ্টিপাত হল মাটি ভেজা কার্যের পর্যাপ্ত শর্ত।

 ৩৬) A, B- এর পর্যাপ্ত শর্ত – এই কথার অর্থ কী? 

উঃ A , B- এর পর্যাপ্ত শর্ত – এই কথার অর্থ হল - যদি A ঘটে তবে B ঘটবে। কিন্তু যদি A না - ঘটে তবে B ঘটতে পারে। 


৩৭) যদি কারণকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করা হয় তবে কী অসুবিধা ?

উঃ 'কারণ' শব্দটিকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করলে কারণ থেকে কার্য অনুমান করা যায়। কিন্তু কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায় না।

 ৩৮) কোন্ দার্শনিক 'কারণ' শব্দটিকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে ব্যবহার করেছেন? 

উঃ দার্শনিক মিল কারণ শব্দটিকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে ব্যবহার করেছেন ।

৩৯) বহুকারণবাদের একটি অসুবিধার উল্লেখ করাে।

 উঃ বহুকারণবাদ স্বীকার করলে কারণ থেকে কার্য সঠিকভাবে অনুমান করা গেলেও কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায় না। 

৪০) বহুকারণবাদ ও বহুকারণ সমন্বয়ের নীতি দুটি উল্লেখ করে। 

উঃ বহুকারণবাদের নীতিটি হল – একটি কার্য অনেকগুলি কারণের দ্বারা উৎপন্ন হয়। বহুকারণ সমন্বয়ের নীতিটি হল – অনেকগুলি কারণ মিলিতভাবে একটি কার্যকে উৎপন্ন করে।  

৪১) বহুকারণবাদ যদি যথার্থ মতবাদ না - হয় তবে এই মতবাদ সৃষ্টির কারণ কী?

 উঃ বহুকারণবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ। এই মতবাদে কার্যকে সামান্য অর্থে এবং কারণকে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা হয়েছে বলে বহুকারণবাদ নামে এক ভ্রান্ত মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। 

৪২) বহুকারণবাদ থেকে মুক্তির উপা য় কী ? 

উঃ বহুকারণবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে যদি কারণ ও কার্য উভয়কে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা হয় ।

৪৩) বিষপান হল মৃত্যুর কারণ। - এই বাক্যটিতে ‘কারণ’ শব্দটি কী শর্ত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ? [ সংসদ নমুনা প্রশ্ন '১৪ ) 

উঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে কারণ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ।

 ৪৪) 'আগুন হল ধোয়ার কারণ'।- এই বাক্যটিতে ‘কারণ' শব্দটি কী শর্ত আর্থে ব্যবহার করা হয়েছে? 

উঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে আবশ্যিক শর্ত অর্থে ‘কারণ' শব্দটি ব্যবহার রা হয়েছে।

 ৪৫) 'মেঘ হল বৃষ্টির কারণ'। - এই বাক্যটিতে ‘কারণ' শব্দটি কী শর্ত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে? 

উঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে আবশ্যিক শর্ত অর্থে ‘ কারণ শব্দটি ব্যবহার রা হয়েছে ।

 ৪৬) 'জলপান তৃষ্ণা  নিবারণের কারণ'। - এই বাক্যটিতে 'কারণ' শব্দটি কী শর্ত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ? 

উঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে আবশ্যিক - পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে ‘কারণ ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ।

 ৪৮) 'ঘর্ষণ উত্তাপের কারণ'।- এই বাক্যে 'কারণ' শব্দটি কী শর্ত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ? 

উঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে 'কারণ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪৯) আবশ্যিক শর্ত হিসাবে কারণের বৈশিষ্ট্য কী?

 উঃ আবশ্যিক শর্ত হিসাবে কারণের বৈশিষ্ট্য হল – কারণ হল কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা। 

৫০) পর্যাপ্ত শর্ত হিসাবে কারণের বৈশিষ্ট্য কী?

 উঃ পর্যাপ্ত শর্ত হিসাবে কারণের বৈশিষ্ট্য হল – কার্য হল কারণের নিয়ত অনুগামী ঘটনা।

৫১) একটি ঘটনার ক - টি পর্যাপ্ত শর্ত থাকতে পারে? 

উঃ একটি ঘটনার একাধিক পর্যাপ্ত শর্ত থাকা সম্ভব।

 ৫২) একটি ঘটনার ক - টি আবশ্যিক শর্ত থাকতে পারে? 

উঃ একটি ঘটনার একটি আবশ্যিক শর্ত থাকতে পারে। 

৫৩) কারণ না থাকলে কার্য ঘটে না — 'কারণ’ কথাটি এখানে কী শর্তে ব্যবহৃত হয়েছে? 

উঃ 'কারণ’ কথাটি এখানে আবশ্যিক শর্তরূপে গ্রহণ করা হয়েছে । 

৫৪) মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল কীরূপ শর্ত? 

উঃ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল আবশ্যিক শর্ত। 

৫৫) আবশ্যিক শর্তের একটি সাংকেতিক উদাহরণ দাও।

উঃ  ‘ ক ’ না ঘটলে ‘ খ ’ ঘটে না। কিন্তু ক ঘটলে খ নাও ঘটতে পারে।

 ৫৬) এককারণবাদ কী ? 

 উঃ যে মতবাদ অনুসারে একটি কার্যের কেবল একটি কারণ থাকে, তাকে এককারণবাদ বলে। 

৫৭) “যদি A ঘটে তবে B নামক ঘটনাটিও ঘটে। ” এখানে A , B- এর কীরূপ শর্ত ? 

উঃ এখানে A, B- এর পর্যাপ্ত শর্ত। 


৫৭) পর্যাপ্ত শর্ত হিসেবে কারণের একটি দৃষ্টান্ত দাও।

 উঃ হৃৎপিণ্ডে গুলিবিদ্ধ হওয়া হল মৃত্যুর পর্যাপ্ত শর্ত। 

৫৮) 'বিষপান মৃত্যুর কারণ’ — এক্ষেত্রে কারণ কথাটি কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? 

 উঃ এক্ষেত্রে 'কারণ’ কথাটি পর্যাপ্ত শর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। 

৫৯) এককারণবাদীরা কারণকে কীরূপ শর্তরূপে গ্রহণ করেন? 

উঃ এককারণবাদীরা কারণকে আবশ্যিক - পর্যাপ্ত শর্তরূপে গ্রহণ করেন।

৬০) বহুকারণবাদীরা কারণকে কীরূপ শর্তরূপে গ্রহণ করেছেন? 

উঃ বহুকারণবাদীরা কারণকে পর্যাপ্ত শর্তরূপে গ্রহণ করেছেন।

 ৬১) বহুকারণবাদীরা কারণ ও কার্যকে কীভাবে গ্রহণ করেন?

 উঃ বহুকারণবাদীরা কারণকে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং কার্যকে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গ্রহণ করেন। 

৬২)বহুকারণবাদ বলতে কী বােঝাে?

 উঃ যে মতবাদ অনুসারে একটি কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণের দ্বারা উৎপন্ন হয় সেই মতবাদকে বলা হয় বহুকারণবাদ।

৬৩) বহুকারণবাদের একটি বাস্তব উদাহরণ দাও। 

উঃ বহুকারণবাদের একটি বাস্তব উদাহরণ হল – মৃত্যু কার্যটি কখনও বিষপানে, কখনও - বা জলে ডুবে, কখনও - বা আগুনে  পুড়ে, কখনও - বা রােগে প্রভৃতি কারণে ঘটতে পারে। তাই মৃত্যু কার্যটির বহুকারণ আছে। 

৬৪) ক, খ - এর পর্যাপ্ত - আবশ্যিক শর্ত —এ কথার অর্থ কী? 

উঃ এর অর্থ হল ‘ ক ’ ঘটলে ‘ খ ’ ঘটবে এবং ক ’ না ঘটলে ‘ খ ’ ও ঘটবে না।

৬৫) আবশ্যিক - পর্যাপ্ত শর্ত হিসেবে কারণের একটি দৃষ্টান্ত দাও।

উঃ ” ভিজে কাঠে অগ্নিসংযােগ ধূম উৎপাদনের আবশ্যিক - পর্যাপ্ত শর্ত।

৬৬) বহুকারণবাদের অর্থ কী? 

উঃ একই কার্যের বহু কারণ থাকতে পারে।

 ৬৭) বহুকারণবাদের সমর্থক কারা? 

উঃ  জন স্টুয়ার্ট মিল ও বেইন বহুকরণবাদের সমর্থক। 

৬৮)  বহুকার সমন্বয় কী? 


উঃ যখন একাধিক কারণ একত্রে মিলিত হয়ে একটি মিশ্র কার্য  উৎপন্ন করে, তখন সেই মিশ্র কার্যের কারণকে বলা হয় বহুকারণ সমন্বয়। যেমন — জল উৎপাদনের জন্য হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয় প্রয়ােজন।

 ৬৯) বহুকারণবাদ এবং বহুকারণ সমন্বয় - এর নীতি দুটি লেখাে।

উঃ বহুকারণবাদ এবং বহুকারণ সমন্বয় - এর নীতি দুটি হল— (১) সমজাতীয় কার্য সংমিশ্রণ এবং (২) ভিন্নজাতীয় কার্য সংমিশ্রণ।

 ৭০)  বহুকারণবাদের একটি অসুবিধা লেখাে।

 উঃ বহুকারণবাদ মেনে নিলে কারণকে কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা বলা যাবে না। 

৭১) বহুকারণবাদের সমস্যা দূর করার একটি উপায় লেখাে। 

উঃ বহুকারণবাদে কারণ ও কার্য উভয়কে সামান্য অথবা বিশেষ অর্থে গ্রহণ করা হলে, বহুকারণবাদের সমস্যা দূর হবে।

 ৭২) কোন্ মতবাদকে কার্যকারণ বিরােধী মতবাদ বলা হয়? 

উঃ বহুকারণবাদকে কার্যকারণ বিরােধী মতবাদ বলা হয়।

Read More

Sunday 10 January 2021

MCQ আরোহ অনুমানের স্বরূপ বা প্রকৃতি

Leave a Comment

 আরোহ অনুমানের স্বরূপ বা প্রকৃতি

বহুবিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর (MCQ)

  ১)  যে উপমাযুক্তির সাদৃশ্যগুলি প্রাসঙ্গিক, অকৃত্রিম, নিজস্ব ধর্মবিশিষ্ট তাকে বলা হয়— 

(a) মন্দ উপমা  (b✓) ভালাে বা উত্তম উপমা  (c) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমান (d) লৌকিক আরােহঅনুমান 

) উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তটি হবে—

(a) সুনিশ্চিত (b ✓)  সম্ভাব্য (c) বৈধ (d) অবৈধ

 ৩) একটি বিশেষ সত্য থেকে অন্য একটি বিশেষ সত্যে উপনীত হওয়া যায়

 (a) অবরােহ অনুমানে  (b) লৌকিক অনুমানে (c✓ ) উপমা অনুমানে (d) কোনােটিই নয় । 

) উপমাযুক্তি উত্তম উপমারূপে গণ্য হয় যখন---

 (a✓) উপমেয় বিষয়গুলি প্রাসঙ্গিক হয়

 (b) উপমেয় বিষয়গুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়

 (c) উপমেয় বিষয়গুলির বাস্তবিকতা থাকে না

 (d) উপমেয় বিষয়গুলি অনুমেয় হয়। 

)  মানুষের মতাে গাছপালার জন্ম, বৃদ্ধি, ক্ষয় ও মৃত্যু আছে। বুদ্ধি আছে। অতএব গাছপালারও বুদ্ধি আছে। এটি একটি—

 (a) লৌকিক আরােহ (b✓) উপমাযুক্তি (c) বৈজ্ঞানিক আরােহ (d) অবরােহ যুক্তি ।

 ৬) পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি— এটি একটি---

 (a✓) মন্দ উপমা (b) ভালাে উপমা (c) যৌক্তিক উপমা (d) কোনােটিই নয় 

৭) উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল— 

 (a) সাদৃশ্যের সংখ্যা (b✓) সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা (c) ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য উত্তরমালা  (d) ব্যক্তিগত সাদৃশ্য।

) অপসারণ, সংজ্ঞপ্রদান ইত্যাদি হল ------- আরােহ অনুমানে অনুসৃত প্রক্রিয়া।

 (a✓) বৈজ্ঞানিক ( b ) সাদৃশ্যমূলক ( c ) লৌকিক ( d ) কারণভিত্তিক ।

 ৯) অবৈজ্ঞানিক আরােহে বিশ্লেষণ করা হয় না------

 (a) সাদৃশ্য (b) পর্যবেক্ষণ (c) পরীক্ষণ (d✓) কার্যকারণ নীতি । 

১০) অবৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানের অপর নাম হল ----

(a) পূর্ণ গণনামূলক আরােহ অনুমান । 

(b✓) অপূর্ণ গণনামূলক আরােহ অনুমান

 (c) সাদৃশ্যমূলক আরােই অনুমান 

(d) বৈসাদৃশ্যমূলক আরােহ অনুমান।

 ১১) অবৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানকে শিশুসুলভ আরােহ অনুমান বলেছেন ---

(a✓) বেকন (b) জর্জ বুল  (c) ভেন (d) কান্ট । 

১২) অপূর্ণ গণনামূলক আরােহ অনুমান বলা হয়— 

(a) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানকে

 (b✓) অবৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানকে

 (c) মিশ্র যুক্তিকে 

(d) নিরপেক্ষ যুক্তিকে।

 ১৩) লৌকিক আরােহ যুক্তির ভিত্তি হল—

 (a) পর্যবেক্ষণমূলক অভিজ্ঞতা (b) পরীক্ষণমূলক অভিজ্ঞতা (c✓) অবাধ অভিজ্ঞতা (d) সবকটি ঠিক

 ১৪) প্রসক্তি সম্বন্ধ থাকে না যে যুক্তিতে তা হল--

 ( a ) অবরােহ যুক্তি (b✓) আরােহ যুক্তি (c) উপমাযুক্তি (d) কোনােটিই নয়।


 ১৫) ‘অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটে---

 (a) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানে (b✓) অবৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানে (c) উপমা যুক্তি তে ( d ) সবকটি ঠিক ।

১৬) আরােহ অনুমান হল— 

( a ) বিশেষ থেকে বিশেষে যাওয়ার প্রক্রিয়া

 ( b ) সামান্য থেকে সামান্যতে যাওয়ার প্রক্রিয়া

 ( c ) সামান্য থেকে বিশেষে যাওয়ার প্রক্রিয়া

 (d✓) বিশেষ থেকে সামান্যতে যাওয়ার প্রক্রিয়া ।

 ১৭) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানের আকারগত ভিত্তি হল—

 (a) পর্যবেক্ষণ (b✓) প্রকৃতির একরূপতা নীতি  (b) অবাধ অভিজ্ঞতা  (d) পরীক্ষণ।

১৮) আরােহ যুক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন 

(a✓) মিল (b) কান্ট  (c) প্লেটো (d) লক। 

১৯) যে যুক্তির সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যায় তা হল---

 (a) অবরােহ যুক্তি (b✓) আরােহ যুক্তি (c) উপমাযুক্তি (d) কোনােটিই নয় । 

২০) যে যুক্তির গতি বিশেষ থেকে সার্বিকের দিকে তা হল ---

(a) অবরােহ যুক্তি (b✓) আরােহ যুক্তি (c) মাধ্যম যুক্তি (d) উপমাযুক্তি । 

২১) সামান্যীকরণ যে যুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তা হল ---

(a) উপমাযুক্তি (b) অবরােহ যুক্তি (c✓) আরােহ যুক্তি (d) সবকটি ঠিক ।

 ২৩) আরােহযুক্তির হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে যে সম্বন্ধ থাকে তা হল ---

 (a✓) আবশ্যিক সম্বন্ধ (b) আপতিক সম্বন্ধ (c) সাময়িক সম্বন্ধ (d) আংশিক সম্বন্ধ । 

২৪) সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যে যুক্তি গঠন করা হয় তা হল ---

(a) অবরােহ যুক্তি (b) আরােহ যুক্তি (✓c) উপমাযুক্তি (d) কোনােটিই নয়।

 ২৫) প্রসক্তিযােগ্যতা যে যুক্তির লক্ষণ তা হল --

(a✓) অবরােহ যুক্তি (b) আরােহ যুক্তি (c) লৌকিক যুক্তি (d) উপমাযুক্তি ।

 ২৬) আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যকে— 

(a) খণ্ডন করে  (b✓) অতিক্রম করে (c) সুনিশ্চিত করে  (d) প্রসক্তিসম্বন্ধে আবদ্ধকরে 

২৭)  আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি হল ---

(a) বিশেষ বচন (b) বিশেষ বিশ্লেষক বচন (c) সামান্য বচন (✓d) সামান্য সংশ্লেষক বচন। 

২৮) আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি হবে---

 (a) নিশ্চিত (✓b) সম্ভাব্য (c) বৈধ (d) অবৈধ ।

২৯) আরােহ অনুমানে সামান্যীকরণের মাধ্যমে যে বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তা হল --

 (a✓) সামান্য সংশ্লেষক বচন  (b) সামান্য বিশ্লেষক বচন (c) বিশেষ সংশ্লেষক বচন (d) বিশেষ বিশ্লেষক বচন। 

৩০) আরােহ অনুমানের সমস্যাটি হল- 

(a) বৈধতা নির্ণয় (b) অবৈধতা নির্ণয় (c) আকারগত সত্যতা নির্ণয় (d✓) সামান্যীকরণ ।

 ৩১) আরােহ অনুমানে যে সমস্যাটি লক্ষ করা যায়— 

(a✓) বিশেষ সত্য থেকে সামান্য সত্যে উপনীত হওয়ার সমস্যা (b) সাদৃশ্যের সংখ্যাল্পতা (c) পর্যবেক্ষণের সমস্যা (d) পরীক্ষণের সমস্যা - এর ক্ষেত্রে। 

৩২) আরােহ অনুমানের সমস্যার সমাধান করা হয়—

 (a) সামান্যীকরণের সাহায্যে  (b) কার্যকারণ নীতির সাহায্যে (c) বিশেষীকরণের সাহায্যে (d✓) কার্যকারণ ও প্রকৃতির একরূপতা নীতির সাহায্যে। 

৩৩) আরােহ অনুমানকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন— 

(✓a) মিল ( b ) বেন্থাম (c) কান্ট ( d ) জর্জ বুল।

 ৩৪) আরােহ অনুমানের সত্যতাটি হল— 

(a✓) বস্তুগত ( b ) আকারগত ( c ) পরিমাণগত ( d ) কোনােটিই নয় । 

৩৫) আরােহঅনুমানে জানা থেকে অজানাতে যাওয়াকে বলা হয়— 

(a) সত্যতা (b) সম্ভাব্যতা (✓c) আরােহমূলক ঝাপ বা লাফ (d) অবরােহমূলক লাফ । 

৩৬) জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে যাওয়ার কারণে উপমাযুক্তি হল একটি- 

(a✓) আরোহ অনুমান (b) অবরোহ অনুমান (c) মাধ্যম অনুমান (d) অমাধ্যম অনুমান।

৩৭) আরোহমূলক লাফ হল---

(a✓) জানা থেকে অজানাতে যাওয়া

(b) অজানা থেকে জানাতে যাওয়া

(c) জানা থেকে জানাতে যাওয়া

(d) অজানা থেকে অজানাতে যাওয়া।


৩৮) আরােহ অনুমান সংক্রান্ত লাফ কথাটি বলেছেন--

 (a) বেইন (b) লক  ( c✓) মিল । (d) কোপি ।

 ৩৯) আরােহ অনুমানের লাফকে অন্ধকারে ঝাপ দেওয়া বলেছেন --

(a) বেইন  (b) কান্ট (c✓) মিল  (d) লক । 

৪০) আরােহ অনুমানের আকারগত ভিত্তি হল— 

 (a) দৃষ্টান্ত গণনা (b) পর্যবেক্ষণ (c) পরীক্ষণ (d✓) প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নীতি 

৪১)  আরােহের বস্তুগত ভিত্তি হল— 

 (a) প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং কার্যকারণ সূত্র (b) পরীক্ষণ এবং সত্যতা যাচাই (c✓) পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ (d) গণনা এবং পরিমাপ । 

৪২) প্রকৃতির একরূপতার অর্থ হল—

 (✓a) একই পরিবেশে একই রকম আচরণ করা (b) একই পরিবেশে বিভিন্ন রকম আচরণ করা (c) বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন রকম আচরণ করা (d) বিভিন্ন পরিবেশে একই রকম আচরণ করা

  ৪৩)  কার্যকারণ নিয়মের অর্থ হল—

 (a) কারণ থাকলে কার্য থাকবে (b✓) কার্য থাকলে কারণ থাকবে (c) কার্য থাকলে কারণ থাকবে না  (d) কার্য ও কারণ একই ঘটনা । 

৪৪)  সম্ভাব্যতার বিষয়টি যুক্ত--

 (a) অবরােহ অনুমানের সঙ্গে (b✓) আরােহ অনুমানের সঙ্গে (c) মাধ্যম অনুমানের সঙ্গে (d) কোনােটিই নয়।

৪৫) আরােহ অনুমানের যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে যে সম্বন্ধ থাকে না তা হল— 

(a) কার্যকারণ সম্বন্ধ (b) যৌক্তিক সম্বন্ধ (c✓) প্রসক্তি সম্বন্ধ (d) বিজ্ঞানসম্মত সম্বন্ধ। 

৪৬) পর্যবেক্ষণ হল --

(a) সকল ঘটনাই প্রত্যক্ষ করা (b) বিশেষ ঘটনা প্রত্যক্ষ করা (c) উদ্দেশ্যহীনভাবে যে - কোনাে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা (d✓) নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে যে - কোনাে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা। 

৪৭) পরীক্ষণ হল— 

(a) প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনাে ঘটনা পর্যবেক্ষণ (✓b) কৃত্রিম পরিবেশে কোনাে ঘটনার পর্যবেক্ষণ (c) ক ও খ উভয়ই ঠিক (d) কোনােটিই নয় ।

৪৮) বিশেষ থেকে সামান্যে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয়—

 (a) বিশেষীকরণ  (b[) সামান্যীকরণ  (c) পরীক্ষণ (d) নিরীক্ষণ। 

৪৯) সামান্য সংশ্লেষক বচন হল সেই বচন --

(a) যার বিধেয় উদ্দেশ্যের সমার্থক 

(b) যার বিধেয়টি স্বীকৃতিমূলক 

(c) যার বিধেয়টি উদ্দেশ্যের পুনরাবৃত্তিমূলক 

(d✓) যার বিধেয়টি উদ্দেশ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতালব্ধ নতুন কিছু তথ্য জ্ঞাপন করে।

 

৫০) আরােহের বস্তুগত ভিত্তি হল—

(a)  পর্যবেক্ষণ (b) পরীক্ষণ  (✓c) পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ (d) প্রকৃতির একরূপতা নীতি। 

৫১) লৌকিক আরােহের আকারগত ভিত্তি হল— 

 (a) দৃষ্টান্ত গণনা (b) পর্যবেক্ষণ (c) পরীক্ষণ (d✓) প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ।

 ৫২) লৌকিক আরােহকে শিশুসুলভ অনুমান বলেছেন --

(a) মিল  (b) হবস  (c) জনসন  (d✓) বেকন।

 ৫৩) লৌকিক আরােহ বিবেচনা করে --

(✓a) সদর্থক দৃষ্টান্ত (b) নঞর্থক দৃষ্টান্ত (c) বিপরীত দৃষ্টান্ত (d) বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত ।

৫৪) যুক্তিবিজ্ঞানী মিল জানিয়েছেন তিন হাজার বছর ধরে ইউরােপীয়রা এমন সিদ্ধান্ত করেছে যে রাজহাঁস সাদা। এমন সিদ্ধান্তে আসার ভিত্তি হল— 

( a ) লৌকিক আরােহ । ( b ) বৈজ্ঞানিক আরােহ ( c ) উপমাযুক্তি ( d ) অবরােহ যুক্তি । 

৫৫) সাপের কামড়ে অনেক লােক মারা গেছে। তাই বলা যায়, সব সাপই বিষধর— এই অনুমানটি— 

(a✓) লৌকিক আরােহের (b) উপমাযুক্তির (c) বৈজ্ঞানিক যুক্তির (d) অবরােহ যুক্তির । 

৫৬) লৌকিক আরোহ অনুমান কে বলা হয় --

 (a) পূর্ণ গণনামূলক আরোহ অনুমান  (b✓) অপূর্ণ গণনামূলক অনুমান (c) সাদৃশ্য অনুমান (d) সাদৃশ্য অনুমান 

 ৫৭) অপূর্ণ গণনামূলক আরােহ অনুমানের আর এক নাম— 

(a✓) অবৈজ্ঞানিক অনুমান  (b) বৈজ্ঞানিক অনুমান    ( c ) লৌকিক অনুমান (d) সাদৃশ্য যুক্তি।

৫৮) কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয় না যে যুক্তিতে তা

 (a) বৈজ্ঞানিক যুক্তি (b) মাধ্যম যুক্তি (c✓) উপমাযুক্তি  (d) অমাধ্যম যুক্তি ।

 ৫৯) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানের লক্ষ্য হল—

 (✓a) কার্যকারণ সম্বন্ধের উপর গুরুত্ব আরােপ (b) লৌকিক অনুমান প্রতিষ্ঠা  (c) উপমাযুক্তির উপর গুরুত্ব আরােপ (d) সবকটি ঠিক । 

৬০) বৈজ্ঞানিক আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি হল— 

(a) বৈধ (b) অবৈধ (c✓) সার্বিক সংশ্লেষক (d) সার্বিক বিশ্লেষক । 

৬১) বৈধতার বিষয়টি যুক্ত— 

(a✓) অবরােহ অনুমানের সঙ্গে (b) আরােহ অনুমানের সঙ্গে (C) লৌকিক অনুমানের সঙ্গে (d) উপমাযুক্তির সঙ্গে। 

৬২) আমরা এক বিশেষ সত্য থেকে আর - একবিশেষ সতত্য উপনীত হই যে আরােহ যুক্তিতে , তার নাম হল— 

 (a) বৈজ্ঞানিক আরােহানুমান। (b) অবৈজ্ঞানিক আরােহানুমান (c✓) উপমাযুক্তি (d) কোনােটিই নয় ।

 ৬৩) উপমাযুক্তি হল—

 (a✓) আরােহ অনুমান  (b) অবরােহ অনুমান (c) পর্যবেক্ষণ (d) পরীক্ষণ ।

 ৬৪)  উপমা যুক্তির ভিত্তি হলো --

 (a) পর্যবেক্ষণ (b) পরীক্ষণ (d) বৈসাদৃশ্য । (c✓) অসম্পূর্ণ সাদৃশ্য।

৬৫) উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা বাড়ে যদি-

 (a✓) সাদৃশ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় 

(b) সাদৃশ্যের সংখ্যা হ্রাস পায় 

(c) সিদ্ধান্ত বিশেষ হয় 

(d) সিদ্ধান্ত সামান্য হয়। 


৬৬) যে উপমাযুক্তির সাদৃশ্যগুলি কৃত্রিম, অপ্রাসঙ্গিক ও আরােপিত ধর্মবিশিষ্ট তাকে বলা হয়— 

 (a) কৃত্রিম উপমা  (b) কোনােটিই নয়  (c✓) মন্দ উপমা (d) উত্তম উপমা।


Read More

Tuesday 29 December 2020

৪২ টি আরোহ যুক্তির দোষ ও বিচার

Leave a Comment

 আরোহমূলক দোষ বা অনুপপত্তি

(INDUCTIVE FALLACIES)

Class - xii ( wbchse)

** নীচের আরোহ যুক্তিগুলি বিচার করো এবং কোন দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো-- (মান 4)

) বদ্ধ পরিষ্কার জল ডেঙ্গির কারণ : 

উঃ

দোষ:  অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ। অথবা, অবৈধ সাম্যানীকরণ দোষ । 

 বিচার:  এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে যে সমস্ত ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিষ্কার জল আছে  অথচ তা ডেঙ্গির কারণ নয়— সেরূপ দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষন করা হয়নি। অথচ এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এই ধরনের দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গুটিকয়েক দৃষ্টান্ত দেখে একপ্রকার সামান্যীকরণ করা হয়েছে বলে একে অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট রূপেও উল্লেখ করা যায়।

২)  সব কাক নিশ্চয়ই কালাে; কারণ, আমরা অন্য কোনাে রঙের কাক দেখিনি। 

উঃ

দোষ:  অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ। 

বিচার : এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কয়েকটি কাককে কালাে বর্ণের হতে দেখে সকল কাক হয় কালাে’ এরূপ সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। কিন্তু, পৃথিবীর সব কাক কালাে কিনা তা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনাে মানুষের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে যে, আমাদের সীমিত অভিজ্ঞতার বাইরে অন্য রঙের কাক থাকতে পারে। কাজেই, কাকের সঙ্গে কালাে রঙের কোনাে অনিবার্য সম্পর্ক আছে কিনা তা নির্ণয় না করে অর্থাৎ, কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় না করে এক্ষেত্রে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। 

৩) কয়েকটি লালফুল গন্ধহীন হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল যে, সব লালফুল গন্ধহীন। 

উঃ

দোষ :  অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ। 

বিচার : এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতায় কয়েকটি লালফুলকে গন্ধহীন হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সব লালফুল গন্ধহীন। কিন্তু, এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। কারণ, এখানে কোনাে বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত বা নঞর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়নি। অর্থাৎ, জগতে গন্ধযুক্ত লালফুলের (যেমন — গােলাপফুল) অস্তিত্ব আছে এটা প্রমাণিত। কাজেই ,সালফুল ও গহীনতার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিচার না করে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।

 ৪) বহু লােক সাপের কামড়ে মারা গেছে। সুতরাং, সব সাপ বিষধর। 

উঃ

দোষ:  অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। 

বিচার : এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, উক্ত যুক্তিতে বেশ কয়েকজন লােকের সাপের কামড়ের ফলে মৃত্যু হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে  সব সাপ বিষধর। কিন্তু, এক্ষেত্রে যে বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত বা নঞর্থক দৃষ্টান্ত থাকতে পারে তাকে পর্যবেক্ষণ না করে সিন্ধান্ত রা হয়েছে। অর্থাৎ, এমন অনেক সাপ আছে যারা বিষধর নয় কিংবা এমন অনেক লােক আছে যারা সাপের কামড়ে মারা যায়নি — এই নঞর্থক দিককে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। তা ছাড়া পৃথিবীর সব সাপ বিষধর কিনা তা কােনাে মানুষের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে তা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

৫) মানসিক হাসপাতালের অধিকাংশ রােগী উচ্চশিক্ষিত। সুতরাং, উচ্চশিক্ষাই মানসিক রােগের কারণ। 

উঃ

দোষ :  অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।

 বিচার: এখানে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, আলােচ্য যুক্তিতে কোনাে মানসিক হাসপাতালের কয়েকজন রােগীকে উচ্চশিক্ষিত হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে উচ্চশিক্ষাই মানসিক রােগের কারণ। কিন্তু, এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। কারণ, এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে মানসিক রােগের কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কিনা তা নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়নি। কেবলমাত্র কয়েকজন মানসিক রােগীকে উচ্চশিক্ষিত হতে দেখে এরূপ সার্বিক সিদ্ধান্ত করার জন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

৬) টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ, টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ বহন করে নিয়ে আসে। 

উঃ

দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।

বিচার: এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ বহন করে নিয়ে আসে এই দিককে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে টেলিগ্রাম অশুভ। কিন্তু, সব ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম অশুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে কিনা এই নঞর্থক দিকটিকে বিবেচনা না করে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে, যা কার্যকারণ সম্পর্ক বহির্ভূত। এজন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।

৭) আজকালকার শিক্ষিত মহিলারা গৃহকর্ম করতে চান না। সুতরাং, নারী শিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক নয়। 

উঃ

দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।

বিচার: যুক্তিটিতে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতায় কয়েকজন শিক্ষিতা মহিলাকে গৃহকর্মে বিমুখ হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে নারী শিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু, পৃথিবীর সব উচ্চশিক্ষিত মহিলা গৃহকর্মে বিমুখ কিনা তা কোনাে ব্যক্তির পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে বিশেষ কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে তা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।

৮) দিনের পরে রাত্রি আসে, সুতরাং দিন রাত্রির কারণ।

উঃ

দোষ: সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ।

বিচার:  যুক্তিটি সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষে দুষ্ট। আমরা জানি একটি কারণের একাধিক কার্য থাকতে পারে।  যখন এই সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা হয় তখন যুক্তিটিতে যে দোষ ঘটে তাকে সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটে। আলােচ্য যুক্তিতে দিনের পর রাত আসে বলে দিনকে রাত্রির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু, দিন এবং রাত্রি কোনােটিই কারাের কারণ নয়, উভয় ঘটনাই হল সহকার্য। উভয়ের কারণ হল পৃথিবীর আহ্নিক গতি। কাজেই, দিন ও রাত্রির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এই উভয় ঘটনাই পৃথিবীর আহ্নিক গতিরূপ কারণের সহকার্য। কাজেই, যুক্তিটিতে দিন রাত্রির অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও শর্তহীন অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। এজন্য যুক্তিটিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে।

 ৯) শীতের পরেই বসন্ত আসে। কাজেই শীত হলো বসন্তের কারণ।

উঃ

দোষ: সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ বলে মনে করার দোষ।

বিচার: প্রদত্ত যুক্তিটিতে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগ করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে শীত হল বসন্তের কারণ। কেননা, শীত নিয়তই বসন্তের পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু যুক্তিটি সিদ্ধ নয়। শীত এবং বসন্ত উভয়ই পৃথিবীর বার্ষিক গতির ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ শীত ও বসন্তের শর্ত হলাে পৃথিবীর বার্ষিক গতি। সুতরাং শীত ও বসন্ত সহকার্য। সুতরাং এই যুক্তিটিতে সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে এখানে সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ গণ্য করা জনিত দোষ ঘটেছে। 

১০) জোয়ারের পর ভাটা আসে। অতএব জোয়ার হল ভাটার কারণ। 

উঃ

দোষ: সহকার্যের কোনাে একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ । 

বিচার: আলােচ্য যুক্তিতে জোয়ারকে ভাটার কারণ বলা হয়েছে। যেহেতু জোয়ার হল ভাটার নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা। কিন্তু, কারণকে কেবল কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হলেই হবে না, তাকে শর্তহীন হতে হবে। জোয়ার এবং ভাটা এই দুটি ঘটনা শর্তহীন নয়। উভয় ঘটনাই চন্দ্রের আকর্ষণজনিত কারণের সহকার্য। অর্থাৎ, চন্দ্রের আকর্ষণের তারতম্যের জন্য পৃথিবীতে জোয়ার এবং ভাটা হয়। সুতরাং, জোয়ার এবং ভাটা ঘটনাদুটির কোনােটি কারাের কারণ নয়। উভয়ই একই কারণের সহকার্য। এ কারণে যুক্তিটিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে। 

১১) তাপমান যন্ত্রের পারদের অবনমন নিকটবর্তী হ্রদের জল জমে যাওয়ার কারণ। 

উঃ

দোষ: সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ 

বিচার: উক্ত যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, তাপমান যন্ত্রের পারদ নীচে নেমে যাওয়া এবং হ্রদের জল জমে যাওয়া— এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। উভয় ঘটনাই একটি কারণের সহকার্য। সেই কারণটি হল তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিতে নেমে যাওয়া। অর্থাৎ, তাপমাত্রা 0 ° বা তার নীচে নেমে গেলে পারদের অবনমন ঘটে আবার জল জমে যায়। সুতরাং, এক্ষেত্রে একটিকে অন্যটির কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।

 ১২) বিদ্যুৎ হল বজ্রনিনাদের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা। অতএব বিদ্যুৎ হল বজ্রনিনাদের কারণ। 

উঃ

দোষ:  সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, বিদ্যুৎ এবং মেঘ গর্জনের মধ্যে কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। উভয় ঘটনাই একটি কারণের সহকার্য। কারণটি হল দুটি বিপরীতমুখী মেঘের সংঘর্ষ। মেঘের সঙ্গে মেঘের সংঘর্ষ হলে বিদ্যুৎ চমক দেখা যায় এবং বজ্রপাতের শব্দও শােনা যায়। সুতরাং, দুটি ঘটনার কেউই অন্যটির কারণ নয়। কাজেই, বিদ্যুৎকে মেঘ গর্জনের কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে সহকার্যকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ ঘটেছে।

১৩) টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ নিয়ে আসে।

উঃ

দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।

বিচার: এই আরােহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ আলােচ্য যুক্তিটিতে  কতকগুলি ক্ষেত্রে টেলিগ্রামকে দুঃসংবাদ বহন করে আনতে দেখে   সামান্যীকরণ করা হয়েছে যে, টেলিগ্রাম মাত্রই অশুভ। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম শুভ সংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে সেই সব বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ না করাই আলােচ্য যুক্তিটির সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত বলে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলি উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র সদর্থক দৃষ্টান্তগুলি পর্যবেক্ষণ করে কোনােরূপ কার্য - কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কারের চেষ্টা না করে অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই দোষ ঘটে। 

১৪)  রাশিয়াতে যখন গমের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন কলকাতা শহরে জন্মহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধি হল কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধির কারণ। 

উঃ

দোষ : অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের ফলে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, যুক্তিতে রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধিকে কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধির কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। আসলে রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধি এবং কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধি এই দুটি ঘটনার মধ্যে সহপরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও সেই সহপরিবর্তন প্রাসঙ্গিক নয়। কাজেই, এক্ষেত্রে একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে ।

১৫) গতবছর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ। 

উঃ

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, যুক্তিটিতে দেবতার রােষকে দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, দুর্ভিক্ষের সঙ্গে দেবতার রােষের কোনােরূপ কার্যকারণ সম্বন্ধ নেই। এক্ষেত্রে দেবতার রােষ হল একটি অবান্তর বিষয়। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিতে দেবতার  রুষ্ট হওয়াকে দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কাজেই, প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে কুসংস্কারবশত একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। 

১৬) তুমি সূর্যগ্রহণের সময় খেয়েছ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছ। সুতরাং, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া তােমার অসুস্থতার কারণ। 

উঃ

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াকেই অসুস্থতার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়ার সঙ্গে অসুস্থতার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। অসুস্থতা প্রসঙ্গে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। অসুস্থতার প্রকৃত কারণ হল ভালাে খাদ্যবস্তু গ্রহণ না করা। অর্থাৎ, সূর্যগ্রহণ না হলেও দূষিত খাদ্যবস্তু খেলে অসুস্থ হতে হত। কাজেই, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াকে অসুস্থতার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। [উল্লেখ্য, উক্ত যুক্তিতে কাকতালীয় দোযেরও প্রয়ােগ করা যায়] 

১৭) কোনাে ডাক্তার তিনজন রােগীকে তিনরকম ওষুধ গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বললেন এবং কিছুদিন পর তারা প্রত্যেকেই রােগমুক্ত হল। কাজেই, সিদ্ধান্ত করা হল গরম জল খাওয়াই তাদের রােগমুক্তির কারণ। 

উঃ

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা,  এখানে গরম জল খাওয়াকেই রােগমুক্তির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু, রােগমুক্তির ক্ষেত্রে গরম জল খাওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। এক্ষেত্রে আসল কারণটি হল রােগের জন্য নির্ধারিত ওষুধ। কাজেই, যেটি প্রকৃত কারণ নয় সেই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ হিসাবে  গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে। 

১৮) কোনাে বেঁটে লােককে ভালাে বক্তৃতা দিতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল বেঁটে হওয়াই তার ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কারণ।

উঃ

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে লােকটির বেঁটে হওয়াকে ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, বেঁটে হওয়ার সঙ্গে ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার আসল কারণ হল বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান থাকা। এক্ষেত্রে বেঁটে প্রকৃতির হওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। কাজেই, যুক্তিটিতে একটি অবান্তর বিষয়কে কারণরূপে গণ্য করার জন্য উক্ত দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে। 

১৯) পরীক্ষার আগে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি হল ছাত্রটির পরীক্ষার অকৃতকার্যতার কারণ।

উঃ

 দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতিকে ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, পরীক্ষার পূর্বে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। এক্ষেত্রে ছাত্রটির শরীর সুস্থ না থাকা, মনােযােগ দিয়ে পড়াশুনা না করা, প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া, সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না লেখা, উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া, গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি প্রভৃতি একাধিক আবশ্যিক শর্ত একত্রিতভাবে ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্য নামক কার্যটি সংঘটিত করে। সুতরাং, শুধুমাত্র গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতিকে এক্ষেত্রে কারণ বলার জন্য যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

২০) বারুদে অগ্নিসংযােগ করতেই বিস্ফোরণ হল। সুতরাং, বারুদে অগ্নিসংযােগ হল বিস্ফোরণের কারণ। 

উঃ

দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে  বারুদে অগ্নিসংযােগকে বিস্ফোরণের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে । কিন্তু, বারুদে অগ্নিসংযােগ করা বিস্ফোরণ ঘটার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। বিস্ফোরণরূপ কার্যের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ বারুদ, শুষ্ক বারুদ, ঠাসা বারুদ, বারুদে  অগ্নিসংযােগ প্রভৃতির প্রয়ােজন হয়। এই শর্তগুলি একত্রিত হয়ে বিস্ফোরণরূপ কার্য সংঘটিত করে। কাজেই, এখানে  কেবলমাত্র অগ্নিসংযােগকে কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। 

২১) বহ্নি না থাকলে ধূম থাকে না । সুতরাং , বহ্নি হল ধূমের কারণ।

উঃ

দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ 

 বিচার: যুক্তিটিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, বহ্নি না থাকলে ধূম হয় না ঠিকই কিন্তু বহ্নি থাকলেই ধূম হবে এমন কথা বলা যায় না। যেমন — বৈদ্যুতিক হিটারে উত্তপ্ত লৌহপিন্ডে বহ্নি থাকে অথচ ধূম থাকে না। অর্থাৎ, বহ্নি থাকা ধূমের একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। ধূম সৃষ্টির জন্য বহ্নি ছাড়াও ভিজে কাঠ বা জ্বালানির প্রয়ােজন হয়। ভিজে কাঠে বহ্নিসংযােগ করলে তবেই ধূম নির্গত হয়। কাজেই, বহ্নিকে ধূমের কারণ বললে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণরূপে গণ্য করা দোষ দেখা দেবে। 

২২) পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণই হল সুস্বাস্থ্যের কারণ।

উঃ

 দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করার দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণকেই সুস্বাস্থ্যের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ সুস্বাস্থ্যের একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। অনেকগুলি উপাদান বা আবশ্যিক শর্তের সমাবেশের ফলে একজন ব্যক্তি সুস্বাস্থ্য অর্জনে সক্ষম হয়। যেমন— শরীর চর্চা, প্রয়ােজনীয় বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত পরিশ্রম, দূষণমুক্ত পরিবেশে বাস, শরীরে রােগের অভাব প্রভৃতি ব্যাপার একত্রে কোনাে মানুষকে সুস্থ ও সবল করে তােলে। কাজেই, এখানে কেবল পুষ্টিকর খাদ্যকে সুস্বাস্থ্যের কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। 

২৩) আকাশে ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক পরেই রাধার মৃত্যু হল। সুতরাং আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবই রাজার মৃত্যুর কারণ।

উঃ

দোষ: কাকতালীয় দোষ।

ব্যাখ্যা: এটি আরােহ অনুমান এর দৃষ্টান্ত। এখানে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কারণ আমরা জানি, কারণ হলাে কার্যের শর্তহীন অপরিবর্তনীয় নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু যে - কোনাে পূর্ববর্তী ঘটনা কারণ নয়। যে - কোনাে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বললে যুক্তিতে যে দোষ ঘটে তাকে কাকতালীয় দোষ বলে। উপরিউক্ত উদাহরণটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে কেননা উদাহরণটিতে পূর্ববর্তী ঘটনা (ধূমকেতুর আবির্ভাব) -কে কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনা (রাজার মৃত্যু) -কে কার্য বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজার মৃত্যুর জন্য ধূমকেতুর আবির্ভাব কারণ হতে পারে না। ধূমকেতুর আবির্ভাব ও রাজার মৃত্যু এদের মধ্যে অ - নিয়ত সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া এক্ষেত্রে রাজার মৃত্যু অন্য কারণে ঘটতে পারে যদিও ঘটনাক্রমে এখানে ধূমকেতুর আবির্ভাব এবং পরবর্তীতে রাজার মৃত্যু পূর্বাপর ঘটেছে। কিন্তু তাই বলে এদেরকে কার্য - কারণ বলা ঠিক নয়। 

বিকল্প

দোষ: কাকতালীয় দোষ

বিচার : উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, আলােচ্য যুক্তিতে ধূমকেতুর আবির্ভাবকে রাজার মৃত্যুর কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। যেহেতু ধুমকেতুর আবির্ভাব রাজার মৃত্যর অগ্রবর্তী ঘটনা। কিন্তু, যে - কোনাে অগ্রবর্তী ঘটনা কারণ নয়। কারণ হবে কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা। এক্ষেত্রে ধূমকেতুর আবির্ভাব রাজার মৃত্যুর অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও তা নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, যখনই আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাব হয়েছে তারপরই একজন রাজার মৃত্যু হয়েছে এমন নয়। কাজেই এখানে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

২৪) নতুন পােশাকটি পরার পরই তার জ্বর হল। সুতরাং, নতুন পােশাকটি পরাই তার জ্বরের কারণ। 

উঃ 

দোষ: কাকতালীয় দোষ

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের ফলে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে নতুন পােশাক পরা জ্বরের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, বিশেষ কোনাে ক্ষেত্রে নতুন পােশাক পরার পর কারাে জ্বর হলেও নতুন পােশাক পরলেই সব সময় জ্বর হয় না। কাজেই, এখানে অনিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য অনুমানটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। 

২৫) শান্তিবাদীরা মিছিল করার পরই পশ্চিমবঙ্গে খরা শুরু হল। কাজেই, শান্তিবাদীদের মিছিল করাই খরার কারণ। 

উঃ 

দোষ: কাকতালীয় দোষ

বিচার: যুক্তিটিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে বলে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে শান্তিবাদীদের মিছিলকে পশ্চিমবঙ্গের খরার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, ঘটনাদুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়নি। এক্ষেত্রে শান্তিবাদীদের মিছিল করা পশ্চিমবঙ্গের খরা সৃষ্টি হওয়ার অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। কিন্তু, কারণ হতে গেলে কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে, এ কারণে যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে।

২৬) মাদুলি ধারণ করার ঠিক পরেই তার রােগ সারল। সুতরাং, মাদুলি ধারণ তার রােগ নিরাময়ের কারণ। 

উঃ

দোষ: কাকতালীয় দোষ। / অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ

বিচার:  উক্ত আরােহ যুক্তিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে মাদুলি ধারণ করাকে রােগ নিরাময়ের কারণরূপে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, এরূপ অনুমান ভ্রান্ত। কারণকে কেবল অগ্রবর্তী ঘটনা হলে চলবে না, তাকে নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে মাদুলি ধারণের পর রােগ নিরাময় হলেও সবক্ষেত্রে তা হয়। অর্থাৎ, মাদুলি ধারণ সবক্ষেত্রে রােগ নিরাময়ের অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। এক্ষেত্রে অসতর্কভাবে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে। [এক্ষেত্রে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষও করা যেতে পারে।] 

২৭) নববধূ গৃহে প্রবেশ করার পরই শাশুড়ির মৃত্যু হল। সুতরাং, নববধূর আগমনই শাশুড়ির মৃত্যুর কারণ। 

উঃ

দোষ: কাকতালীয় দোষ

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। আলােচ্য যুক্তিতে নববধূর গৃহে আগমনকে শাশুড়ির মৃত্যুর কারণরূপে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, নববধূর গৃহে আগমন শাশুড়ির মৃত্যুর অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে নববধূর গৃহে প্রবেশের পর শাশুড়ির মৃত্যু ঘটলেও সবক্ষেত্রে তা হয় না। কাজেই, কুসংস্কার বসতঃ এবং অসতর্কভাবে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে।

২৮) উপনিবেশগুলি ফলের মতাে। কারণ , ফল পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি উপনিবেশগুলি সমৃদ্ধ হলে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

উঃ 

দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।

বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির উদাহরণ। কেননা, এক্ষেত্রে উপনিবেশ ও ফলের মধ্যে একটি অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। ফল প্রাকৃতিক নিয়মে নিজ থেকেই পেকে যায় এবং গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু, উপনিবেশগুলি চেষ্টা করে সমৃদ্ধ হয় অর্থাৎ, পরিপক্ক হয় এবং দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কাজেই, দুটি বিষয়ের পরিপক্কতা এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। অথচ এই যুক্তিতে সেই পার্থক্য সরিয়ে দিয়ে ফল এবং উপনিবেশদুটিকে একজাতীয় বলা হয়েছে। এজন্য এটি মন্দ উপমাযুক্তি হিসাবে গণ্য হবে। 

২৯) প্রায় জলে অবগাহন কোরাে না; কেননা, এক টুকরাে দড়ির মতাে শরীরেরও পচনের আশঙ্কা আছে। 

উঃ 

দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।

বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত। এই যুক্তিতে দড়ির সঙ্গে মানুষের শরীরের যে সাদৃশ্য উল্লেখ করা হয়েছে তা অপ্রাসঙ্গিক। কেননা, দড়ি জড়পদার্থ। তার সঙ্গে জলের সম্পর্ক এক ধরনের। আর দেহে যখন চেতনা থাকে তখন চেতনাযুক্ত দেহের সঙ্গে জলের সম্পর্ক অন্য ধরনের। অর্থাৎ, জলে ভেজা দড়ি এবং জলে ভেজা দেহ — দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। অথচ যুক্তিটিতে এই পার্থক্য সরিয়ে দিয়ে জলে ভেজা দড়ি এবং জলে ভেজা দেহের পরিণাম অভিন্ন বলে অনুমান করা হয়েছে। সুতরাং, এটি মন্দ উপমাযুক্তি হিসাবে গণ্য হবে। 

৩০) একটি দেশের চরম পরিণতি হল ধ্বংস, কারণ, দেশ হল একপ্রকার জীবদেহ এবং জীবদেহের বার্ধক্য ও মৃত্যু আছে। 

উঃ 

দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।

বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির উদাহরণ। কারণ, এক্ষেত্রে দেশ ও জীবদেহের মধ্যে উৎপত্তি ও বৃদ্ধির সাদৃশ্যটি প্রকৃত সাদৃশ্য নয়। জীবদেহের মধ্যে প্রাণ আছে বলে তার যে অর্থে বৃদ্ধির কথা বলা হয় সেই অর্থে দেশের বৃদ্ধির কথা বলা যায় না। বস্তুত দেশ ও জীবদেহের মধ্যে বৈসাদৃশ্যমূলক ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের সংখ্যাই অধিক। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক সাদৃশ্য না থাকায় দেশের ধ্বংস জীবদেহের ধ্বংসের মতাে একইরকমভাবে ঘটে — এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। তাই যুক্তিটি মন্দ উপমাযুক্তি দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

৩১) কোনাে দেশের রাজধানী হল দেশের হৃৎপিণ্ডের মতাে। কাজেই, রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি দেশের পক্ষে ক্ষতিকর।

 উঃ 

দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।

বিচার: উক্ত যুক্তিটি ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষে দুষ্ট। এখানে দেশের রাজধানীর সঙ্গে দেহের হৃৎপিণ্ডের তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে তুলনা বা সাদৃশ্যটি আলংকারিক তুলনা বলে গণ্য করা হয়। আর আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য অনুমান করা যুক্তিযুক্ত নয়। বস্তুত হৃৎপিণ্ডের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধির কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাই এখানে মন্দ উপমাযুক্তি দোষ ঘটেছে।

৩২) নতুন শাড়িটি পরার পরই রমার জ্বর হল । কাজেই, নতুন শাড়িটিই হল রমার জ্বরের কারণ। 

উঃ 

দোষ: কাকতালীয় দোষ 

বিচার: যুক্তিটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে নতুন শাড়িকেই জ্বরের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং কার্যকারণ সম্পর্ক বহির্ভূত। এক্ষেত্রে নতুন শাড়ি পরা জ্বরের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, রমা যখনই শাড়ি পরে তখনই জ্বর হয় এমন নয়। কোনাে ঘটনাকে কারণ হতে গেলে তাকে কার্যের নিয়ত, শর্তান্তরহীন অব্যবহিত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে। এক্ষেত্রে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।

৩৩)  গ্রীষ্মের পর বর্ষা আসে, অতএব গ্রীষ্মকাল হল বর্ষাকালের কারণ। 

উঃ 

দোষঃ সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করার দোষ।

বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মের পরে বর্ষা আসে বলে গ্রীষ্মকালকে বর্ষাকালের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, কারণ হবে কার্যের নিয়ত শর্তান্তরহীন অগ্রবর্তী ঘটনা। এখানে গ্রীষ্মকাল - বর্ষাকালের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও শর্তান্তরহীন অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। উভয় ঘটনাই হল কার্য। উভয়ের কারণ হল পৃথিবীর বার্ষিক গতি। বার্ষিক গতির জন্যই বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ, গ্রীষ্ম ও বর্ষার আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং, এক্ষেত্রে গ্রীষ্মকে বর্ষার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।

 ৩৪) হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণ হল ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধের কারণ।

 উঃ 

দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।

বিচার: উক্ত যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, কারণ হবে একাধিক সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি। এক্ষেত্রে হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণকেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ যুদ্ধের একমাত্র কারণ নয়, কারণের একটি অংশমাত্র। এক্ষেত্রে হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণ করার পাশাপাশি আরও অন্যান্য শর্ত যেমন— ইউরােপে অর্থনৈতিক সংকট, উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা, জার্মান জাতির জাতীয়তাবােধ প্রভৃতি একত্রিত হয়ে যুদ্ধ সংঘটিত করেছে। কাজেই, এক্ষেত্রে একটি শর্তকে সমগ্র কারণ বলে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।

 ৩৫) বুদ্ধিজীবীরা মিছিল করার পরে পশ্চিমবঙ্গে খরা সৃষ্টি হল। সুতরাং, বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করাই হল পশ্চিমবঙ্গে খরা সৃষ্টির কারণ। 

উঃ

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ। / কাকতালীয় দোষ।

 বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করাকেই খরা সৃষ্টির কারণ বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করার সঙ্গে খরা সৃষ্টি হওয়ার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এরূপ সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

৩৬) যকৃৎ থেকে যেমন পিত্তরস, পাকস্থলী থেকে অম্লরস ক্ষরিত হয়, তেমনি মস্তিষ্ক থেকে চিন্তা নিঃসৃত হয়। 

উঃ 

দোষ: মন্দ উপমাযুক্তি বা দুষ্টু উপমা যুক্তি বা ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।

বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত। কেননা, এক্ষেত্রে হেতুবাক্যে উল্লিখিত ধর্মগুলি সিদ্ধান্তে অনুমিত ধর্ম প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। এক্ষেত্রে হেতুবাক্যে উল্লিখিত ধর্মগুলি অর্থাৎ পিত্তরস, অম্নরস হল জড়ধর্ম এবং জড়ধর্মী যকৃৎ ও পাকস্থলী থেকে ওইসব ধর্ম নিঃসৃত হতে পারে। কিন্তু, চিন্তা হল অজড়ধর্ম, যা জড়ধর্মী মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হতে পারে না। কাজেই, এখানে অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গঠিত হয়েছে বলে যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট হয়েছে।

 ৩৭) কলকাতার বাৎসরিক মৃত্যুর হার দিল্লির চেয়ে বেশি। অতএব কলকাতা দিল্লির চেয়ে অস্বাস্থ্যকর স্থান। 

উঃ 

দোষ:  অ-পর্যবেক্ষণ দোষ /অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ/

বিচার: উক্ত যুক্তিতে অ - পর্যবেক্ষণ দোষ ঘটেছে। কেননা, বাৎসরিক মৃত্যুর হার বেশি দেখে কলকাতাকে দিল্লির চেয়ে অস্বাস্থ্যকর স্থান বলা হয়েছে। কিন্তু, এখানে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ না করে কেবল কিছু সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। দিল্লির তুলনায় কলকাতায় বাৎসরিক মৃত্যুর হার বেশি এ কথা সত্য, কিন্তু দিল্লির তুলনায় কলকাতায় জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি ফলে মৃত্যুর হারও বেশি— এই নঞর্থকদিকটিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। 

৩৮) পেঁচার ডাক নিশ্চয়ই অশুভ। কেননা, পেঁচা ডাকার ঠিক পরেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।

 উঃ 

দোষ: কাকতালীয় দোষ।

বিচার: যুক্তিটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে পেঁচার ডাক অগ্নিকাণ্ডের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, যখনই অগ্নিকাণ্ড ঘটে তখনই পেঁচা ডাকে এমন নয়। কাজেই, এখানে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।

 ৩৯) রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে, এটা তার জানাই ছিল। কারণ, পরীক্ষা দিতে যাবার সময় সে রাস্তার একটি কালাে বিড়াল দেখেছিল। 

উঃ 

দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ 

বিচার: উক্তি যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে। কেননা, পরীক্ষায় পাশ করা বা ফেল করার সঙ্গে রাস্তায় কালাে বিড়াল দেখার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। পরীক্ষায় পাশ করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ব্যাপার হল ভালাে প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু, এখানে একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। 


৪০)  ভােরের স্বপ্ন সত্য হয়।

উঃ 

দোষ:  অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ। 

বিচার: যুক্তিটি অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কেননা, এখানে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভােরের স্বপ্ন সত্য হতে দেখে সেই সীমিত সংখ্যক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে ভােরের স্বপ্নমাত্রই সত্য হয়। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে দেখা যাবে, ভােরের স্বপ্ন কখনও সত্য হয় আবার কখনও মিথ্যা হয়। কাজেই, কার্যকারণ সম্পর্ক নিরূপণ না করে কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটিতে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে ।

৪১) কুকুরেরাও মানুষের মতাে প্রাণী। সুতরাং কুকুরেরাও মানুষের মতাে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন: 

উঃ

দোষ:  মন্দ - উপমার দোষ।

 বিচার: এই আরােহী যুক্তিটি মন্দ - উপমার দোষে দুষ্ট। কারন, এখানে মানুষের সঙ্গে কুকুরের তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনাে উপমা রচনার ক্ষেত্রে দুটি সমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত, কোনাে বিজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত নয়। তাছাড়া কুকুর এবং মানুষের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে, সেগুলি উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই মানুষ এবং একটি ইতর প্রাণীর মধ্যে উপমা সৃষ্টি করায় যুক্তিটি  এরূপ দোষে দুষ্ট হয়েছে।

৪২) পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হল ভালাে ফসল হওয়ার কারণ। 

উঃ

দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ

বিচার : উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ভালাে ফসল হওয়ার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। ভালাে ফসল হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উর্বর মৃত্তিকা, উন্নত মানের বীজ, কীটনাশক, রাসায়নিক সার প্রভৃতির প্রয়ােজন হয়। এগুলি একত্রিতভাবে ভালাে ফসল উৎপন্ন করে। কাজেই, এই শর্তগুলির মধ্যে কেবলমাত্র একটিকে অর্থাৎ, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতকে ভালাে ফসল হওয়ার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। 


Read More

Saturday 26 December 2020

চার্বাক দর্শনে অনুমান প্রমাণ নয় কেন? সমালোচনাসহ লেখ।

Leave a Comment

 অনুমান কাকে বলে? চার্বাক দর্শনে অনুমান প্রমাণ নয় কেন? এই মতক কি গ্রহণ যোগ্য? উত্তর এর সমর্থনে যুক্তি দাও।

উঃ

অনুমান: জ্ঞাত বিষয় থেকে ব্যাপ্তিজ্ঞানের ভিত্তিতে অজ্ঞাত নতুন বিষয়ের জ্ঞানকে অনুমান বলে। যে - কোনাে অনুমান প্রক্রিয়ায় তিনটি বিষয় থাকে — পক্ষ, সাধ্য ও হেতু। অনুমানের ক্ষেত্রে যে বিষয়টির অনুমান করা হয় বা যা প্রমাণ করতে চাওয়া হয় তাকে বলে সাধ্য। যে অধিকরণে (স্থলে) সাধ্য আছে কিনা এরূপ সংশয় থাকে, সেই অধিকরণকে পক্ষ বলে। আর যার সাহায্যে পক্ষে সাধ্যের অনুমান করা হয় সেই বিষয়টি হল হেতু। 

উদাহরণস্বরূপ--

 ওই পর্বতটি ধূমবান। 

যেখানে যেখানে ধূম থাকে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকে। 

 : . ওই পর্বতটি বহ্নিমান।

 উক্ত অনুমানে ‘পর্বত’ হল পক্ষ, 'বহ্নি' হল সাধ্য এবং 'ধূম’ হল হেতু। এখানে ধূমের সঙ্গে বহ্নির অর্থাৎ হেতুর সঙ্গে সাধ্যের যে নিহত সহচার সম্পর্ক আছে তাকেই বলা হয় ব্যপ্তি। ব্যাপ্তি-জ্ঞান অনুমানের ভিত্তি।

        অনুমান প্রমাণ খন্ডনে চার্বাকদের যুক্তি:

প্রথমতঃ অনুমান হল এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হই। এক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা আছে তা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং বলা যায়, অনুমান হল একপ্রকারের অন্ধকারে লাফ দেওয়ার প্রক্রিয়া, যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া নয়। 

দ্বিতীয়তঃ  অনুমানে ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। চার্বাক দার্শনিকেরা বলেন, প্রত্যক্ষ যেমন স্পষ্ট জ্ঞান দেয়, অনুমান সেরূপ স্পষ্ট জ্ঞান দিতে পারে না। কেননা, অনুমান পরােক্ষ বা অন্য - নির্ভর জ্ঞান। প্রত্যক্ষ সংশয় ও বিপর্যয় - শূন্য জ্ঞান দেয়; অপরপক্ষে, অনুমান - প্রদত্ত জ্ঞান সংশয়মূলক, বিতর্কিত ও অনিশ্চিত। তাই সংশয়মূলক অনুমানকে যথার্থ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। 

তৃতীয়তঃ  অবরােহ অনুমান চক্রক দোযে (Fallacy of Petitio Principii) দুষ্ট। কেননা, অবরােহ অনুমানে সিদ্ধান্তটিকে পূর্ব থেকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে স্বীকার করে নেওয়া হয়, যে প্রধান আশ্রয়বাক্যের যাথার্থ্য প্রমাণিত হয়নি। অবশ্য আরােহ অনুমানের লক্ষ্য হল- অবরােহ অনুমানের প্রধান আশ্রয়বাক্যের যথার্থ প্রমাণ করা। কিন্তু আরােহ অনুমানে প্রত্যক্ষ বিষয়কে ভিত্তি করে অপ্রত্যক্ষ বিষয়ের সামান্যীকরণ করতে হয়। সেজন্য আরােহ অনুমানে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা ও সন্দেহের অবকাশ থাকে।

       চতুর্থতঃ  যথার্থ ও বৈধ অনুমান গঠন করতে হলে আমাদের ব্যাপ্তিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। চার্বাক দার্শনিকেরা বলেন, ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না; অতএব অনুমান যথার্থ জ্ঞানের উৎস হতে পারে না। ব্যাপ্তিজ্ঞান বলতে কি বােঝায় সংক্ষেপে আলােচনা করা যাক। দূরে পাহাড়ে ধূম দেখে অনুমান করলাম যে সেখানে বহ্নি আছে। এই অনুমান নিশ্চিতভাবে সত্য হতে পারে যদি ধূম ও  বহ্নির এই সম্বন্ধ থাকে যে, “যেখানে যেখানে ধূম আছে, সেখানে সেখানেই বহ্নি আছে।” ধূম আর বহ্নির এই নিয়ত সম্বন্ধকে দার্শনিক পরিভাষায় বলা হয় ব্যাপ্তি। ধূম থাকলেই বহ্নি থাকবে— অতীতেও যেখানে ধূম ছিল সেখানে বহ্নি ছিল, বর্তমানেও যেখানে ধুম আছে সেখানে বহ্নি আছে এবং ভবিষ্যতেও যেখানে ধূম থাকবে, বহ্নি থাকবে এই রকম নিঃসন্দিগ্ধ ব্যাপ্তিজ্ঞান যদি আমাদের হয়, তবেই আমরা কোন স্থানে ধূম দেখে নিশ্চিতভাবে অনুমান করতে পারি যে সেখানে বহ্নি আছে। চার্বাকদের মতে এরূপ নিঃসন্দিগ্ধ ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানে ধূমের সঙ্গে বহ্নির সহ - অবস্থানের সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করা গেলেও সুদূর অতীতে ও অনাগত ভবিষ্যতে ধূমের সঙ্গে বহ্নির এই সহ - অবস্থানের সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করা যায় না। অতএব অনুমান নিশ্চিত আনের উৎস হতে পারে না। 

পঞ্চমতঃ  কেউ কেউ বলতে পারেন, অনুমানের সাহায্যে ব্যাপ্তিজ্ঞান সম্ভব হয়। বহুক্ষেত্রে বহ্নিকে ধূমের সহচররূপে দেখেছি; এদের একত্র থাকার ব্যতিক্রম কোথাও দেখা যায়নি। এর ভিত্তিতে আমরা অনুমান করছি, ধুম ও বহ্নি একত্র থাকবেই। কিন্তু এভাবে ব্যাপ্তিজ্ঞান যদি অনুমানের ওপর নির্ভর করে, তাহলে ঐ অনুমান আবার ব্যাপ্তিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করবে এবং ঐ ব্যাপ্তিজ্ঞান আবার আর একটি অনুমানের ওপর নির্ভর করবে। এইভাবে অনুমানের পর অনুমান গঠন করেই চলতে হবে। ফলতঃ  অনবস্থা দোষ (Fallacy of Infinite Regress) ঘটবে। প্রকৃতপক্ষে, যখন অনুমান প্রমাণ কিনা— এটাই বিচার্য বিষয়, তখন অনুমানের ওপর ভিত্তি করে ব্যাপ্তিজ্ঞান স্থাপন করা উচিত নয়।

যষ্ঠতঃ অনেকে বলতে পারেন, কোন বিশ্বস্ত মহাজ্ঞানী ব্যক্তির আপ্তবাক্য থেকে ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভ করা যেতে পারে। কিন্তু তাও গ্রহণযােগ্য নয়। কেননা, এরূপ ব্যক্তি সত্যিই বিশ্বাসযােগ্য কিনা তা জানার জন্য অনুমানের সাহায্য নিতে হয়। এক্ষেত্রে অনুমানটি হবে নিম্নরূপ: 

বিশ্বস্ত মহাজ্ঞানী লােকেরা যা বলেন তা সন্দেহাতীত;

 বিশ্বস্ত মহাজ্ঞানী লােকেরা বলেন, বহ্নি ও ধূমের নিয়ত সম্বন্ধ আছে। 

: . বহ্নি ও ধূমের নিয়ত সম্বন্ধ(ব্যাপ্তি) সন্দেহাতীত। 


সপ্তমতঃ  চার্বাকগণ অনুমানের বিরুদ্ধে আরও আপত্তি তুলে বলেন যে, উপমানের দ্বারাও ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। আমরা জানি, নৈয়ায়িকগণ উপমান নামে একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ স্বীকার করেন। উপমান কাকে বলে বােঝার জন্য উপমানের বহুল প্রচলিত উদাহরণটি নেওয়া যাক। কোন একজন নগরবাসী মানুষ গরু দেখেছেন; কিন্তু গবয় বা নীলগাই দেখেননি। একদিন তিনি একজন অরণ্যবাসী ব্যক্তির কাছে জানলেন যে, গরুর সদৃশ পশুই হল গবয় (গােসদৃশ গবয়)। ঐ নগরবাসী ব্যক্তিটি একদিন অরণ্যে ভ্রমণ করার জন্য বের হলেন। তিনি অরণ্যে গিয়ে গরুর সদৃশ একটি প্রাণী প্রত্যক্ষ করলেন এবং বললেন— এই নতুন প্রাণীটি হল গবয় বা নীলগাই। এই সাদৃশ্যভিত্তিক জ্ঞানের উপায়কেই নৈয়ায়িকগণ উপমান বলেছেন। চার্বাকদের মতে উপমান স্বতন্ত্র প্রমাণ নয়। তারা বলেন, উপমান অনুমানেরই প্রকারভেদ। পরিচিত গরু এবং একটি অপরিচিত গবয়ের মধ্যে সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করার পর আমরা অনুমানের সাহায্যে বলি— অপরিচিত পশুটি হল গবয়। তাই চার্বাকগণ সিদ্ধান্ত করেন , উপমান যেহেতু স্বতন্ত্র প্রমাণ নয়, সেহেতু উপমানের দ্বারা ব্যাপ্তি - জ্ঞান অর্জনের প্রশ্নই ওঠে না। 

অষ্টমতঃ ভাট্ট মীমাংসকগণ এবং অদ্বৈত বৈদান্তিকগণ অনুপলব্ধি নামে একটি প্রমাণ স্বীকার করেন। চার্বাকগণ বলেন, অনুপলব্ধির মাধ্যমেও ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। ভাব বস্তুর (অর্থাৎ, অস্তিত্ব রয়েছে এমন বস্তুর) জ্ঞানের জন্য যেমন প্রত্যক্ষ, অনুমান প্রভৃতি প্রমাণ স্বীকার করা হয়, তেমনই বস্তুর অভাবের বা অনস্তিত্বের জ্ঞানের জন্য ভাট্ট মীমাংসকগণ এবং অদ্বৈত বৈদান্তিকগণ অনুপলব্ধি নামক স্বতন্ত্র প্রমাণ স্বীকার করেন। 

‘ভূতলে (মেঝেতে) ঘট নেই’— আমরা অনেক সময় এই জাতীয় অবধারণ ব্যক্ত করি। প্রশ্ন হল কি উপায়ে আমরা ভূতলে ঘটাভাব জানতে পারি? এর উত্তরে ভাট্ট মীমাংসকগণ বলেন, প্রত্যক্ষ, অনুমান ইত্যাদি চিরাচরিত প্রমাণের মাধ্যমে বস্তুর অভাবের জ্ঞান সম্ভব নয়। বস্তুর অভাবের জ্ঞানের জন্য তাঁরা অনুপলব্ধি নামক স্বতন্ত্র প্রমাণ স্বীকার করেন। চার্বাক গন বলেন - অনুপলব্ধিকে যদি স্বতন্ত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়াও  হয় , তাহলেও বলা যায় যে, অনুপলব্ধির মাধ্যমে কোন কিছুর অভাবের জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়, ব্যাপ্তি - জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। 

নবতমঃ অষ্টমত কেউ কেউ বলেন, কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। এদের মতে, ধূম ও বহ্নির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা গেলেই ধূম ও বহ্নির মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু চার্বাকপন্থীরা এই অভিমত স্বীকার করেন না। চার্বাক মতে, কার্যকারণ সম্পর্ক হল অনিবার্য সম্পর্ক। আর অনিবার্যতাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। তাই কার্যকারণ সম্পর্কের দ্বারা ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভ করা যায় না।

এই সকল কারণে চার্বাকগণ অনুমানকে প্রমাণ হিসাবে স্বীকার করেন না। অবশ্য পরবর্তীকালে যারা সুশিক্ষিত চার্বাক নামে পরিচিত তারা দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নির্বাহের প্রয়ােজনে কিছু অনুমানের প্রামাণ্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তবে তারা অতীন্দ্রিয় বিষয় সম্পর্কে অনুমান সমর্থন করেননি। 

 সমালােচনাঃ  ভারতীয় অন্যান্য দর্শন সম্প্রদায়, বিশেষ করে জৈন দার্শনিকগণ অনুমান প্রমাণ - বিরােধী চার্বাকদের মতের তীব্র সমালােচনা করেছেন। 

১) জৈন দার্শনিকগণ বলেন, চার্বাকরা যখন ঈশ্বর, আত্মা, স্বর্গ, পরলােক প্রভৃতি অতীন্দ্রিয় সত্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন তখন তারা অনুমানের সাহায্য নিয়েই এরূপ সিদ্ধান্ত করেন। এক্ষেত্রে চার্বাকদের অনুমান প্রক্রিয়াটি হল :

 যা কিছু প্রত্যক্ষগ্রাহ্য কেবল তাদের অস্তিত্ব আছে।

 আত্মা ঈশ্বর প্রভৃতি প্রত্যক্ষগ্রাহ্য নয়। 

. :  আত্মা ঈশ্বর প্রভৃতির অস্তিত্ব নেই। 

২) চার্বাকদের বিরুদ্ধে জৈনরা আরও অভিযােগ করে বলেন যে, যদি চার্বাকদের প্রশ্ন করা হয় প্রত্যক্ষকে কেন একমাত্র প্রমাণ বলা হবে — তাহলে হয় তারা নীরব থাকবেন অথবা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখাবেন। যদি তারা নীরব থাকেন তাহলে তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর যদি তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেন  তাহলে প্রকারান্তরে তারা অনুমানকে প্রমাণরূপে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবেন। 

3) অনুমান প্রমাণ স্বীকার না - করলে সমস্ত প্রকার আলােচনা, তর্ক, বিতর্ক এবং ব্যবহারিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়বে। যেমন — বিদেশে স্থিত কোনাে ব্যক্তির প্রত্যক্ষের অভাবে তাকে মৃত বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু অনুমান করে নিতে হয় যে তিনি জীবিত আছেন। 

৪) নৈয়ায়িক উদয়নাচার্য চার্বাকদের অনুমান সম্পর্কিত মতের সমালােচনা করে বলেন, চার্বাকরা যখন ভবিষ্যতের কথা বলেন, তখন তারা সেই ভবিষ্যৎকে কীভাবে জানেন? প্রত্যক্ষের দ্বারা নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎকে জানা যায় না। কাজেই, স্বীকার করতে হয় যে, ভবিষ্যৎকে জানতে গেলে অনুমানের সাহায্য নিতেই হয়। 

৫) অনুমানলব্ধ জ্ঞান পরােক্ষ ও অস্পষ্ট বলে চার্বাকরা অনুমানকে অযথার্থ বলেছেন। কিন্তু জৈনদের মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞানও ইন্দ্রিয়নির্ভর হওয়ার জন্য পরােক্ষ জ্ঞান হয়। কাজেই, অনুমানলব্ধ জ্ঞান পরােক্ষ বলে অযথার্থ হলে প্রত্যঙ্গলব্ধ জ্ঞানকেও অযথার্থ বলতে হবে।

৬) যে সকল যুক্তির সাহায্যে চার্বাকগণ অনুমান ও শব্দকে প্রমাণরূপে অস্বীকার করেছেন সেই একই যুক্তির সাহায্যে প্রত্যক্ষকেও প্রমাণরূপে গ্রহণ করা যাবে না। কেননা, অনুমান ও শব্দের মতাে প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞানও অনেক সময় ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। যেমন — রজ্জুতে সর্পভ্রম। কাজেই, অনুমানকে প্রমাণ হিসাবে অস্বীকার করলে প্রত্যক্ষকেও প্রমাণ বলা যাবে না।

Google translation: 

What is Anumana?  Why is  Anumana not Pramana in Carvaka philosophy?  Is this opinion acceptable?  Argue in support of the answer.

 Anumana: Anumana is the knowledge of an unknown new subject on the basis of baptism from a known subject.  That - there are three things in the conjecture process - pros, cons and reason.  In the case of conjecture, it is possible to say what is inferred or what is sought to be proved.  The tribunal in which there is such doubt as to whether it is feasible is called a party.  And the reason with which it is estimated that the cause is possible is the cause.

 For example--

  That mountain is smoky.

 Where there is smoke, there is smoke.

  :.  That mountain is flowing.

  In that conjecture ‘mountain’ is the side, ‘bahni’ is the possible and ‘dhoom’ is the cause.  Here, the relation between smoke and bahni, that is, the cause of death, is called range.  Scope-knowledge is the basis of conjecture.

         Charbak's argument in refuting the hypothesis:

 First of all, conjecture is a mental process by which we move from the known truth to the unknown truth.  The uncertainty in this case cannot be denied.  So it can be said that conjecture is a process of jumping into a kind of darkness, not a process of gaining accurate knowledge.

 Second, there is the possibility of error in conjecture.  Charbak philosophers say that as direct knowledge gives clear knowledge, conjecture cannot give such clear knowledge.  Because, conjecture is indirect or other - dependent knowledge.  Direct doubt and catastrophe - gives zero knowledge;  Conjecture, on the other hand, is skeptical, controversial, and uncertain.  So skeptical assumptions cannot be taken as just proof.

 Thirdly, the Fallacy of Petitio Principii is evil.  For, in the assumption of Abrahah, the decision is accepted from the East in the main asylum, which has not proved the validity of the main asylum.  However, the goal of the Ara'ah conjecture is to prove the main premise of the Ara'ah conjecture.  But in Araeh's conjecture one has to generalize the indirect subject based on the direct subject.  That is why there is enough room for uncertainty and doubt in Araeh's conjecture.

        Fourth, we need to rely on baptism in order to make accurate and valid assumptions.  Charbak philosophers say that baptism cannot be achieved directly;  Therefore conjecture cannot be a source of accurate knowledge.  Let us briefly discuss what is meant by baptism.  Seeing the smoke in the distant mountains, I guessed that there was a bahni.  This assumption can certainly be true if there is a relation between smoke and bahni that "where there is smoke, there is bahni."  This constant relation of smoke and smoke is called range in philosophical terms.  If there is smoke, there will be fire: in the past, where there was smoke, there will be fire, now there is smoke, there will be fire, and in the future, where there will be smoke, there will be fire.  .  According to the Charbaks, such an undoubted baptism is not possible through direct observation.  This is because, although the relation of co-position of smoke with smoke can be seen at present, the co-position of co-position of smoke with smoke in the distant past and in the future cannot be observed.  Therefore, conjecture cannot be a sure source of income.

 Fifth, some may say that baptism is possible with the help of conjecture.  In many cases I have seen Bohni as a companion of smoke;  The exception of their being together was not seen anywhere.  On this basis, we assume that Dhoom and Bohni will be together.  But if baptism thus relies on conjecture, then that conjecture will again depend on baptism and that baptism will again depend on another conjecture.  In this way, after the assumption, the assumption must be formed.  As a result, Fallacy of Infinite Regress will occur.  In fact, baptism should not be based on conjecture when it comes to guessing.

 As many may say, baptism can be obtained from the revelation of a faithful sage.  But that too is not acceptable.  Because, to know whether such a person is really credible, one has to take the help of conjecture.  In this case the estimate will be as follows:

 What the faithful sages say is beyond doubt;

  The faithful sage Lakera said that there is a definite relationship between bahni and dhoom.

 :.  The definite relation (range) of smoke and smoke is undoubted.

 Seventh, the Charvakas further objected to the hypothesis, saying that it was not possible to gain baptism even by analogy.  As we know, logicians accept a unique proof called analogy.  Let's take the most common example of analogy to explain what an analogy is.  One of the townspeople saw cows;  But did not see the cow or the nilgai.  One day he learned from a forest dweller that a cow-like animal is a cow (cow-like cow).  The man from the city went out for a walk in the forest one day.  He went to the forest and saw an animal resembling a cow and said: This new animal is a cow or a nilgai.  The logicians call this analogous way of knowledge analogy.  According to Charbak, analogy is not a separate proof.  They say that analogy is a type of conjecture.  After observing the resemblance between a familiar cow and an unfamiliar cow, we say by conjecture: The unfamiliar animal is the cow.  The Charvakas therefore conclude that since analogy is not a separate proof, there is no question of acquiring knowledge by analogy.

 Eighth, the Bhatta Mimansakas and the Advaita Vedantics accept a proof called unattainable.  The Charbaks say that it is not possible to gain baptism even through non-realization.  Just as evidence for direct knowledge, conjecture, etc. is accepted for the knowledge of the object of thought (i.e., the thing that exists), so for the knowledge of the lack or non-existence of matter, the Bhatta theologians and the Advaita Vedantics accept the separate evidence for unavailability.

 ‘There are no pots on the floor’ - we often express this kind of assumption.  The question is in what way can we know what happened on the ground?  In reply to this, the Bhatt critics said that knowledge of the absence of matter is not possible through conventional evidence such as direct, conjecture, etc.  For the knowledge of the lack of objects, they accept the unique evidence called unavailability.  Charbak Gon says that even if the unattainable is accepted as a separate proof, it can be said that it is possible to gain knowledge of the lack of something through the unattainable, it is not possible to gain the knowledge of scope.

 Ninth: Eighth Some say that scope can be established on the basis of causal relationship.  According to them, the causal relationship between smoke and smoke can only be established by establishing a causal relationship between smoke and smoke.  But the Charbakists do not accept this view.  According to Charbak, causal relationships are inevitable relationships.  And inevitability cannot be perceived.  So baptism cannot be gained by causal relationship.

 For all these reasons the Charvakas do not accept conjecture as evidence.  However, those who later came to be known as the well-educated Charbaks accepted the evidence of some conjecture in the necessity of daily life.  However, they did not support speculation about the supernatural.

  Criticism: Other Indian philosophical communities, especially Jain philosophers, have sharply criticized the views of anti-Charbakas.

 1) Jain philosophers say that when the Charvakas deny the existence of God, the soul, the heavens, the afterlife, etc., they make such a decision with the help of conjecture.  In this case, the process of guessing Charbak is:

  All that is perceptible is their existence.

  The soul is not perceptible to God etc.

 .  : Soul God etc. does not exist.

 2) The Jains further complained against the Charbakas, saying that if the Charbakas were asked why the eyewitness would be called the only evidence - then they would either remain silent or argue in favor of their statement.  If they remain silent, their statement will not be established.  And if they argue in favor of their statement, then they will be forced to accept the conjecture as evidence.

 3) Do not accept conjectural evidence - all kinds of discussions, arguments, debates and practical life will be useless.  For example, a person living abroad should be considered dead due to lack of direct contact.  But one has to assume that he is alive.

 4) The logical Udayanacharya criticizes the Charbakas' assumptions and says, "When the Charbakas speak of the future, how do they know the future?"  The future is certainly not known by direct observation.  So, we have to admit that to know the future, we have to take the help of conjecture.

 5) The Charbakars have called the conjecture unreal as the knowledge gained is implicit and vague.  But according to the Jains, direct knowledge is also indirect knowledge to be sense dependent.  Therefore, if the inferred knowledge is untrue as perceptual, then the perceived knowledge must also be called untrue.

 7) The same argument by which the Charbakas have rejected conjecture and word as evidence cannot be accepted as evidence.  Because, according to conjecture and word, perceived knowledge is often proved wrong.  For example - snake delusion on the rope.  Therefore, if the conjecture is denied as evidence, the eyewitness cannot be called evidence either.

Read More