Saturday, 19 May 2018

নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর। [( ভারতীয় দর্শন)( Indian Philosophy)]

1 comment
 প্রশ্ন:  নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর।

    উঃ      নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষণের পার্থক্য : নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ এবং সবিকল্পক প্রত্যক্ষ তুলনা করলে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি ধরা পড়ে ------

     প্রথমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের প্রাথমিক স্তর। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তর বা পরিণত স্তর।

      দ্বিতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যপদেশ্য জ্ঞান। কেননা- এই রূপ জ্ঞানকে কোন বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষকে বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হল ব্যপদেশ্য জ্ঞান।

      তৃতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যবসায়াত্মক জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান বা অস্পষ্ট জ্ঞান। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ব্যবসায়াত্মক বা সুস্পষ্ট জ্ঞান বা সুনিশ্চিত জ্ঞান।

     চতুর্থত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের অনুব্যবসায় সম্ভব নয়।  কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষকের অনুব্যবসায় সম্ভব। 'অনু ব্যবসায়' শব্দটির অর্থ স্মৃতি বা পূর্ব জ্ঞান। এখন নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয় বলে এই প্রত্যক্ষ স্মৃতি ও কল্পনা বর্জিত। কিন্তু, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তাই এই প্রত্যক্ষে স্মৃতি ও কল্পনার ভূমিকা আছে।

     পঞ্চমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ নিস্প্রকারক বলে বচনে প্রকাশ করা যায় না। তাই এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে না। অর্থাৎ, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ প্রমা বা অপ্রমা হতে পারেনা। পক্ষান্তরে, সবিকল্পক জ্ঞানকে বচনাকারে প্রকাশ করা যায়  বলে, এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে। অর্থাৎ, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রমা ও অপ্রমা উভয়ই হতে পারে।

     ষষ্ঠত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধ বর্জিত। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধযুক্ত।

      সপ্তমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে কেবলমাত্র কোন বস্তুর অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুটি কী তা জানা যায় না। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষে গুণ-সমন্বিত বস্তুকে জানা যায়।

     অষ্টমত, নির্বিকল্পক জ্ঞানের কেবল প্রত্যক্ষ হয় কিন্তু অনুমিতি, উপমিতি, শাব্দবোধ প্রভৃতি হতে পারে না। অপরদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানের প্রত্যক্ষ, অনুমিতি উপমিতি, শাব্দজ্ঞান প্রভৃতি হতে পারে।

      নবমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষের মধ্যে কেবলমাত্র সংযোগ সন্নিকর্ষটি ছাড়া অন্যগুলি প্রয়োজন নয়। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষই প্রযুক্ত হতে পারে।
  
    মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায়, নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের মধ্যে উক্ত পার্থক্য করা গেলেও উভয় প্রত্যক্ষকে দুটি স্বতন্ত্র প্রত্যক্ষ বলে মনে করলে ভুল হবে। আসলে উভয়েই একই প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার দুটি ভিন্ন স্তর। নৈয়ায়িকদের মতে নির্বিকল্পক স্তরের অস্পষ্ট ও অব্যক্ত জ্ঞান সবিকল্পক স্তরে স্পষ্ট ও ব্যক্ত হয়। তাই আমরা যখন নির্বিকল্পক স্তর থেকে সবিকল্পক স্তরে উন্নীত হই তখন আমাদের বাস্তব জ্ঞানেরও উন্নতি ঘটে।
                                                                                                                      <<<<<>>>>>
Read More

Friday, 18 May 2018

পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা করো। (INDIAN PHILOSOPHY)

Leave a Comment
প্রশ্ন: পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা কর।
উ: পঞ্চাবয়বী ন্যায়: ভারতীয় দার্শনিকরা মনে করেন পরার্থানুমান বা অন্যের কাছে কিছু প্রমাণের জন্য অনুমান করতে হলে অনুমানকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। কেননা, এ অনুমান হলো পরকে বোঝাবার জন্য। নৈয়ায়িকদের মতে, পরার্থানুমানকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি বচন বা অবয়বের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হলো- (১) প্রতিজ্ঞা, (২) হেতু, (৩) উদাহরণ, (৪) উপনয়, (৫) নিগমন। এই পাঁচটি অবয়বকে একত্রে বলা হয় পঞ্চাবয়বী ন্যায়। পরার্থানুমানের অবয়বগুলিকে যুক্তির আকারে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে-

(১)  পর্বতটি বহ্নিমান (প্রতিজ্ঞা)
(২) কারণ  পর্বতটি ধূমবান (হেতু)
(৩) যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি, যেমন- মহানস বা পাকশালা, কামারশালা ইত্যাদি (উদাহরণ)
(৪)  পর্বতটিও ধূমবান (উপনয়)
(৫) সুতরাং,  পর্বতটি বহ্নিমান (নিগমন বা সিদ্ধান্ত)।

    পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের প্রত্যেকটি অবয়বের পরিচয়, কার্য ও প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিজ্ঞা : যে অবয়ব বাক্যে বক্তা তার প্রতিবাদ্য বিষয়টিকে বাক্যের আকারে প্রকাশ করে তাকে প্রতিজ্ঞা বলে। প্রতিজ্ঞা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা হয় যে পক্ষে সাধ্য আছে। 'পর্বটি বহ্নিমান' - এই প্রতিজ্ঞা বাক্যে পর্বত = পক্ষ এবং বহ্নি = সাধ্য। এই বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে পক্ষ সাধ্যবিশিষ্ট। সুতরাং পর্বতটি যে বহ্নিবিশিষ্ট তা প্রতিপাদন করাই প্রতিজ্ঞার মূল কাজ। কাজেই পক্ষ জ্ঞানের জন্য প্রতিজ্ঞা বাক্যে প্রয়োজন হয়।

      হেতু : ন্যায়ের দ্বিতীয় অবয়ব বাক্যটি হল হেতুবাক্য। যা সাধ্যকে সাধন করে বা প্রমাণ করে তার নাম হেতু। এই হেতুর অপর নাম লিঙ্গ। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে বা লিঙ্গ প্রতিপাদন করে। তাই লিঙ্গ জ্ঞানের জন্যই হেতু বাক্যের প্রয়োজন হয়।

    উদাহরণ : ন্যায়ের তৃতীয় অবয়ব বাক্যটি হল উদাহরণ। যে বাক্য ব্যাপ্তি প্রতিপাদন করে তাকেই উদাহরণ বাক্য বলে। পরিচিত দৃষ্টান্ত সহযোগে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সার্বিক সম্পর্ক জ্ঞাপক অবয়ব হলো উদাহরণ। অর্থাৎ বাক্যের প্রতিজ্ঞা এবং হেতুর মধ্যে যে ব্যাপ্তি সেটিকে পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিপাদন করার জন্যই উদাহরণ বাক্যে প্রয়োজন হয়।

   উপনয় : যে বাক্যে ব্যাপ্তিবিশিষ্টি হেতু বা লিঙ্গের প্রতিপাদন করা হয়, তাকে উপনয় বাক্য বলা হয় । সাধ্যের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হেতুপদের ও পক্ষপদের সম্বন্ধজ্ঞাপক অবয়বই উপনয়। এই বাক্যে পক্ষে সাধ্যের ব্যাপ্তিবিশিষ্ট হেতুর প্রতিপাদন করা হয়। উপনয়ে সামান্য বচনটিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কাজেই, পক্ষধর্মতা জ্ঞানের জন্য উপনয় বাক্যের প্রয়োজন হয়।

     নিগমন : যে বাক্যে ব্যাপ্তি ও পক্ষধর্মতাবিশিষ্ট হেতুর দ্বারা পক্ষে সাধ্য আছে তা প্রতিপাদিত হয়, তাকে নিগমন বাক্য বলা হয় । নিগমন হলো সিদ্ধান্ত অবয়ব। পূর্ববর্তী বাক্যগুলির উপর নির্ভর করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তাকে নিগমন বলে। সুতরাং, প্রতিজ্ঞা বাক্য থেকে পাওয়া বিষয়টিকে প্রমাণ করা নিগম মনের কাজ।
                     <<<<<<>>>>>>
Read More

২। সমাজবিদ্যার(Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
  প্রশ্ন: সামাজিক শ্রেণী এবং জাতি বা বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।           ১৫ নম্বর
     OR, সামাজিক শ্রেণী ও বর্ণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উঃ   সামাজিক শ্রেণী: সামাজিক শ্রেণী প্রসঙ্গে গিন্সবার্গ বলেন, " সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায়, সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন অংশ বা জনগোষ্ঠীকে যারা সমতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমাজস্বীকৃত উঁচু-নিচু মানদণ্ডের দ্বারা এক জনগোষ্ঠি অপরাপর জনগোষ্ঠি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে"। ম্যাকাইভার ও পেজ্ বলেন, "সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায় সম্প্রদায়ের এমন এক খন্ডাংশ যা মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র। সামাজিক শ্রেণী প্রথমত, মর্যাদা অনুসারে উঁচু-নিচুভাবে অবস্থান করে; দ্বিতীয়ত, শ্রেণীর মর্যাদা সমাজস্বীকৃত হয় এবং শ্রেণী সদস্যরা ওই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকে; তৃতীয়ত, সামাজিক শ্রেণীর সাংগঠনিক স্থায়িত্ব থাকে"। প্রত্যেক শ্রেণীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক শ্রেণি- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না;  তবে প্রত্যেক শ্রেণি অন্য শ্রেণী থেকে উচ্চতর ভাবে বা নিম্নতর ভাবে সম্বন্ধের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থান করে।

   জাতি বা বর্ণ: স্যার এডওয়ার্ড ব্লাস্ট তাঁর 'Social Service in India' নামক নিবন্ধ সংকলন গ্রন্থে বলেছেন, 'জাতি হচ্ছে এমন এক জনগোষ্ঠি যাদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রথা প্রচলিত, যারা বংশপরম্পরায় এক সাধারণ পদবী গ্রহণ করে, যারা সামাজিক আচার আচরণের ক্ষেত্রে কতগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে, যারা গতানুগতিকভাবে পূর্বপুরুষের বৃত্তি গ্রহণ করে এবং যারা মনে করে যে তাদের আদি পূর্বপুরুষ একই ব্যক্তি এবং এভাবে যারা এক সুসংহত গোষ্ঠী জীবনে বসবাস করে।' জাতি এবং জাতিভেদ প্রথা কেবলমাত্র ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় -- ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে, এমনকি ভারতের বাইরে অনেক হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রথার প্রচলন আছে। প্রাচীনকালের মিশর জাপান প্রভৃতি দেশেও যে এই প্রথার প্রচলন ছিল, ইতিহাসে তার অনেক নজির পাওয়া যায়। বর্তমানে মাসাইদের মধ্যে, পূর্ব-হর্নের সোমালীদের মধ্যে, পলিনেশীয়দের মধ্যে, বর্মীদের মধ্যে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। তবে, জাতি ও জাতিভেদ প্রথা বলতে বিশেষ করে ভারতীয়দের এবং আরো বিশেষ করে ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সামাজিক শ্রেণীভেদ প্রথাকেই বোঝানো হয়, কেননা ভারতীয় সমাজে এই প্রথা অতিপ্রাচীন এবং সুপ্রাচীন হওয়ায় এই প্রথা ভারতীয় জনজীবনে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।
       জাত- ব্যবস্থা জন্ম ভিত্তিক। ব্যক্তি যে জাতে জন্মগ্রহণ করে সে জাতির সদস্য হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করে। প্রত্যেক জাতভুক্ত ব্যক্তিকে সেই জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। প্রত্যেকটি জাতির একটি পেশা বা বৃত্তি নির্দিষ্ট থাকে।

   সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতীয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা ----
  
    প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্ন স্তর ভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারা কে অনুসরণ করে, তাহলে সে ক্রমশই উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাবের জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নীত হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলে এই প্রথাকে নিশ্চল বলাই সঙ্গত।

    দ্বিতীয়ত,  জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতি বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।

    তৃতীয়ত, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
                            <<<<<>>>>>
Read More

Wednesday, 16 May 2018

মাধ্যমিক শিক্ষায় হান্টার কমিশনের সুপারিশ আলোচনা কর।

Leave a Comment
প্রশ্ন:  মাধ্যমিক শিক্ষায় হান্টার কমিশনের (১৯৮২-৮৩) সুপারিশ আলোচনা কর।     ৫ নম্বর
   উঃ
         লর্ড রিপন 1882 খ্রিস্টাব্দে উয়িলিয়াম হান্টারের সভাপতিত্বে যে শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করেন সেটি হলো হান্টার কমিশন। এটি ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন। 

    মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে হান্টার কমিশনের সুপারিশ: মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হলো নিম্নরূপ -

  ১) মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালনায় সরকার সক্রিয় ভূমিকা নেবেন না।

   ২) বেসরকারি উদ্যোগে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহ গড়ে উঠবে।

  ৩) সরকারি অনুদানের সাহায্যে বিদ্যালয়গুলির আর্থিক সংকট মোচন করা হবে।

   ৪) পাঠ্যক্রমের বিভাজনে - A কোর্স ও B কোর্স করতে হবে।

   ৫) নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা হলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি।

   ৬) অনুন্নত অঞ্চলে বিদ্যালয় স্থাপনেরও সুপারিশ করেছেন কমিশন।

   ৭) মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
                       <<<<<>>>>>
Read More

Monday, 14 May 2018

রাধাকৃষ্ণন কমিশনের (১৯৪৮) অর্থসংক্রান্ত সুপারিশগুলি কি কি?

Leave a Comment
    প্রশ্ন: রাধাকৃষ্ণন কমিশনের (১৯৪৮) অর্থসংক্রান্ত সুপারিশগুলি কি কি?                              ৫ নম্বর

উ:
        রাধাকৃষ্ণন কমিশনের অর্থসংক্রান্ত সুপারিশ:  কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থসংস্থান সম্পর্কে সুপারিশে বলেছে -

     ১) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর গৃহনির্মাণের জন্য অর্থ দান করতে হবে।

    ২) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হবে সেগুলি ক্রয় করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সাজ সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে। আর এই ক্রয়ের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হবে।

    ৩) মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে সমস্ত শিক্ষার্থী দূর থেকে আসে তাদের জন্য ছাত্রাবাস তৈরি করতে হবে এই ছাত্রাবাস তৈরীর জন্য যে খরচ হবে তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।

    ৪) মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বেতন প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত সাহায্য দান করতে হবে।

      ৫) উচ্চ শিক্ষায় বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজকর্ম হয় এবং এর জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থের যোগান রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।

     ৬) মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য এবং বিদেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রকে অর্থ প্রদান 
করতে হবে।
                                   <<<<<>>>>>
Read More

Sunday, 13 May 2018

মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারী কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য কর

Leave a Comment
    প্রশ্ন: মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য কর।                ৫ নম্বর

       উত্তর: মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের পার্থক্য:                        

   ১) মুদালিয়র কমিশনের নবম শ্রেণি থেকে বিশেষীকৃত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে, কোঠারি কমিশনে একাদশ শ্রেণী থেকে বিশেষীকৃত শিক্ষার সংস্থান রয়েছে।

     ২) মুদালিয়র কমিশনে পাঠ্যক্রমে বিষয়গুলিকে মানবীয় বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, কারিগরি বিভাগ, কৃষি বিভাগ, বাণিজ্য, চারুকলা বিভাগ ও গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগ - এই সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অপরদিকে কোঠারী কমিশনে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ঐচ্ছিক বিষয়গুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি। শিক্ষার্থীর স্বাধীনভাবে যেকোন বিষয় নির্বাচন করার অধিকার আছে।

     ৩) মুদালিয়র কমিশনে পাঠ্যক্রমের একটি সুনির্দিষ্ট সংগঠিত রূপ রচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোঠারি কমিশনে পাঠ্যক্রমের একটি খসড়া কাঠামো ও কতগুলি নীতি প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

    ৪) মুদালিয়ার কমিশনে হস্তশিল্পকে আংশিকভাবে অবশ্যিক করা হয়েছে। কিন্তু কোঠারি কমিশনে কর্ম অভিজ্ঞতাকে সর্বশেষ পর্যায় পর্যন্ত আবশ্যিক করা হয়েছে।

    ৫) কোঠারি কমিশনে সহপাঠ ক্রমিক কার্যাবলীকে সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপন করা হয়নি। কিন্তু কোঠারি কমিশনে সমাজসেবা, শারীর শিক্ষা ইত্যাদিতে আবশ্যিক করা হয়েছে।

  ৬) মুদালিয়র কমিশনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোঠারী কমিশনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
  
                            <<<<<>>>>>

Read More

Saturday, 12 May 2018

পরিণমন বলতে কি বোঝ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

1 comment
পরিণমন বলতে কি বোঝ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উঃ
     পরিণমন: স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে যে পরিবর্তন হয় তাকে পরিণমন বলে।
       
       পরিণমন বলতে সেই সব আচরণের পরিবর্তনকে বোঝায় যা কোনো রকম অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ঘটে এবং যেগুলির জন্য কোন অনুশীলনের দরকার হয়না। যেমন, বিশেষ একটি বয়স হলে শিশুর মাংসপেশী শক্ত হয় এবং সে হাঁটতে শেখে। কিন্তু এই বয়সে তাকে সাইকেল চালানো শেখানো যাবে না। কোন শিখন কৌশল অবলম্বন করেও তা সম্ভব নয়।

    পরিণমনের বৈশিষ্ট্য: পরিণমনে নিম্নলিিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়়। 

    (১)  বিকাশের প্রক্রিয়া: পরিণমন শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেখা দেয়। শিশুর হাঁটা শেখা তার পরিণমনের ফল।

     (২) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: পরিণমনের জন্য অতীত অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তাই মনোবিদগণ একে স্বাভাবিক বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেন। 

    (৩) জৈবিক বিকাশ: পরিনমন মূলত ব্যক্তির জীবনের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির জৈবিক কেন্দ্রের বিকাশে কোন ত্রুটি থাকলে তার পরিণমনলব্ধ আচরণও ত্রুটিপূর্ণ হয়।

        (৪) অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া: পরিণমন সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। বাহ্যিক পরিবেশের উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত নয়।

         (৫)  দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া: পরিণমন মূলত বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তির দৈহিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

         (৬) সর্বজনীন: প্রতিটি বয়ঃস্তরে  প্রতিটি ব্যক্তির প্রায় একই রকমের পরিণমন ঘটতে দেখা যায়।

           (৭) সীমাবদ্ধ:  মাতৃগর্ভে ভ্রূণ সঞ্চারের সময়ে আরম্ভ হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিণমনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

          

    
Read More