Wednesday, 23 May 2018

প্রশ্ন: সাংখ্যদর্শনের বিবর্তনবাদ / পরিণামবাদ / অভিব্যক্তিবাদ আলোচনা কর।(Sankhya theory of Evolution)

Leave a Comment
প্রশ্ন: সাংখ্যদর্শনের বিবর্তনবাদ / পরিণামবাদ / অভিব্যক্তিবাদ আলোচনা কর।
উঃ

       সাংখ্য বিবর্তনবাদ: সাংখ্যদর্শন দ্বৈতবাদী। এই দর্শনে দুটি তত্ত্ব স্বীকার করা হয়েছে। একটি পুরুষ অপরটি প্রকৃতি। প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগের ফলে এই জগতের আবির্ভাব ঘটে। প্রকৃতি হতে এই জগতের আবির্ভাব। প্রকৃতিতে এই জগতের লয়। সত্ত্ব, রজঃ, তমো এই  গুণ তিনটির সাম্যবস্থা হল প্রকৃতি। প্রকৃতি পরিণামী। নিজ স্বভাহেতু প্রকৃতির নিয়মিত সৃষ্টি করে থাকে। এই পরিণাম দুই প্রকার -- স্বরূপ পরিণাম ও বিরূপ পরিণাম। প্রলয় কালে যে পরিনাম হয় তাকে স্বরূপ পরিণাম এবং সৃষ্টিদশায় যে পরিনাম হয় তাকে বিরূপ পরিণাম বলে।

      প্রকৃতির এই পরিণাম যান্ত্রিক নয়। প্রকৃতি জড়, অচেতন হলেও তার এই পরিনাম উদ্দেশ্যমূলক। প্রকৃতি পরিণামের দুটি উদ্দেশ্য -- একটি পুরুষের ভোগ, অপরটি মোক্ষ। পুরুষের ভোগের জন্য প্রকৃতির সৃষ্টিকার্য যেমন প্রয়োজন মোক্ষের জন্যও পুরুষের পক্ষে প্রকৃতির প্রয়োজন।

     সাংখ্য মতে প্রকৃতি জগতের উপাদান কারণ। উৎপত্তির পূর্বে কার্য কারণে সৎ। জগৎ, কার্য, প্রকৃতিতে অব্যক্ত রূপে থাকে। প্রকৃতির পরিণামের ফলে জগতের অভিব্যক্তি। চেতন পুরুষ ও সক্রিয় প্রকৃতির সংযোগের ফলে পরিণাম শুরু হয়। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগের ফলে গুণত্রয়ের মধ্যে বিক্ষোভ ঘটে। তাদের সাম্যবস্থা নষ্ট হয়। এর ফলে প্রকৃতির মধ্যে প্রবল আলোড়ন শুরু হয়। প্রতিটি গুণ অপর দুটি গুণকে অভিভূত করতে চেষ্টা করে। এর ফলে বিভিন্ন পরিমাণে গুনগুলির বিন্যাস ঘটে। বিভিন্ন জাগতিক বস্তু এর ফলে সৃষ্টি হয়। প্রকৃতি থেকে জড়জগতের ক্রমাভিব্যক্তি নিম্নরূপ:

                          পুরুষ + প্রকৃতি
                             মহৎ( বুদ্ধি)
                              অহংকার
                                     |
|-----------|--------------------------------------------|----
মন    পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়     পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়      পঞ্চতন্মাত্র
                                                                                                                                             পঞ্চমহাভূত

     মহৎ বা বুদ্ধি: মহৎ বা বুদ্ধি প্রকৃতির প্রথম পরিণাম। জাগতিক বস্তু সৃষ্টির বীজ বলে একে মহৎ বা বিরাট বলা হয়। মহৎ থেকেই সৃষ্টি শুরু। আবার জীবের মধ্যে বুদ্ধি রূপে প্রকাশিত হয় বলে এর অপর নাম বুদ্ধি। ধর্ম, জ্ঞান, বৈরাগ্য, বুদ্ধির সাত্ত্বিক রূপ; অধর্ম' অজ্ঞানতা, মোহ বুদ্ধির তামসরূপ। বুদ্ধি চেতন পুরুষ থেকে ভিন্ন। কিন্তু পুরুষের চৈতন্য বুদ্ধিতে প্রতিবিম্বিত হয়। ইন্দ্রিয়, মন, অংকার বুদ্ধির জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। বুদ্ধির জন্য প্রকৃতি ও পুরুষের ভেদ জ্ঞান হয়।  

         মন:    মনের সাহায্য ছাড়া কোন ইন্দ্রিয় কাজ করতে পারে না। মন জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয় উভয়ই -- পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, ও মন এই হল একাদশ ইন্দ্রিয়। মন সূক্ষ্ম অথচ সাবয়ব। মন নিত্য ও পরমাণু পরিমাণ নয়। সাংখ্য মতে মন হলো অনিত্য।

       অহংকার: অহংকার প্রকৃতির দ্বিতীয় পরিণাম।  মহৎ বা বুদ্ধি থেকে প্রত্যক্ষভাবে অহংকারের আবির্ভাব হয়। আত্মাভিমান ও সমত্ববুদ্ধি অহংকারের ধর্ম। অহংকারের জন্য পুরুষ নিজেকে কর্তা ও ভোক্তা মনে করে। সত্ত্ব রজঃ ও তমোগুণের তারতম্য হেতু অহংকার তিনপ্রকার -- সাত্ত্বিক রাজস ও তামসা। সাত্ত্বিক অহংকার থেকে পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ও মনের আবির্ভাব হয়। তামস অহংকার থেকে পঞ্চতন্মাত্রের আবির্ভাব হয়।  রাজস অহঙ্কার উভয়ের উৎপত্তিতে সাহায্য করে।

         পঞ্চতন্মাত্র: রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ ও স্পর্শ - এই পাঁচটি পঞ্চতন্মাত্র।  পঞ্চতন্মাত্র থেকে পঞ্চভূতের সৃষ্টি হয়। ক্ষিতি, অপ্,  তেজ, মরুৎ, ও ব্যোম্ -- এই পাঁচটি পঞ্চভূত। পঞ্চ তন্মাত্র থেকে পঞ্চ মহাভুতের আবির্ভাব নিম্নলিখিত উপায়ে হয়।

        (১) শব্দতন্মাত্র থেকে উৎপন্ন হয় ব্যোম আকাশ। শব্দ আকাশের গুণ।

     (২) শব্দতন্মাত্রের সঙ্গে স্পর্শতন্মাত্রের সংযোগের ফলে মরুৎ বা বায়ুর উৎপত্তি হয়। শব্দ ও স্পর্শ বায়ুর গুন।

     (৩)  রূপ তন্মাত্রের সঙ্গে শব্দ স্পর্শ তন্মাত্রের সংযোগে তেজের উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ তেজের গুন।

        (৪) রস তন্মাত্র শব্দ, স্পর্শ ও রূপ তন্মাত্রের  মিলিত হলে অপ্ বা জলের উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস জলের গুন।

      (৫) গন্ধ তন্মাত্র শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস তন্মাত্রের সঙ্গে যুক্ত হলে ক্ষিতি বা  পৃথিবীর উৎপত্তি হয়। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ পৃথিবীর গুণ।

      মহৎ থেকে মহাভুত অবধি প্রকৃতির এই পরিণামমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-- প্রত্যয় বা বুদ্ধি সর্গ এবং তন্মাত্র বা ভৌতিক সর্গ। প্রত্যয় সর্গের অন্তর্গত হল- মহৎ, অহংকার, মন, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়। তন্মাত্র সর্গের অন্তর্গত হল পঞ্চ তন্মাত্র, পঞ্চভূত মহাভুত ও মহাভুত থেকে উৎপন্ন সকল দ্রব্য। মহৎ থেকে পঞ্চ মহাভুতের আবির্ভাবকে অনুলোম পরিণাম বলা হয়। এর বিপরীত পরিণামমকে অর্থাৎ প্রলয়কালে যে পরিণামম হয় তাকে প্রতিলোম পরিণামম বলে।
                                <<<<<>>>>>
                      
Read More

Tuesday, 22 May 2018

প্রশ্ন: বৈশেষিক দর্শন অনুসারে কর্ম পদার্থের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। (Indian Philosophy -বৈশেষিক দর্শন)

Leave a Comment
প্রশ্ন: বৈশেষিক দর্শন অনুসারে কর্ম পদার্থের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।                ১০ নম্বর
উঃ

      কর্ম: কর্ম অর্থে গতি বোঝায়। কর্ম বা গতি বিশ্বের এক মূল তত্ত্ব, -  দ্রব্য ও গুনের অতিরিক্ত একটি দ্রব্য। কর্মের অর্থ গতি বা স্থান পরিবর্তন। দ্রব্য এবং গুণ থেকে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হল কর্ম। দ্রব্যকে আশ্রয় করেই কর্ম বিরাজ করে। দ্রব্য ছাড়া কর্ম থাকতে পারেনা। কর্মের কোন গুণ থাকতে পারেনা। সব রকমের দ্রব্যের মধ্যই কর্ম থাকেনা। কেবল অনিত্য মূর্ত দ্রব্যের মধ্যেই কর্ম বিরাজ করে। দ্রব্যের মধ্যে গুণ ও কর্ম উভয় বিরাজ করলেও গুণ ও কর্মের মধ্যে পার্থক্য আছে। গুন নিষ্ক্রিয় কিন্তু কর্ম সক্রিয়। গুণ হলো দ্রব্যের স্থায়ী লক্ষণ কিন্তু কর্ম হল অস্থায়ী। কাজেই কর্ম বা গতিকে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে।

    কর্ম পাঁচ প্রকার। যথা - (১) উৎক্ষেপন, (২) অবক্ষেপণ, (৩) আকুঞ্চন, (৪) প্রসারণ ও (৫) গমন।

     (১) উৎক্ষেপণ: যে কর্মের দ্বারা উপরের সঙ্গে কোন দ্রব্যের সংযোগ হয়, তাকে বলা হয় উৎক্ষেপণ। যেমন- আম পাড়তে গাছের উপর দিকে ঢিল ছুড়ে দেওয়া

  (২) অবক্ষেপণ: যে কর্মের দ্বারা নিচের দিকে কোন দ্রব্যকে নিক্ষেপ করা হয়, তাকে বলা হয় অবক্ষেপণ। যেমন- ছাদ থেকে নিচে কিছু ফেলে দেওয়া।

    (৩) আকুঞ্চন: কোন দ্রব্যের বিভিন্ন অংশগুলিকে সংকুচিত করাকেই আকুঞ্চন বলে। যেমন- হাত মুষ্টিবদ্ধ করে  হাতের আংগুল গুলিকে সংকুচিত করা।

       (৪) প্রসারণ: কোন দ্রব্যের সংযুক্ত অংশকে বিচ্ছিন্ন করাকেই প্রসারণ বলে। যেমন- মুষ্টির মধ্যে ধরা হাতের আঙ্গুলগুলি বিস্তার করা।

      (৫) গমন: এই চার প্রকার কর্ম বাদে অন্যসব কর্ম হলো গমন। যেমন- আগুনের ঊর্ধ্বগতি, বাতাসের তীব্র গতি প্রভৃতি গমনের অন্তর্গত।

        সবরকম কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। পার্থিব দ্রব্যের কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায়, কিন্তু মনের কর্মকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
                                         <<<<<>>>>>

Read More

সাংখ্য দর্শনে পুরুষের স্বরূপ কি? পুরুষের অস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তি গুলি কি কি? সাংখ্য মতে পুরুষ এক না বহু ?আলোচনা কর। (Indian philosophy: সাংখ্য দর্শন)

Leave a Comment
 প্রশ্ন: সাংখ্য দর্শনে পুরুষের স্বরূপ কি? পুরুষের অস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তি গুলি কি কি? পুরুষ এক না বহু? আলোচনা কর।                   ২০ নম্বর
উঃ
     পুরুষ: প্রকৃতি তত্ত্ব ছাড়াও সাংখ্যদর্শনের দ্বিতীয় একটি তত্ত্ব স্বীকার করা হয়েছে সেটি হলো পুরুষ বা আত্মা। পুরুষ হলো সাংখ্যের দ্বিতীয় স্বীকৃত তত্ত্ব। আমরা পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারি না। জগতের সবকিছুকে অস্বীকার করলেও আমার নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা অসম্ভব। আত্মার অস্তিত্ব স্ব-প্রকাশ, তাই সাংখ্য দার্শনিকগণ আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পুরুষ বা আত্মা সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের অতীত এবং তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মের আরেকটি শ্রেণীর দ্রব্য। পুরুষকে বর্জন করে জগতের ব্যাখ্যা হতে পারে না।

     সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, পুরুষ বা আত্মা দেহ নয়, মন নয়, বুদ্ধি নয়, ইন্দ্রিয়ও নয়। আত্মা এদের থেকে স্বতন্ত্র। পুরুষ হচ্ছে এক সচেতন সত্তা যা সব সময় জ্ঞাতা কিন্তু কখনোই জ্ঞেয় বা জ্ঞানের বিষয় নয়। পুরুষ নির্বিকার জ্ঞান স্বরূপ। আত্মা শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ, তাই পুরুষ বা আত্মার কোন পরিবর্তন বা বিকার হয়না। পুরুষ সনাতন - তার উৎপত্তি বা ধ্বংস নেই। পুরুষ পরিচ্ছিন্ন বা সীমিত নয়। পুরুষ বিভু বা সর্বব্যাপী। পুরুষ লোভ, মোহ, রাগ-বিরাগ মুক্ত। পুরুষ  অপরিণামী।

পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ: সাংখ্য দর্শনে পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বের স্বপক্ষে একাধিক যুক্তি দেখানো হয়েছে ও এইসব যুক্তি দ্বারা পুরুষ বা আত্মার আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তিগুলি এইরকম -

      ক) সংঘাতপরার্থত্বাৎ: সংঘাত অর্থাৎ যৌগিক পদার্থ অপরের উদ্দেশ্য পূরণ করে থাকে। এইসব যৌগিক পদার্থের নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য নেই। টেবিল চেয়ার ঘট পট প্রভৃতি সংঘাত দ্রব্য পর-প্রয়োজনে নিবেদিত। এইসব সংঘাত দ্রব্যগুলি কোন চেতন সত্তার প্রয়োজন মেটায়। এই চেতন সত্তাই পুরুষ।

    খ) ত্রিগুণাদি বিপর্যয়াৎ: সব জ্ঞেয় বস্তুই ত্রিগুণাত্মিকা অর্থাৎ সব জ্ঞেয় বস্তুরই সত্ত্ব রজঃ ও তমঃ এই তিনটি গুণ আছে। কাজেই এদের দ্রষ্টা হিসেবে এমন একটি সত্তার অস্তিত্ব থাকতে হবে যার মধ্যে শুধু চৈতন্য আছে, কিন্তু গুণত্রয় নেই। এই সত্তাই  হলো পুরুষ।

    গ) অধিষ্ঠানাৎ: যার অধিষ্ঠানের জন্য দেহ বুদ্ধি-অহংকার-মন বিশিষ্ট হয়ে চেতন পদার্থের মত মনে হয় এবং যার অভাবে দেহ বুদ্ধি- অহংকার-মনবিহীন হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে তাই পুরুষ বা আত্মা। সচেতন একজন রথী না থাকলে যেমন অচেতন রথ ঠিক পথে চলতে পারে না, তেমনি অচেতন প্রকৃতির কার্য যে নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে ঘটতে দেখা যায় তাও কোন সচেতন সত্তার সাহায্য ছাড়া হতে পারে না। এই সচেতন সত্তাই পুরুষ।

      ঘ) ভক্তৃভাবাৎ: সুখ-দুঃখ ও বিষাদাত্মক ভোগ্যবস্তুর ভোক্তা রূপে চেতন পুরুষের অস্তিত্ব মানতে হবে। ভোগ্যবস্তুর অস্তিত্ব মেনে নিলে ভোক্তার অস্তিত্বকেও স্বীকার করতে হয়। সুখ, দুঃখ ও বিষাদ ইত্যাদি ভোগ্য। কোন জড় ও অচেতন দ্রব্যের পক্ষে ভোগ করা সম্ভব নয়। তাই ভোক্তা রূপে চেতন সত্তার অস্তিত্ব মানতেই হবে এবং চেতন সত্তাই পুরুষ।

      ঙ) কৈবল্যার্থং প্রবৃত্তেশ্চ:  অনেকের মধ্যে কৈবল্য বা মুক্তির চেষ্টা দেখা যায়। প্রকৃতি কিংবা প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত বস্তু তো অচেতন এবং স্বভাবতই দুঃখযুক্ত। কাজেই তাদের পক্ষে দুঃখ থেকে মুক্তির প্রশ্ন ওঠেনা। তাহলে প্রকৃতি থেকে স্বতন্ত্র এক সচেতন সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, নইলে কৈবল্য লাভের চেষ্টার কোনো অর্থ হয় না। এই সচেতন সত্তাই পুরুষ।

      বহু পুরুষবাদ বা আত্মার বহুত্ববাদ : সাংখ্য মতে, পুরুষ বা আত্মাএক নয়, বহ। সাংখ্য কার নিম্নলিখিত যুক্তির সাহায্যে পুরুষের বহুত্ব প্রমাণ করেছেন:

        (ক) বিভিন্ন জীবের মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, ইন্দ্রিয় বিষয়ে পার্থক্য দেখা যায়। এক ব্যক্তির জন্ম হলে অন্য ব্যক্তির জন্ম হয় না। একজন অন্ধ বা বধির হলে অন্যজন অন্ধ বা বধির হয়না। এরকম যখন বাস্তবে হয় না তখন আমাদের মানতেই হবে আত্মা এক নয়, বহু।

       (খ) সমস্ত জীবের মধ্যে এক আত্মা থাকলে সমস্ত জীবের প্রবৃত্তি যুগবৎ হত অর্থাৎ একজনের প্রবৃত্তিতে অন্যজনেরও একই প্রবৃত্তি জাগ্রত হত। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা হয়না। যেমন- একজন যখন যাচ্ছে, আর একজন তখন আসছে। সুতরাং জীবের প্রবৃত্তিগত ভিন্নতাই আত্মার ভিন্নতা প্রমাণ করে। তাই  এক নয়, বহু।

       (গ) একথা আমরা স্বীকার করি যে মানুষ দেবতা নয়, আবার পশুও নয়। একই আত্মা যদি সকলের মধ্যে থাকতো তবে দেবতা মানুষ ও পশুপাখির কোন প্রভেদ থাকত না। কাজেই, আত্মার বহুত্ব স্বীকার করতে হবে।

    (ঘ) মৃত্যুর পর পূণ্যাত্মার স্বর্গবাস, পাপাত্মার নরকবাস। এর দ্বারাও প্রতিপন্ন হয় যে বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিভিন্ন আত্মা বিরাজমান। সমস্ত জীবের মধ্যে এক আত্মা থাকলে একজনের মুক্তিতে অন্য সবাই মুক্তি লাভ করতো। সুতরাং আত্মা এক নয়, বহু।
                                  <<<<<>>>>>
Read More

Saturday, 19 May 2018

সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ভূমিকা আলোচনা কর।[ভারতীয় দর্শন(Indian philosophy)]

Leave a Comment
     প্রশ্ন: সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ভূমিকা আলোচনা কর।

       সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ : কোন একটি শ্রেণী বা জাতির অন্তর্গত একটি ব্যক্তি বা বস্তুর সামান্য ধর্মের প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে সেই জাতি বা শ্রেণীর অন্তর্গত সমস্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। যেমন- মানুষ জাতির সামান্য ধর্ম হলো মনুষ্যত্ব। ন্যায় মতে, যখন আমরা একটি বিশেষ মানুষকে প্রত্যক্ষ করি তখন 'মনুষত্ব' নামক সামান্য ধর্মটিও প্রত্যক্ষ করি। এই 'মনুষত্ব' ধর্মের মাধ্যমে সকল মানুষকে প্রত্যক্ষ করাই হলো সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ।

       ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষের ভূমিকা:  ন্যায়সম্মত ব্যাপ্তি নির্ণয়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ। সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ একপ্রকার অলৌকিক প্রত্যক্ষ। যেমন আমরা পর্বত, পাকশালা প্রভৃতি কোন কোন ক্ষেত্রে ধূম ও বহ্নির ব্যাপ্তি প্রত্যক্ষ করতে পারি। কিন্তু ব্যাপ্তি সম্বন্ধ সার্বজনীন। তাই আমাদের বলার উদ্দেশ্য এরকম হয় না যে, শুধু পর্বতীয় ধূমের সঙ্গে পর্বতীয় বহ্নির ব্যাপ্তি আছে বা পাকশালার ধূমের সঙ্গে পাকশালার বহ্নির ব্যাপ্তি আছে। সকল ধূমের সঙ্গে সকল বহ্নির ব্যাপ্তিই আমরা জানতে চাই। কিন্তু সকল ধূম ও সকল বহ্নির সঙ্গে আমাদের ইন্দ্রিয়ের সাধারণ বা লৌকিক সন্নিকর্ষ সম্ভব নয়। তা সমাধানকল্পেই ন্যায়দর্শনে সামান্যলক্ষণ সন্নিকর্ষের দ্বারা সকল ধূম ও সকল বহ্নির ব্যাপ্তিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

         এই সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষের সাহায্যে আমরা কোন একটি স্থানে ধূমকে প্রত্যক্ষ করার সময় ঐ ধূমের মাধ্যমে ধূমত্ব জাতিকে এবং ঐ ধূমত্ব জাতির মাধ্যমে সকল ধূমকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। অনুরূপভাবে বহ্নিত্ব জাতির মাধ্যমে আমরা সকল বহ্নিকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের প্রত্যক্ষকালে ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের সম্বন্ধও আমাদের প্রত্যক্ষের বিষয় হয়। ধূমত্ব ও বহ্নিত্বের এই সম্বন্ধের সাহায্যে আমরা সামান্যত সকল ধূমের সঙ্গে সকল বহ্নির একটি সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করি। এই প্রত্যক্ষ হয় এক ধরনের অলৌকিক প্রত্যক্ষ। এটাই সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষ। এইভাবে সামান্যলক্ষণ প্রত্যক্ষের সাহায্যে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে ব্যাপ্তি নির্ণয় করা যেতে পারে।
                         <<<<<>>>>>
Read More

নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর। [( ভারতীয় দর্শন)( Indian Philosophy)]

1 comment
 প্রশ্ন:  নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর।

    উঃ      নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষণের পার্থক্য : নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ এবং সবিকল্পক প্রত্যক্ষ তুলনা করলে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি ধরা পড়ে ------

     প্রথমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের প্রাথমিক স্তর। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তর বা পরিণত স্তর।

      দ্বিতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যপদেশ্য জ্ঞান। কেননা- এই রূপ জ্ঞানকে কোন বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষকে বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হল ব্যপদেশ্য জ্ঞান।

      তৃতীয়ত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল অব্যবসায়াত্মক জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান বা অস্পষ্ট জ্ঞান। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ব্যবসায়াত্মক বা সুস্পষ্ট জ্ঞান বা সুনিশ্চিত জ্ঞান।

     চতুর্থত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের অনুব্যবসায় সম্ভব নয়।  কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষকের অনুব্যবসায় সম্ভব। 'অনু ব্যবসায়' শব্দটির অর্থ স্মৃতি বা পূর্ব জ্ঞান। এখন নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয় বলে এই প্রত্যক্ষ স্মৃতি ও কল্পনা বর্জিত। কিন্তু, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, তাই এই প্রত্যক্ষে স্মৃতি ও কল্পনার ভূমিকা আছে।

     পঞ্চমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ নিস্প্রকারক বলে বচনে প্রকাশ করা যায় না। তাই এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে না। অর্থাৎ, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ প্রমা বা অপ্রমা হতে পারেনা। পক্ষান্তরে, সবিকল্পক জ্ঞানকে বচনাকারে প্রকাশ করা যায়  বলে, এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন ওঠে। অর্থাৎ, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রমা ও অপ্রমা উভয়ই হতে পারে।

     ষষ্ঠত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধ বর্জিত। অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধযুক্ত।

      সপ্তমত, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে কেবলমাত্র কোন বস্তুর অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুটি কী তা জানা যায় না। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষে গুণ-সমন্বিত বস্তুকে জানা যায়।

     অষ্টমত, নির্বিকল্পক জ্ঞানের কেবল প্রত্যক্ষ হয় কিন্তু অনুমিতি, উপমিতি, শাব্দবোধ প্রভৃতি হতে পারে না। অপরদিকে, সবিকল্পক জ্ঞানের প্রত্যক্ষ, অনুমিতি উপমিতি, শাব্দজ্ঞান প্রভৃতি হতে পারে।

      নবমত, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষের মধ্যে কেবলমাত্র সংযোগ সন্নিকর্ষটি ছাড়া অন্যগুলি প্রয়োজন নয়। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ছয়টি লৌকিক সন্নিকর্ষই প্রযুক্ত হতে পারে।
  
    মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায়, নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের মধ্যে উক্ত পার্থক্য করা গেলেও উভয় প্রত্যক্ষকে দুটি স্বতন্ত্র প্রত্যক্ষ বলে মনে করলে ভুল হবে। আসলে উভয়েই একই প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার দুটি ভিন্ন স্তর। নৈয়ায়িকদের মতে নির্বিকল্পক স্তরের অস্পষ্ট ও অব্যক্ত জ্ঞান সবিকল্পক স্তরে স্পষ্ট ও ব্যক্ত হয়। তাই আমরা যখন নির্বিকল্পক স্তর থেকে সবিকল্পক স্তরে উন্নীত হই তখন আমাদের বাস্তব জ্ঞানেরও উন্নতি ঘটে।
                                                                                                                      <<<<<>>>>>
Read More

Friday, 18 May 2018

পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা করো। (INDIAN PHILOSOPHY)

Leave a Comment
প্রশ্ন: পরার্থানুমানের বিভিন্ন অবয়বগুলি আলোচনা কর।
উ: পঞ্চাবয়বী ন্যায়: ভারতীয় দার্শনিকরা মনে করেন পরার্থানুমান বা অন্যের কাছে কিছু প্রমাণের জন্য অনুমান করতে হলে অনুমানকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। কেননা, এ অনুমান হলো পরকে বোঝাবার জন্য। নৈয়ায়িকদের মতে, পরার্থানুমানকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি বচন বা অবয়বের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। এই পাঁচটি অবয়ব হলো- (১) প্রতিজ্ঞা, (২) হেতু, (৩) উদাহরণ, (৪) উপনয়, (৫) নিগমন। এই পাঁচটি অবয়বকে একত্রে বলা হয় পঞ্চাবয়বী ন্যায়। পরার্থানুমানের অবয়বগুলিকে যুক্তির আকারে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে-

(১)  পর্বতটি বহ্নিমান (প্রতিজ্ঞা)
(২) কারণ  পর্বতটি ধূমবান (হেতু)
(৩) যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি, যেমন- মহানস বা পাকশালা, কামারশালা ইত্যাদি (উদাহরণ)
(৪)  পর্বতটিও ধূমবান (উপনয়)
(৫) সুতরাং,  পর্বতটি বহ্নিমান (নিগমন বা সিদ্ধান্ত)।

    পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের প্রত্যেকটি অবয়বের পরিচয়, কার্য ও প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিজ্ঞা : যে অবয়ব বাক্যে বক্তা তার প্রতিবাদ্য বিষয়টিকে বাক্যের আকারে প্রকাশ করে তাকে প্রতিজ্ঞা বলে। প্রতিজ্ঞা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা হয় যে পক্ষে সাধ্য আছে। 'পর্বটি বহ্নিমান' - এই প্রতিজ্ঞা বাক্যে পর্বত = পক্ষ এবং বহ্নি = সাধ্য। এই বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে পক্ষ সাধ্যবিশিষ্ট। সুতরাং পর্বতটি যে বহ্নিবিশিষ্ট তা প্রতিপাদন করাই প্রতিজ্ঞার মূল কাজ। কাজেই পক্ষ জ্ঞানের জন্য প্রতিজ্ঞা বাক্যে প্রয়োজন হয়।

      হেতু : ন্যায়ের দ্বিতীয় অবয়ব বাক্যটি হল হেতুবাক্য। যা সাধ্যকে সাধন করে বা প্রমাণ করে তার নাম হেতু। এই হেতুর অপর নাম লিঙ্গ। হেতুই প্রতিজ্ঞার কারণ নির্দেশ করে বা লিঙ্গ প্রতিপাদন করে। তাই লিঙ্গ জ্ঞানের জন্যই হেতু বাক্যের প্রয়োজন হয়।

    উদাহরণ : ন্যায়ের তৃতীয় অবয়ব বাক্যটি হল উদাহরণ। যে বাক্য ব্যাপ্তি প্রতিপাদন করে তাকেই উদাহরণ বাক্য বলে। পরিচিত দৃষ্টান্ত সহযোগে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সার্বিক সম্পর্ক জ্ঞাপক অবয়ব হলো উদাহরণ। অর্থাৎ বাক্যের প্রতিজ্ঞা এবং হেতুর মধ্যে যে ব্যাপ্তি সেটিকে পরিচিত দৃষ্টান্তের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করা হয়। ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিপাদন করার জন্যই উদাহরণ বাক্যে প্রয়োজন হয়।

   উপনয় : যে বাক্যে ব্যাপ্তিবিশিষ্টি হেতু বা লিঙ্গের প্রতিপাদন করা হয়, তাকে উপনয় বাক্য বলা হয় । সাধ্যের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হেতুপদের ও পক্ষপদের সম্বন্ধজ্ঞাপক অবয়বই উপনয়। এই বাক্যে পক্ষে সাধ্যের ব্যাপ্তিবিশিষ্ট হেতুর প্রতিপাদন করা হয়। উপনয়ে সামান্য বচনটিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কাজেই, পক্ষধর্মতা জ্ঞানের জন্য উপনয় বাক্যের প্রয়োজন হয়।

     নিগমন : যে বাক্যে ব্যাপ্তি ও পক্ষধর্মতাবিশিষ্ট হেতুর দ্বারা পক্ষে সাধ্য আছে তা প্রতিপাদিত হয়, তাকে নিগমন বাক্য বলা হয় । নিগমন হলো সিদ্ধান্ত অবয়ব। পূর্ববর্তী বাক্যগুলির উপর নির্ভর করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তাকে নিগমন বলে। সুতরাং, প্রতিজ্ঞা বাক্য থেকে পাওয়া বিষয়টিকে প্রমাণ করা নিগম মনের কাজ।
                     <<<<<<>>>>>>
Read More

২। সমাজবিদ্যার(Sociology) প্রশ্ন এবং উত্তর।

Leave a Comment
  প্রশ্ন: সামাজিক শ্রেণী এবং জাতি বা বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।           ১৫ নম্বর
     OR, সামাজিক শ্রেণী ও বর্ণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উঃ   সামাজিক শ্রেণী: সামাজিক শ্রেণী প্রসঙ্গে গিন্সবার্গ বলেন, " সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায়, সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন অংশ বা জনগোষ্ঠীকে যারা সমতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমাজস্বীকৃত উঁচু-নিচু মানদণ্ডের দ্বারা এক জনগোষ্ঠি অপরাপর জনগোষ্ঠি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে"। ম্যাকাইভার ও পেজ্ বলেন, "সামাজিক শ্রেণী বলতে বোঝায় সম্প্রদায়ের এমন এক খন্ডাংশ যা মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য অংশ থেকে স্বতন্ত্র। সামাজিক শ্রেণী প্রথমত, মর্যাদা অনুসারে উঁচু-নিচুভাবে অবস্থান করে; দ্বিতীয়ত, শ্রেণীর মর্যাদা সমাজস্বীকৃত হয় এবং শ্রেণী সদস্যরা ওই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকে; তৃতীয়ত, সামাজিক শ্রেণীর সাংগঠনিক স্থায়িত্ব থাকে"। প্রত্যেক শ্রেণীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক শ্রেণি- সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না;  তবে প্রত্যেক শ্রেণি অন্য শ্রেণী থেকে উচ্চতর ভাবে বা নিম্নতর ভাবে সম্বন্ধের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থান করে।

   জাতি বা বর্ণ: স্যার এডওয়ার্ড ব্লাস্ট তাঁর 'Social Service in India' নামক নিবন্ধ সংকলন গ্রন্থে বলেছেন, 'জাতি হচ্ছে এমন এক জনগোষ্ঠি যাদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রথা প্রচলিত, যারা বংশপরম্পরায় এক সাধারণ পদবী গ্রহণ করে, যারা সামাজিক আচার আচরণের ক্ষেত্রে কতগুলি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে, যারা গতানুগতিকভাবে পূর্বপুরুষের বৃত্তি গ্রহণ করে এবং যারা মনে করে যে তাদের আদি পূর্বপুরুষ একই ব্যক্তি এবং এভাবে যারা এক সুসংহত গোষ্ঠী জীবনে বসবাস করে।' জাতি এবং জাতিভেদ প্রথা কেবলমাত্র ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় -- ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে, এমনকি ভারতের বাইরে অনেক হিন্দুদের মধ্যেও এই প্রথার প্রচলন আছে। প্রাচীনকালের মিশর জাপান প্রভৃতি দেশেও যে এই প্রথার প্রচলন ছিল, ইতিহাসে তার অনেক নজির পাওয়া যায়। বর্তমানে মাসাইদের মধ্যে, পূর্ব-হর্নের সোমালীদের মধ্যে, পলিনেশীয়দের মধ্যে, বর্মীদের মধ্যে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ মানুষের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন আছে। তবে, জাতি ও জাতিভেদ প্রথা বলতে বিশেষ করে ভারতীয়দের এবং আরো বিশেষ করে ভারতে বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সামাজিক শ্রেণীভেদ প্রথাকেই বোঝানো হয়, কেননা ভারতীয় সমাজে এই প্রথা অতিপ্রাচীন এবং সুপ্রাচীন হওয়ায় এই প্রথা ভারতীয় জনজীবনে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করেছে।
       জাত- ব্যবস্থা জন্ম ভিত্তিক। ব্যক্তি যে জাতে জন্মগ্রহণ করে সে জাতির সদস্য হিসেবেই জীবন অতিবাহিত করে। প্রত্যেক জাতভুক্ত ব্যক্তিকে সেই জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। প্রত্যেকটি জাতির একটি পেশা বা বৃত্তি নির্দিষ্ট থাকে।

   সামাজিক শ্রেণী ও জাতি: সামাজিক শ্রেণী ও জাতীয় ক্ষেত্রে উঁচু-নিচু ভাবে স্তর বিভাগ হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যথা ----
  
    প্রথমত, সামাজিক শ্রেণী সচল কিন্তু জাতি সাধারণত নিশ্চল। সমাজের নিম্ন স্তর ভুক্ত মানুষ যদি তার দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য অর্থ, বিত্ত ও মান মর্যাদার অধিকারী হয়ে উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারা কে অনুসরণ করে, তাহলে সে ক্রমশই উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়। তেমনি, উচ্চস্তরের মানুষ যদি তার যোগ্যতার অভাবের জন্য উচ্চস্তরের মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনধারন প্রণালীকে অনুসরণ করতে না পারে তাহলে সে নিম্নস্তরে অবনত হয়। কিন্তু জাতিভেদ প্রথার ক্ষেত্রে জাতি-চলাচল, বিশেষ করে নিম্নতর জাতি থেকে উচ্চতর জাতিতে উন্নীত হওয়া সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলে এই প্রথাকে নিশ্চল বলাই সঙ্গত।

    দ্বিতীয়ত,  জাতির ক্ষেত্রে স্বজাতি বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, উঁচু জাতির সঙ্গে নিচু জাতির বিবাহ শাস্ত্র নিষিদ্ধ। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে বিবাহাদি সম্পর্ক স্বজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্রাহ্মণ সন্তান যদি শূদ্রের কন্যাকে বিবাহ করে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে তাকে জাতিচ্যুত হতে হয়। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এমন কোন শাস্ত্রীয় বিধান নেই। শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চস্তর ভুক্ত মানুষের নিম্নস্তর ভুক্ত মানুষের সঙ্গে বিবাহাদি সম্পর্ক নিষিদ্ধ নয়।

    তৃতীয়ত, জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সামাজিক শ্রেণীভেদের কেবল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে, জাতি বা বর্ণ চারটি। যথা-- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। অপরদিকে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসকেই সামাজিক শ্রেণীভেদের কারণরূপে গণ্য করা হয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমবিভাগ, বৃত্তি বিভাগ, সম্পত্তির বন্টন ইত্যাদি প্রয়োজনীয়রূপে দেখা দেয় এবং শ্রম, বৃত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদির পরিমাণ অনুসারে মানুষ কমবেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে, সমাজের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলেই  সামাজিক স্তর বিভাগ বা শ্রেণীবিভাগের প্রচলন হয়।
                            <<<<<>>>>>
Read More