প্রশ্ন: উপমা যুক্তি কাকে বলে? উপমা যুক্তি মূল্যায়নের মানদন্ডগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উঃ
উপমা যুক্তি : দুটি বস্তুর মধ্যে কোন কোন বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ্য করে তারই ভিত্তিতে যখন উভয়ের মধ্যে অন্য কোন সাদৃশ্যের অনুমান করা হয় তখন তাকে উপমা যুক্তি বা সাদৃশ্যমূলক আরোহ অনুমান বলে।
উদাহরণ: পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহে -- জল, মাটি, তাপ, মাধ্যাকর্ষণ ও একই ধরনের আবহাওয়ার দেখে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব দেখে যদি মঙ্গল গ্রহে উপরোক্ত সাদৃশ্যগুলির ভিত্তিতে অনুমান করি যে, সম্ভবত মঙ্গল গ্রহেও প্রাণী আছে তবে ওই যুক্তি বা অনুমানটিকে বলে উপমা যুক্তি।
উপমা যুক্তির মূল্যায়নের মানদন্ড: উপমা যুক্তির মূল্যায়নের মানদন্ড গুলি হল--
প্রথমত, উপমা যুক্তির আশ্রয় বাক্যে যে দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য থাকে সেই দৃষ্টান্তগুলির সংখ্যা যত বেশি হয় সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা তত বেশি বেড়ে যায়। যেমন--- মানিকতলা বাজারে একজন ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনলাম এবং তা মিষ্টি লাগলো। দ্বিতীয় দিনেও ওই ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনলাম এবং তা মিষ্টি লাগলো। এ থেকে যদি সিদ্ধান্ত করি ওই ফলওয়ালার সব আম মিষ্টি, তাহলে সিদ্ধান্তটির সম্ভাব্যতা খুবই কম হয়ে দাঁড়ায়। অপরপক্ষে, যদি 15/16 বার ওই ফলওয়ালার কাছ থেকে হিমসাগর আম কিনে দেখি যে তার ফল মিষ্টি এবং তারপর যদি সিদ্ধান্ত করি --- ভবিষ্যতেও ওই ফলওয়ালার হিমসাগর আম মিষ্টি হবে, সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি হয়।
দ্বিতীয়ত, হেতুবাক্যে জ্ঞাত সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে, উপমা যুক্তি সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে। যেমন - পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মধ্যে সাদৃশ্যের সংখ্যা বেশি এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য 'পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহেও জীবের অস্তিত্ব আছে' - এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে সাদৃশ্যের সংখ্যা কম হওয়ার জন্য 'পৃথিবীর মতো চন্দ্রেও জীবের অস্তিত্ব আছে' - এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা খুবই কম।
তৃতীয়ত, হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য যত বেশি হবে, সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে। যেমন- একটি বিদ্যালয় এর 10 জন ছাত্রকে পরীক্ষা করে দেখা গেল যে, তারা সবাই সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে। রবিন ওই বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিক পাঠরত। কাজেই সিদ্ধান্ত করা যায় যে, রবিনও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা আরো বেশি হবে যদি আমরা উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য বেশি পর্যবেক্ষণ করি। যদি দেখা হয় তাদের মধ্যে কে ধনী বা নির্ধন, কে শহরের ছাত্র বা গ্রামের ছাত্র ইত্যাদি।
চতুর্থত, জ্ঞাত গুণাবলীর তুলনায় যদি অজ্ঞাত গুণাবলীর সংখ্যা ও গুরুত্ব বেশি হয়, তাহলে উপমা যুক্তির সিদ্ধান্ত কম সম্ভাব্য হবে। এই বিষয়টিকে নিচের ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করা যায়:
সাদৃশ্য
----------------------------------------
বৈশাদৃশ্য + অজ্ঞাত গুণাবলী
এর অর্থ হল: উপমাযুক্তির ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য ও অজ্ঞাত গুণাবলীর সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত কম হবে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।
পঞ্চমত, উপমা যুক্তির মূল্যায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হল সাদৃশ্যের বিষয়গুলির প্রাসঙ্গিকতা। হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের সঙ্গে সিদ্ধান্তের যদি একটি মাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাদৃশ্য থাকে তাহলেও সেই যুক্তি অনেক বেশি সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যদিকে, হেতুবাক্যে উল্লিখিত বেশ কয়েকটি কম গুরুত্বপূর্ণ বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে সিদ্ধান্তের উল্লিখিত দৃষ্টান্তের মিল থাকলেও সিদ্ধান্তটি কম সম্ভাব্য হবে। যেমন- রামের রক্ত পরীক্ষা করে যদি যক্ষা রোগের জীবাণু পাওয়া যায় এবং শ্যামের রক্তেও যদি একই জীবাণু পাওয়া যায় এবং যদি তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয় রাম যে ওষুধ খেয়ে ভালো হয়েছে শ্যামও সেই ঔষধে ভালো হবে তবে সিদ্ধান্ত অনেক জোরালো হবে। অন্যদিকে, রাম ও শ্যামের মধ্যে ওজন, বর্ণ, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাদৃশ্য দেখে এবং রামকে একটি ঔষধে সুস্থ হতে দেখে যদি সিদ্ধান্ত করা হয় একই রোগে একই ওষুধে সুস্থ হবে তবে সিদ্ধান্তটি হবে খুবই দুর্বল।
<<<<<>>>>>