অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis) ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
অস্টিওআর্থ্রাইটিস কী?
অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো বয়সজনিত এক ধরনের বাত ব্যথা, যেখানে জয়েন্টের হাড়ের প্রান্তের কার্টিলেজ (Cartilage) ক্ষয়ে যায়। ফলে জয়েন্টে হাড় একে অপরের সঙ্গে ঘষা খায়, ব্যথা, ফোলা ও শক্ত হয়ে যায়। এটি মূলত হাঁটু, কোমর, ঘাড়, হাত ও মেরুদণ্ডে বেশি দেখা যায়।
---
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণ
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ও কার্টিলেজ ক্ষয়
অতিরিক্ত ওজন (হাঁটু ও কোমরে চাপ সৃষ্টি করে)
জয়েন্টে আঘাত বা পূর্বের ইনজুরি
বংশগত কারণ
অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভারী কাজ
দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা
প্রয়োজনীয় টেস্ট:
X-ray (জয়েন্ট স্পেস কমে যাওয়া, হাড়ের পরিবর্তন দেখার জন্য)
MRI (নরম টিস্যু ও কার্টিলেজের ক্ষতি দেখতে)
Joint fluid analysis (ইনফেকশন বা গাউট বাদ দেওয়ার জন্য)
---
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ
জয়েন্টে ব্যথা, বিশেষ করে হাঁটু ও কোমরে
দীর্ঘসময় বিশ্রামের পর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
নড়াচড়ার সময় জয়েন্টে কটকট বা ঘর্ষণের শব্দ
জয়েন্ট ফুলে যাওয়া বা গরম হয়ে যাওয়া
হাঁটাচলায় কষ্ট, সিঁড়ি ওঠা-নামায় সমস্যা
দীর্ঘমেয়াদে জয়েন্ট বিকৃতি
---
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা : হোমিওপ্যাথি রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করে। এটি ব্যথা কমানোর পাশাপাশি জয়েন্টের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
প্রচলিত হোমিও ঔষধ
Bryonia Alba – সামান্য নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়ে, বিশ্রামে আরাম।
Ruta Graveolens – জয়েন্ট ও লিগামেন্ট দুর্বল হয়ে গেলে।
Calcarea Fluorica – জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া ও হাড় ক্ষয়ে কাজে লাগে।
Rhus Tox – ঠান্ডা ও ভেজা পরিবেশে ব্যথা বাড়ে, গরমে আরামে।
Arnica Montana – পুরনো আঘাতজনিত অস্টিওআর্থ্রাইটিসে উপকারী।
---
বায়োকেমিক চিকিৎসা
Calcarea Fluor 6x – জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া ও ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে।
Kali Phos 6x – স্নায়ু ও জয়েন্টের দুর্বলতা দূর করে।
Ferrum Phos 6x – ব্যথা ও প্রদাহের প্রাথমিক পর্যায়ে উপকারী।
---
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন
ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, ডিম, মাছ) খাওয়া
অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা
নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম করা
ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলা
---
হোমিওপ্যাথির গুরুত্ব
অস্টিওআর্থ্রাইটিস একটি ক্রনিক রোগ, তাই একেবারে সারানো সম্ভব না হলেও হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদে রোগীর ব্যথা কমায়, জয়েন্টের অবস্থা স্থিতিশীল রাখে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে জীবনের মান উন্নত করে।
0 comments:
Post a Comment