আরোহমূলক দোষ বা অনুপপত্তি
(INDUCTIVE FALLACIES)
Class - xii ( wbchse)
** নীচের আরোহ যুক্তিগুলি বিচার করো এবং কোন দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো-- (মান 4)
১) বদ্ধ পরিষ্কার জল ডেঙ্গির কারণ :
উঃ
দোষ: অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ। অথবা, অবৈধ সাম্যানীকরণ দোষ ।
বিচার: এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে যে সমস্ত ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিষ্কার জল আছে অথচ তা ডেঙ্গির কারণ নয়— সেরূপ দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষন করা হয়নি। অথচ এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এই ধরনের দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গুটিকয়েক দৃষ্টান্ত দেখে একপ্রকার সামান্যীকরণ করা হয়েছে বলে একে অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট রূপেও উল্লেখ করা যায়।
২) সব কাক নিশ্চয়ই কালাে; কারণ, আমরা অন্য কোনাে রঙের কাক দেখিনি।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার : এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কয়েকটি কাককে কালাে বর্ণের হতে দেখে সকল কাক হয় কালাে’ এরূপ সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। কিন্তু, পৃথিবীর সব কাক কালাে কিনা তা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনাে মানুষের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে যে, আমাদের সীমিত অভিজ্ঞতার বাইরে অন্য রঙের কাক থাকতে পারে। কাজেই, কাকের সঙ্গে কালাে রঙের কোনাে অনিবার্য সম্পর্ক আছে কিনা তা নির্ণয় না করে অর্থাৎ, কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় না করে এক্ষেত্রে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত।
৩) কয়েকটি লালফুল গন্ধহীন হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল যে, সব লালফুল গন্ধহীন।
উঃ
দোষ : অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার : এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতায় কয়েকটি লালফুলকে গন্ধহীন হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সব লালফুল গন্ধহীন। কিন্তু, এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। কারণ, এখানে কোনাে বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত বা নঞর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়নি। অর্থাৎ, জগতে গন্ধযুক্ত লালফুলের (যেমন — গােলাপফুল) অস্তিত্ব আছে এটা প্রমাণিত। কাজেই ,সালফুল ও গহীনতার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিচার না করে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৪) বহু লােক সাপের কামড়ে মারা গেছে। সুতরাং, সব সাপ বিষধর।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে।
বিচার : এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, উক্ত যুক্তিতে বেশ কয়েকজন লােকের সাপের কামড়ের ফলে মৃত্যু হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সব সাপ বিষধর। কিন্তু, এক্ষেত্রে যে বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত বা নঞর্থক দৃষ্টান্ত থাকতে পারে তাকে পর্যবেক্ষণ না করে সিন্ধান্ত রা হয়েছে। অর্থাৎ, এমন অনেক সাপ আছে যারা বিষধর নয় কিংবা এমন অনেক লােক আছে যারা সাপের কামড়ে মারা যায়নি — এই নঞর্থক দিককে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। তা ছাড়া পৃথিবীর সব সাপ বিষধর কিনা তা কােনাে মানুষের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে তা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৫) মানসিক হাসপাতালের অধিকাংশ রােগী উচ্চশিক্ষিত। সুতরাং, উচ্চশিক্ষাই মানসিক রােগের কারণ।
উঃ
দোষ : অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার: এখানে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, আলােচ্য যুক্তিতে কোনাে মানসিক হাসপাতালের কয়েকজন রােগীকে উচ্চশিক্ষিত হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে উচ্চশিক্ষাই মানসিক রােগের কারণ। কিন্তু, এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। কারণ, এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে মানসিক রােগের কার্যকারণ সম্পর্ক আছে কিনা তা নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়নি। কেবলমাত্র কয়েকজন মানসিক রােগীকে উচ্চশিক্ষিত হতে দেখে এরূপ সার্বিক সিদ্ধান্ত করার জন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৬) টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ, টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ বহন করে নিয়ে আসে।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার: এটি আরােহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এখানে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ বহন করে নিয়ে আসে এই দিককে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে টেলিগ্রাম অশুভ। কিন্তু, সব ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম অশুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে কিনা এই নঞর্থক দিকটিকে বিবেচনা না করে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে, যা কার্যকারণ সম্পর্ক বহির্ভূত। এজন্য যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৭) আজকালকার শিক্ষিত মহিলারা গৃহকর্ম করতে চান না। সুতরাং, নারী শিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক নয়।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার: যুক্তিটিতে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে অবাধ অভিজ্ঞতায় কয়েকজন শিক্ষিতা মহিলাকে গৃহকর্মে বিমুখ হতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে নারী শিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু, পৃথিবীর সব উচ্চশিক্ষিত মহিলা গৃহকর্মে বিমুখ কিনা তা কোনাে ব্যক্তির পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে বিশেষ কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যে সার্বিক সিদ্ধান্ত করা হয়েছে তা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৮) দিনের পরে রাত্রি আসে, সুতরাং দিন রাত্রির কারণ।
উঃ
দোষ: সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ।
বিচার: যুক্তিটি সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষে দুষ্ট। আমরা জানি একটি কারণের একাধিক কার্য থাকতে পারে। যখন এই সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা হয় তখন যুক্তিটিতে যে দোষ ঘটে তাকে সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটে। আলােচ্য যুক্তিতে দিনের পর রাত আসে বলে দিনকে রাত্রির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু, দিন এবং রাত্রি কোনােটিই কারাের কারণ নয়, উভয় ঘটনাই হল সহকার্য। উভয়ের কারণ হল পৃথিবীর আহ্নিক গতি। কাজেই, দিন ও রাত্রির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এই উভয় ঘটনাই পৃথিবীর আহ্নিক গতিরূপ কারণের সহকার্য। কাজেই, যুক্তিটিতে দিন রাত্রির অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও শর্তহীন অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। এজন্য যুক্তিটিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে।
৯) শীতের পরেই বসন্ত আসে। কাজেই শীত হলো বসন্তের কারণ।
উঃ
দোষ: সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ বলে মনে করার দোষ।
বিচার: প্রদত্ত যুক্তিটিতে অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগ করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে শীত হল বসন্তের কারণ। কেননা, শীত নিয়তই বসন্তের পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু যুক্তিটি সিদ্ধ নয়। শীত এবং বসন্ত উভয়ই পৃথিবীর বার্ষিক গতির ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ শীত ও বসন্তের শর্ত হলাে পৃথিবীর বার্ষিক গতি। সুতরাং শীত ও বসন্ত সহকার্য। সুতরাং এই যুক্তিটিতে সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে এখানে সহকার্যের একটিকে অপরটির কারণ গণ্য করা জনিত দোষ ঘটেছে।
১০) জোয়ারের পর ভাটা আসে। অতএব জোয়ার হল ভাটার কারণ।
উঃ
দোষ: সহকার্যের কোনাে একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করা দোষ ।
বিচার: আলােচ্য যুক্তিতে জোয়ারকে ভাটার কারণ বলা হয়েছে। যেহেতু জোয়ার হল ভাটার নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা। কিন্তু, কারণকে কেবল কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হলেই হবে না, তাকে শর্তহীন হতে হবে। জোয়ার এবং ভাটা এই দুটি ঘটনা শর্তহীন নয়। উভয় ঘটনাই চন্দ্রের আকর্ষণজনিত কারণের সহকার্য। অর্থাৎ, চন্দ্রের আকর্ষণের তারতম্যের জন্য পৃথিবীতে জোয়ার এবং ভাটা হয়। সুতরাং, জোয়ার এবং ভাটা ঘটনাদুটির কোনােটি কারাের কারণ নয়। উভয়ই একই কারণের সহকার্য। এ কারণে যুক্তিটিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে।
১১) তাপমান যন্ত্রের পারদের অবনমন নিকটবর্তী হ্রদের জল জমে যাওয়ার কারণ।
উঃ
দোষ: সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ
বিচার: উক্ত যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, তাপমান যন্ত্রের পারদ নীচে নেমে যাওয়া এবং হ্রদের জল জমে যাওয়া— এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। উভয় ঘটনাই একটি কারণের সহকার্য। সেই কারণটি হল তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিতে নেমে যাওয়া। অর্থাৎ, তাপমাত্রা 0 ° বা তার নীচে নেমে গেলে পারদের অবনমন ঘটে আবার জল জমে যায়। সুতরাং, এক্ষেত্রে একটিকে অন্যটির কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
১২) বিদ্যুৎ হল বজ্রনিনাদের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা। অতএব বিদ্যুৎ হল বজ্রনিনাদের কারণ।
উঃ
দোষ: সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, বিদ্যুৎ এবং মেঘ গর্জনের মধ্যে কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। উভয় ঘটনাই একটি কারণের সহকার্য। কারণটি হল দুটি বিপরীতমুখী মেঘের সংঘর্ষ। মেঘের সঙ্গে মেঘের সংঘর্ষ হলে বিদ্যুৎ চমক দেখা যায় এবং বজ্রপাতের শব্দও শােনা যায়। সুতরাং, দুটি ঘটনার কেউই অন্যটির কারণ নয়। কাজেই, বিদ্যুৎকে মেঘ গর্জনের কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে সহকার্যকে কারণরূপে গণ্য করা দোষ ঘটেছে।
১৩) টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ টেলিগ্রাম দুঃসংবাদ নিয়ে আসে।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার: এই আরােহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ আলােচ্য যুক্তিটিতে কতকগুলি ক্ষেত্রে টেলিগ্রামকে দুঃসংবাদ বহন করে আনতে দেখে সামান্যীকরণ করা হয়েছে যে, টেলিগ্রাম মাত্রই অশুভ। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম শুভ সংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে সেই সব বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ না করাই আলােচ্য যুক্তিটির সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত বলে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলি উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র সদর্থক দৃষ্টান্তগুলি পর্যবেক্ষণ করে কোনােরূপ কার্য - কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কারের চেষ্টা না করে অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সামান্য বচন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই দোষ ঘটে।
১৪) রাশিয়াতে যখন গমের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন কলকাতা শহরে জন্মহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধি হল কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধির কারণ।
উঃ
দোষ : অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের ফলে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, যুক্তিতে রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধিকে কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধির কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। আসলে রাশিয়ায় গমের ফলন বৃদ্ধি এবং কলকাতায় জন্মহার বৃদ্ধি এই দুটি ঘটনার মধ্যে সহপরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও সেই সহপরিবর্তন প্রাসঙ্গিক নয়। কাজেই, এক্ষেত্রে একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে ।
১৫) গতবছর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, যুক্তিটিতে দেবতার রােষকে দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, দুর্ভিক্ষের সঙ্গে দেবতার রােষের কোনােরূপ কার্যকারণ সম্বন্ধ নেই। এক্ষেত্রে দেবতার রােষ হল একটি অবান্তর বিষয়। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিতে দেবতার রুষ্ট হওয়াকে দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কাজেই, প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে কুসংস্কারবশত একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
১৬) তুমি সূর্যগ্রহণের সময় খেয়েছ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছ। সুতরাং, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া তােমার অসুস্থতার কারণ।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াকেই অসুস্থতার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়ার সঙ্গে অসুস্থতার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। অসুস্থতা প্রসঙ্গে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। অসুস্থতার প্রকৃত কারণ হল ভালাে খাদ্যবস্তু গ্রহণ না করা। অর্থাৎ, সূর্যগ্রহণ না হলেও দূষিত খাদ্যবস্তু খেলে অসুস্থ হতে হত। কাজেই, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াকে অসুস্থতার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। [উল্লেখ্য, উক্ত যুক্তিতে কাকতালীয় দোযেরও প্রয়ােগ করা যায়]
১৭) কোনাে ডাক্তার তিনজন রােগীকে তিনরকম ওষুধ গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বললেন এবং কিছুদিন পর তারা প্রত্যেকেই রােগমুক্ত হল। কাজেই, সিদ্ধান্ত করা হল গরম জল খাওয়াই তাদের রােগমুক্তির কারণ।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে গরম জল খাওয়াকেই রােগমুক্তির কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু, রােগমুক্তির ক্ষেত্রে গরম জল খাওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। এক্ষেত্রে আসল কারণটি হল রােগের জন্য নির্ধারিত ওষুধ। কাজেই, যেটি প্রকৃত কারণ নয় সেই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে।
১৮) কোনাে বেঁটে লােককে ভালাে বক্তৃতা দিতে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল বেঁটে হওয়াই তার ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কারণ।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে লােকটির বেঁটে হওয়াকে ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, বেঁটে হওয়ার সঙ্গে ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। ভালাে বক্তৃতা দেওয়ার আসল কারণ হল বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান থাকা। এক্ষেত্রে বেঁটে প্রকৃতির হওয়া একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। কাজেই, যুক্তিটিতে একটি অবান্তর বিষয়কে কারণরূপে গণ্য করার জন্য উক্ত দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে।
১৯) পরীক্ষার আগে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি হল ছাত্রটির পরীক্ষার অকৃতকার্যতার কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতিকে ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, পরীক্ষার পূর্বে গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। এক্ষেত্রে ছাত্রটির শরীর সুস্থ না থাকা, মনােযােগ দিয়ে পড়াশুনা না করা, প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া, সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না লেখা, উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া, গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি প্রভৃতি একাধিক আবশ্যিক শর্ত একত্রিতভাবে ছাত্রটির পরীক্ষায় অকৃতকার্য নামক কার্যটি সংঘটিত করে। সুতরাং, শুধুমাত্র গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতিকে এক্ষেত্রে কারণ বলার জন্য যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষে দুষ্ট হয়েছে।
২০) বারুদে অগ্নিসংযােগ করতেই বিস্ফোরণ হল। সুতরাং, বারুদে অগ্নিসংযােগ হল বিস্ফোরণের কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে বারুদে অগ্নিসংযােগকে বিস্ফোরণের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে । কিন্তু, বারুদে অগ্নিসংযােগ করা বিস্ফোরণ ঘটার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। বিস্ফোরণরূপ কার্যের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ বারুদ, শুষ্ক বারুদ, ঠাসা বারুদ, বারুদে অগ্নিসংযােগ প্রভৃতির প্রয়ােজন হয়। এই শর্তগুলি একত্রিত হয়ে বিস্ফোরণরূপ কার্য সংঘটিত করে। কাজেই, এখানে কেবলমাত্র অগ্নিসংযােগকে কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
২১) বহ্নি না থাকলে ধূম থাকে না । সুতরাং , বহ্নি হল ধূমের কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ
বিচার: যুক্তিটিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, বহ্নি না থাকলে ধূম হয় না ঠিকই কিন্তু বহ্নি থাকলেই ধূম হবে এমন কথা বলা যায় না। যেমন — বৈদ্যুতিক হিটারে উত্তপ্ত লৌহপিন্ডে বহ্নি থাকে অথচ ধূম থাকে না। অর্থাৎ, বহ্নি থাকা ধূমের একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। ধূম সৃষ্টির জন্য বহ্নি ছাড়াও ভিজে কাঠ বা জ্বালানির প্রয়ােজন হয়। ভিজে কাঠে বহ্নিসংযােগ করলে তবেই ধূম নির্গত হয়। কাজেই, বহ্নিকে ধূমের কারণ বললে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণরূপে গণ্য করা দোষ দেখা দেবে।
২২) পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণই হল সুস্বাস্থ্যের কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করার দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণকেই সুস্বাস্থ্যের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ সুস্বাস্থ্যের একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। অনেকগুলি উপাদান বা আবশ্যিক শর্তের সমাবেশের ফলে একজন ব্যক্তি সুস্বাস্থ্য অর্জনে সক্ষম হয়। যেমন— শরীর চর্চা, প্রয়ােজনীয় বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত পরিশ্রম, দূষণমুক্ত পরিবেশে বাস, শরীরে রােগের অভাব প্রভৃতি ব্যাপার একত্রে কোনাে মানুষকে সুস্থ ও সবল করে তােলে। কাজেই, এখানে কেবল পুষ্টিকর খাদ্যকে সুস্বাস্থ্যের কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
২৩) আকাশে ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক পরেই রাধার মৃত্যু হল। সুতরাং আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবই রাজার মৃত্যুর কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ।
ব্যাখ্যা: এটি আরােহ অনুমান এর দৃষ্টান্ত। এখানে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কারণ আমরা জানি, কারণ হলাে কার্যের শর্তহীন অপরিবর্তনীয় নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। কিন্তু যে - কোনাে পূর্ববর্তী ঘটনা কারণ নয়। যে - কোনাে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বললে যুক্তিতে যে দোষ ঘটে তাকে কাকতালীয় দোষ বলে। উপরিউক্ত উদাহরণটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে কেননা উদাহরণটিতে পূর্ববর্তী ঘটনা (ধূমকেতুর আবির্ভাব) -কে কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনা (রাজার মৃত্যু) -কে কার্য বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজার মৃত্যুর জন্য ধূমকেতুর আবির্ভাব কারণ হতে পারে না। ধূমকেতুর আবির্ভাব ও রাজার মৃত্যু এদের মধ্যে অ - নিয়ত সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া এক্ষেত্রে রাজার মৃত্যু অন্য কারণে ঘটতে পারে যদিও ঘটনাক্রমে এখানে ধূমকেতুর আবির্ভাব এবং পরবর্তীতে রাজার মৃত্যু পূর্বাপর ঘটেছে। কিন্তু তাই বলে এদেরকে কার্য - কারণ বলা ঠিক নয়।
বিকল্প
দোষ: কাকতালীয় দোষ
বিচার : উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, আলােচ্য যুক্তিতে ধূমকেতুর আবির্ভাবকে রাজার মৃত্যুর কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। যেহেতু ধুমকেতুর আবির্ভাব রাজার মৃত্যর অগ্রবর্তী ঘটনা। কিন্তু, যে - কোনাে অগ্রবর্তী ঘটনা কারণ নয়। কারণ হবে কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা। এক্ষেত্রে ধূমকেতুর আবির্ভাব রাজার মৃত্যুর অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও তা নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, যখনই আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাব হয়েছে তারপরই একজন রাজার মৃত্যু হয়েছে এমন নয়। কাজেই এখানে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে।
২৪) নতুন পােশাকটি পরার পরই তার জ্বর হল। সুতরাং, নতুন পােশাকটি পরাই তার জ্বরের কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের ফলে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে নতুন পােশাক পরা জ্বরের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, বিশেষ কোনাে ক্ষেত্রে নতুন পােশাক পরার পর কারাে জ্বর হলেও নতুন পােশাক পরলেই সব সময় জ্বর হয় না। কাজেই, এখানে অনিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য অনুমানটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে।
২৫) শান্তিবাদীরা মিছিল করার পরই পশ্চিমবঙ্গে খরা শুরু হল। কাজেই, শান্তিবাদীদের মিছিল করাই খরার কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ
বিচার: যুক্তিটিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগ ঘটেছে বলে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে শান্তিবাদীদের মিছিলকে পশ্চিমবঙ্গের খরার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, ঘটনাদুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়নি। এক্ষেত্রে শান্তিবাদীদের মিছিল করা পশ্চিমবঙ্গের খরা সৃষ্টি হওয়ার অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। কিন্তু, কারণ হতে গেলে কার্যের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে, এ কারণে যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে।
২৬) মাদুলি ধারণ করার ঠিক পরেই তার রােগ সারল। সুতরাং, মাদুলি ধারণ তার রােগ নিরাময়ের কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ। / অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে মাদুলি ধারণ করাকে রােগ নিরাময়ের কারণরূপে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, এরূপ অনুমান ভ্রান্ত। কারণকে কেবল অগ্রবর্তী ঘটনা হলে চলবে না, তাকে নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে মাদুলি ধারণের পর রােগ নিরাময় হলেও সবক্ষেত্রে তা হয়। অর্থাৎ, মাদুলি ধারণ সবক্ষেত্রে রােগ নিরাময়ের অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। এক্ষেত্রে অসতর্কভাবে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে। [এক্ষেত্রে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষও করা যেতে পারে।]
২৭) নববধূ গৃহে প্রবেশ করার পরই শাশুড়ির মৃত্যু হল। সুতরাং, নববধূর আগমনই শাশুড়ির মৃত্যুর কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। আলােচ্য যুক্তিতে নববধূর গৃহে আগমনকে শাশুড়ির মৃত্যুর কারণরূপে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, নববধূর গৃহে আগমন শাশুড়ির মৃত্যুর অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে নববধূর গৃহে প্রবেশের পর শাশুড়ির মৃত্যু ঘটলেও সবক্ষেত্রে তা হয় না। কাজেই, কুসংস্কার বসতঃ এবং অসতর্কভাবে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে।
২৮) উপনিবেশগুলি ফলের মতাে। কারণ , ফল পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি উপনিবেশগুলি সমৃদ্ধ হলে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উঃ
দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।
বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির উদাহরণ। কেননা, এক্ষেত্রে উপনিবেশ ও ফলের মধ্যে একটি অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। ফল প্রাকৃতিক নিয়মে নিজ থেকেই পেকে যায় এবং গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু, উপনিবেশগুলি চেষ্টা করে সমৃদ্ধ হয় অর্থাৎ, পরিপক্ক হয় এবং দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কাজেই, দুটি বিষয়ের পরিপক্কতা এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। অথচ এই যুক্তিতে সেই পার্থক্য সরিয়ে দিয়ে ফল এবং উপনিবেশদুটিকে একজাতীয় বলা হয়েছে। এজন্য এটি মন্দ উপমাযুক্তি হিসাবে গণ্য হবে।
২৯) প্রায় জলে অবগাহন কোরাে না; কেননা, এক টুকরাে দড়ির মতাে শরীরেরও পচনের আশঙ্কা আছে।
উঃ
দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।
বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত। এই যুক্তিতে দড়ির সঙ্গে মানুষের শরীরের যে সাদৃশ্য উল্লেখ করা হয়েছে তা অপ্রাসঙ্গিক। কেননা, দড়ি জড়পদার্থ। তার সঙ্গে জলের সম্পর্ক এক ধরনের। আর দেহে যখন চেতনা থাকে তখন চেতনাযুক্ত দেহের সঙ্গে জলের সম্পর্ক অন্য ধরনের। অর্থাৎ, জলে ভেজা দড়ি এবং জলে ভেজা দেহ — দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। অথচ যুক্তিটিতে এই পার্থক্য সরিয়ে দিয়ে জলে ভেজা দড়ি এবং জলে ভেজা দেহের পরিণাম অভিন্ন বলে অনুমান করা হয়েছে। সুতরাং, এটি মন্দ উপমাযুক্তি হিসাবে গণ্য হবে।
৩০) একটি দেশের চরম পরিণতি হল ধ্বংস, কারণ, দেশ হল একপ্রকার জীবদেহ এবং জীবদেহের বার্ধক্য ও মৃত্যু আছে।
উঃ
দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।
বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির উদাহরণ। কারণ, এক্ষেত্রে দেশ ও জীবদেহের মধ্যে উৎপত্তি ও বৃদ্ধির সাদৃশ্যটি প্রকৃত সাদৃশ্য নয়। জীবদেহের মধ্যে প্রাণ আছে বলে তার যে অর্থে বৃদ্ধির কথা বলা হয় সেই অর্থে দেশের বৃদ্ধির কথা বলা যায় না। বস্তুত দেশ ও জীবদেহের মধ্যে বৈসাদৃশ্যমূলক ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের সংখ্যাই অধিক। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক সাদৃশ্য না থাকায় দেশের ধ্বংস জীবদেহের ধ্বংসের মতাে একইরকমভাবে ঘটে — এরূপ সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত। তাই যুক্তিটি মন্দ উপমাযুক্তি দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৩১) কোনাে দেশের রাজধানী হল দেশের হৃৎপিণ্ডের মতাে। কাজেই, রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি দেশের পক্ষে ক্ষতিকর।
উঃ
দোষ: মন্দ উপমা যুক্তি / ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।
বিচার: উক্ত যুক্তিটি ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষে দুষ্ট। এখানে দেশের রাজধানীর সঙ্গে দেহের হৃৎপিণ্ডের তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে তুলনা বা সাদৃশ্যটি আলংকারিক তুলনা বলে গণ্য করা হয়। আর আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য অনুমান করা যুক্তিযুক্ত নয়। বস্তুত হৃৎপিণ্ডের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধির কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাই এখানে মন্দ উপমাযুক্তি দোষ ঘটেছে।
৩২) নতুন শাড়িটি পরার পরই রমার জ্বর হল । কাজেই, নতুন শাড়িটিই হল রমার জ্বরের কারণ।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ
বিচার: যুক্তিটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এখানে নতুন শাড়িকেই জ্বরের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং কার্যকারণ সম্পর্ক বহির্ভূত। এক্ষেত্রে নতুন শাড়ি পরা জ্বরের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, রমা যখনই শাড়ি পরে তখনই জ্বর হয় এমন নয়। কোনাে ঘটনাকে কারণ হতে গেলে তাকে কার্যের নিয়ত, শর্তান্তরহীন অব্যবহিত অগ্রবর্তী ঘটনা হতে হবে। এক্ষেত্রে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
৩৩) গ্রীষ্মের পর বর্ষা আসে, অতএব গ্রীষ্মকাল হল বর্ষাকালের কারণ।
উঃ
দোষঃ সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করার দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে সহকার্যের কোনাে একটিকে কারণ বলে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মের পরে বর্ষা আসে বলে গ্রীষ্মকালকে বর্ষাকালের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, কারণ হবে কার্যের নিয়ত শর্তান্তরহীন অগ্রবর্তী ঘটনা। এখানে গ্রীষ্মকাল - বর্ষাকালের নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও শর্তান্তরহীন অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। উভয় ঘটনাই হল কার্য। উভয়ের কারণ হল পৃথিবীর বার্ষিক গতি। বার্ষিক গতির জন্যই বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ, গ্রীষ্ম ও বর্ষার আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং, এক্ষেত্রে গ্রীষ্মকে বর্ষার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
৩৪) হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণ হল ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধের কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ।
বিচার: উক্ত যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, কারণ হবে একাধিক সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি। এক্ষেত্রে হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণকেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ যুদ্ধের একমাত্র কারণ নয়, কারণের একটি অংশমাত্র। এক্ষেত্রে হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণ করার পাশাপাশি আরও অন্যান্য শর্ত যেমন— ইউরােপে অর্থনৈতিক সংকট, উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা, জার্মান জাতির জাতীয়তাবােধ প্রভৃতি একত্রিত হয়ে যুদ্ধ সংঘটিত করেছে। কাজেই, এক্ষেত্রে একটি শর্তকে সমগ্র কারণ বলে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
৩৫) বুদ্ধিজীবীরা মিছিল করার পরে পশ্চিমবঙ্গে খরা সৃষ্টি হল। সুতরাং, বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করাই হল পশ্চিমবঙ্গে খরা সৃষ্টির কারণ।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ। / কাকতালীয় দোষ।
বিচার: উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করাকেই খরা সৃষ্টির কারণ বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবীদের মিছিল করার সঙ্গে খরা সৃষ্টি হওয়ার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এরূপ সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৩৬) যকৃৎ থেকে যেমন পিত্তরস, পাকস্থলী থেকে অম্লরস ক্ষরিত হয়, তেমনি মস্তিষ্ক থেকে চিন্তা নিঃসৃত হয়।
উঃ
দোষ: মন্দ উপমাযুক্তি বা দুষ্টু উপমা যুক্তি বা ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষ।
বিচার: এটি একটি মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত। কেননা, এক্ষেত্রে হেতুবাক্যে উল্লিখিত ধর্মগুলি সিদ্ধান্তে অনুমিত ধর্ম প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। এক্ষেত্রে হেতুবাক্যে উল্লিখিত ধর্মগুলি অর্থাৎ পিত্তরস, অম্নরস হল জড়ধর্ম এবং জড়ধর্মী যকৃৎ ও পাকস্থলী থেকে ওইসব ধর্ম নিঃসৃত হতে পারে। কিন্তু, চিন্তা হল অজড়ধর্ম, যা জড়ধর্মী মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হতে পারে না। কাজেই, এখানে অপ্রাসঙ্গিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গঠিত হয়েছে বলে যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৩৭) কলকাতার বাৎসরিক মৃত্যুর হার দিল্লির চেয়ে বেশি। অতএব কলকাতা দিল্লির চেয়ে অস্বাস্থ্যকর স্থান।
উঃ
দোষ: অ-পর্যবেক্ষণ দোষ /অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ/
বিচার: উক্ত যুক্তিতে অ - পর্যবেক্ষণ দোষ ঘটেছে। কেননা, বাৎসরিক মৃত্যুর হার বেশি দেখে কলকাতাকে দিল্লির চেয়ে অস্বাস্থ্যকর স্থান বলা হয়েছে। কিন্তু, এখানে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ না করে কেবল কিছু সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। দিল্লির তুলনায় কলকাতায় বাৎসরিক মৃত্যুর হার বেশি এ কথা সত্য, কিন্তু দিল্লির তুলনায় কলকাতায় জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি ফলে মৃত্যুর হারও বেশি— এই নঞর্থকদিকটিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৩৮) পেঁচার ডাক নিশ্চয়ই অশুভ। কেননা, পেঁচা ডাকার ঠিক পরেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।
উঃ
দোষ: কাকতালীয় দোষ।
বিচার: যুক্তিটিতে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে। কেননা, এক্ষেত্রে পেঁচার ডাক অগ্নিকাণ্ডের অগ্রবর্তী ঘটনা হলেও নিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনা নয়। অর্থাৎ, যখনই অগ্নিকাণ্ড ঘটে তখনই পেঁচা ডাকে এমন নয়। কাজেই, এখানে অনিয়ত অগ্রবর্তী ঘটনাকে কারণ বলার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
৩৯) রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে, এটা তার জানাই ছিল। কারণ, পরীক্ষা দিতে যাবার সময় সে রাস্তার একটি কালাে বিড়াল দেখেছিল।
উঃ
দোষ: অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ
বিচার: উক্তি যুক্তিতে কোনাে অবান্তর ঘটনাকে কারণ মনে করা দোষ ঘটেছে। কেননা, পরীক্ষায় পাশ করা বা ফেল করার সঙ্গে রাস্তায় কালাে বিড়াল দেখার কোনােরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। পরীক্ষায় পাশ করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ব্যাপার হল ভালাে প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু, এখানে একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।
৪০) ভােরের স্বপ্ন সত্য হয়।
উঃ
দোষ: অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ।
বিচার: যুক্তিটি অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কেননা, এখানে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভােরের স্বপ্ন সত্য হতে দেখে সেই সীমিত সংখ্যক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে ভােরের স্বপ্নমাত্রই সত্য হয়। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে দেখা যাবে, ভােরের স্বপ্ন কখনও সত্য হয় আবার কখনও মিথ্যা হয়। কাজেই, কার্যকারণ সম্পর্ক নিরূপণ না করে কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে বলে যুক্তিটিতে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ঘটেছে ।
৪১) কুকুরেরাও মানুষের মতাে প্রাণী। সুতরাং কুকুরেরাও মানুষের মতাে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন:
উঃ
দোষ: মন্দ - উপমার দোষ।
বিচার: এই আরােহী যুক্তিটি মন্দ - উপমার দোষে দুষ্ট। কারন, এখানে মানুষের সঙ্গে কুকুরের তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনাে উপমা রচনার ক্ষেত্রে দুটি সমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত, কোনাে বিজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত নয়। তাছাড়া কুকুর এবং মানুষের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে, সেগুলি উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই মানুষ এবং একটি ইতর প্রাণীর মধ্যে উপমা সৃষ্টি করায় যুক্তিটি এরূপ দোষে দুষ্ট হয়েছে।
৪২) পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হল ভালাে ফসল হওয়ার কারণ।
উঃ
দোষ: আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ
বিচার : উক্ত আরােহ যুক্তিতে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসাবে গণ্য করা দোষ ঘটেছে। কেননা, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ভালাে ফসল হওয়ার একটি শর্তমাত্র, একমাত্র কারণ নয়। ভালাে ফসল হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উর্বর মৃত্তিকা, উন্নত মানের বীজ, কীটনাশক, রাসায়নিক সার প্রভৃতির প্রয়ােজন হয়। এগুলি একত্রিতভাবে ভালাে ফসল উৎপন্ন করে। কাজেই, এই শর্তগুলির মধ্যে কেবলমাত্র একটিকে অর্থাৎ, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতকে ভালাে ফসল হওয়ার কারণ হিসাবে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে উক্ত দোষ ঘটেছে।